যুক্তরাষ্ট্র-চীন সমঝোতায় ডলারের দাপট

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১২ ১১:০২:৪৭
যুক্তরাষ্ট্র-চীন সমঝোতায় ডলারের দাপট

সত্য নিউজ:ওয়াশিংটন ও বেইজিং থেকে আশাব্যঞ্জক বার্তা আসার পরই বিশ্ববাজারে দেখা গেছে পুঁজিবাজার ও মুদ্রা সূচকের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের চলমান বাণিজ্য আলোচনা "প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি"র দিকেই এগোচ্ছে—এই খবরে সোমবার সকালে বিশ্বব্যাপী সূচক ও ডলারের দর বেড়েছে।

সোমবার সকালে ওয়াল স্ট্রিটের মূল সূচকগুলোতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ও নাসডাক ফিউচার্সের মান বেড়েছে যথাক্রমে ১.২ শতাংশ করে। ইউরোপের ইউরোস্টক ৫০ সূচক বেড়েছে ০.৯ শতাংশ, জার্মানির ডিএএক্স ০.৭ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যের এফটিএসই ০.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এশিয়ার বাজারেও একই ধরনের প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। জাপানের নিক্কেই সূচক ০.৩ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কেএস১১ সূচক ০.৪ শতাংশ বেড়ে লেনদেন শুরু করেছে।

ডলার শক্তিশালী, তবে মিশ্র প্রভাব অন্যান্য মুদ্রায়

বাজারের আস্থাবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ডলার ইনডেক্স ০.২ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে ১০০.৬০ পয়েন্টে। ইয়েনের বিপরীতে ডলারের মান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৫.৯০ ইয়েনে, যা ০.৪ শতাংশের প্রবৃদ্ধি। ইউরোর বিপরীতে ডলার শক্তিশালী হলেও ইউয়ানের বিপরীতে ডলার সামান্য পিছিয়েছে ০.২ শতাংশ।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, স্টক ফিউচার্স চুক্তির এই উত্থান ভবিষ্যৎ বাজারের ইতিবাচক দিকনির্দেশনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদিও চূড়ান্ত বাণিজ্যচুক্তি এখনো হয়নি, তবুও আলোচনার অগ্রগতি বাজারে আশাবাদ তৈরি করেছে।

শুল্ক হ্রাসের প্রত্যাশা ও রাজনৈতিক বার্তা

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত আলোচনা "গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি"র দিকে এগোচ্ছে। চীনও জানিয়েছে, দু’দেশ নতুন একটি অর্থনৈতিক সংলাপ ফোরাম গঠনে সম্মত হয়েছে। যদিও এখনো কোনো নির্দিষ্ট শুল্কহারের ঘোষণা আসেনি, তবে দুই দেশ যৌথ বিবৃতি দেওয়ার কথা জানিয়েছে।

বিনিয়োগকারীরা ধারণা করছেন, হোয়াইট হাউস হয়তো ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত উচ্চ শুল্ক আরোপ থেকে পিছিয়ে আসবে। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ঘোষিত ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপও পরিশোধন হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন অনেকে। শুল্ক ইস্যুতে ইতিবাচক সুর পেলে এটি বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধির ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।

ভূরাজনীতির উন্নতি বাজারে আস্থা বাড়িয়েছে

এদিকে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির ঘোষণা ও ইউক্রেন-রাশিয়া আলোচনার সম্ভাবনাও বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি তুরস্কে পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত। ভূরাজনৈতিক এই ইতিবাচক অগ্রগতি বিশ্ববাজারে আস্থা ফিরিয়ে এনেছে।

স্বর্ণ ও জ্বালানি তেলের বাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ডলারের চাঙাভাব ও বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি নেওয়ার মনোভাব বাড়ায় সোনার দাম কিছুটা কমেছে। সোমবার সোনার দাম ১.৭ শতাংশ কমে প্রতি আউন্স ৩,২৬৮ ডলারে নেমেছে, যা এপ্রিলে রেকর্ড করা ৩,৫০০ ডলারের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

অন্যদিকে, তেলের বাজারে আবার আশাবাদ দেখা গেছে। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ২৩ সেন্ট বেড়ে হয়েছে ৬৪.১৪ ডলার এবং ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ২৫ সেন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১.২৭ ডলার।

চুক্তি এখনও অনিশ্চিত, তবে আশা জাগাচ্ছে কাঠামোগত অগ্রগতি

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপারস্টোনের কৌশলবিদ মাইকেল ব্রাউন মন্তব্য করেন, “চীন-যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি কাঠামো তৈরি করছে, যার আওতায় ভবিষ্যতে আরও কার্যকর আলোচনা হতে পারে। যদিও এখনো চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি, কিন্তু ইতিবাচক বার্তা ভবিষ্যতের জন্য সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে।”

বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে বলছেন, আলোচনার ফলাফল যতক্ষণ না শুল্ক স্থগিত, হ্রাস বা সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দিকে এগোয়, ততক্ষণ বাজারে স্থায়ী প্রভাব আসবে না। তবে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত বার্তা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ইতিবাচকই বলা চলে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ