পাক-বাংলা পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক
ঐতিহাসিক অমীমাংসিত তিন বিষয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সুরাহা চায় বাংলাদেশ

সত্য নিউজ: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার দাবি সহ তিনটি অমীমাংসিত বিষয়ে সমাধান চেয়েছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-পাকিস্তান পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়ে জোর দেয় বাংলাদেশ। পাকিস্তানও বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তির সদিচ্ছা প্রকাশ করেছে।
ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত এই বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন এবং পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ। ২০১০ সালের পর দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পর দুই দেশের মধ্যে এই ধরনের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।
বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে অমীমাংসিত তিনটি বিষয় উত্থাপন করা হয়েছে। বিষয়গুলো হলো:
-
১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া।
-
বাংলাদেশে আটকে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদের প্রত্যাবাসন।
-
অবিভক্ত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা এবং ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর প্রেরিত বিদেশি সাহায্যের অর্থ হস্তান্তর।
তিনি বলেন, "আমরা চাই, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী হিসেবে পাকিস্তান এ বিষয়গুলোর দ্রুত নিষ্পত্তিতে গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে। আমরা একটি মজবুত, কল্যাণমুখী এবং ভবিষ্যৎমুখী সম্পর্ক গড়ে তুলতে একযোগে কাজ করতে আগ্রহী।"
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে পররাষ্ট্রসচিব জানান, পাকিস্তান এসব বিষয়ে ভবিষ্যতে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে। যেহেতু এই বৈঠক দীর্ঘ ১৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হলো, তাই সঙ্গে সঙ্গে সব সমস্যার সমাধান আশা করা বাস্তবসম্মত নয়। তবে, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সদিচ্ছার প্রকাশ গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।
বৈঠক শেষে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “ঢাকায় এসে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আলোচনা অত্যন্ত ইতিবাচক এবং ফলপ্রসূ হয়েছে।” ঢাকায় তার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “খাবার, পরিবেশ এবং কেনাকাটা—সব কিছুই চমৎকার ছিল।”
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত ঐতিহাসিক ইস্যুগুলোর সমাধান শুধু দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য নয়, বরং অঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭১ সালের গণহত্যা একটি ঐতিহাসিক সত্য, যার স্বীকৃতি ও আনুষ্ঠানিক ক্ষমা ছাড়া দুই দেশের সম্পর্ক একটি প্রকৃত ভিত্তিতে গড়ে উঠতে পারে না। বাংলাদেশের তরফ থেকে গণহত্যার স্বীকৃতি, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন এবং অবিভক্ত সম্পদের ন্যায্য অংশ সংক্রান্ত দাবিগুলো দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বৈধ ও ন্যায্য দাবি। পাকিস্তানের সদিচ্ছা প্রকাশ এক ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও, ভবিষ্যতে এসব দাবির বিষয়ে কার্যকর অগ্রগতি ও আন্তরিক পদক্ষেপই নির্ধারণ করবে এই সংলাপের বাস্তব ফলাফল।
এছাড়া পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার আগামী ২৭ ও ২৮ এপ্রিল ঢাকা সফর করবেন বলে জানা যায়। এই সফরের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে যাদুই দেশের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার পরিচায়ক হতে পারে—যদি তা বাস্তবায়নের পর্যায়ে পৌঁছায়। ইতিহাসকে অস্বীকার না করে, বরং সেটিকে স্বীকার করে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়াই হবে একটি স্থিতিশীল, সম্মানজনক ও কল্যাণমুখী পারস্পরিক সম্পর্ক গঠনের মূল চাবিকাঠি।
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- জুলাই চার্টার ও জাতীয় ঐকমত্য: জামায়াতের অনুপস্থিতি কতটা যুক্তিসঙ্গত?
- বিশ্ববিদ্যালয় সংকট, বাজেট বৈষম্য ও শিক্ষায় ন্যায্যতার দাবি
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- Clash of Civilizations: মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের নতুন রূপরেখা
- চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের ১০টি বড় ক্ষতি
- মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের নতুন কৌশল: চীন ও রাশিয়া কী করবে?
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- ভোক্তার কষ্ট বুঝছে সরকার:বাণিজ্য উপদেষ্টা
- ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার সতর্কবার্তা
- ২৮ জুন ঢাকায় জনতার ঢল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মহাসমুদ্র!
- এবার পাকিস্তানকে হামলার হুমকি দিল ইসরায়েল
- নির্বাচিত নারী, অলঙ্কার নয়: গণতন্ত্রে নারীর শক্তির সন্ধান