বিশেষ প্রতিবেদন

ভারতের পণ্যে উচ্চ শুল্ক: যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানির জন্য সুবর্ণ সুযোগ নাকি সীমিত সম্ভাবনা?

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৮ ১১:৪১:৩৪
ভারতের পণ্যে উচ্চ শুল্ক: যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানির জন্য সুবর্ণ সুযোগ নাকি সীমিত সম্ভাবনা?

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পাল্টা শুল্ক নীতির কারণে ভারতীয় পণ্যে উচ্চ কর আরোপ হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার রপ্তানি প্রতিযোগিতার মানচিত্র বদলে যেতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, যেটি ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ তিন পোশাক রপ্তানিকারকের মধ্যে রয়েছে, এই পরিবর্তনের ফলে উল্লেখযোগ্য সুযোগ পেতে পারে। তবে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করছেন, এই সুযোগ স্থায়ী নাও হতে পারে যদি প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা দ্রুত গড়ে তোলা না হয়।

দুই সপ্তাহ আগেও যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নীতিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বাজার-অংশ দখলের পরিকল্পনা করছিল ভারতের ব্যবসায়ীরা। তাঁদের ধারণা ছিল, এই দেশগুলোর পণ্যে বেশি শুল্ক আরোপ হবে, অথচ ভারতীয় পণ্যে তুলনামূলক কম শুল্ক বসবে। কিন্তু ৩১ জুলাইয়ের ঘোষণায় চিত্র পাল্টে যায়। ওইদিন যুক্তরাষ্ট্র কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ১৯ শতাংশ এবং বাংলাদেশের পণ্যে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করলেও ভারতীয় পণ্যে শুল্ক ধরা হয় ২৫ শতাংশ। এর মাত্র এক সপ্তাহ পর, রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানির ‘শাস্তি’ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় পণ্যে মোট শুল্ক দাঁড়াচ্ছে ৫০ শতাংশে।

যদিও এই অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে ২১ দিন পর, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য পাল্টা শুল্ক ইতোমধ্যে কার্যকর হয়ে গেছে। ভারতীয় রপ্তানিকারকের জন্য এটি বড় ধাক্কা, আর বাংলাদেশের জন্য এটি সম্ভাবনার জানালা খুলে দিয়েছে।

বাংলাদেশের সম্ভাব্য লাভের খাতসমূহ

শুল্ক বৃদ্ধির ফলে ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা কিছু খাতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবেন। রপ্তানি সম্ভাবনা বেশি এমন খাতগুলো হলো:

তৈরি পোশাক (RMG) – যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের গড় শুল্ক ৬০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে, যেখানে বাংলাদেশের গড় শুল্ক হবে ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে নিট ও ওভেন পোশাকে অর্ডার সরতে পারে।

হোম টেক্সটাইল – ভারত গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ২৯৩ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানি করেছে, বাংলাদেশ মাত্র ১৫ কোটি ডলার। উচ্চমূল্যের পণ্যে অর্ডার সরার সম্ভাবনা বেশি।

কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য – উচ্চ শুল্কের কারণে ভারতীয় কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যে দাম বাড়বে, যা বাংলাদেশের জন্য সুযোগ তৈরি করবে।

চামড়াজাত পণ্য – ভারতীয় পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি এই খাতে বাংলাদেশের প্রবেশাধিকারের সুযোগ বাড়াবে।

হিমায়িত মাছ ও চিংড়ি – মূল্য প্রতিযোগিতায় ভারত পিছিয়ে পড়বে, ফলে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা বাড়তে পারে।

আসবাব – ভারত যুক্তরাষ্ট্রে ১১৫ কোটি ডলারের আসবাব রপ্তানি করেছে, বাংলাদেশ মাত্র ১ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। হাতিলসহ কয়েকটি ব্র্যান্ড সক্ষমতা বাড়ালে বাজার দখলের সুযোগ রয়েছে।

অর্থনীতিবিদদের সতর্কতা

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, ট্রাম্পের এই শুল্কনীতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতির পরিপন্থী। রাশিয়া, ভেনেজুয়েলা ও ইরান থেকে জ্বালানি তেল কিনলে অতিরিক্ত শুল্কের হুমকি বাংলাদেশের জন্যও উদ্বেগজনক, কারণ বাংলাদেশ রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করে। এছাড়া অন্য দেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করে রপ্তানি করলে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসতে পারে।

তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতি বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলকে অস্থিতিশীল করেছে এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল শুল্কনীতির কারণে বিদেশি ক্রেতারা তড়িঘড়ি ব্যবসা স্থানান্তর করবে এমনটি নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তাই বাজার পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাওয়া এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

সম্ভাব্য কৌশল

সম্ভাব্য বাজার কৌশলগুলোকে কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। সর্বপ্রথম, দ্রুত সক্ষমতা বৃদ্ধি অপরিহার্য। বিশেষ করে পোশাক, হোম টেক্সটাইল এবং আসবাবপত্র খাতে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক মানের গুণমান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। এর মধ্যে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন, দক্ষ জনবল প্রশিক্ষণ এবং গুণগত মান যাচাইয়ের আন্তর্জাতিক সনদপ্রাপ্ত ব্যবস্থা গড়ে তোলা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

এছাড়া, সরকারি নীতি সহায়তা রপ্তানি প্রবৃদ্ধির অন্যতম ভিত্তি। কাঁচামাল আমদানিতে বন্ড সুবিধা নিশ্চিত করা, রপ্তানি প্রণোদনার হার বৃদ্ধি, এবং বন্দর ও লজিস্টিক অবকাঠামো উন্নয়ন এই খাতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে কাস্টমস প্রক্রিয়া দ্রুততর করা ও সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনাকে আরও কার্যকর করার পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাজার গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন ও বজায় রাখা অপরিহার্য। পাশাপাশি বাজার প্রবণতা ও চাহিদার পরিবর্তন নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং শুল্ক নীতির যেকোনো পরিবর্তন দ্রুত শনাক্ত করে তার ভিত্তিতে রপ্তানি কৌশল হালনাগাদ করতে হবে।

বৈচিত্র্যকরণও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। শুধুমাত্র তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভর না করে চামড়াজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, হিমায়িত মাছ ও চিংড়ি, এবং হোম ডেকর পণ্যের মতো অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতে বাজার সম্প্রসারণ করতে হবে। এর ফলে একদিকে বাজারের ঝুঁকি কমবে, অন্যদিকে আয় বৃদ্ধির নতুন সুযোগ তৈরি হবে।

সবশেষে, দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের সাথে স্থায়ী সরবরাহ সম্পর্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন। এতে শুধু অর্ডারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে না, বরং বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের প্রতি ক্রেতাদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে। স্থায়ী ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরির জন্য নির্ভরযোগ্য ডেলিভারি, মানসম্মত পণ্য এবং প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নীতি বজায় রাখা হবে মূল চাবিকাঠি।


চীনের অর্থনৈতিক নীরব বিপ্লব: পশ্চিমা একপক্ষীয় বিশ্বনীতির অবসানের সংকেত

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৮ ০১:০২:২০
চীনের অর্থনৈতিক নীরব বিপ্লব: পশ্চিমা একপক্ষীয় বিশ্বনীতির অবসানের সংকেত

যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে ব্যাপকহারে শুল্ক আরোপ করে নতুন বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেন, তখন অনেকেই মনে করেছিলেন চীনের রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি এত বড় ধাক্কা সামলাতে পারবে না। প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে চীন, যা তাদের মোট রপ্তানির প্রায় ১৫ শতাংশ। ফলে অনেকে ধরে নিয়েছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার হারালে চীনের অর্থনীতি ধসে পড়বে। কিন্তু বাস্তবে যা ঘটল তা সবাইকে বিস্মিত করল। চীন পশ্চাদপসরণ না করে পাল্টা আঘাত হানে—শুল্কে পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি বন্ধ করে এবং আমেরিকান কোম্পানিগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করে। বেইজিং স্পষ্ট জানিয়ে দেয়—এটা আগের চীন নয়, এবং এখন আর তারা কারও শর্তে খেলবে না।

এই আত্মবিশ্বাসের পেছনে রয়েছে এক দশকব্যাপী এক নীরব বিপ্লব। চীনের নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছিল যে পশ্চিমা বাজার ও পুঁজির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকিপূর্ণ। ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ ছিল সেই পরিবর্তনের কারণ নয়, বরং একটি অনুঘটক যা একটি চলমান কৌশলগত পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করেছে। এই রূপান্তরের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি স্বপ্ন—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা ছাড়াই নিজস্ব অর্থনৈতিক বলয়ের নেতৃত্ব নেওয়া। এটি শুধু আত্মরক্ষার কৌশল নয়; এটি বৈশ্বিক নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুতির নামান্তর।

এই অর্থনৈতিক উত্তরণের পেছনের ইতিহাস বুঝতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে সেই পুরোনো চীনের দিকে—যেখানে উৎপাদন ছিল কেন্দ্রীয় ভিত্তি। ১৯৭০-এর দশকে দেং শিয়াওপিংয়ের অর্থনৈতিক উদারীকরণের মাধ্যমে চীন ধীরে ধীরে বিশ্বের বৃহত্তম উৎপাদনকেন্দ্রে পরিণত হয়। বিশাল সস্তা শ্রমশক্তিকে কাজে লাগিয়ে তারা পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে। আমাজন থেকে অ্যাপল—সবার পণ্য তৈরি হতো চীনের কারখানায়। এই মডেলেই চীন টানা তিন দশক ধরে ১০ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখে।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সম্পর্কের অসাম্য প্রকট হয়ে ওঠে। চীনা কোম্পানিগুলো যখন পশ্চিমা বাজারে আগ্রাসীভাবে প্রবেশ করছিল, তখন পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর জন্য চীনের বাজার ছিল সংকীর্ণ ও নিয়ন্ত্রিত। ২০১৮ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য ঘাটতি ৪০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। অনেকেই তখন চীনকে ‘অবাধ বাজারের সুযোগ নিয়ে স্বার্থসিদ্ধি করা এক কর্তৃত্ববাদী শক্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করে। ট্রাম্প এই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় আসেন এবং ক্ষমতায় এসেই শত শত বিলিয়ন ডলারের চীনা পণ্যে শুল্ক আরোপ করেন। শুধু তাই নয়, হুয়াওয়ের মতো কোম্পানিকে নিষিদ্ধ করে এবং সেমিকন্ডাক্টরের মতো প্রযুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

তবে চীন এ যুদ্ধে হেরে যায়নি। বরং তারা নতুন এক পথ বেছে নেয়। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং “ডুয়াল সার্কুলেশন” বা দ্বৈত প্রবাহনীতির কথা ঘোষণা করেন। এই কৌশলের মূল লক্ষ্য হলো দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও উদ্ভাবনশীলতা বৃদ্ধি করে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনা এবং সমান্তরালভাবে বিশ্বের অন্যান্য অংশে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করা। দুই স্তরের এই কৌশলে একদিকে রয়েছে ‘আভ্যন্তরীণ প্রবাহ’—যা স্থানীয় চাহিদা, স্থানীয় প্রযুক্তি ও চীনা ভোক্তাকে কেন্দ্র করে; অন্যদিকে রয়েছে ‘বাহ্যিক প্রবাহ’—যা মার্কিন বাজারের বাইরে নতুন নতুন অংশীদার গড়ে তুলতে চায়, বিশেষ করে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে।

এই কৌশল বাস্তবায়নে চীন অভ্যন্তরীণভাবে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। অনেকেই চীনের রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির কথা বলেন, কিন্তু ২০২৪ সালে দেশটির মোট জিডিপির প্রায় ৪৫ শতাংশ এসেছে দেশীয় ভোগব্যয় থেকে, যা রপ্তানির দ্বিগুণ। BYD, Huawei এবং TikTok-এর মতো কোম্পানিগুলো এখন চীনের গর্ব। দেশীয় বাজারে তৈরি গাড়ি, ফোন, বিলাসপণ্য—সবই চীনারা নিজেরাই ব্যবহার করছে। তবে সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো দুর্বল হওয়ায় চীনের জনগণের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা প্রবল, যা ভোগব্যয় বৃদ্ধির পথে একটি বড় বাধা।

একই সঙ্গে চীনের আবাসন খাতও সংকটে। ২০১৯ সালের পর থেকে বাড়ির মূল্য ক্রমাগত কমছে। জন্মহার হ্রাস পাচ্ছে, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী কমছে এবং প্রবীণদের সংখ্যা বাড়ছে—যা ভবিষ্যৎ অর্থনীতিতে চাপ বাড়াবে।

তবে চীন এসব সংকটের মোকাবিলা করছে আরেকটি কৌশলগত পথে—বৃহৎ বিনিয়োগের মাধ্যমে। ২০১৮ সাল থেকে চীন গবেষণা ও উন্নয়নে ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তাদের লক্ষ্য হলো: আধুনিক প্রযুক্তি যেমন সেমিকন্ডাক্টর, এআই, ইলেকট্রিক যানবাহন এবং সবুজ জ্বালানি উৎপাদনে স্বনির্ভর হওয়া। যুক্তরাষ্ট্র যখন সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তখন অনেকেই মনে করেছিলেন চীনের প্রযুক্তি খাত ভেঙে পড়বে। কিন্তু ২০২৩ সালে হুয়াওয়ে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ৭-ন্যানোমিটার চিপ উন্মোচন করে সবাইকে চমকে দেয়।

এই প্রযুক্তি বিপ্লবের পাশাপাশি চীনের অবকাঠামো উন্নয়নও বিশ্বে নজিরবিহীন। বিশ্বে যত কিলোমিটার হাই-স্পিড রেললাইন আছে, তার চেয়েও বেশি রয়েছে এককভাবে চীনে—৪০,০০০ কিলোমিটার! এর সঙ্গে রয়েছে বন্দর, মহাসড়ক, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ডিজিটাল নেটওয়ার্ক—সব মিলিয়ে এক বিশাল অর্থনৈতিক মেশিন। অনেকে বলেন চীন অনেক বেশি উৎপাদন করছে—প্রয়োজনের চেয়ে বেশি স্টিল, বেশি ইভি, বেশি সৌর প্যানেল। তবে চীন একে কৌশলগত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। কম দামে বেশি উৎপাদন করে বিশ্ববাজারে প্রবেশ করে তারা শুধু পণ্য বিক্রি করছে না, বিশ্ব অর্থনীতির নাভিমূলে নিজেদের স্থানও পাকাপোক্ত করছে।

বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটেও চীনের কৌশল একই রকম দূরদর্শী। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিকল্প হিসেবে চীন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI) প্রকল্প শুরু করে ২০১৩ সালে। এর মাধ্যমে তারা এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে রেললাইন, বন্দর, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে—প্রায় ৭৫ শতাংশ বৈশ্বিক জনগোষ্ঠীকে ছুঁয়ে যাচ্ছে এই প্রকল্প। বিনিময়ে চীন পাচ্ছে নতুন বাজার, কাঁচামাল সরবরাহ, এবং কূটনৈতিক বন্ধুত্ব। এখন চীন শুধু ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গেই বড় বাণিজ্য করছে না, বরং অনেক দেশেই তারাই এখন প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার।

তবে এই অগ্রগতির পেছনে অর্থনৈতিক ব্যয়ও রয়েছে। স্থানীয় সরকার ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। ২০২৬ সালের মধ্যে চীনের ঋণ-জিডিপি অনুপাত ১০০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই বিনিয়োগের ফলাফল অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে—ভুতুড়ে শহর, ফাঁকা রেললাইন বা অলস কারখানার মতো উদাহরণ এখন আর বিরল নয়।

তা সত্ত্বেও, বিশ্বে যে শক্তির ভারসাম্য ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে তা আর অস্বীকার করার উপায় নেই। চীন এখন আর শুধু বিশ্বব্যাপী উৎপাদন কেন্দ্র নয়, বরং এক নতুন অর্থনৈতিক বলয়ের নেতা হওয়ার পথে। এটি প্রযুক্তি, অবকাঠামো, কূটনীতি, এবং বিপুল জনশক্তিকে কেন্দ্র করে নতুন এক যুগের সূচনা করেছে—যেখানে মার্কিন নেতৃত্ব আর একচ্ছত্র নয়।

অতীতের চীন যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদা পূরণের জন্য উৎপাদন করত। আজকের চীন নিজের প্রয়োজন মেটাতে উৎপাদন করে, নিজের বাজার তৈরি করে এবং নিজের প্রভাব বিস্তার করে। এটি শুধু একটি বাণিজ্য যুদ্ধ নয়, বরং এটি একটি নতুন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক আদর্শের জন্ম। প্রশ্ন এখন আর এটি নয় যে, “চীন টিকে থাকবে কিনা।” বরং প্রশ্ন হলো, “পশ্চিমা বিশ্ব কীভাবে মানিয়ে নেবে এমন একটি ভবিষ্যৎ যেখানে চীন আর কারও নিয়ম মেনে খেলতে রাজি নয়?”


সঞ্চয়পত্রে ভাটা, দ্বিগুণ হারে বাড়ছে বিল-বন্ডে বিনিয়োগ

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৭ ১০:৩২:০২
সঞ্চয়পত্রে ভাটা, দ্বিগুণ হারে বাড়ছে বিল-বন্ডে বিনিয়োগ
ছবি: সংগৃহীত

দেশে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের সঞ্চয় করার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। একই সঙ্গে সঞ্চয়পত্র সংক্রান্ত নিয়মের জটিলতা, সুদহারের বিভ্রান্তি এবং সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে তুলনামূলকভাবে বেশি সুদের প্রাপ্তি—এই তিনটি কারণে মানুষ ক্রমেই সঞ্চয়পত্রের পরিবর্তে বিল-বন্ডের দিকে ঝুঁকছে।

সঞ্চয়পত্রে তিন বছর ধরে নেতিবাচক প্রবণতাজাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, গত তিন অর্থবছর ধরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ধারাবাহিকভাবে কমছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নিট বিক্রি ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা কমেছে, ফলে সঞ্চয়পত্রে মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৩৮ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকায়। তার আগের দুই অর্থবছরেও যথাক্রমে ২১ হাজার ১২৪ কোটি এবং ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ কমেছিল।

একসময় বাজেট ঘাটতি পূরণে সঞ্চয়পত্র ছিল সরকারের অন্যতম নির্ভরযোগ্য উৎস। কিন্তু চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আগের বছর এটি ছিল ১৫ হাজার ৪০০ কোটি, যা সংশোধিত বাজেটে নেমে আসে ১৪ হাজার কোটিতে।

নিয়ম কঠোর হওয়ায় সঞ্চয়পত্রে আগ্রহ কমেছে বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৯ সালে ‘জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ চালুর ফলে সঞ্চয়পত্র কেনার প্রক্রিয়া কঠোর হয়ে যায়। একই নামে বড় অঙ্কের সঞ্চয়পত্র কেনা কঠিন হয় এবং এক লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে বাধ্যতামূলক হয় ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন)।

এ ছাড়া, প্রতি ছয় মাস অন্তর সুদহার পর্যালোচনার নিয়ম চালু হওয়ায় সর্বশেষ জুলাইয়ে সুদহার ৪৭ থেকে ৫৭ বেসিস পয়েন্ট কমেছে। বর্তমানে সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি ও কম বিনিয়োগের জন্য আলাদা সুদহার নির্ধারিত রয়েছে, যা অনেকের কাছে জটিল এবং অসুবিধাজনক মনে হচ্ছে।

বিকল্প হিসাবে বিল ও বন্ডে আস্থা বাড়ছেএই প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীরা বেশি আস্থা রাখছেন ট্রেজারি বিল ও বন্ডের ওপর। সেখানে ব্যাংক, প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন ফান্ড এবং সাধারণ নাগরিকদের বিনিয়োগ প্রবলভাবে বাড়ছে। ২০২৩ সালের জুন শেষে এই খাতে মোট বিনিয়োগ ছিল ২৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। মাত্র দুই বছরে, ২০২৫ সালের জুন শেষে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ১৫৯ কোটি টাকায়—অর্থাৎ প্রায় পাঁচ গুণ বৃদ্ধি।

বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, বর্তমানে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ মিলছে, যা করমুক্ত এবং ঝুঁকিমুক্ত। সময়মতো মুনাফা পাওয়া এবং সেকেন্ডারি মার্কেটে বিক্রির সুযোগ থাকায় এটি ব্যক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় পন্থা হয়ে উঠেছে।

/আশিক


চীনের হারানো ব্যবসা ধীরে ধীরে জায়গা নিচ্ছে বাংলাদেশে

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৭ ০৯:৩৪:৩২
চীনের হারানো ব্যবসা ধীরে ধীরে জায়গা নিচ্ছে বাংলাদেশে

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন—এই ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২৫ শতাংশ, যা শীর্ষ ১০ সরবরাহকারীর মধ্যে সর্বোচ্চ। একই সময় চীনের রপ্তানি কমেছে ১১১ কোটি ডলার। এ প্রবণতা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কনীতির কারণে তৈরি হয়েছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র চীনসহ বিভিন্ন দেশের আমদানি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। নতুন শুল্কহার অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ, ভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ এবং চীনের পণ্যে ৩০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হচ্ছে। তবে রাশিয়ার জ্বালানি তেল কেনার কারণে ভারতের পণ্যে বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায়, তাদের মোট শুল্কহার দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের অধীনস্থ অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস (OTEXA)-এর হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি-জুন সময়ে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৪২৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছরের একই সময়ে এই রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৪০ কোটি ডলার। এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫.১৩ শতাংশ।

শুধু রপ্তানি বৃদ্ধিই নয়, বাজারে বাংলাদেশের হিস্যাও বেড়েছে। গত বছর এটি ছিল ৯.২৬ শতাংশ, যা ২০২৫ সালের জুন শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশে।

অন্যদিকে, এই সময়ে চীনের রপ্তানি ৫৭৩ কোটি ডলারে নেমে এসেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ কম। ফলে দেশটির মার্কেট শেয়ারও কমে দাঁড়িয়েছে ১৮.৮৮ শতাংশে। বিপরীতে ভিয়েতনাম ৭৭৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে ১৯.৭৯ শতাংশ বাজার দখল করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক চাপ এবং পাল্টা শুল্কের কারণে ক্রয়াদেশ ধীরে ধীরে স্থানান্তর হচ্ছে। একাধিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মতে, গত ৬-৮ মাস ধরে চীনের হারানো অর্ডার ধীরে ধীরে বাংলাদেশে আসছে। বিশেষ করে কম মূল্যের পোশাকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে।

তুসুকা গ্রুপের চেয়ারম্যান আরশাদ জামাল জানান, সেপ্টেম্বর থেকে গ্রীষ্মকালীন পোশাকের অর্ডার আসতে শুরু করবে। তিনি বলেন, "আমরা তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে আছি। শুধু মার্কিন নয়, ইউরোপীয় ক্রেতারাও বাড়তি অর্ডার দিচ্ছেন।"

ভবিষ্যতে এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান আরও মজবুত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, "চীন থেকে স্থানান্তরিত অর্ডার বাংলাদেশে আসছে এবং এই ধারা চলতে থাকলে আমাদের ব্যবসায় ভালো সম্ভাবনা তৈরি হবে। তবে আমরা সদস্যদের মার্কিন ক্রেতাদের সঙ্গে শুল্ক ভাগাভাগি না করার নির্দেশনা দিয়েছি।"

ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের রপ্তানিও এ সময় বেড়েছে। ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি হয়েছে ২২৬ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি ১৮ শতাংশ। ভারত রপ্তানি করেছে ২৮৪ কোটি ডলারের পোশাক, প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ।

সামগ্রিকভাবে, যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে তৈরি পোশাক আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৮ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৭৬ শতাংশ বেশি। এই বৃদ্ধির পেছনে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

/আশিক


দক্ষিণ কোরিয়ার বড় বিনিয়োগ মোংলায়, ৮২০ কর্মসংস্থানের সুযোগ

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৭ ০৮:৪০:০৯
দক্ষিণ কোরিয়ার বড় বিনিয়োগ মোংলায়, ৮২০ কর্মসংস্থানের সুযোগ
ছবি: সংগৃহীত

মোংলা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোনে (ইপিজেড) দক্ষিণ কোরিয়ার ওসিএফ কোম্পানি লিমিটেড ৮০ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগে একটি আধুনিক তাঁবু, তাঁবু অ্যাক্সেসরিজ, ক্যাম্পিং ফার্নিচার, ফার্নিচার অ্যাক্সেসরিজ ও ব্যাগ উৎপাদন কারখানা স্থাপন করতে যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত চুক্তি বুধবার (৬ আগস্ট) ঢাকায় বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) নির্বাহী দপ্তরে স্বাক্ষরিত হয়েছে।

চুক্তিতে বেপজার পক্ষে সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. আশরাফুল কবীর এবং ওসিএফ কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান হাইয়ুন গিল কিম স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানটি বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়।

বেপজার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নতুন কারখানায় তাঁবু, তাঁবু ও ফার্নিচার সংক্রান্ত বিভিন্ন অ্যাক্সেসরিজ, ক্যাম্পিং চেয়ার ও টেবিল, অ্যালুমিনিয়াম ও কার্বন উপকরণ, স্কি ও ট্রেকিং পোল, মাউন্টেন ও ওয়াকিং স্টিক, বেড কট, স্ট্যান্ড, পেট ফার্নিচার, অ্যারো এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ তৈরি করা হবে। এই প্রকল্প থেকে প্রায় ৮২০ জন বাংলাদেশি নাগরিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বলেন, বেপজা বৈচিত্র্যময় শিল্পোৎপাদনের জন্য সবসময় বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে আসছে। এটি ওসিএফ কোম্পানির বেপজার অধীনে দ্বিতীয় প্রকল্প হওয়ায় তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে আরও বেশি করে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে বেপজার ‘অ্যাম্বাসেডর’ হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

ওসিএফ কোম্পানির চেয়ারম্যান হাইয়ুন গিল কিম বলেন, বেপজার সহযোগিতায় তারা আগামী বছরের মধ্যেই নতুন কারখানায় উৎপাদন শুরু করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বেপজার অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

-রাফসান


গ্যাস ও গবেষণায় বড় সিদ্ধান্ত: ৫০ হাজার মেট্রিক টন অকটেন আমদানি অনুমোদন

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৬ ২১:৫৪:৫৩
গ্যাস ও গবেষণায় বড় সিদ্ধান্ত: ৫০ হাজার মেট্রিক টন অকটেন আমদানি অনুমোদন
ছবি: সংগৃহীত

নিরাপদ গ্যাস মজুত ও সমুদ্র গবেষণায় বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দেশের বাড়তে থাকা জ্বালানি চাহিদা এবং সামুদ্রিক গবেষণার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় বুধবার (৬ আগস্ট) অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির ২৪তম সভায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

সভায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাবের ভিত্তিতে ২০২৫ সালের জন্য অতিরিক্ত ৫০ হাজার মেট্রিক টন অকটেন (গ্যাসোলিন ৯৫ আনলেডেড) আমদানির নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পর্ব-২)’-এর আওতায় কয়েকটি সরঞ্জাম কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—একটি ছোট গবেষণা জাহাজ, দুটি স্পিডবোট, একটি পন্টুন জেটি ও গ্যাংওয়ে। এসব সরঞ্জাম খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড থেকে আন্তর্জাতিক সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (DPM) কেনা হবে।

সভায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের আওতায় ভারতের অংশে রোপওয়ে নির্মাণে ডিপিএম পদ্ধতিতে প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটির নাম—‘কনভারসন অব ওয়েট প্রসেস টু ড্রাই প্রসেস অব সিসিসিএল’।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবও সভায় অনুমোদন পেয়েছে। সেখানে ২০০৮ সালের সরকারি ক্রয় বিধিমালার ৮৩(১)(ক) ধারা অনুযায়ী ৪ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের সময়সীমা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক দরপত্র পদ্ধতির মাধ্যমে এই চাল সংগ্রহ করা হবে।

সব মিলিয়ে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা, গবেষণা ও খাদ্য মজুত পরিস্থিতি জোরদারে এ সিদ্ধান্তগুলোকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

/আশিক


প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে আবার চাঙা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৬ ১৯:৪৪:১০
প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে আবার চাঙা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার
ছবি: সংগৃহীত

চলতি আগস্ট মাসের শুরুতেই বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক ধারা দেখা যাচ্ছে। মাসের প্রথম পাঁচ দিনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ হয়েছে ৩২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ৪ হাজার এক কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে হিসাব)।

এই তথ্য দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান। তিনি জানান, আগস্টের প্রথম ৫ দিনে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। ২০২৪ সালের আগস্টে প্রথম পাঁচ দিনে এসেছিল ১৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। সে তুলনায় এবার বেড়েছে ১৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার, অর্থাৎ প্রায় ১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নতুন অর্থবছর ২০২৫-২৬ এর জুলাই মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ১০ হাজার ডলার, অর্থাৎ প্রায় ২ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। টাকায় এর পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। তবে এই সময় ৮টি ব্যাংক কোনো রেমিট্যান্স আনতে পারেনি।

বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রেমিট্যান্স প্রবাহের দিকেও নজর দেওয়া যাক—

জুলাই: ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার

আগস্ট: ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার

সেপ্টেম্বর: ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ডলার

অক্টোবর: ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার

নভেম্বর: ২২০ কোটি ডলার

ডিসেম্বর: ২৬৪ কোটি ডলার

জানুয়ারি: ২১৯ কোটি ডলার

ফেব্রুয়ারি: ২৫৩ কোটি ডলার

মার্চ: ৩২৯ কোটি ডলার

এপ্রিল: ২৭৫ কোটি ডলার

মে: ২৯৭ কোটি ডলার

জুন: ২৮২ কোটি ডলার

২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে মার্চ মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে— ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। পুরো অর্থবছরজুড়ে (জুলাই থেকে জুন) দেশে এসেছে মোট ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।

বিশ্লেষকদের মতে, নতুন অর্থবছরের শুরুতেই রেমিট্যান্স প্রবাহে এই বৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করছে।

/আশিক


ব্যাংক খাত লুটপাটের নজিরবিহীন চিত্র তুলে ধরলেন উপদেষ্টা’—সালেহউদ্দিন

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৬ ১৪:১৯:৪০
ব্যাংক খাত লুটপাটের নজিরবিহীন চিত্র তুলে ধরলেন উপদেষ্টা’—সালেহউদ্দিন
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই দেশের অর্থনীতিতে যতটা সম্ভব সংস্কার বাস্তবায়নের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

বুধবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক স্টাফ কলেজে আয়োজিত এক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. সালেহউদ্দিন বলেন, “গতকাল নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় ঘোষণা করা হয়েছে। এখন আমাদের হাতে সময় খুবই কম। আমরা অল্প সময়েই চলে যাব। তাই এই সময়ের মধ্যে যতটা সম্ভব অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়ন করব। যেগুলো করার মতো, সেগুলো শুরু করে যাব।”

সংস্কারকে চলমান একটি প্রক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করে উপদেষ্টা আরও বলেন, “সংস্কার কোনো এককালীন বিষয় নয়। এটি চলতে থাকে। আমার জীবন যেমন থেমে নেই, সংস্কারও তেমনি থেমে থাকে না। আমরা কিছু কার্যক্রম শুরু করব, ভবিষ্যতে তা আরও এগিয়ে নেওয়া যাবে।”

আলোচনায় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেন ড. সালেহউদ্দিন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আমার ছাত্র ছিল। সে বলেছে, আমি আইএমএফে কাজ করেছি, ১০০ দেশের অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু পৃথিবীর কোনো দেশে দেখিনি, যেখানে ৮০ শতাংশ ঋণের টাকা একবারে তুলে নেওয়া হয়েছে।”

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “একটি ব্যাংকে যদি ২০ হাজার কোটি টাকা থাকে, তাহলে তার মধ্যে ১৬ হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এখানে তো আমাদের সবারই টাকা থাকে—আপনারও, আমারও।”

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহিদ হোসাইন। এতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেকও উপস্থিত ছিলেন।

/আশিক


৬ আগস্ট ২০২৫, বাংলাদেশি টাকায় আজকের আন্তর্জাতিক মুদ্রার রেট

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৬ ১০:৩৩:২০
৬ আগস্ট ২০২৫, বাংলাদেশি টাকায় আজকের আন্তর্জাতিক মুদ্রার রেট

বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ও প্রবাসী আয়ের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারের পরিবর্তন। আজ ৬ আগস্ট ২০২৫, বুধবার, দেশের ব্যাংকগুলো প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মুদ্রার সাথে বাংলাদেশি টাকার হালনাগাদ বিনিময় হার। দেখা যাচ্ছে, মার্কিন ডলার, ব্রিটিশ পাউন্ড ও ইউরোর মতো প্রধান মুদ্রাগুলোর বিপরীতে টাকার মান উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। এতে করে দেশের আমদানি ব্যয় যেমন বাড়বে, তেমনি প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন রেমিট্যান্স প্রেরকরা।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ এসব মিলিয়েই টাকার মানে এ অবনতি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যথাসময়ে হস্তক্ষেপ না করলে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তবে রপ্তানিমুখী খাত ও প্রবাসী আয় থেকে সুবিধা নিতে এই দিকটি ইতিবাচক হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।

আজকের হালনাগাদ বিনিময় হার (৳):

মুদ্রা বর্তমান রেট (৳)

USD (মার্কিন ডলার) ১২১.৪২

GBP (ব্রিটিশ পাউন্ড) ১৬২.৩১

EUR (ইউরো) ১৪০.৩০

CAD (কানাডিয়ান ডলার) ৮৭.৯৫

AUD (অস্ট্রেলিয়ান ডলার) ৭৮.৫৫

CNY (চাইনিজ ইউয়ান) ১৬.৪৭

INR (ভারতীয় রুপি) ১.৩৮

SAR (সৌদি রিয়াল) ৩২.৩৮

AED (দুবাই দিরহাম) ৩৩.০৭

QAR (কাতারি রিয়াল) ৩৩.২৮

KWD (কুয়েতি দিনার) ৩৯৭.৪০

OMR (ওমানি রিয়াল) ৩১৫.৩৮

BHD (বাহরাইনি দিনার) ৩২২.২২

SGD (সিঙ্গাপুর ডলার) ৯৪.৩২

MYR (মালয়েশিয়ান রিংগিত) ২৮.৬৭

JPY (জাপানি ইয়েন) ০.৭৬

KRW (দক্ষিণ কোরিয়ান ওন) ০.০৯

TRY (তুর্কি লিরা) ২.৯৮

ZAR (দক্ষিণ আফ্রিকান র‍্যান্ড) ৬.৭২

MVR (মালদ্বীপ রুপি) ৭.৮৩

IQD (ইরাকি দিনার) ০.০৯

LYD (লিবিয়ান দিনার) ২২.২৭

BND (ব্রুনাই ডলার) ৯৪.৩০


বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে অর্থনীতির পুনর্জাগরণের নতুন সূচনা

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৬ ০৮:৪৭:৫৯
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে অর্থনীতির পুনর্জাগরণের নতুন সূচনা
ছবিঃ সংগৃহীত

বহুদিন পর বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক একটি বার্তা পাওয়া গেছে। দীর্ঘ চার বছরের অপেক্ষার পর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষে বৈদেশিক লেনদেনে ৩২৯ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত হয়েছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কেবলমাত্র পরিসংখ্যানের বিষয় নয়, বরং কঠোর অর্থনৈতিক নীতি, প্রবাসী আয় উৎসাহিতকরণ এবং বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে ডলার সংগ্রহের এক যৌথ সফলতা। যদিও শিল্প খাতে কাঁচামালের সংকট এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিদ্যমান।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত বছর যেখানে বৈদেশিক লেনদেনে ৪৩০ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল, সেখানে এবার তা বদলে ৩২৯ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল ৮২২ কোটি ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ সালের পর প্রথমবারের মতো এমন ইতিবাচক ভারসাম্য তৈরি হলো। বাণিজ্য ঘাটতি কমে এসেছে ২২৪৩ কোটি ডলার থেকে ২০৪৫ কোটি ডলারে, যা রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানি নিয়ন্ত্রণের ফলে সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসীরা পাঠানো রেমিট্যান্স বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০৩৩ কোটি ডলারে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৬.৮২ শতাংশ বেশি। সরকারের হুন্ডি প্রতিরোধের পদক্ষেপ এবং বৈধ অর্থপ্রবাহ নিশ্চিত করার উদ্যোগের প্রভাব এখানে স্পষ্ট।

গত সরকারের সময় এলসি জালিয়াতি, পাচার ও দুর্নীতির ঘটনার তদন্ত চলছে, এবং সরকারের কঠোর পদক্ষেপে এখন এক পণ্যের নামে এলসি খুলে অন্য পণ্য আনার সুযোগ সীমিত করা হয়েছে। ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ প্রেরণাতেও কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হয়েছে, যার ফলে বৈদেশিক লেনদেন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও আস্থা ফিরে এসেছে। এছাড়া, জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩১.৭৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা গত ২৮ মাসে সর্বোচ্চ। বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু রাখায় ডলারের দর নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং আমদানিকারকদের জন্য ডলারের দাম কমার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

-রফিক

পাঠকের মতামত: