ছয় বছর পর ড্যাবের ভোটযুদ্ধ আজ, চিকিৎসক মহলে উত্তেজনা

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৯ ০৮:১৯:২৫
ছয় বছর পর ড্যাবের ভোটযুদ্ধ আজ, চিকিৎসক মহলে উত্তেজনা
ছবি: সংগৃহীত

বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ছয় বছরেরও বেশি সময় পর আজ শনিবার আয়োজন করছে তাদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল। রাজধানীর কাকরাইলের উইলস লিটন ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবে নতুন নেতৃত্ব। ভোট আয়োজনের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিজন কান্তি সরকার জানান, কাউন্সিলের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে এবং নির্ধারিত সময়ে ভোট শুরু হবে। এবারের নির্বাচন হবে পাঁচটি পদে—সভাপতি, মহাসচিব, সিনিয়র সহসভাপতি, কোষাধ্যক্ষ এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। মোট ভোটার সংখ্যা তিন হাজার ১৩১ জন।

ভোটে মুখোমুখি হচ্ছে দুটি প্রধান প্যানেল—হারুন-শাকিল ও আজিজ-শাকুর। হারুন-শাকিল প্যানেল ২০১৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ড্যাবের নেতৃত্বে ছিল, যেখানে সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক ডা. হারুনুর রশীদ। অপরদিকে, আজিজ-শাকুর প্যানেলের নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক একেএম আজিজুল হক, যিনি ২০০৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সংগঠনের সভাপতি ছিলেন।

হারুন প্যানেলে মহাসচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, সিনিয়র সহসভাপতি পদে ডা. আবুল কেনান, কোষাধ্যক্ষ পদে ডা. মো. মেহেদী হাসান এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে ডা. একেএম খালেকুজ্জামান দিপু।

অন্যদিকে, আজিজ প্যানেলে মহাসচিব পদে আছেন অধ্যাপক আব্দুস শাকুর খান, সিনিয়র সহসভাপতি পদে ডা. সাইফ উদ্দিন নিসার আহমেদ তুষার, কোষাধ্যক্ষ পদে ডা. তৌহিদ উল ইসলাম এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে ডা. আবু মো. আহসান ফিরোজ।

দুই বড় প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ডা. ওবায়দুল কবির।

উল্লেখযোগ্যভাবে, সর্বশেষ ড্যাব নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালের ২৪ মে, যেখানে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন ডা. হারুনুর রশীদ এবং মহাসচিব হয়েছিলেন ডা. আব্দুস সালাম। গত বছর কমিটির মেয়াদ শেষ হলে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করা হয়, যা দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের সুযোগ তৈরি করেছে।

-রাফসান


মিটফোর্ড সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় ভেজাল ওষুধের সাম্রাজ্য

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৭ ০৮:৩৮:৪০
মিটফোর্ড সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় ভেজাল ওষুধের সাম্রাজ্য
ছবি: সংগৃহীত

ভেজাল ও নকল ওষুধ সেবনে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন— এমন তথ্য সামনে আসার পর দেশজুড়ে শুরু হয়েছে উদ্বেগ ও সমালোচনা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এসব ওষুধ দীর্ঘমেয়াদে কিডনি বিকল, ক্যানসারসহ নানা রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এমনকি এসব ওষুধ মৃত্যুর কারণও হয়ে উঠছে বলে তারা সতর্ক করেছেন।

সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত দুইটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ভেজাল ওষুধ এবং অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারের ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়। এর পর বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসক মহল, ওষুধ ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।

বিশেষ করে রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড ওষুধ মার্কেটকে ঘিরে এক শক্তিশালী সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব উঠে এসেছে। একাধিক ওষুধ ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, এই সিন্ডিকেট শতাধিক সদস্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। এসব ওষুধ সারা দেশের দোকানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। গ্রামাঞ্চলে এসব ওষুধের প্রভাব সবচেয়ে বেশি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রাক্তন ব্যবসায়ী জানান, তিনি ২০ বছর মিটফোর্ডে ব্যবসা করেছেন। কিন্তু ভেজাল ওষুধ বিক্রির জন্য সমিতির চাপে পড়ে একপর্যায়ে দোকান গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, অনেক ওষুধ ব্যবসায়ী, এমনকি সমিতির কিছু নেতাও মাসোহারা নিয়ে এই অপরাধে জড়িত। বিশেষ করে ইনসুলিন ও অ্যান্টিবায়োটিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ নকল করে বাজারে ছাড়ছে তারা।

মিটফোর্ড থেকে পরিচালিত এসব কার্যক্রম বন্ধে মাঝে মধ্যে মোবাইল কোর্ট অভিযান চালালেও কার্যকর কোনো পরিবর্তন হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিপুল ভেজাল ওষুধ জব্দ করলেও বাজারজাত বন্ধ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, কিছু অসাধু ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও এসব সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত।

আশির দশকে ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে ২ হাজারের বেশি শিশু মারা যাওয়ার স্মৃতি এখনো জাতির মনে গাঁথা। কিন্তু সেই ভয়াবহ ঘটনার পরও আজ পর্যন্ত এ বিষয়ে কার্যকর নজরদারি গড়ে ওঠেনি।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি এবং ভেজাল ওষুধ সেবন নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান শাস্তির ব্যবস্থা ছাড়া কোনো স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।

কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশীদ বলেন, হঠাৎ বা দীর্ঘমেয়াদে কিডনি বিকলের অন্যতম কারণ এই ভেজাল ওষুধ। তিনি এসব ওষুধ বিক্রেতার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. শফি আহমেদ মোয়াজও একই কথা বলেন। তিনি মনে করেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ হলে ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

এক ক্যানসার বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রতিদিন কত মানুষ ভেজাল ওষুধ খেয়ে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রশাসনের কাছে নেই। এ বিষয়ে মনিটরিং ব্যবস্থার ঘাটতি রয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

ঢাকা শ্যামলীর যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ হাসপাতালের প্রধান উপপরিচালক ডা. আয়েশা বেগম বলেন, এসব ওষুধে রোগীরা জটিলতায় ভুগছেন, অথচ বাজারজাত বন্ধে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেই।

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এমএন হুদা বলেন, চুলকানি, দাদ ও খোসপাঁচড়ার মতো রোগেও ভেজাল ওষুধের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। আমদানি করা প্রতিটি ওষুধ পরীক্ষার পরই বাজারজাত অনুমতি নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন তিনি।

সাবেক ম্যাজিস্ট্রেট রোকন উদ-দৌলাহ মনে করেন, ভেজাল ওষুধ জব্দের পর তাৎক্ষণিক পরীক্ষার মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে এই নৈরাজ্য অনেকটাই ঠেকানো সম্ভব।

/আশিক


মানসিক রোগ সম্পর্কে সচেতন হোন, চিনে নিন লক্ষণ ও প্রকারভেদ

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৬ ১১:২৪:৪২
মানসিক রোগ সম্পর্কে সচেতন হোন, চিনে নিন লক্ষণ ও প্রকারভেদ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, মানসিক রোগগুলি হলো এমন অবস্থা যা কোনো ব্যক্তির চিন্তা, আবেগ নিয়ন্ত্রণ বা আচরণে উল্লেখযোগ্য ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এবং সাধারণত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অসুবিধা বা যন্ত্রণার কারণ হয়। মানসিক রোগ বা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। ২০১৯ সালে বিশ্বের ৯৭০ মিলিয়ন মানুষ বা প্রতি আটজনের মধ্যে একজন মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিল, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল উদ্বেগ ও বিষণ্নতা জনিত সমস্যা। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০২০ সালে উদ্বেগ ও বিষণ্নতা জনিত রোগের সংখ্যা যথাক্রমে ২৬% ও ২৮% বেড়ে গিয়েছিল। যদিও মানসিক রোগের জন্য কার্যকর প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা বিদ্যমান, অধিকাংশ রোগী যথাযথ সেবা থেকে বঞ্চিত থাকেন এবং তারা সামাজিক কলঙ্ক, বৈষম্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সম্মুখীন হন।

মানসিক রোগের বিভিন্ন প্রকার

উদ্বেগজনিত রোগসমূহ

২০১৯ সালে প্রায় ৩০১ মিলিয়ন মানুষ উদ্বেগজনিত রোগে ভুগছিলেন, যার মধ্যে ছিল ৫৮ মিলিয়ন শিশু ও কিশোর। উদ্বেগজনিত রোগে অতিরিক্ত ভয়, চিন্তা ও আচরণগত ব্যাঘাত থাকে যা ব্যক্তি জীবনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে। সাধারণ উদ্বেগ, প্যানিক অ্যাটাক, সামাজিক উদ্বেগ, বিচ্ছেদের উদ্বেগসহ বিভিন্ন ধরণের উদ্বেগজনিত রোগ রয়েছে। এসব রোগের জন্য মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা এবং প্রয়োজনে ঔষধ ব্যবহার করা হয়।

বিষণ্নতা (ডিপ্রেশন)

২০১৯ সালে ২৮০ মিলিয়ন মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছিলেন, যাদের মধ্যে ছিল ২৩ মিলিয়ন শিশু ও কিশোর। বিষণ্নতা সাধারণ মেজাজের ওঠানামার চেয়ে ভিন্ন, এটি দীর্ঘস্থায়ী এবং ব্যক্তি অধিকাংশ সময় দুঃখী, বিরক্ত বা অবসন্ন বোধ করে। অন্য লক্ষণগুলোর মধ্যে মনোযোগের অভাব, অপরাধবোধ, ভবিষ্যতের প্রতি হতাশা, আত্মহত্যার চিন্তা, ঘুম বা খাওয়ার অভ্যাসের পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত ক্লান্তি অন্তর্ভুক্ত। বিষণ্নতা আক্রান্তদের আত্মহত্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে চিকিৎসা ও ঔষধের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

বাইপোলার ডিজঅর্ডার

২০১৯ সালে ৪০ মিলিয়ন মানুষ বাইপোলার ডিজঅর্ডারে ভুগছিলেন। এই রোগে রোগী মনের অবস্থা পরিবর্তিত হয়, কখনো বিষণ্নতায় ডুবে যান আবার কখনো অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস বা রেগে যাওয়ার মতো ম্যানিক অবস্থায় চলে যান। ম্যানিক পর্যায়ে অতিরিক্ত কথা বলা, ঘুমের অভাব, আত্মবিশ্বাসের অতিরিক্ত বর্ধন, অস্থিরতা ও বেপরোয়া আচরণ দেখা যায়। বাইপোলার রোগীদেরও আত্মহত্যার ঝুঁকি বেশি থাকে। চিকিৎসায় মনস্তাত্ত্বিক শিক্ষাদান, চাপ কমানো, সামাজিক কার্যকলাপ বাড়ানো এবং ঔষধ অন্তর্ভুক্ত।

পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি)

যুদ্ধ ও সংঘর্ষ এলাকার মানুষের মধ্যে পিটিএসডি’র প্রাদুর্ভাব বেশি। কোনো ভয়াবহ বা আতঙ্কজনক ঘটনা পরবর্তী সময়ে এটি বিকাশ লাভ করে। এর লক্ষণগুলোর মধ্যে ঘটনার পুনরাবৃত্তি স্মৃতি, মেমরি এড়ানো, এবং বর্তমানেও হঠাৎ আতঙ্ক অনুভব অন্তর্ভুক্ত। দীর্ঘস্থায়ী এই অবস্থায় ব্যক্তি সামাজিক ও শারীরিক জীবনে সমস্যায় পড়ে। কার্যকর মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা রয়েছে।

সিজোফ্রেনিয়া

বিশ্বব্যাপী প্রায় ২৪ মিলিয়ন মানুষ সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত, যার জীবনকাল সাধারণ মানুষের চেয়ে ১০-২০ বছর কম। রোগীদের বোধের ভারসাম্যহীনতা, বিভ্রান্তিকর ধারনা, দৃষ্টিভ্রম, অগোছালো চিন্তা ও আচরণ লক্ষ্য করা যায়। জ্ঞানীয় দক্ষতা হ্রাস পেতে পারে। ঔষধ, পরিবারের সহায়তা ও পুনর্বাসন চিকিৎসায় উন্নতি সম্ভব।

খাদ্যাভাসজনিত রোগ

২০১৯ সালে ১৪ মিলিয়ন মানুষ খাদ্যাভাসজনিত রোগে ভুগছিলেন, যার মধ্যে ছিল প্রায় ৩ মিলিয়ন শিশু ও কিশোর। এগুলো হলো অ্যানোরেক্সিয়া নেরোভসা, বুলিমিয়া নেরোভসা ইত্যাদি। রোগীরা খাবারের প্রতি অস্বাভাবিক দৃষ্টি ও শরীরের ওজন নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন থাকেন। গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও মানসিক যন্ত্রণা সৃষ্টি করে। পারিবারিক ও মনস্তাত্ত্বিক থেরাপি কার্যকর।

বিঘ্নকারী আচরণ ও সামাজিক ব্যাধি

২০১৯ সালে ৪০ মিলিয়ন মানুষ, যার মধ্যে অনেক শিশু ও কিশোর, কনডাক্ট ডিজঅর্ডার বা সামাজিক ব্যাধিতে ভুগছিলেন। এই রোগে ব্যক্তি অন্যের অধিকার বা সামাজিক নিয়ম-কানুন লঙ্ঘন করে চলেন। চিকিৎসায় পারিবারিক ও শিক্ষাগত সহায়তা, সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি ও মনস্তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

স্নায়ুবিকাশজনিত রোগ

এই রোগগুলো বুদ্ধিবৃত্তিক, ভাষাগত, চলাচল ও সামাজিক দক্ষতায় দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি করে। অটিজম, এডিএইচডি, বুদ্ধিমত্তার বিকাশজনিত ব্যাধি এগুলোর অন্তর্ভুক্ত। শিশুকাল থেকেই লক্ষণ দেখা যায়। মনস্তাত্ত্বিক ও চিকিৎসা পদ্ধতি, অকুপেশনাল থেরাপি, ভাষা থেরাপি এবং প্রয়োজনে ঔষধ ব্যবহৃত হয়।

ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিরা

অধিকাংশ মানুষ মানসিক রোগের ঝুঁকি কম হলেও দারিদ্র্য, সহিংসতা, প্রতিবন্ধকতা ও বৈষম্যের মতো বিরূপ পরিবেশে যারা বসবাস করে, তাদের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ব্যক্তিগত ও জেনেটিক কারণও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও সামাজিক সহায়তা

বিশ্বব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম নয়, এবং প্রাপ্ত সেবার মান অনেক ক্ষেত্রে দুর্বল। উদাহরণস্বরূপ, মাত্র ২৯% সিজোফ্রেনিয়া রোগী এবং এক তৃতীয়াংশ বিষণ্নতা রোগীই যথাযথ চিকিৎসা পান। সামাজিক, শিক্ষাগত, কর্মসংস্থান, বাসস্থান ও পারিবারিক সহায়তাও অপরিহার্য।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পদক্ষেপ

ডব্লিউএইচওর মানসিক স্বাস্থ্য কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২০৩০ সালের মধ্যে চারটি প্রধান উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে:১. মানসিক স্বাস্থ্য নীতি ও নেতৃত্ব শক্তিশালীকরণ;২. সমন্বিত, সম্প্রদায়ভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান;৩. মানসিক স্বাস্থ্য প্রচার ও প্রতিরোধ কৌশল বাস্তবায়ন;৪. তথ্য ব্যবস্থা, গবেষণা ও প্রমাণভিত্তিক নীতি উন্নয়ন।

ডব্লিউএইচওর ‘মেন্টাল হেলথ গ্যাপ অ্যাকশন প্রোগ্রাম (mhGAP)’ মূলত দরিদ্র দেশগুলিতে অ-বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম সরবরাহ করে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার বিস্তার ঘটায়। এর মাধ্যমে চিকিৎসা প্রণালী এবং রোগ নির্ণয়ে কার্যকর সমাধান প্রদান করা হয়।


ট্রাম্প প্রশাসনের নাটকীয় ঘোষণা: বাতিল ২২টি mRNA ভ্যাকসিন প্রকল্প

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৬ ১১:২১:৩০
ট্রাম্প প্রশাসনের নাটকীয় ঘোষণা: বাতিল ২২টি mRNA ভ্যাকসিন প্রকল্প
ছবিঃ সংগৃহীত

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যনীতিতে নাটকীয় রদবদলের ঘোষণা দিয়েছে। মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অধীনে স্বাস্থ্য সচিব রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র এক বিবৃতিতে জানান, mRNA প্রযুক্তিনির্ভর ২২টি ভ্যাকসিন প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি প্রাণ রক্ষাকারী কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের সেই প্রযুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে এবার প্রকাশ্যেই প্রশ্ন তুলল হোয়াইট হাউস।

মার্কিন স্বাস্থ্য বিভাগ (HHS) জানিয়েছে, BARDA (Biomedical Advanced Research and Development Authority) কর্তৃক পরিচালিত এসব প্রকল্পের মোট মূল্য প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার। বাতিলকৃত প্রকল্পগুলোর মধ্যে মডার্নার বার্ড ফ্লু ভ্যাকসিনের গবেষণা ছাড়াও ফাইজার ও সানোফির একাধিক প্রকল্প এবং বিভিন্ন প্রাক-অনুমোদন চুক্তিও রয়েছে।

রবার্ট কেনেডি বলেন, "আমরা বিজ্ঞান বিশ্লেষণ করেছি, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ শুনেছি, তারপর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই ভ্যাকসিনগুলো উপরের শ্বাসনালীর সংক্রমণ—যেমন কোভিড কিংবা ইনফ্লুয়েঞ্জা—থেকে কার্যকরভাবে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ।" তাঁর মতে, "এখন সময় এসেছে mRNA প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে এমন নতুন ভ্যাকসিন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করার, যা ভাইরাসের পরিবর্তনশীলতা সত্ত্বেও দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর থেকে যায়।"

উল্লেখযোগ্য যে, রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র গত দুই দশক ধরে ভ্যাকসিনবিরোধী নানা বক্তব্য ও তত্ত্ব ছড়ানোর জন্য সমালোচিত। স্বাস্থ্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যাকসিন নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন। তিনি সরকারকে উপদেষ্টা দিচ্ছিলেন এমন একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেলকে বরখাস্ত করে নিজস্ব মতাদর্শ অনুসারে নতুন সদস্য নিয়োগ করেন। সেই নতুন প্যানেল প্রথম সভাতেই একটি দীর্ঘকাল ব্যবহৃত ও নিরাপদ প্রিজারভেটিভ নিষিদ্ধ করে, যেটিকে দীর্ঘদিন ধরে অ্যান্টি-ভ্যাকসিন আন্দোলন লক্ষ্যবস্তু করে আসছিল।

আরও চমকপ্রদভাবে, কেনেডির উদ্যোগে এক নতুন গবেষণাও চালু হয়েছে, যেখানে ভ্যাকসিন ও অটিজমের মধ্যে সম্পর্ক খোঁজার চেষ্টা করা হবে—যদিও এই তত্ত্ব দীর্ঘদিন আগে বৈজ্ঞানিকভাবে ভ্রান্ত হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

mRNA ভ্যাকসিন সাধারণ ভ্যাকসিনের মতো জীবাণুর দুর্বল বা নিষ্ক্রিয় সংস্করণ ব্যবহার না করে জিনগত বার্তা পাঠিয়ে কোষে এক ধরনের ‘ডামি’ ভাইরাস তৈরি করায়, যা ইমিউন সিস্টেমকে প্রকৃত জীবাণুর বিরুদ্ধে সুরক্ষা গড়ে তুলতে সহায়তা করে। এই প্রযুক্তি দীর্ঘ গবেষণার ফসল হলেও কোভিড মহামারিকালে ট্রাম্প প্রশাসনের অপারেশন ওয়ার্প স্পিড প্রকল্পের মাধ্যমে এর বাণিজ্যিক বাস্তবায়ন দ্রুত সম্ভব হয়। প্রযুক্তিটির জনক বলে খ্যাত কাতালিন কারিকো ও ড্রু ওয়েইসম্যান ২০২৩ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনেকের কাছেই বৈজ্ঞানিক প্রগতির বিরুদ্ধে এক বিপজ্জনক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও কেনেডি আশ্বাস দিয়েছেন, "HHS সব মার্কিন নাগরিকের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিনকে সমর্থন করে। কিন্তু এখন আমরা mRNA‑এর সীমা ছাড়িয়ে আরও ভালো সমাধানের দিকে এগোচ্ছি।"

-জাহাঙ্গীর কবির, নিজস্ব প্রতিবেদক


হার্টের রিং: তিন কোম্পানির ১০টি স্টেন্টের দাম কমালো সরকার

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৪ ১৯:৩২:০৪
হার্টের রিং: তিন কোম্পানির ১০টি স্টেন্টের দাম কমালো সরকার
হার্টের রিং

হার্টের রিংয়ের দাম কমালো সরকার, সর্বোচ্চ কমেছে ৩৬ শতাংশ

হৃদরোগীদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসা সামগ্রী করোনারি স্টেন্ট বা হার্টের রিংয়ের দাম কমিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এক প্রজ্ঞাপনে রোববার (৩ আগস্ট) এ তথ্য জানায়।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, তিনটি কোম্পানির ১০ ধরনের স্টেন্টের দাম নতুনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটিমাত্র স্টেন্টের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানভেদে প্রতি ইউনিট স্টেন্টের খুচরা মূল্য এখন সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে করে একেক ধরনের স্টেন্টে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে। সর্বোচ্চ কমেছে ৩৬ শতাংশ।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মো. আকতার হোসেন জানান, যেসব স্টেন্টের দাম কমানো হয়েছে সেগুলোর দাম আগে অনেক বেশি ছিল। সরকার নিয়ন্ত্রিত মূল্য নির্ধারণ কমিটি ধাপে ধাপে আরও কোম্পানির স্টেন্টের দাম পুনর্নির্ধারণ করবে। নতুন এই দাম আগামী সপ্তাহ থেকেই কার্যকর হবে।

মেডট্রনিক, অ্যাবোট ভাসকুলার এবং বস্টন সায়েন্টিফিক—এই তিন কোম্পানির আমদানিকৃত রিংগুলোর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, জীবনদায়ী এই চিকিৎসা সামগ্রীর ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট মূল্যনীতি থাকলে দাম অযাচিতভাবে বাড়ানো বা কমানো বন্ধ হবে। তবে তারা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন দামে স্টেন্ট সরবরাহ করবেন বলে জানান।

বাংলাদেশে হৃদরোগের চিকিৎসায় রিং পরানো একটি বহুল প্রচলিত পদ্ধতি। কারও হৃদপিণ্ডে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হলে চিকিৎসকরা অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি পদ্ধতির মাধ্যমে রিং স্থাপনের পরামর্শ দেন। এই পদ্ধতিতে সরু ক্যাথেটার দিয়ে ধমনীতে একটি ছোট জালাকৃতির স্টেন্ট স্থাপন করা হয়, যা রক্তনালী খোলা রাখে এবং হৃদপিণ্ডে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল নিশ্চিত করে।

বাংলাদেশে ব্যবহৃত স্টেন্ট বা রিং প্রায় সবই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, পোল্যান্ড, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত থেকে এসব রিং আসে। বিভিন্ন হাসপাতালে এসব রিংয়ের মূল্য তালিকা টানিয়ে রাখা হয় এবং রোগীর পছন্দ অনুযায়ী চিকিৎসক নির্দিষ্ট রিং প্রতিস্থাপন করেন।

/আশিক


'জুলাই সনদে স্বাস্থ্য সংস্কার অন্তর্ভুক্ত হোক': বিশিষ্টজনদের জোর দাবি

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৩ ১১:৩৬:৪৯
'জুলাই সনদে স্বাস্থ্য সংস্কার অন্তর্ভুক্ত হোক': বিশিষ্টজনদের জোর দাবি

দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি এক খোলা চিঠিতে দেশের স্বাস্থ্য খাতের গভীর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা জোর দিয়ে তুলে ধরেছেন স্বাস্থ্য খাত–সংশ্লিষ্ট ছয়জন খ্যাতিমান ব্যক্তি। তাঁরা চিঠিতে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান এবং এসব সুপারিশ জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আহ্বান জানান।

গতকাল শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে এই খোলা চিঠিটি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী বিশিষ্টজনেরা হলেন স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন, আবু মুহাম্মদ জাকির হোসেন, লিয়াকত আলী, নায়লা জামান খান, আজহারুল ইসলাম খান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ।

নেতৃত্বের নৈতিক দায় ও ঐতিহাসিক মুহূর্ত

খোলা চিঠিতে তাঁরা লেখেন, "ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে প্রধান উপদেষ্টা নেতৃত্বের যে গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন, তা শুধু প্রশাসনিক নয়, বরং গভীর নৈতিক দায়ও বহন করে।" তাঁরা আশা প্রকাশ করেন, এই অন্তর্বর্তী নেতৃত্ব দেশের শাসনব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং মানবিক করতে সক্ষম হবে।

স্বাস্থ্য খাত শুধু সেবা নয়, জাতীয় উন্নয়নের স্তম্ভ

চিঠিতে স্বাস্থ্য খাতকে কেবল একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়, বরং জাতীয় উন্নয়নের মৌলিক স্তম্ভ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। তারা বলেন, “স্বাস্থ্যখাত মানবসম্পদের বিকাশ, সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সম–অধিকার নিশ্চিতকরণের অন্যতম ভিত্তি। একটি কার্যকর, ন্যায়ভিত্তিক ও টেকসই স্বাস্থ্যব্যবস্থা ছাড়া জাতীয় উন্নয়নের কল্পনাও করা যায় না।”

সাফল্য ও সংকটের সহাবস্থান

বিশিষ্টজনেরা স্বীকার করেন যে, গত কয়েক দশকে স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের কিছু উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁরা সতর্ক করে বলেন, কাঠামোগত দুর্বলতা, শাসন ব্যবস্থার বিচ্যুতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতার অভাব দেশের এই অগ্রযাত্রাকে বারবার প্রতিহত করেছে। ফলে মৌলিক ও টেকসই রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

সুপারিশ বাস্তবায়ন: ভবিষ্যতের রূপরেখা

খোলাচিঠিতে বলা হয়, "স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো কেবল সেবার সম্প্রসারণ বা মানোন্নয়নের দিকনির্দেশনা নয়— এগুলো একটি সুসংহত রূপান্তর পরিকল্পনার রূপরেখা।" তাঁরা মনে করেন, এই সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন, প্রশাসনিক জবাবদিহির কাঠামো এবং স্বাস্থ্যখাতের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব।

বিশিষ্টজনেরা জোর দিয়ে বলেন, যদি এই সুপারিশগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে তা কেবল নথিতে সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। কিন্তু যদি এগুলো জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তবে তা হবে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ—যা অতীতের ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি রোধ করে ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।

প্রস্তাবিত নীতিগত ও কাঠামোগত সংস্কার

চিঠিতে তিনটি প্রধান সংস্কারমূলক প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়:

  • স্বাধীন, গণজবাবদিহিমূলক এবং উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন স্বাস্থ্য কমিশন গঠন।
  • গ্রাম ও শহরে সবার জন্য বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা।
  • উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সমন্বয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের স্টিয়ারিং কমিটি গঠন।

তাঁরা বলেন, এসব প্রস্তাব ২০২৫ সালের মধ্যভাগে কার্যকরভাবে গ্রহণ করলে, ডিসেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় সরকারি আদেশ ও অধ্যাদেশ জারি করা সম্ভব হবে। এমনকি ২০২৬ সালের প্রথম প্রান্তিকে জনগণের সামনে কাঠামোগত রূপান্তরের দৃশ্যমান অগ্রগতি তুলে ধরা সম্ভব হবে।

এই খোলাচিঠি শুধুমাত্র স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের প্রতি একটি আহ্বান নয়, বরং এটি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের প্রতি এক দৃঢ় রাজনৈতিক ও নৈতিক প্রত্যাশার প্রতিফলন। যেখানে নেতৃত্বের কাছে অনুরোধ নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি অবকাশ সৃষ্টির আহ্বান জানানো হয়েছে।


'চলুন সহজভাবে বুঝি': হেপাটাইটিস সম্পর্কে সচেতনতার নতুন বার্তা

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ৩১ ২২:২৬:০৯
'চলুন সহজভাবে বুঝি': হেপাটাইটিস সম্পর্কে সচেতনতার নতুন বার্তা
ছবি: ফ্রিপিক

হেপাটাইটিস প্রতিরোধে জাতীয় ঐক্য দরকার: বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস ২০২৫

প্রতিবছরের মতো ২৮ জুলাই বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস’। হেপাটাইটিস রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো, দ্রুত পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্সের সদস্য দেশগুলো যৌথভাবে দিবসটি পালন করছে।

২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য—‘চলুন সহজভাবে বুঝি’ (Let’s Break It Down)—এই থিমের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সহজ ভাষায় হেপাটাইটিস সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে দিবসটি উপলক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এক বাণীতে বলেন, হেপাটাইটিস নির্মূলে ২০৩০ সালের লক্ষ্য অর্জনে সরকারের পাশাপাশি নাগরিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ সারা দেশে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

কী এই হেপাটাইটিস?

হেপাটাইটিস হলো লিভারের প্রদাহজনিত রোগ, যা মূলত ভাইরাসজনিত। হেপাটাইটিসের পাঁচটি ধরন রয়েছে—A, B, C, D ও E। এসব ভাইরাস থেকে তাৎক্ষণিক বা দীর্ঘমেয়াদে লিভার সিরোসিস, ক্যানসার ও এমনকি লিভার ফেইলিউর পর্যন্ত হতে পারে। বর্তমানে এটি বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রাণঘাতী সংক্রামক ভাইরাস। প্রতিবছর ২২ লাখ মানুষ নতুনভাবে আক্রান্ত হন এবং প্রায় ১০ লাখ মানুষ প্রাণ হারান।

বাংলাদেশের বাস্তবতা

বাংলাদেশে পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক।

হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ৪.৪% মানুষ, আর সি ভাইরাসে আক্রান্ত ০.৬৬%।

দেশে ৯০ লাখ থেকে ১ কোটির বেশি মানুষ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস বহন করছেন।

প্রতিবছর ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে হেপাটাইটিসজনিত জটিলতায়।

লিভার ক্যানসার দেশে ক্যানসারজনিত মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ, যার মূল উৎস হেপাটাইটিস বি ও সি।

কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?

হেপাটাইটিস A ও E প্রতিরোধে:

নিরাপদ পানি ও খাদ্য নিশ্চিত করা

স্বাস্থ্যবিধি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত

হেপাটাইটিস A টিকা গ্রহণ

গর্ভবতী নারীদের জন্য বিশেষ সতর্কতা

হেপাটাইটিস B ও C প্রতিরোধে:

রক্ত গ্রহণের আগে সঠিক স্ক্রিনিং

পুনঃব্যবহারযোগ্য সুচ, সিরিঞ্জ নিষিদ্ধ

ব্যক্তিগত জিনিস ভাগাভাগি না করা

নিরাপদ যৌন আচরণ

আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত বা অঙ্গ দান নিষিদ্ধ

নিয়ন্ত্রণের কৌশল

সবার জন্য টিকা ও পরীক্ষা সহজলভ্য করা

গর্ভকালীন পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা

নবজাতকের জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টিকা নিশ্চিত করা

স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ

ওষুধের দাম নাগালের মধ্যে আনা

কুসংস্কার ও বৈষম্য দূর করা

তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সচেতনতা ছড়ানো

গ্রামাঞ্চলে বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন

বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ মানুষ গ্রামে বসবাস করেন। অথচ গ্রামাঞ্চলে এখনো হেপাটাইটিস পরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবা তেমন পৌঁছেনি।

৬২% গর্ভবতী নারী গ্রামে থাকলেও, অনেকেই প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন ও পরীক্ষা পান না।

কুসংস্কার ও তথ্যের অভাবে তাঁরা ঝুঁকিতে।

স্বাস্থ্যসেবার বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি, যেন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সেবা পৌঁছে যায়।

২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস নির্মূলের রোডম্যাপ

প্রতিটি নবজাতকের জন্য বার্থডোজ নিশ্চিত

সম্মিলিত সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ

পরীক্ষা, চিকিৎসা ও টিকা সহজলভ্য করা

পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ সহায়তা

জাতীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও নজরদারি

হেপাটাইটিস প্রতিরোধযোগ্য রোগ। প্রয়োজন শুধু সময়মতো সচেতনতা, পরীক্ষা ও চিকিৎসা। আসুন, সব বাধা দূর করে গড়ি একটি হেপাটাইটিসমুক্ত বাংলাদেশ।


জানুন লবণের অতিরিক্ত ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ৩১ ১৬:১২:০৩
জানুন লবণের অতিরিক্ত ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক
ছবিঃ সংগৃহীত

রান্নাঘর ও ডাইনিং টেবিলে লবণ প্রায়শই এক অপরিহার্য উপাদান হিসেবে দেখা যায়। তবে এই সাধারণ উপাদানটির অতিরিক্ত ব্যবহার স্বাদের জন্য যতটা প্রিয়, তার থেকে অনেক বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে মানবদেহে। হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ লবণের মূল উপাদান হলো ৪০ শতাংশ সোডিয়াম এবং ৬০ শতাংশ ক্লোরাইড। এর মধ্যে সোডিয়ামই প্রধান কারণ যা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা তৈরি করে এবং দীর্ঘমেয়াদে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।

অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ক্ষতিকর প্রভাব এড়াতে চিকিৎসকরা বিভিন্ন বিকল্প সমাধান প্রস্তাব করেন। পুষ্টিবিদ আস্থুল জৈব ভারতীয় পরামর্শ দেন লো-সোডিয়াম লবণের ব্যবহার, যা স্বাদ বজায় রেখে শরীরকে সোডিয়ামের অতিরিক্ত প্রভাব থেকে রক্ষা করে। লো-সোডিয়াম লবণে থাকে পটাশিয়াম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

রান্নায়ও লবণের পরিবর্তে ফ্রেশ ফল, সবজি, মাছ-মাংসের মতো প্রাকৃতিক খাবার বেশি ব্যবহার করতে উৎসাহ দেওয়া হয়। মশলা, লেবুর রস বা ভিনেগার ব্যবহার করে খাবারে স্বাদ বৃদ্ধি সম্ভব, যা স্বাস্থ্যকর হওয়ার পাশাপাশি স্বাদের সমৃদ্ধিও বয়ে আনে। বিশেষ করে খাবার টেবিলে অতিরিক্ত লবণ রাখা থেকে বিরত থাকা জরুরি, কারণ এ অভ্যাসে আমরা অজান্তেই অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করি।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে প্রখ্যাত ‘ড্যাশ ডায়েট’ অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে ফলমূল, সবজি, হোল গ্রেইন, লিন প্রোটিন এবং কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য থাকে, যা সোডিয়ামের মাত্রা কমিয়ে হৃদয় স্বাস্থ্য রক্ষা করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) পরামর্শ দেয় দৈনিক সোডিয়াম গ্রহণ এক্সপ্রেস করে ২,৩০০ মিলিগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়, যা প্রায় এক চা চামচ লবণের সমান। তবে উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগ আক্রান্তদের জন্য এই সীমা ১,৫০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত নামানো হয়। বাস্তবে অধিকাংশ মানুষ এই নির্ধারিত সীমার চেয়ে অনেক বেশি লবণ গ্রহণ করেন, যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক।

সুতরাং, লবণের স্বাদ বাড়ানোর ক্ষমতা সত্ত্বেও, এটি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গ্রহণ করলে ‘নীরব ঘাতক’ হিসেবে কাজ করে। খাদ্যাভ্যাসে সচেতনতা আনাই বর্তমানে সবচেয়ে জরুরি। নিয়মিত কম লবণযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি জটিলতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এবং দীর্ঘস্থায়ী সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত হয়। রান্না ও খাওয়ার অভ্যাসে সঠিক পরিবর্তন আনা এখন সময়ের অপরিহার্য দাবী।


জানুন নিয়মিত বেদানা খাওয়ার যত উপকারীতা

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ৩১ ১৫:০৬:২৮
জানুন নিয়মিত বেদানা খাওয়ার যত উপকারীতা
ছবি: সংগৃহীত

তাজা ফলের মধ্যে রয়েছে অসাধারণ পুষ্টিগুণ, আর এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো লাল বেদানা। ঋতু অনুযায়ী বাজারে নানা ধরনের ফল পাওয়া যায়, তবে বেদানা তার টকটকে স্বাদ ও পুষ্টিতে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে। পুষ্টিবিদ এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই ফলকে নিয়মিত খাদ্যাভাসে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন।

বেদানায় রয়েছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও মিনারেল, যেমন ফাইবার, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। এসব উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সার্বিক সুস্থতা নিশ্চিত করে। পুষ্টিবিদ অনুশ্রী জানান, বেদানায় থাকা অ্যান্থোসায়ানিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায় এবং বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি অসুখের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতেও সহায়ক।

হার্টের জন্য বেদানার উপকারিতা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বেদানার রস উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। পুষ্টিবিদ অনুশ্রী বলেন, হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য বেদানা একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও বেদানা উপকারী। বেদানার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত বেদানা খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার উচ্চতা বাড়ার আশঙ্কা কমায়।

হজম প্রক্রিয়ায় বেদানার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এতে থাকা ডায়েটারি ফাইবার অন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। তবে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বেদানা খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় না, কারণ কিছু ক্ষেত্রে এটি সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।

ত্বকের যত্নেও বেদানা খুবই কার্যকর। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে ফ্রি র‌্যাডিকেল থেকে রক্ষা করে এবং বলিরেখা প্রতিরোধে সহায়ক। বেদানায় বিদ্যমান ভিটামিন সি ও ফলিক অ্যাসিড ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ত্বককে প্রাণবন্ত রাখে।

রক্তশূন্যতা মোকাবিলায় বেদানার ভূমিকা রয়েছে। যদিও বেদানায় আয়রনের পরিমাণ বেশি নয়, তবুও এতে থাকা ভিটামিন সি শরীরে আয়রনের শোষণ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে বেদানা খেলে শরীরে আয়রনের শোষণ বৃদ্ধি পেয়ে রক্তশূন্যতার ঝুঁকি কমে।

পুষ্টিবিদ অনুশ্রী বেদানা খাওয়ার সময় নির্দিষ্ট করেছেন। তিনি জানান, সকালের নাশতার পর এবং দুপুরের খাবারের আগে বেদানা খাওয়া যেতে পারে। বিকেলে দুপুরের খাবারের পরেও বেদানা গ্রহণ উপকারী। বেদানার সর্বোচ্চ পুষ্টি পাওয়ার জন্য খোসা ছাড়িয়ে গোটা দানা চিবিয়ে খাওয়া উচিত। এর রসও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং শরীরে দ্রুত শোষিত হয়।

বেদানাকে স্ন্যাকস বা ডেজার্ট হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। টক দই, ওটস, স্মুদি কিংবা ফ্রুট সালাদের সঙ্গে মিশিয়ে বেদানা খাওয়া যেতে পারে, যা স্বাদ ও পুষ্টি দুটোই বৃদ্ধি করে।

সার্বিকভাবে, বেদানা একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল, যা নিয়মিত খাদ্যাভাসে অন্তর্ভুক্ত করলে শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। তাই ঋতু বিশেষে বাজারে পাওয়া গেলে বেদানা গ্রহণ করা উচিত।


নিজের অজান্তেই বিষণ্ণ? হাই-ফাংশনিং ডিপ্রেশনের ৫ লক্ষণ জানুন

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ৩০ ১৮:৩৪:০৮
নিজের অজান্তেই বিষণ্ণ? হাই-ফাংশনিং ডিপ্রেশনের ৫ লক্ষণ জানুন
ছবি: সংগৃহীত

হাসির আড়ালে লুকানো বিষণ্ণতা: হাই-ফাংশনিং ডিপ্রেশন যে ‘নীরব সংকট’

মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখাও ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ, যতটা শারীরিক সুস্থতা। অনেক মানুষ বাইরে থেকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করলেও, ভেতরে এক ধরনের ক্লান্তি, শূন্যতা বা বিষণ্ণতা নিয়ে বেঁচে থাকেন, যা সহজে চোখে পড়ে না। এটিই হতে পারে ‘হাই-ফাংশনিং ডিপ্রেশন’—এক ধরনের নীরব মানসিক সংকট।

বিষণ্ণতা মানেই থমকে যাওয়া নয়

বিখ্যাত মনোবিদ এবং নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলিং লেখক ড. জুলি স্মিথ সম্প্রতি এই বিষণ্ণতার ধরন নিয়ে আলোকপাত করেছেন। তিনি বলছেন, ডিপ্রেশন শুরু হয় না যেদিন আপনি বিছানা থেকে উঠতেই পারছেন না, বরং তার অনেক আগেই যখন আপনি স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা করছেন, কিন্তু ভিতরে ভিতরে ভেঙে পড়ছেন।

হাই-ফাংশনিং ডিপ্রেশন কী?

এই অবস্থা এখনো কোনো স্বীকৃত ক্লিনিক্যাল মানসিক রোগ না হলেও বাস্তবে বহু মানুষ এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তারা নিয়মিত কাজ করছেন, সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকছেন, কিন্তু হৃদয়ের গভীরে জমছে এক ধরণের অস্পষ্ট দুঃখবোধ, ক্লান্তি বা শূন্যতা।

এই বিষণ্ণতা চেনা কঠিন

এই ধরনের বিষণ্ণতার সবচেয়ে জটিল দিক হলো—এটি চেনা যায় না সহজে। এমনকি অনেক সময় ব্যক্তি নিজেও বুঝতে পারেন না ঠিক কী কারণে সবকিছু অর্থহীন লাগছে বা কেন তিনি আর আগের মতো আনন্দ পাচ্ছেন না।

ড. স্মিথের মতে, হাই-ফাংশনিং ডিপ্রেশনের ৫টি সাধারণ লক্ষণ:

১. একা হলেই ভেঙে পড়ার প্রবণতা:

দিনভর নিজেকে ঠিক রাখলেও, একা থাকলে সেই আবরণ ভেঙে পড়ে। নিজের প্রতি যত্ন নেয়াও কঠিন হয়ে পড়ে।

২. সামাজিক পরিস্থিতিতে অস্বস্তি:

বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা বা সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়া আনন্দদায়ক হওয়ার কথা, কিন্তু এসব মুহূর্তে মনে হয় যেন একটা পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন।

৩. অনুভূতি থেকে পালানোর চেষ্টা:

অতিরিক্ত সিরিজ দেখা, রিল স্ক্রল করা কিংবা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে অনেকে নিজেদের চিন্তা থেকে নিজেকেই আড়াল করার চেষ্টা করেন।

৪. কাজ করেন, কিন্তু উৎসাহ নেই:

আগে যেসব কাজে আনন্দ পেতেন, এখন তা নিছক দায়িত্বে পরিণত হয়েছে। কাজ করেন ঠিকই, কিন্তু ভেতরে উৎসাহ বা আগ্রহ অনুভব করেন না।

৫. বাইরে সফল, ভিতরে ফাঁকা:

বাহ্যিকভাবে সফল মনে হলেও মনের ভিতর যেন এক শূন্যতা বা বিষণ্ণতা প্রতিনিয়ত বসবাস করছে।

নিজের সঙ্গে সৎ হোনএই ধরণের মানসিক অবস্থা অবহেলা করলে তা ভবিষ্যতে আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। তাই নিজেকে বুঝুন, নিজের অনুভূতিকে গুরুত্ব দিন। প্রয়োজনে কাউন্সেলিংয়ের সাহায্য নিন। কারণ সুস্থ থাকার জন্য শুধু শরীর নয়, মনকেও প্রয়োজন ভালোবাসা ও যত্ন।

সূত্র: https://tinyurl.com/5n99pezr

পাঠকের মতামত: