ইসরায়েলি দখল পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিল ইরাক

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৯ ০৯:০১:৪৮
ইসরায়েলি দখল পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিল ইরাক
ছবি: সংগৃহীত

ইরাকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গাজা উপত্যকা পুরোপুরি দখল করার ইসরায়েলের পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। দেশটি এই পদক্ষেপকে গাজার নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে ‘ক্ষুধার নীতি’, বাস্তুচ্যুত করা এবং গণহত্যার অংশ বলে অভিহিত করেছে। ইরাকের মতে, এসব কর্মকাণ্ড যুদ্ধাপরাধের শামিল এবং এর জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা উচিত।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) শাফাক নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, এক বিবৃতিতে ইরাক ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচ্ছেদ্য অধিকার—বিশেষ করে জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আইনগত ও মানবিক দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে এসব লঙ্ঘন অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়েছে দেশটি।

এদিকে টাইমস অব ইসরাইলের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা উপত্যকা দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। পাশাপাশি যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে থাকা বেসামরিক জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইসরায়েল যে পাঁচটি শর্ত দেবে, মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য তা সমর্থন করেছেন। শর্তগুলো হলো—

হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ

হামাসের হাতে থাকা ৫০ জিম্মিকে ফেরত আনা (যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা)

গাজা উপত্যকার নিরস্ত্রীকরণ

গাজায় ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ

হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ নয়, বরং বিকল্প কোনো বেসামরিক সরকারের হাতে গাজার শাসন হস্তান্তর

/আশিক


মোদিকে গোপন পরামর্শ দেবেন নেতানিয়াহু

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৮ ২০:১০:২৫
মোদিকে গোপন পরামর্শ দেবেন নেতানিয়াহু
ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এর পেছনে মূলত দুটি কারণকে দায়ী করা হচ্ছে প্রথমত, পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক উত্তেজনা নিরসনে নয়াদিল্লির প্রত্যাশিত ভূমিকা না রাখা, এবং দ্বিতীয়ত, ওয়াশিংটনের সরাসরি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রাখা। যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে এটি শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থেরও অবমাননা, বিশেষ করে যখন মস্কোর ওপর চাপ সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে করার কৌশলকে তারা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ক্ষোভের প্রকাশ ঘটেছে বাণিজ্য ক্ষেত্রে গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করেছে। এর ফলে ভারতের ওপর মোট মার্কিন রপ্তানি শুল্কের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটি ভারতের রপ্তানি খাত, বিশেষ করে টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবার বাজারে বড় ধাক্কা দেবে। ভারতের জন্য যুক্তরাষ্ট্র শুধু একটি বৃহৎ বাজারই নয়, বরং বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস, ফলে এই শুল্ক বৃদ্ধি সরাসরি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় মধ্যস্থতার আগ্রহ দেখিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদি ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দুজনই আমার দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। অতীতে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কূটনৈতিক সমঝোতার অভিজ্ঞতা থেকে আমি মোদিকে কিছু কার্যকর পরামর্শ দিতে পারি, তবে সেগুলো হবে সম্পূর্ণ নেপথ্যে ও গোপনীয়ভাবে।”

নেতানিয়াহু আরও উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে দৃঢ় ও বহুমাত্রিক প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি, কৃষি, মহাকাশ গবেষণা ও কৌশলগত সহযোগিতাসহ নানা ক্ষেত্রে এই অংশীদারিত্ব বিস্তৃত। তবে শুল্ক ইস্যুটি এখন দুই দেশের জাতীয় স্বার্থের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। তাঁর মতে, আলোচনার মাধ্যমে এমন একটি সমাধানে পৌঁছানো জরুরি, যা উভয় দেশের মর্যাদা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করবে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই সমঝোতা শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের জন্য নয়, ইসরায়েলের জন্যও উপকারী হবে। কারণ দুই দেশই ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ কৌশলগত মিত্র, এবং ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা বিশেষত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা, কৃষি উদ্ভাবন ও বাণিজ্যে এই সমঝোতার ফলে আরও শক্তিশালী হবে।

আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি অব্যাহত রাখা শুধু অর্থনৈতিক হিসাবের ফল নয়, বরং জ্বালানি নিরাপত্তা ও মূল্যসাশ্রয়ের কৌশল। তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক অগ্রাধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অন্যদিকে, পাকিস্তান ইস্যুতে ভারতের সীমিত সক্রিয়তা ট্রাম্প প্রশাসনের চোখে কৌশলগত হতাশা তৈরি করেছে, যা বর্তমান উত্তেজনার অন্যতম পটভূমি।

-রাফসান


ট্রাম্প বলেন, “খুব হতাশ”

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৮ ১৫:৪২:১৫
ট্রাম্প বলেন, “খুব হতাশ”
ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের জন্য তিনি কোনো পূর্বশর্ত মানতে রাজি নন, এমনকি যদি পুতিন তার আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক না-ও করেন। এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প সরাসরি বলেন, “না, তার দরকার নেই, না” পুতিনকে আগে জেলেনস্কির সঙ্গে বসতে হবে কিনা এমন প্রশ্নে। তার এই মন্তব্য মার্কিন গণমাধ্যমে এর আগে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ঐ প্রতিবেদনগুলোতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোয়াইট হাউস কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছিল, পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠকই ট্রাম্প-পুতিন শীর্ষ বৈঠকের পূর্বশর্ত।

ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “তারা আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চায়, আর আমি যা পারি করব যেন হত্যা বন্ধ হয়।” এর আগের দিন তিনি জানিয়েছিলেন, পুতিনের সঙ্গে তার সরাসরি বৈঠক “খুব শিগগিরই হতে পারে”। এই মন্তব্য আসে তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের মস্কো সফর ও পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর।

প্রসঙ্গত, জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ট্রাম্প প্রকাশ্যে দাবি করে আসছেন যে তিনি রাশিয়ার ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন থামানোর চেষ্টা করছেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময়ও তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় গেলে “২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যুদ্ধ থামিয়ে দেবেন”।

সম্প্রতি তিনি রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়িয়ে মস্কোকে আল্টিমেটাম দিয়েছেন যে শুক্রবারের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে হবে, অন্যথায় আরও কঠোর অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক শাস্তির মুখে পড়তে হবে। যদিও স্টিভ উইটকফের আলোচনার পর এই সময়সীমা বহাল আছে কিনা সে বিষয়ে ট্রাম্প স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। পরিবর্তে তিনি মন্তব্য করেন, “এটা পুতিনের ওপর নির্ভর করছে। আমরা দেখব সে কী বলে।”

তার বক্তব্যে হতাশার সুরও শোনা গেছে। ট্রাম্প বলেন, “খুব হতাশ”- যা ইঙ্গিত দেয় যে চলমান কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এখনো পরিস্থিতি আশানুরূপ এগোয়নি।


চীনের অর্থনৈতিক নীরব বিপ্লব: পশ্চিমা একপক্ষীয় বিশ্বনীতির অবসানের সংকেত

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৮ ০১:০২:২০
চীনের অর্থনৈতিক নীরব বিপ্লব: পশ্চিমা একপক্ষীয় বিশ্বনীতির অবসানের সংকেত

যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে ব্যাপকহারে শুল্ক আরোপ করে নতুন বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেন, তখন অনেকেই মনে করেছিলেন চীনের রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি এত বড় ধাক্কা সামলাতে পারবে না। প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে চীন, যা তাদের মোট রপ্তানির প্রায় ১৫ শতাংশ। ফলে অনেকে ধরে নিয়েছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার হারালে চীনের অর্থনীতি ধসে পড়বে। কিন্তু বাস্তবে যা ঘটল তা সবাইকে বিস্মিত করল। চীন পশ্চাদপসরণ না করে পাল্টা আঘাত হানে—শুল্কে পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি বন্ধ করে এবং আমেরিকান কোম্পানিগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করে। বেইজিং স্পষ্ট জানিয়ে দেয়—এটা আগের চীন নয়, এবং এখন আর তারা কারও শর্তে খেলবে না।

এই আত্মবিশ্বাসের পেছনে রয়েছে এক দশকব্যাপী এক নীরব বিপ্লব। চীনের নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছিল যে পশ্চিমা বাজার ও পুঁজির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকিপূর্ণ। ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ ছিল সেই পরিবর্তনের কারণ নয়, বরং একটি অনুঘটক যা একটি চলমান কৌশলগত পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করেছে। এই রূপান্তরের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি স্বপ্ন—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা ছাড়াই নিজস্ব অর্থনৈতিক বলয়ের নেতৃত্ব নেওয়া। এটি শুধু আত্মরক্ষার কৌশল নয়; এটি বৈশ্বিক নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুতির নামান্তর।

এই অর্থনৈতিক উত্তরণের পেছনের ইতিহাস বুঝতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে সেই পুরোনো চীনের দিকে—যেখানে উৎপাদন ছিল কেন্দ্রীয় ভিত্তি। ১৯৭০-এর দশকে দেং শিয়াওপিংয়ের অর্থনৈতিক উদারীকরণের মাধ্যমে চীন ধীরে ধীরে বিশ্বের বৃহত্তম উৎপাদনকেন্দ্রে পরিণত হয়। বিশাল সস্তা শ্রমশক্তিকে কাজে লাগিয়ে তারা পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে। আমাজন থেকে অ্যাপল—সবার পণ্য তৈরি হতো চীনের কারখানায়। এই মডেলেই চীন টানা তিন দশক ধরে ১০ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখে।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সম্পর্কের অসাম্য প্রকট হয়ে ওঠে। চীনা কোম্পানিগুলো যখন পশ্চিমা বাজারে আগ্রাসীভাবে প্রবেশ করছিল, তখন পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর জন্য চীনের বাজার ছিল সংকীর্ণ ও নিয়ন্ত্রিত। ২০১৮ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য ঘাটতি ৪০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। অনেকেই তখন চীনকে ‘অবাধ বাজারের সুযোগ নিয়ে স্বার্থসিদ্ধি করা এক কর্তৃত্ববাদী শক্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করে। ট্রাম্প এই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় আসেন এবং ক্ষমতায় এসেই শত শত বিলিয়ন ডলারের চীনা পণ্যে শুল্ক আরোপ করেন। শুধু তাই নয়, হুয়াওয়ের মতো কোম্পানিকে নিষিদ্ধ করে এবং সেমিকন্ডাক্টরের মতো প্রযুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

তবে চীন এ যুদ্ধে হেরে যায়নি। বরং তারা নতুন এক পথ বেছে নেয়। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং “ডুয়াল সার্কুলেশন” বা দ্বৈত প্রবাহনীতির কথা ঘোষণা করেন। এই কৌশলের মূল লক্ষ্য হলো দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও উদ্ভাবনশীলতা বৃদ্ধি করে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনা এবং সমান্তরালভাবে বিশ্বের অন্যান্য অংশে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করা। দুই স্তরের এই কৌশলে একদিকে রয়েছে ‘আভ্যন্তরীণ প্রবাহ’—যা স্থানীয় চাহিদা, স্থানীয় প্রযুক্তি ও চীনা ভোক্তাকে কেন্দ্র করে; অন্যদিকে রয়েছে ‘বাহ্যিক প্রবাহ’—যা মার্কিন বাজারের বাইরে নতুন নতুন অংশীদার গড়ে তুলতে চায়, বিশেষ করে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে।

এই কৌশল বাস্তবায়নে চীন অভ্যন্তরীণভাবে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। অনেকেই চীনের রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির কথা বলেন, কিন্তু ২০২৪ সালে দেশটির মোট জিডিপির প্রায় ৪৫ শতাংশ এসেছে দেশীয় ভোগব্যয় থেকে, যা রপ্তানির দ্বিগুণ। BYD, Huawei এবং TikTok-এর মতো কোম্পানিগুলো এখন চীনের গর্ব। দেশীয় বাজারে তৈরি গাড়ি, ফোন, বিলাসপণ্য—সবই চীনারা নিজেরাই ব্যবহার করছে। তবে সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো দুর্বল হওয়ায় চীনের জনগণের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা প্রবল, যা ভোগব্যয় বৃদ্ধির পথে একটি বড় বাধা।

একই সঙ্গে চীনের আবাসন খাতও সংকটে। ২০১৯ সালের পর থেকে বাড়ির মূল্য ক্রমাগত কমছে। জন্মহার হ্রাস পাচ্ছে, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী কমছে এবং প্রবীণদের সংখ্যা বাড়ছে—যা ভবিষ্যৎ অর্থনীতিতে চাপ বাড়াবে।

তবে চীন এসব সংকটের মোকাবিলা করছে আরেকটি কৌশলগত পথে—বৃহৎ বিনিয়োগের মাধ্যমে। ২০১৮ সাল থেকে চীন গবেষণা ও উন্নয়নে ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তাদের লক্ষ্য হলো: আধুনিক প্রযুক্তি যেমন সেমিকন্ডাক্টর, এআই, ইলেকট্রিক যানবাহন এবং সবুজ জ্বালানি উৎপাদনে স্বনির্ভর হওয়া। যুক্তরাষ্ট্র যখন সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তখন অনেকেই মনে করেছিলেন চীনের প্রযুক্তি খাত ভেঙে পড়বে। কিন্তু ২০২৩ সালে হুয়াওয়ে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ৭-ন্যানোমিটার চিপ উন্মোচন করে সবাইকে চমকে দেয়।

এই প্রযুক্তি বিপ্লবের পাশাপাশি চীনের অবকাঠামো উন্নয়নও বিশ্বে নজিরবিহীন। বিশ্বে যত কিলোমিটার হাই-স্পিড রেললাইন আছে, তার চেয়েও বেশি রয়েছে এককভাবে চীনে—৪০,০০০ কিলোমিটার! এর সঙ্গে রয়েছে বন্দর, মহাসড়ক, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ডিজিটাল নেটওয়ার্ক—সব মিলিয়ে এক বিশাল অর্থনৈতিক মেশিন। অনেকে বলেন চীন অনেক বেশি উৎপাদন করছে—প্রয়োজনের চেয়ে বেশি স্টিল, বেশি ইভি, বেশি সৌর প্যানেল। তবে চীন একে কৌশলগত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। কম দামে বেশি উৎপাদন করে বিশ্ববাজারে প্রবেশ করে তারা শুধু পণ্য বিক্রি করছে না, বিশ্ব অর্থনীতির নাভিমূলে নিজেদের স্থানও পাকাপোক্ত করছে।

বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটেও চীনের কৌশল একই রকম দূরদর্শী। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিকল্প হিসেবে চীন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI) প্রকল্প শুরু করে ২০১৩ সালে। এর মাধ্যমে তারা এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে রেললাইন, বন্দর, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে—প্রায় ৭৫ শতাংশ বৈশ্বিক জনগোষ্ঠীকে ছুঁয়ে যাচ্ছে এই প্রকল্প। বিনিময়ে চীন পাচ্ছে নতুন বাজার, কাঁচামাল সরবরাহ, এবং কূটনৈতিক বন্ধুত্ব। এখন চীন শুধু ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গেই বড় বাণিজ্য করছে না, বরং অনেক দেশেই তারাই এখন প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার।

তবে এই অগ্রগতির পেছনে অর্থনৈতিক ব্যয়ও রয়েছে। স্থানীয় সরকার ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। ২০২৬ সালের মধ্যে চীনের ঋণ-জিডিপি অনুপাত ১০০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই বিনিয়োগের ফলাফল অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে—ভুতুড়ে শহর, ফাঁকা রেললাইন বা অলস কারখানার মতো উদাহরণ এখন আর বিরল নয়।

তা সত্ত্বেও, বিশ্বে যে শক্তির ভারসাম্য ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে তা আর অস্বীকার করার উপায় নেই। চীন এখন আর শুধু বিশ্বব্যাপী উৎপাদন কেন্দ্র নয়, বরং এক নতুন অর্থনৈতিক বলয়ের নেতা হওয়ার পথে। এটি প্রযুক্তি, অবকাঠামো, কূটনীতি, এবং বিপুল জনশক্তিকে কেন্দ্র করে নতুন এক যুগের সূচনা করেছে—যেখানে মার্কিন নেতৃত্ব আর একচ্ছত্র নয়।

অতীতের চীন যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদা পূরণের জন্য উৎপাদন করত। আজকের চীন নিজের প্রয়োজন মেটাতে উৎপাদন করে, নিজের বাজার তৈরি করে এবং নিজের প্রভাব বিস্তার করে। এটি শুধু একটি বাণিজ্য যুদ্ধ নয়, বরং এটি একটি নতুন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক আদর্শের জন্ম। প্রশ্ন এখন আর এটি নয় যে, “চীন টিকে থাকবে কিনা।” বরং প্রশ্ন হলো, “পশ্চিমা বিশ্ব কীভাবে মানিয়ে নেবে এমন একটি ভবিষ্যৎ যেখানে চীন আর কারও নিয়ম মেনে খেলতে রাজি নয়?”


২৪ ঘণ্টায় দ্বিতীয়বার ‘শুল্ক হামলা’! কাঁপছে ভারতীয় অর্থনীতি

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৭ ২১:৩৫:২০
২৪ ঘণ্টায় দ্বিতীয়বার ‘শুল্ক হামলা’! কাঁপছে ভারতীয় অর্থনীতি
ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে উত্তেজনা ছড়ালেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কার্যকর করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া সেমিকন্ডাক্টর চিপের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। নিউ হ্যাম্পশায়ারে এক নির্বাচনী সমাবেশে ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন, যা ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

ট্রাম্প বলেন, “আমরা আর বাইরের দেশ থেকে সস্তায় চিপ আনব না। চিপ উৎপাদন হবে আমাদের দেশেই। অন্য দেশ থেকে কেউ চিপ আমদানি করতে চাইলে তাকে ১০০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।” ট্রাম্পের এই বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে ব্লুমবার্গ, রয়টার্স, সিএনবিসি ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতো শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। রিপাবলিকান হেডকোয়ার্টার থেকেও তার বক্তব্যের স্বীকৃতি মিলেছে।

এই ঘোষণার ফলে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়তে যাচ্ছে ভারত, যেটি এখনো সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। দেশটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে ব্যাপকভাবে চিপ আমদানি করে। যদিও ‘India Semiconductor Mission’-এর আওতায় ভারত নিজস্ব উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের চেষ্টা করছে, বাস্তবে দেশটির সিংহভাগ চাহিদাই আমদানিনির্ভর।

২০২২ সালে ভারতের সেমিকন্ডাক্টর বাজারের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়নে পৌঁছেছে। বাজার বিশ্লেষকদের ধারণা, ২০২৯ সালের মধ্যে এই খাতের পরিধি ১০০–১১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে দেশটিতে এখনও পূর্ণাঙ্গ চিপ ডিজাইন ও উৎপাদন পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি।

ফলে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শুল্ক কার্যকর হলে মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, গাড়ি এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের দাম বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে গুজরাট, কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুতে সেমিকন্ডাক্টর কারখানা স্থাপনের কাজ চলছে। টাটা, ফক্সকন, মাইক্রন ও অ্যাম্প্যাক-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কেন্দ্র সরকারের বিশেষ প্রণোদনা নিয়ে উৎপাদনে নামছে। কিন্তু এই ধাক্কা তাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনা ও বাজার সম্ভাবনায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

এর আগে, রাশিয়া থেকে তেল কেনার জেরে ভারতকে শাস্তি হিসেবে ২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। এবার সেমিকন্ডাক্টর খাতে আরও বড় শুল্ক চাপের হুঁশিয়ারি সেই চাপকেই বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ মার্কিন রাজনীতিতে ‘অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ’ ট্রাম্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচারকৌশল। তবে এই কৌশল আন্তর্জাতিক বাজারে বিশেষ করে প্রযুক্তিনির্ভর দেশগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ভারতের মতো উন্নয়নশীল প্রযুক্তি অর্থনীতির জন্য এটি হতে পারে এক অপ্রত্যাশিত ধাক্কা।

/আশিক


ট্রাম্পের ‘পারস্পরিক শুল্ক’ কার্যকর হচ্ছে যখন থেকে

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৭ ১৪:৫৫:১৭
ট্রাম্পের ‘পারস্পরিক শুল্ক’ কার্যকর হচ্ছে যখন থেকে
ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতি ৬ আগস্ট মধ্যরাত থেকে কার্যকর হচ্ছে। স্থানীয় সময় বুধবার রাতে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে একতরফাভাবে সুবিধা নেওয়া দেশগুলোর কাছ থেকে এবার কোটি কোটি ডলার শুল্ক হিসেবে আদায় করা হবে। তিনি দাবি করেন, এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

ট্রাম্প পোস্টে আরও বলেন, “আমেরিকার মহত্ত্বকে থামাতে পারে কেবলমাত্র র‍্যাডিকাল বামপন্থি আদালত, যারা আমাদের দেশকে ব্যর্থ দেখতে চায়।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি মূলত তার নেওয়া শুল্ক উদ্যোগের বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতগুলোতে চলমান মামলাগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কোম্পানি ও অঙ্গরাজ্য ট্রাম্পের ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতির বিরুদ্ধে মামলা করেছে, যেগুলোতে অভিযোগ আনা হয়েছে যে, এ সিদ্ধান্ত মার্কিন অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং প্রেসিডেন্ট সংবিধানবিরোধীভাবে অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করছেন।

বর্তমানে এসব মামলায় বাদীপক্ষ অনেকক্ষেত্রেই নিম্ন আদালতে জয়লাভ করছে। ট্রাম্প প্রশাসন এসব রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আপিল করেছে, এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশিরভাগ মামলাই শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে। এই পরিস্থিতি ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতিকে আইনি অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল সতর্ক করে বলেছেন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও বাড়তে পারে। তিনি জানিয়েছেন, ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা নিয়ে সতর্কভাবে চিন্তা করছে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে শুল্ক আরোপ করলে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে এবং ভোক্তাপর্যায়ে পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষকে মূল্যস্ফীতির চাপ বহন করতে হতে পারে।

-রফিক


একজোট হচ্ছে রাশিয়া-চীন-ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বিরুদ্ধে বার্তা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৭ ১২:৩৩:১১
একজোট হচ্ছে রাশিয়া-চীন-ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বিরুদ্ধে বার্তা
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের এই চাপকে উপেক্ষা করে একত্রিত হতে চলেছে বিশ্ব রাজনীতির তিন গুরুত্বপূর্ণ শক্তি—রাশিয়া, চীন ও ভারত।

সম্প্রতি ঘোষণা এসেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দীর্ঘ ছয় বছর পর চীন সফরে যাচ্ছেন। সময়টা তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বর্তমানে একপ্রকার চূড়ান্ত টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে। রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা অব্যাহত রাখায় ভারতের ওপর নতুন করে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

এ প্রসঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, বিভিন্ন দেশকে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে চাপ দিচ্ছে, তা বৈধ নয় এবং এটি সার্বভৌম দেশের অধিকার লঙ্ঘন করে। যদিও তিনি সরাসরি ভারতের নাম নেননি, তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের প্রতি রাশিয়ার একপ্রকার কৌশলগত সমর্থনই এতে প্রতিফলিত হয়েছে।

আগামী ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর চীনের তিয়ানজিন শহরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (SCO) শীর্ষ সম্মেলন। এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি, এবং একই সময় সেখানে থাকবেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও। বৈঠকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবিরোধী কৌশল, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাণিজ্যসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ায় ভারত এখন রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার দিকে মনোযোগী। বিশেষ করে ২০২০ সালে লাদাখ সীমান্তে চীন-ভারত সেনা সংঘর্ষের পর উভয় দেশের সম্পর্কে যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছিল, তা এখন কিছুটা কমে এসেছে। ২০২৪ সালে রাশিয়ায় ব্রিকস সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে মোদির বৈঠকেও এ বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছিল।

বিশ্ব রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের কৌশল একধরনের বৈশ্বিক বাস্তবতা তৈরি করেছে, যেখানে একতরফা শর্ত চাপিয়ে দিয়ে সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তার বদলে, রাশিয়া-চীন-ভারত একটি নতুন কৌশলগত জোট বা অন্তত ঘনিষ্ঠ সমঝোতার দিকে এগোচ্ছে, যা ভবিষ্যতের বৈশ্বিক ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।

/আশিক


কানাডায় গাজা সংঘাতের পর ইসলামবিদ্বেষের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৭ ১১:৪৮:৫০
কানাডায় গাজা সংঘাতের পর ইসলামবিদ্বেষের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি
ছবি: সংগৃহীত

কানাডায় গাজা সংঘাতের পর ইসলামবিদ্বেষ ও ফিলিস্তিনবিরোধী অপরাধ বেড়েছে অস্বাভাবিক মাত্রায়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এই ধরনের অপরাধের হার প্রায় ১৮০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানায় ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামোফোবিয়া রিসার্চ হাবের একটি গবেষণা। টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদন অনুসারে, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে কানাডার বিভিন্ন প্রদেশে ইসলামোফোব্বিয়া এবং ফিলিস্তিনবিরোধী বিদ্বেষমূলক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

গবেষক নাদিয়া হাসান বলেন, ‘গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে কানাডায় ইসলামবিদ্বেষ, ফিলিস্তিনবিরোধী এবং আরব-বিরোধী বর্ণবাদ জীবনযাত্রার বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রবলভাবে বেড়েছে।’ এই গবেষণায় ১৬টি কানাডীয় সংগঠন, সরকারি রেকর্ড এবং সংবাদ মাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। টরন্টো পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বরের মধ্যে ইসলামোফোবিক ও ফিলিস্তিনবিরোধী অপরাধের সংখ্যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডিয়ান মুসলিমস (এনসিসিএম) জানায়, অক্টোবর মাসেই ইসলামবিদ্বেষ সংক্রান্ত অভিযোগ ১৩০০ শতাংশ বেড়েছে, যা সময়ের সাথে বৃদ্ধি পেয়ে ১৮০০ শতাংশে দাঁড়ায়। মুসলিম লিগ্যাল সাপোর্ট সেন্টার ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ৪৭৪টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পেয়েছে, যার মধ্যে ৩৪৫ জন অভিযোগকারী তাদের ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থানের কারণে চাকরি হারিয়েছেন বা সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। লিগ্যাল সেন্টার ফর প্যালেস্টাইন জানায়, এই আট মাসে ফিলিস্তিনবিরোধী বর্ণবাদের অভিযোগ ৬০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

গবেষক নাদিয়া হাসান বলেন, ‘এই প্রতিবেদন কেবল প্রকৃত পরিস্থিতির একটি অংশ তুলে ধরেছে।’ তিনি জানান, সংগঠনগুলোর সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎকার এবং সরবরাহকৃত তথ্যের পাশাপাশি সরকার ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণাটি প্রস্তুত করা হয়েছে।

কানাডায় ইসলামোফোবিয়া মোকাবিলায় নিযুক্ত বিশেষ প্রতিনিধি আমিরা এলঘাওয়াবি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার রক্ষায় কথা বলার কারণে লোকজন চাকরি হারাচ্ছে, ভবিষ্যত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে—এ পরিস্থিতি এখনই গুরুত্ব দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘৯/১১-পরবর্তী সময়ের পুরনো অপপ্রচার আজ কট্টর ডানপন্থিদের মাধ্যমে পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, যা মুসলিম, ফিলিস্তিনি ও আরব-কানাডিয়ানদের বিরুদ্ধে ঘৃণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’

/আশিক


বিতর্কিত রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে ফের আলোচনায় মিয়ানমার সংকট

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৭ ১১:৪৭:২০
বিতর্কিত রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে ফের আলোচনায় মিয়ানমার সংকট
ছবিঃ সংগৃহীত

মিয়ানমারের সামরিক সমর্থিত অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি উ মিন্ট সোয়ে মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকালে রাজধানী নেপিডো'র একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। সামরিক জান্তার পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে জানানো হয়েছে যে, তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে।

২০২১ সালে অং সান সুচির গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে সেনাবাহিনী যখন ক্ষমতা দখল করে, তখন মিন্ট সোয়েকে 'কার্যনির্বাহী রাষ্ট্রপতি' হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে তিনি মূলত একটি প্রতীকী পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। প্রকৃত ক্ষমতা তখন থেকেই সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং-এর হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল। গত বছর, পারকিনসনস রোগে ভুগে স্বাস্থ্যহানি ঘটায় মিন্ট সোয়েকে কার্যত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতির দায়িত্বটিও মিন অং হ্লাইং নিজেই গ্রহণ করেন।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, মিন্ট সোয়ে সাম্প্রতিক সময়ে মারাত্মক ওজন হ্রাস, ক্ষুধামান্দ্য, জ্বর এবং মানসিক অবনতি অনুভব করছিলেন। ফলে তাঁকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়, যেখানে তিনি বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ২৮ মিনিটে মারা যান।

উল্লেখ্য, মিন্ট সোয়ে একসময় অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকারের অধীনে ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তবে ২০২১ সালের সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ। সেনাবাহিনী তা কঠোরভাবে দমন করে। বহু বিক্ষোভকারী এরপর শহর ছেড়ে পাহাড়ি অঞ্চলে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করেন, যেখানকার জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো আগে থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছিল।

সম্প্রতি, মিন অং হ্লাইং দেশের ওপর চলমান জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন এবং ডিসেম্বর মাসে একটি সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেন, যা সেনা শাসনের অবসানের একটি "পথ" বলে দাবি করা হয়। তবে এই নির্বাচনকে বিরোধী গোষ্ঠীগুলো "প্রহসন" হিসেবে বর্ণনা করে ইতিমধ্যেই বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। জাতিসংঘের এক বিশেষজ্ঞ গত জুনে বলেন, এ নির্বাচন আসলে জান্তা শাসনকে বৈধতা দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা।

এখনো পর্যন্ত সেই নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হয়নি।

-সুত্রঃ এ এফ পি


ভারত সমর্থিত বিদ্রোহীদের হামলায় পাকিস্তানে নিহত তিন সেনা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৭ ১১:২০:৪০
ভারত সমর্থিত বিদ্রোহীদের হামলায় পাকিস্তানে নিহত তিন সেনা
ছবি: সংগৃহীত

বালুচিস্তানে ভারত সমর্থিত বিদ্রোহীদের হামলায় এক মেজরসহ তিন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাত ও বুধবার (৬ আগস্ট) ভোররাতের মাঝামাঝি সময়ে মাস্তুং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

আইএসপিআরের ভাষ্য, ‘ফিতনা আল-হিন্দুস্তান’ নামের ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর মদদপুষ্ট একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এই হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) স্থাপন করে বিস্ফোরণ ঘটায়। ঘটনাস্থলেই তিন সেনা নিহত হন।

নিহতরা হলেন—মেজর মোহাম্মদ রিজওয়ান তাহির (৩১), যিনি পাঞ্জাবের নারোয়াল জেলার বাসিন্দা। অপর দুজন হলেন সোয়াবি জেলার বাসিন্দা নায়েক ইবনি আমিন (৩৭) এবং কারাক জেলার বাসিন্দা ল্যান্স নায়েক মোহাম্মদ ইউনুস (৩৩)।

হামলার পরপরই নিরাপত্তা বাহিনী মাস্তুং এলাকায় অভিযান শুরু করে। অভিযানে চারজন ভারত সমর্থিত সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে বলে জানায় সেনাবাহিনী। পুরো এলাকা সন্ত্রাসমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।

ঘটনার নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “এই ক্ষতি কেবল পরিবারগুলোর নয়, পুরো জাতির। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এমন এক প্রাচীর, যাকে নাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। আমাদের সন্ত্রাসবিরোধী সংগ্রামে সেনাদের আত্মত্যাগ অতুলনীয়। সন্ত্রাস নির্মূলে রাষ্ট্র সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ‘ফিতনা আল-হিন্দুস্তান’ ভারতের ‘র’ গোয়েন্দা সংস্থার প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় কাজ করছে। তারা মনে করছে, ভারতের পক্ষ থেকে প্রক্সি যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানের ভেতরে অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা চলছে।

/আশিক

পাঠকের মতামত: