সুরা আল-বাকারার উল্লেখযোগ্য ঘটনা ও বিষয়বস্তু বিস্তারিত জানুন

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৮ ১৭:৩৩:৩৫
সুরা আল-বাকারার উল্লেখযোগ্য ঘটনা ও বিষয়বস্তু বিস্তারিত জানুন
ছবিঃ সংগৃহীত

সুরা আল-বাকারা (سورة البقرة) কুরআনের দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে দীর্ঘ সুরা, যাতে মোট ২৮৬টি আয়াত রয়েছে। মদীনায় অবতীর্ণ এই সুরাটি মুসলিম উম্মাহর জন্য জীবনদর্শন, বিধান, শিক্ষা ও ইতিহাসের এক অনন্য সমন্বয়। এতে আগের উম্মাহদের ঘটনা, তাদের সাফল্য ও ব্যর্থতা, নবীদের মিশন, শিরক ও কপটতার পরিণতি, এবং মুসলিমদের জন্য বিভিন্ন শরীয়ত আইন বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। নিচে এর উল্লেখযোগ্য ঘটনা ও বিষয়বস্তু বিস্তারিতভাবে ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করা হলো—

১. আদম (আ.)-এর সৃষ্টির ঘটনা ও ইবলিসের অবাধ্যতা

আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন যে তিনি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বা খলিফা সৃষ্টি করবেন। ফেরেশতারা জিজ্ঞাসা করেন, “আপনি কি এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে সেখানে অশান্তি সৃষ্টি করবে ও রক্তপাত ঘটাবে, অথচ আমরা আপনার প্রশংসা ও পবিত্রতা ঘোষণা করছি?” আল্লাহ বলেন, “আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না।” এরপর আল্লাহ আদম (আ.)-কে সমস্ত বস্তুর নাম শিক্ষা দেন এবং ফেরেশতাদের সামনে তা উপস্থাপন করেন। ফেরেশতারা যখন বস্তুগুলোর নাম জানাতে অক্ষম হন, তখন আদম (আ.) তা সঠিকভাবে বলে দেন, যা তার জ্ঞানগত শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে।

আল্লাহ ফেরেশতাদের আদেশ দেন আদম (আ.)-এর সামনে সিজদা করতে। সবাই আদেশ পালন করলেও ইবলিস অহংকার ও হিংসার কারণে অস্বীকার করে। সে যুক্তি দেয়, “আমি আগুন থেকে সৃষ্টি, আর সে মাটি থেকে—তাহলে আমি কেন সিজদা করব?” এই অবাধ্যতার কারণে ইবলিস চিরতরে অভিশপ্ত হয় এবং মানুষের চিরশত্রু হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই ঘটনার মাধ্যমে মানবজাতির উৎপত্তি, জ্ঞানপ্রাপ্তির শ্রেষ্ঠত্ব এবং শয়তানের চিরশত্রুতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

২. বনী ইসরাঈলের ইতিহাস ও অপরাধসমূহ

সুরাটিতে বনী ইসরাঈলের ইতিহাস বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে বহু নিয়ামত দান করেছিলেন নবী পাঠিয়েছেন, কিতাব দিয়েছেন, দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছেন, খাদ্য ও পানীয়ের ব্যবস্থা করেছেন কিন্তু তারা বারবার অবাধ্যতা করেছে। তারা বহু নবীর কথা অমান্য করেছে, কাউকে হত্যা করেছে, আবার কাউকে মিথ্যাবাদী আখ্যা দিয়েছে।

তারা আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে শিরক, কপটতা, মূর্তিপূজা ও অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়। বহুবার সতর্ক করার পরও তারা সঠিক পথে ফিরতে চায়নি। এই ঘটনা মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করে দেয় যাতে তারা অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেয় এবং অবাধ্যতার পথে না চলে।

৩. গরু জবাইয়ের ঘটনা (বাকারাহ্‌র কাহিনি)

এক খুনের রহস্য উদঘাটনের জন্য আল্লাহ বনী ইসরাঈলকে একটি নির্দিষ্ট ধরনের গরু জবাই করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু তারা আদেশ পালনে আন্তরিক না হয়ে অহেতুক প্রশ্ন করতে থাকে—গরুর রঙ কী হবে, বয়স কত হবে, এর ব্যবহার কী রকম হবে—ইত্যাদি। তাদের এই বাড়াবাড়ির ফলে কাজটি জটিল হয়ে ওঠে।

শেষমেশ আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী গরু জবাই করা হয় এবং মৃত ব্যক্তিকে গরুর একটি অংশ দিয়ে আঘাত করলে তিনি জীবিত হয়ে খুনির পরিচয় দেন। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা পাওয়া যায় যে আল্লাহর আদেশ পালন করতে হলে দ্বিধা ও অতিরিক্ত প্রশ্ন থেকে বিরত থাকা উচিত এবং আন্তরিকভাবে নির্দেশ মানা উচিত।

৪. কিবলামুখ পরিবর্তনের ঘটনা

মুসলিমরা প্রথমে সালাতে বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামাজ পড়ত। পরে আল্লাহর নির্দেশে কাবা শরীফকে কিবলা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। এটি ছিল মুসলিম উম্মাহর স্বতন্ত্র পরিচয় প্রতিষ্ঠার এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

এই পরিবর্তন কিছু লোকের কাছে বিস্ময়কর মনে হলেও এটি প্রমাণ করে যে মুসলিম উম্মাহর দিকনির্দেশনা সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে এবং তারা কেবল তাঁর আদেশ মেনে চলে। এই ঘটনা মুসলমানদের ঐক্য ও স্বকীয়তা রক্ষার প্রতীক হয়ে আছে।

৫. তালীম ও বিধান সম্পর্কিত আয়াতসমূহ

  • সুরা আল-বাকারায় ইসলামি শরীয়তের বহু মৌলিক বিধান নাযিল হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য
  • সালাত, রোজা, যাকাত ও হজের বিধান
  • ব্যবসা-বাণিজ্যে ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা এবং সুদ (রিবা) কঠোরভাবে নিষিদ্ধকরণ
  • আল্লাহর পথে ব্যয় করার উৎসাহ
  • শপথ, কসম ও মান্নতের বিধান
  • বিবাহ, তালাক, ইদ্দত ও পরিবার-সংক্রান্ত আইন
  • ন্যায়সংগত যুদ্ধ (কাতাল) এর অনুমতি ও শর্তাবলি

এসব বিধান মুসলমানদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের জন্য পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা প্রদান করে।

৬. তালুত ও জালুতের ঘটনা

বনী ইসরাঈলের জন্য আল্লাহ তালুতকে রাজা নিযুক্ত করেন। কিন্তু অনেকেই তার নেতৃত্ব মেনে নিতে রাজি হয়নি, কারণ তারা মনে করত রাজা ধনী ও প্রভাবশালী হওয়া উচিত। আল্লাহ জানান, তিনি তালুতকে জ্ঞান ও শারীরিক শক্তিতে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।

তালুতের নেতৃত্বে বনী ইসরাঈল জালুতের সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হয়। যুদ্ধে দাউদ (আ.) আল্লাহর সাহায্যে জালুতকে পরাজিত করেন। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে বিজয় সম্পদ বা বাহ্যিক শক্তির ওপর নির্ভর করে না, বরং আল্লাহর ইচ্ছা ও সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল।

৭. আয়াতুল কুরসি (আয়াত ২৫৫)

আয়াতুল কুরসি কুরআনের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আয়াত। এতে আল্লাহর মহিমা, সর্বশক্তিমত্তা ও সর্বব্যাপী জ্ঞানের বর্ণনা রয়েছে। তিনি আকাশ ও জমিনের মালিক, তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ সুপারিশ করতে পারে না, আর তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সব কিছু জানেন।

এ আয়াত হিফাজতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মুসলমানদের জন্য দৈনন্দিন জীবনে পড়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

৮. রাসূল (সা.) ও সাহাবাদের আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি

সুরার শেষের দুটি আয়াতে যা “আমানার রাসূলু” নামে পরিচিত রাসূলুল্লাহ (সা.) ও মুমিনদের ঈমান, আনুগত্য এবং আল্লাহর কাছে দোয়ার বাণী এসেছে। রাসূল (সা.) এগুলোকে “আর্শের নিচের খাজানা” বলে বর্ণনা করেছেন। এতে আল্লাহ মুসলমানদের জন্য দায়িত্ব সহজ করার প্রতিশ্রুতি দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া শিখিয়ে দেন।


হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.): ন্যায়, প্রজ্ঞা ও বিশ্বনেতৃত্বের এক স্বর্ণযুগ

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৮ ১০:৫৬:৫৮
হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.): ন্যায়, প্রজ্ঞা ও বিশ্বনেতৃত্বের এক স্বর্ণযুগ

ইসলামের ইতিহাসে হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) এমন এক মহান ব্যক্তিত্ব যিনি শক্তি, সাহস, ন্যায়বিচার, প্রজ্ঞা এবং আল্লাহভীতি দ্বারা বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা, নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সাহাবি, এবং এমন এক নেতা যাঁর শাসনকাল মুসলিম সভ্যতার সোনালি যুগ হিসেবে পরিচিত। তাঁর শাসনামলে শুধু ইসলামী সাম্রাজ্য ভৌগোলিকভাবে বিস্তৃত হয়নি, বরং প্রশাসনিক কাঠামো, বিচারব্যবস্থা, করনীতি, সামাজিক কল্যাণ এবং ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী সংস্কার হয়েছে। পশ্চিমা ঐতিহাসিকরাও স্বীকার করেছেন, তাঁর শাসন ছিল মানব ইতিহাসের অন্যতম সফল, সুশৃঙ্খল ও ন্যায়নিষ্ঠ শাসনব্যবস্থার উদাহরণ।

প্রাথমিক জীবন ও পারিবারিক পটভূমি

হযরত ওমর (রা.) ৫৮৩ খ্রিষ্টাব্দে মক্কায় কুরাইশ গোত্রের বানু আদী শাখায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম ছিল খাত্তাব ইবনে নুফাইল এবং মাতার নাম হাতমা বিনতে হাশিম। তাঁর পরিবার কুরাইশদের মধ্যে সামাজিক মর্যাদার দিক থেকে সম্মানিত ছিল, তবে ধনী ছিল না। শৈশব থেকেই ওমর (রা.) ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, সাহসী এবং শারীরিকভাবে বলবান। তিনি তলোয়ার চালনা, ঘোড়সওয়ারি, উটপালন এবং ক্রীড়ায় পারদর্শী ছিলেন।

শিক্ষাজীবনে তিনি আরবি সাহিত্য, কবিতা, বংশাবলি বিদ্যা এবং বক্তৃতাশৈলীতে দক্ষতা অর্জন করেন। সেই সময়ের মক্কার সমাজে বংশগৌরব, বাগ্মিতা এবং শারীরিক সক্ষমতা ছিল নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা—যা ওমর (রা.)-এর মধ্যে শৈশব থেকেই স্পষ্ট ছিল। ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি মক্কার বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন এবং কুরাইশদের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন।

ইসলাম গ্রহণের পূর্ববর্তী জীবন

ইসলাম আবির্ভাবের প্রথম দিকে ওমর (রা.) ছিলেন নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কঠোর বিরোধীদের একজন। তিনি মুসলমানদের প্রতি শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব পোষণ করতেন এবং তাঁদের ওপর নির্যাতনে অংশ নিতেন। তাঁর কঠোর স্বভাব ও দৃঢ় বিশ্বাস তাঁকে ইসলামের অন্যতম প্রধান প্রতিপক্ষ করে তুলেছিল। অনেক ঐতিহাসিক বর্ণনায় এসেছে যে, এক পর্যায়ে তিনি নবীজীকে হত্যা করার সংকল্প করেছিলেন, যাতে মুসলমানদের আন্দোলন পুরোপুরি দমন করা যায়।

ইসলাম গ্রহণের ঘটনা

তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায় এক ঐতিহাসিক ঘটনায়। নবীজীকে হত্যার উদ্দেশ্যে পথে বের হয়ে তিনি শুনলেন, তাঁর বোন ফাতিমা বিনতে খাত্তাব ও ভগ্নীপতি সাঈদ ইবনে যায়েদ ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে তিনি কুরআন তিলাওয়াত শুনতে পান। সুরা ত্বা-হা’র আয়াত শুনে তাঁর হৃদয় কেঁপে ওঠে। পবিত্র কুরআনের বাণী তাঁর অন্তরে গভীর প্রভাব ফেলে, এবং তিনি উপলব্ধি করেন যে, এটি মানুষের রচিত কোনো কথা নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সত্য।

এই অভিজ্ঞতার পর তিনি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। মুসলমানদের জন্য এটি ছিল এক বিশাল বিজয়, কারণ ওমর (রা.)-এর সাহস, প্রভাব এবং নেতৃত্বগুণ মুসলিম সমাজকে নতুন শক্তি যোগায়। তাঁর ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই মুসলমানরা প্রকাশ্যে ইবাদত করতে শুরু করেন।

গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও ভূমিকা

১. নবীজীর সহচর হিসেবে ভূমিকা: ইসলাম গ্রহণের পর হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) শুধুমাত্র একজন সাধারণ অনুসারী হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকেননি; বরং তিনি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর অন্যতম নিকটতম ও বিশ্বস্ত সহচরে পরিণত হন। বদর, উহুদ, খন্দক, খাইবার এবং হুনায়েনসহ প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ গাজওয়ায় তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং প্রতিটি যুদ্ধে তাঁর অসীম সাহস ও কৌশলগত দক্ষতা নবীজীর জন্য অপরিহার্য হয়ে ওঠে। বদরের যুদ্ধে তাঁর যুদ্ধদক্ষতা মুসলিম বাহিনীর মনোবল বৃদ্ধি করে এবং শত্রুপক্ষের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।

ওমর (রা.)-এর চরিত্রে ছিল দৃঢ়তা ও নির্ভীকতা, যা মুসলিম বাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা ও আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলত। তিনি কেবল যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পরামর্শেও নবীজীর কাছে মূল্যবান ছিলেন। তাঁর কঠোর মনোভাব এবং সত্যের পক্ষে আপসহীন অবস্থান ইসলামের শত্রুদের মনে এক ধরনের ভয় এবং মুসলমানদের মনে নিরাপত্তার অনুভূতি সৃষ্টি করেছিল।

২. হিজরত: মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের সময় অধিকাংশ মুসলমান গোপনে রাতের আঁধারে শহর ত্যাগ করেছিলেন, কারণ কুরাইশরা মুসলমানদের হিজরত ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছিল। কিন্তু ওমর (রা.)-এর সাহস ছিল অতুলনীয়। তিনি প্রকাশ্যে মক্কার কাবাঘরে গিয়ে কুরাইশদের নেতৃবৃন্দের সামনে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন,

“যে তার স্ত্রীকে বিধবা করতে চায়, সন্তানকে পিতৃহীন করতে চায়, সে যেন পথে এসে আমাকে বাধা দেয়।”

এই ঘোষণা শুধু ব্যক্তিগত সাহসিকতার প্রকাশই ছিল না, বরং এটি মুসলমানদের জন্য এক বিশাল প্রেরণা হয়ে ওঠে। তাঁর এই কর্মে মক্কার ইসলামের শত্রুরা বুঝে যায় যে মুসলমানরা আর ভীত-সন্ত্রস্ত জনগোষ্ঠী নয়; বরং তারা দৃঢ় বিশ্বাস ও আত্মত্যাগের মানসিকতা অর্জন করেছে। ইসলামী ইতিহাসে এ ঘটনা অনন্য উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

৩. হুদায়বিয়ার সন্ধি ও পরবর্তী ঘটনা: হিজরতের ছয় বছর পর ৬ হিজরিতে (৬২৮ খ্রিঃ) নবী মুহাম্মদ (সা.) ও মুসলিম বাহিনী কাবা শরিফে ওমরাহ আদায়ের উদ্দেশ্যে মক্কার দিকে অগ্রসর হন। কুরাইশদের বাধার কারণে মক্কার উপকণ্ঠে হুদায়বিয়া নামক স্থানে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা মুসলমানদের জন্য আপাতদৃষ্টিতে অসম এবং অপমানজনক মনে হয়েছিল। চুক্তির শর্তগুলোর মধ্যে ছিল—সেই বছর মুসলমানরা উমরাহ করতে পারবে না, এবং মক্কা থেকে কেউ মদিনায় গেলে তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে; তবে মদিনা থেকে কেউ মক্কায় গেলে তাকে ফেরত দিতে হবে না।

এই শর্তগুলো শুনে ওমর (রা.)-এর মন বিদীর্ণ হয়ে যায়। তিনি নবীজীর কাছে প্রশ্ন করেন, “আমরা কি সত্য ধর্মে নেই? আল্লাহ কি আমাদের সহায় নন?” নবীজী ধৈর্যের সাথে উত্তর দেন, “অবশ্যই।” তবুও তাঁর অন্তরে কষ্ট থেকে যায়। কিন্তু কয়েক মাস পর এই চুক্তির সুফল স্পষ্ট হয়—যুদ্ধবিরতির সুযোগে ইসলাম দ্রুত প্রসার লাভ করে, বহু মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ইসলাম গ্রহণ করে এবং মুসলিম রাষ্ট্র কূটনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়। তখন ওমর (রা.) স্বীকার করেন, নবীজীর দূরদর্শিতা সত্যিই অসাধারণ ছিল এবং এই চুক্তি ছিল কৌশলগত বিজয়ের এক মাইলফলক।

৪. নবীজীর ইন্তেকালের পর: ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ইন্তেকালের সংবাদ শোনার পর ওমর (রা.) গভীর শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তিনি প্রথমে বাস্তবতা মেনে নিতে অস্বীকার করেন এবং ক্রোধভরে বলেন, “যে বলবে মুহাম্মদ (সা.) ইন্তেকাল করেছেন, আমি তার মাথা উড়িয়ে দেব। বরং তিনি মূসা (আ.)-এর মতো আল্লাহর কাছে গেছেন এবং আবার ফিরে আসবেন।”

এই পরিস্থিতিতে আবু বকর সিদ্দিক (রা.) মসজিদে এসে কুরআনের আয়াত পাঠ করেন—

“মুহাম্মদ কেবল একজন রাসূল; তাঁর পূর্বে বহু রাসূল অতিবাহিত হয়েছেন। তিনি যদি মারা যান অথবা নিহত হন, তবে কি তোমরা পেছনে ফিরে যাবে?” (সূরা আলে ইমরান: ১৪৪)

এই আয়াত শোনার পর ওমর (রা.) যেন বাস্তবতায় ফিরে আসেন এবং তাঁর চোখ দিয়ে অশ্রুধারা প্রবাহিত হয়। তিনি উপলব্ধি করেন, আল্লাহর রাসূলের ইন্তেকাল এক বাস্তবতা এবং উম্মাহকে এখন ঐক্যবদ্ধ থেকে নতুন নেতৃত্বের অধীনে অগ্রসর হতে হবে। এই ঘটনার মাধ্যমে তাঁর আন্তরিকতা, নবীজীর প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং সত্য মেনে নেওয়ার বিনয়ী মানসিকতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

খেলাফতকাল (৬৩৪–৬৪৪ খ্রিঃ): হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর ইন্তেকালের পর ৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দে হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর দশ বছরের শাসনকাল ইসলামী ইতিহাসের এক সুবর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত, কারণ এই সময়ে ইসলামী রাষ্ট্র অভূতপূর্ব ভূখণ্ড বিস্তার, প্রশাসনিক কাঠামো উন্নয়ন, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং অর্থনৈতিক সংস্কারে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করে।

প্রশাসনিক সংস্কার

প্রদেশ ব্যবস্থা: ওমর (রা.)-এর শাসনামলে দ্রুত বিস্তৃত সাম্রাজ্যকে কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য তিনি একে বিভিন্ন প্রদেশ ও প্রশাসনিক অঞ্চলে ভাগ করেন। প্রতিটি প্রদেশে গভর্নর (আমির) নিয়োগ করা হতো, যাঁরা প্রশাসন, কর আদায়, আইনশৃঙ্খলা ও জনগণের কল্যাণের দায়িত্ব পালন করতেন। বড় প্রদেশগুলো আবার জেলায় বিভক্ত ছিল, যাতে স্থানীয় পর্যায়ে শাসন কার্যক্রম দ্রুত ও দক্ষতার সাথে পরিচালিত হয়।

দায়িত্বরতদের জবাবদিহিতা: ওমর (রা.) কর্মকর্তাদের আর্থিক ও নৈতিক জবাবদিহিতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। তিনি গভর্নর ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব রাখতে বাধ্য করতেন এবং দায়িত্ব গ্রহণের আগে ও পরে তাঁদের সম্পদ তালিকা সংগ্রহ করতেন, যাতে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যায়। দায়িত্বে অবহেলা বা অনিয়ম প্রমাণিত হলে তিনি বিনা দ্বিধায় তাঁদের অপসারণ করতেন।

দেওয়ান ব্যবস্থা: তাঁর আমলে প্রবর্তিত দেওয়ান ছিল প্রশাসনিক নথিপত্র সংরক্ষণ ও বেতন ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সুশৃঙ্খল রেজিস্ট্রি সিস্টেম। এতে সেনাবাহিনীর সদস্যদের নাম, পদমর্যাদা, দায়িত্ব ও বেতন নির্ধারণের রেকর্ড রাখা হতো। এটি ছিল মুসলিম রাষ্ট্রে প্রথম আধুনিক আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর ভিত্তি।

জনগণের সাথে সরাসরি যোগাযোগ: ওমর (রা.) মদিনার মসজিদে নিয়মিত বসে জনতার অভিযোগ ও পরামর্শ শুনতেন। এভাবে তিনি সাধারণ জনগণকে শাসকের সাথে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ দেন, যা একাধারে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করত। তিনি রাত্রিকালীন টহলেও বের হতেন, যাতে নিজ চোখে জনগণের অবস্থা দেখতে পারেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যা সমাধান করতে পারেন।

অর্থনৈতিক সংস্কার

বায়তুল মাল প্রতিষ্ঠা: ওমর (রা.) রাষ্ট্রীয় অর্থব্যবস্থাকে কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনার জন্য বায়তুল মাল প্রতিষ্ঠা করেন। এতে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ, কর, খাজনা ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় আয় জমা রাখা হতো এবং তা জনকল্যাণে ব্যয় করা হতো। তিনি এই তহবিলের অপচয় বা ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছিলেন।

ভূমি কর ও খাজনা ব্যবস্থা: তিনি কৃষিজমি ও অন্যান্য উৎপাদনশীল সম্পদের ওপর ন্যায়সঙ্গত কর আরোপ করেন। মুসলিম ও অমুসলিম উভয়েই কর দিত, তবে করহার ছিল সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে নির্ধারিত। যুদ্ধবন্দী ও চুক্তিভিত্তিক অমুসলিম প্রজারা জিজিয়া কর দিত, কিন্তু বিনিময়ে রাষ্ট্র তাঁদের জীবন, সম্পদ ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করত।

গরিব ও এতিমদের জন্য ভাতা:তাঁর শাসনামলে দরিদ্র, এতিম, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের জন্য নিয়মিত ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা ছিল, যা ইতিহাসে প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উদাহরণ। শিশুদের জন্য দুধ ও খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।

বিচার ব্যবস্থা

কাজী নিয়োগ: তিনি প্রতিটি প্রদেশে স্বতন্ত্র বিচার বিভাগ গঠন করেন এবং সেখানকার জন্য ন্যায়পরায়ণ ও যোগ্য বিচারক (কাজী) নিয়োগ করেন। কাজীরা স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করতেন, এবং শাসক পর্যন্ত তাঁদের সিদ্ধান্ত মেনে চলতেন।

আইনের শাসন: ওমর (রা.) দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, শাসকসহ সকলেই আইনের অধীন। একাধিক ঘটনায় দেখা যায়, তিনি সাধারণ নাগরিকের মতো আদালতে হাজির হয়েছেন এবং মামলার রায় নিজের বিপক্ষে গেলে তা বিনা আপত্তিতে মেনে নিয়েছেন। তাঁর এই নীতি আইনের শাসনের প্রকৃত রূপ তুলে ধরে, যা আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।

সামরিক ও ভূখণ্ড বিস্তার: হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.)-এর খেলাফতকাল ইসলামী সাম্রাজ্যের ভূখণ্ড বিস্তারের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব সময় হিসেবে চিহ্নিত। মাত্র দশ বছরের শাসনামলে তিনি ইসলামী রাষ্ট্রকে আরব উপদ্বীপের বাইরে প্রসারিত করে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং পারস্যের বিশাল অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করেন। এই বিস্তার ছিল শুধু সামরিক শক্তির ফল নয়, বরং দক্ষ কৌশল, শৃঙ্খলাবদ্ধ সেনাবাহিনী, ন্যায়নিষ্ঠ শাসননীতি এবং বিজিত জনগণের সাথে মানবিক আচরণের সমন্বিত ফল।

পারস্য জয়: পারস্যের সাসানীয় সাম্রাজ্য তখনকার বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সাম্রাজ্য ছিল। তবে ধারাবাহিক সংঘর্ষে তারা দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং ওমর (রা.)-এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী এই সুযোগকে কাজে লাগায়।

কাদিসিয়ার যুদ্ধ (৬৩৬ খ্রিঃ): এই ঐতিহাসিক যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী সাসানীয় সেনাদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে। যুদ্ধটি কয়েক দিন ধরে চলে এবং মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন সা'দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)।

নাহাওয়ান্দের যুদ্ধ (৬৪২ খ্রিঃ): “বিজয়ের বিজয়” নামে পরিচিত এই যুদ্ধের মাধ্যমে সাসানীয় সাম্রাজ্যের পতন সম্পূর্ণ হয়। পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যেই পারস্য সম্পূর্ণ মুসলিম শাসনের অধীনে আসে।এই বিজয় শুধু ভৌগোলিক বিস্তারই নয়, বরং ইসলামী সভ্যতার সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করে, কারণ পারস্যের উন্নত প্রশাসনিক পদ্ধতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ইসলামী রাষ্ট্রে যুক্ত হয়।

রোমান ভূখণ্ড জয়:পূর্ব রোমান বা বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যও তখন মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিশালী প্রভাব বিস্তার করছিল। তবে একাধিক যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী ধারাবাহিক সাফল্য অর্জন করে।

ইয়ামুকের যুদ্ধ (৬৩৬ খ্রিঃ): সিরিয়ার ইয়ামুক নদীর তীরে সংঘটিত এই যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী বিশাল বিজয় অর্জন করে, যার ফলে সিরিয়া এবং প্যালেস্টাইন মুসলিম শাসনের অধীনে আসে। এই যুদ্ধে খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) অসামান্য নেতৃত্বের পরিচয় দেন।

মিশর বিজয় (৬৩৯–৬৪২ খ্রিঃ): আমর ইবনে আস (রা.)-এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী মিশর জয় করে। মিশরের কপটিক খ্রিস্টান জনগণ রোমান শাসনের নিপীড়ন থেকে মুক্তি পেয়ে মুসলিম শাসনকে স্বাগত জানায়।

এই বিজয়গুলো মুসলিম রাষ্ট্রকে সমুদ্রপথে বাণিজ্য ও কৌশলগত অবস্থানে শক্তিশালী করে তোলে।

জেরুজালেম দখল:

জেরুজালেম ছিল খ্রিস্টান ও ইহুদিদের জন্য পবিত্র নগরী। ইয়ামুক যুদ্ধে বাইজান্টাইন বাহিনী পরাজিত হওয়ার পর নগরীর নেতারা আত্মসমর্পণের শর্তে ওমর (রা.)-এর কাছে চাবি হস্তান্তর করতে সম্মত হয়, তবে শর্ত ছিল যে, খলিফা নিজে এসে চাবি গ্রহণ করবেন।

ওমর (রা.) সাধারণ পোশাকে, এক উট ও একজন খাদেমসহ মদিনা থেকে জেরুজালেমে আসেন। তাঁর সরলতা, ন্যায়বিচার ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতা খ্রিস্টান নেতাদের মুগ্ধ করে। তিনি শহরে প্রবেশ করে খ্রিস্টান ও ইহুদিদের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দেন এবং তাঁদের উপাসনালয় রক্ষা করার নির্দেশ দেন। এই ঘটনা ইসলামী শাসনের সহিষ্ণুতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

সাফল্য ও অবদান

ন্যায়বিচারের প্রতীক – “আল-ফারুক”: ওমর (রা.)-এর অটল ন্যায়পরায়ণতার কারণে তিনি “আল-ফারুক” উপাধি লাভ করেন, যার অর্থ সত্য ও মিথ্যার মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্যকারী। তাঁর শাসনে ধনী-গরিব, মুসলিম-অমুসলিম—সকলের জন্য সমান বিচার নিশ্চিত করা হতো।

রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের আধুনিকীকরণ: তাঁর শাসনে প্রদেশভিত্তিক প্রশাসনিক কাঠামো, কর ব্যবস্থা, সেনাবাহিনীর রেজিস্ট্রি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, ডাক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। এটি ছিল মুসলিম বিশ্বের প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক সংস্কার।

সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা: তিনি দরিদ্র, এতিম, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের জন্য নিয়মিত ভাতা চালু করেন। যুদ্ধাহত সৈনিকদের জন্যও রাষ্ট্রীয় সহায়তার ব্যবস্থা করেন।

শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তার: নতুন অঞ্চলে মসজিদ ও মক্তব প্রতিষ্ঠা করে কুরআন শিক্ষা ও সাধারণ জ্ঞানচর্চার প্রসার ঘটান। বিজিত এলাকায় ইসলামী শিক্ষা ও স্থানীয় জ্ঞানের মেলবন্ধন ঘটাতে সহায়তা করেন।

ধর্মীয় সহিষ্ণুতা: বিজিত অমুসলিম জনগণকে তাঁদের ধর্ম পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা দেন এবং তাঁদের উপাসনালয় সংরক্ষণ করেন। তিনি চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা ও কর ব্যবস্থার মাধ্যমে মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে সহাবস্থান নিশ্চিত করেন।

রাস্তা ও অবকাঠামো উন্নয়ন: তিনি সড়ক, সেতু, কূপ, খাল এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা উন্নত করেন। ডাক ব্যবস্থা ও সীমান্ত প্রতিরক্ষা জোরদার করেন, যা বাণিজ্য, যোগাযোগ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।

শহীদ হওয়া

৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ফজরের নামাজ আদায়ের সময় এক অমুসলিম দাস আবু লুলু ফিরোজ তাঁকে ছুরিকাঘাত করে। কয়েকদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে তিনি শুরা কমিটি গঠন করে পরবর্তী খলিফা নির্বাচন করার নির্দেশ দেন। তাঁকে মদীনায় নবীজীর পাশে দাফন করা হয়।

ইতিহাসে স্থান ও প্রভাব

হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) কেবল ইসলামের দ্বিতীয় খলিফাই নন, তিনি ছিলেন এমন এক দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক, যিনি নেতৃত্ব, প্রশাসনিক প্রজ্ঞা ও নৈতিক দৃঢ়তার মাধ্যমে বিশ্ব ইতিহাসে স্থায়ী ছাপ রেখে গেছেন। তাঁর কঠোর ন্যায়বিচার, দৃঢ় প্রশাসন, স্বচ্ছ জবাবদিহিতা এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণে অবিচল মনোভাব তাঁকে মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে।

তাঁর শাসনকাল প্রমাণ করেছে যে একটি রাষ্ট্র কেবল সামরিক শক্তি বা ভূখণ্ড বিস্তারের মাধ্যমে নয়, বরং সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং নৈতিক শৃঙ্খলার মাধ্যমে স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ হতে পারে। ওমর (রা.) এমন এক কাঠামোগত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন, যেখানে প্রদেশভিত্তিক শাসন, করনীতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সামরিক সংগঠন এবং সামাজিক নিরাপত্তা একে অপরের সাথে সমন্বিত ছিল। এই মডেল পরবর্তী শতাব্দীগুলিতে মুসলিম সাম্রাজ্যের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।

আধুনিক ঐতিহাসিক, বিশেষত পশ্চিমা গবেষকরাও তাঁকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। ব্রিটিশ ঐতিহাসিক থমাস আর্নল্ড ও জর্জ সার্টন তাঁর শাসনকে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও নৈতিক নেতৃত্বের বিরল সমন্বয় বলে অভিহিত করেছেন। এমনকি অমুসলিম গবেষকরাও স্বীকার করেছেন, তাঁর শাসনব্যবস্থা ছিল অগ্রসরমান রাষ্ট্র পরিচালনার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

তাঁর নেতৃত্বে ইসলামী রাষ্ট্র শুধু ভূখণ্ডগতভাবে নয়, বরং প্রশাসনিক ও নৈতিক ক্ষেত্রেও এক সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী রূপ লাভ করে। তিনি রাষ্ট্রে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে যেমন কঠোর ছিলেন, তেমনি দরিদ্র, এতিম, বিধবা ও অমুসলিম নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় ছিলেন অসীম সহৃদয়। ফলে বিজিত অঞ্চলের অনেক জনগণ মুসলিম শাসনকে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করে, যা ইসলামের শান্তিপূর্ণ বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ওমর (রা.)-এর মৃত্যুর পরও তাঁর প্রবর্তিত নীতি, আইন ও সংস্কার শতাব্দীর পর শতাব্দী মুসলিম শাসনব্যবস্থায় কার্যকর ছিল। তাঁর ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা, এবং জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপ পরবর্তী খলিফা, শাসক ও নেতাদের জন্য আদর্শ হয়ে থাকে।

হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) ছিলেন এমন এক বিরল চরিত্র, যাঁর জীবন মুসলিম উম্মাহর জন্য অনন্ত অনুপ্রেরণা ও দিকনির্দেশনার উৎস। ইসলাম গ্রহণের আগে একজন দৃঢ় প্রতিপক্ষ থেকে তিনি রূপান্তরিত হয়েছিলেন ইসলামের এক অকুতোভয় রক্ষক ও সংস্কারক নেতায়। তাঁর খেলাফতের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল ঈমান, সাহস, ন্যায়বিচার, বিনয় এবং জনকল্যাণমূলক উদ্যোগের প্রতিফলন।

তিনি প্রমাণ করেছিলেন, একজন শাসকের শক্তি কেবল সামরিক ক্ষমতায় নয়, বরং ন্যায়পরায়ণতা, সততা, এবং প্রজাদের কল্যাণে নিবেদিত নেতৃত্বে নিহিত। তাঁর প্রতিষ্ঠিত নীতি ও দৃষ্টান্ত কেবল ইসলামী সভ্যতার সোনালি অধ্যায় রচনা করেনি, বরং মানব ইতিহাসেও আদর্শ রাষ্ট্রনায়কত্বের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তাঁর জীবন ও শাসন আজও আমাদের শেখায়—ন্যায় ও সত্যের পথে অবিচল থাকলে একটি জাতি শুধু টিকে থাকে না, বরং ইতিহাসে অমর হয়ে যায়।


জীবনে যা ঘটে সবই মুমিনের জন্য কল্যাণ: কোরআন-হাদিসের আলোকে চমৎকার ব্যাখ্যা

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৬ ১৯:৩১:৩৮
জীবনে যা ঘটে সবই মুমিনের জন্য কল্যাণ: কোরআন-হাদিসের আলোকে চমৎকার ব্যাখ্যা
ছবি: সংগৃহীত

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিপদ, কষ্ট, সুখ কিংবা দুঃখ যা কিছুই ঘটুক না কেন, অনেকেই বলে থাকেন, “জীবনে যা কিছু হয়, সবই ভালোর জন্য হয়।” এই বাক্যটি শুনে কেউ কেউ এটিকে কেবল সান্ত্বনার বুলি মনে করলেও, ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি গভীর তাওহীদ ও তাকদিরের প্রতি বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ। একজন প্রকৃত মুমিনের জীবনে যা কিছু ঘটে, সে তা আল্লাহর ফয়সালা হিসেবে মেনে নেয় এবং বিশ্বাস রাখে—তা অবশ্যই কোনো না কোনো কল্যাণের বাহক।

আল-কুরআনের সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৫৫-তে আল্লাহ তাআলা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, তিনি মানুষকে ভয়, ক্ষুধা, জান-মালের ক্ষতি এবং ফসলহানির মাধ্যমে পরীক্ষা করবেন। কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিয়েছেন, যাদের অন্তর দৃঢ় থাকে বিপদের সময়েও। এই আয়াতটি ইঙ্গিত করে, জীবনে যেসব প্রতিকূলতা আসে তা নিছক শাস্তি নয়, বরং তা ঈমানদারদের জন্য আত্মশুদ্ধি ও আত্মোন্নয়নের সুযোগ।

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, একজন মুমিনের সবকিছুতেই কল্যাণ নিহিত থাকে। যদি কোনো সুখকর ঘটনা ঘটে, সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে, ফলে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি কোনো কষ্ট হয়, সে ধৈর্য ধারণ করে, সেটিও তার জন্য মঙ্গলজনক হয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ২৯৯৯)। এই হাদিস স্পষ্টভাবে তুলে ধরে, কষ্টের মধ্যেও মুমিনের জন্য রয়েছে এক আধ্যাত্মিক লাভ ও সওয়াব।

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণিত অপর এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, একজন মুসলমানের শরীরে একটি কাঁটা বিদ্ধ হওয়া পর্যন্তও যদি কষ্ট সহ্য করে, তবে তার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারী ৫৬৪২; সহিহ মুসলিম ২৫৭৩)। এতে বোঝা যায়, প্রতিটি শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা এমনকি ক্ষুদ্রতম অসুবিধাও একজন মুমিনের জন্য আত্মশুদ্ধির একটি সুযোগ।


প্রতিদিন ১০০০ বার ইস্তিগফার করলে কী হয় জানুন

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৬ ১৮:১৮:৩১
প্রতিদিন ১০০০ বার ইস্তিগফার করলে কী হয় জানুন
ছবিঃ সংগৃহীত

ইসলামি আধ্যাত্মিক চর্চার অন্যতম শক্তিশালী ও পরীক্ষিত এক জিকির হলো “আস্তাগফিরুল্লাহ”। এটি শুধুমাত্র একটি বাক্য নয়, বরং একজন মুসলমানের জীবনে আত্মশুদ্ধি, অনুতাপ, এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক পরিশুদ্ধ পথ। অনেকেই বিশ্বাস করেন, যদি কেউ প্রতিদিন ১০০০ বার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ পাঠ করেন, তবে তার জীবনে অভাবনীয় পরিবর্তন আসে মানসিক, আধ্যাত্মিক ও পারলৌকিক প্রতিটি ক্ষেত্রে।

অতীতের ভুল থেকে মুক্তির পথ

"আস্তাগফিরুল্লাহ" শব্দটির অর্থই হলো, “আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।” প্রতিটি পাঠের মধ্য দিয়ে একজন মুমিন নিজ কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হন, এবং ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে নিজের আত্মাকে কলুষমুক্ত করার প্রয়াস চালান। হাদীসে এসেছে, প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) দিনে একাধিকবার আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করতেন, যদিও তিনি নিষ্পাপ ছিলেন। ফলে মুসলমানদের জন্য এটি এক অনন্য শিক্ষা পাপমোচনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পথ হলো নিয়মিত ও আন্তরিকভাবে ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ পাঠ করা।

মানসিক চাপ ও উদ্বেগ হ্রাসে কার্যকর

আধুনিক গবেষণাও দেখায়, নিয়মিত জিকির ও প্রার্থনা মস্তিষ্কের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। দুশ্চিন্তা ও হতাশা যখন একজন মানুষকে গ্রাস করে, তখন “আস্তাগফিরুল্লাহ” উচ্চারণ একটি তাৎক্ষণিক মানসিক প্রশান্তি এনে দিতে পারে। অনেক মুসলিম জবান দিয়ে বলেন, প্রতিদিন ১০০০ বার ইস্তিগফার তাদের জীবনে এমন এক মানসিক শক্তি দিয়েছে, যা কোন থেরাপি দিতে পারেনি।

আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ার সেতুবন্ধন

প্রতিটি ইস্তিগফারে একজন মুমিন আল্লাহর সামনে নিজেকে নতজানু করে তুলে ধরেন। এই আত্মসমর্পণের অনুভবই তাকে আল্লাহর রহমতের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসে। আত্মিক জীবনে যারা স্থবিরতা অনুভব করেন, তাদের জন্য ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ যেন এক নবজাগরণের ডাক। ইস্তিগফার হচ্ছে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছার দ্বার।

হৃদয়ের প্রশান্তি ও অন্তরের আলো

কুরআনুল কারিমে স্পষ্ট বলা হয়েছে: “নিশ্চয়ই, আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে।” (সূরা রা'দ, আয়াত ২৮)

এই আয়াতের তাৎপর্য দাঁড়ায় ইস্তিগফার শুধুমাত্র ক্ষমা পাওয়ার মাধ্যম নয়, বরং এটি এক গভীর আধ্যাত্মিক প্রশান্তির উৎস। যারা নিয়মিত ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ জপ করেন, তারা নিজেদের ভিতরে এক অদ্ভুত স্বস্তি ও মানসিক স্থিতি অনুভব করেন, যা বাহ্যিক দুনিয়ায় বিরল।


সহজ কিন্তু আল্লাহর কাছে প্রিয় দুটি দোয়া, পুরস্কার অফুরন্ত

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৬ ১১:১৫:৩০
সহজ কিন্তু আল্লাহর কাছে প্রিয় দুটি দোয়া, পুরস্কার অফুরন্ত

দোয়া—শব্দটি যদিও ছোট, কিন্তু এর গভীরতা ও প্রভাবের বিস্তৃতি অপরিসীম এবং পরিমাপ করা সত্যিই কঠিন। এটি প্রভু ও বান্দার মাঝে একটি শক্তিশালী সেতু হিসেবে কাজ করে, যেখানে একজন নিঃস্ব ও ছোট এক মানুষ হৃদয় থেকে বিনীত অনুনয়-বিনয়ের মাধ্যমে মহান মালিকের করুণা প্রার্থনা করে এবং স্নেহপূর্ণ মনিব সেই চাওয়া পূরণ করেন। দোয়া হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য এক অনন্য উপহার এবং মুমিনদের জন্য শক্তিশালী অস্ত্র, যা সকল অসাধারণ ক্ষমতার বাইরে থেকে কাজ শুরু করে।

আরবি ভাষায় ‘দোয়া’ শব্দের অর্থ হলো ডাকা, আহ্বান করা, প্রার্থনা করা বা কোনো কিছু চাওয়া। মহানবী মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘দোয়া ছাড়া আল্লাহর ইচ্ছা পরিবর্তন সম্ভব নয়।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২১৩৯)। তাই দোয়া সব ইবাদতের মূল ভিত্তি এবং তা ইসলামী জীবনাচরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেছেন, এমন দুটি বাক্য রয়েছে যা উচ্চারণে সহজ হলেও, সওয়াবের মাত্রায় অত্যন্ত ভারী এবং আল্লাহর কাছে বিশেষ পছন্দনীয়। এগুলো হলো, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম’ যার অর্থ ‘মহান সেই আল্লাহ ও তাঁর সমস্ত প্রশংসা, যিনি সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৪০৬)।

আরেকটি হাদিসে হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি’ পাঠ করে, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুরগাছ রোপণ করা হয়। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৬৪)। এই হাদিসগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, দোয়া ও আল্লাহর নাম জপ করার মাধ্যমে আমরা শুধু আত্মার প্রশান্তি পাই না, বরং অনন্ত পুরস্কারেরও অংশীদার হতে পারি।


ইবাদাতে আগ্রহ ফেরাতে ৯টি শক্তিশালী টিপস!

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৬ ১০:৪৭:৫৯
ইবাদাতে আগ্রহ ফেরাতে ৯টি শক্তিশালী টিপস!

মানুষ যখন দুনিয়ার ব্যস্ততা, হতাশা বা পাপের ধাক্কায় ইবাদাতে গাফেল হয়ে পড়ে, তখন মনে অজানা এক অনীহা কাজ করে। এই অনীহা কখনো হৃদয়ের ক্লান্তি থেকে আসে, কখনো শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে, আবার কখনো আসে জীবনের ভারসাম্যহীনতা থেকে। তবে আশার কথা হলো এই অবস্থা অতিক্রম করা সম্ভব। আল্লাহর সাহায্য চাইলে তিনি কখনোই বান্দাকে ফিরিয়ে দেন না। নিচে এমন কিছু বাস্তব, আত্মোপলব্ধিমূলক এবং আধ্যাত্মিক টিপস তুলে ধরা হলো, যা অনুসরণ করলে ইবাদাতে আগ্রহ ফিরে আসতে পারে, অন্তরে প্রশান্তি নেমে আসতে পারে:

১. অনীহার উপলব্ধি এবং আন্তরিক প্রার্থনা

প্রথম কাজ হলো নিজে উপলব্ধি করা ইবাদাতে আমার আগ্রহ কমে গেছে। এই উপলব্ধি কোনো ব্যর্থতা নয়, বরং এটি ইবাদাতে ফিরে যাওয়ার প্রথম পদক্ষেপ। এরপর আল্লাহর দরবারে কাঁদতে হবে, তাঁর কাছে আকুতি করতে হবে “হে আল্লাহ, আপনি আমাকে আপনার ইবাদাতে ফিরিয়ে নিন।” রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শেখানো দু’আটি হতে পারে সবচেয়ে উপযোগী: “আল্লাহুম্মা আইন্নি আ’লা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিক।”

এই দোয়াটি কেবল ঠোঁটের উচ্চারণে নয়, বরং হৃদয়ের গভীর থেকে অনুভব করে করা উচিত।

২. অন্তর বিশ্লেষণ ও পাপ পরিহার

ইবাদাতে অনীহার পেছনে থাকতে পারে অজানা বা গোপন কোনো পাপ। তাই নিজের আমল পর্যালোচনা করা প্রয়োজন কোনো পাপ হচ্ছে কিনা, কোনো ভুল পথে হেঁটে যাচ্ছি কিনা। যদি পাওয়া যায়, তবে সেগুলো থেকে তওবা করা এবং ভবিষ্যতে বেঁচে থাকার প্রতিজ্ঞা করা জরুরি।

৩. ইবাদাত ছাড় না দেওয়া, ধরে রাখা

অনীহা এলেও ইবাদাত ছেড়ে দেওয়া যাবে না। কখনো মনে হবে আজ নামাজে মন বসবে না, তবুও পড়তে হবে। জোর করে হলেও আল্লাহর কাছে দাঁড়াতে হবে। ইবাদাত শেষে দেখবেন, অন্তরে হালকা প্রশান্তির অনুভব আসছে।

৪. অজানা পাপ থেকে মুক্তির জন্য তওবা ও ইস্তেগফার

কখনো এমনও হয় কোনো গুনাহ আমাদের অজান্তেই ইবাদাতে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই নিয়মিতভাবে ইস্তেগফার করা উচিত এবং নিয়ত করে বলতে হবে “হে আল্লাহ, যদি অজান্তে কোনো পাপ করে থাকি, আমাকে ক্ষমা করুন।”

৫. ছোট ছোট আমলের গুরুত্ব অনুধাবন

সব সময় বড় আমল করা সম্ভব নয়। কিন্তু ছোট ছোট আমলও অত্যন্ত মূল্যবান। যেমন আজানের জবাব দেওয়া, অযুর পর দু’আ, সালাতের পর জিকির ইত্যাদি। বড় আমল না হলেও ছোট আমল যেন অবহেলায় না ছুটে যায়, সে বিষয়ে সচেতন থাকা প্রয়োজন।

৬. ধার্মিক বন্ধুদের সঙ্গ ও আলোকিত পরিবেশ

যদি সম্ভব হয়, কোনো ধর্মপ্রাণ ও নেককার মানুষের সহবতে যাওয়া। তা সম্ভব না হলে অন্তত একজন দ্বীনদার বন্ধুর সঙ্গে ঈমানি আলোচনা করা। কখনো কখনো এক-আধটু কথা হৃদয়ে আলো জ্বালাতে পারে।

৭. আল্লাহর স্মরণে রেগুলার মজলিসে অংশগ্রহণ

যেখানে আল্লাহর কথা হয়, নবীজির জীবনী আলোচনা হয়, কুরআন ও হাদিস পাঠ হয়—সেইসব মজলিসে নিয়মিত অংশ নেওয়া। এমন পরিবেশ হৃদয়কে জাগিয়ে তোলে।

৮. নাফসের নিয়ন্ত্রণ ও আত্মসংযম

নাফসের দাবির পেছনে ছুটে ইবাদাতের প্রতি অনীহা জন্মায়। ‘যা ইচ্ছা করব, যতক্ষণ ইচ্ছা ঘুমাবো, যা খুশি খাব’ এই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আত্মসংযমের চর্চা করতে হবে, যাতে ইবাদাতে মন বসে।

৯. ‘মন চায় না’ বলেই থেমে যাওয়া নয়

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মন চাইলেও করবো, না চাইলেও করবো। নিজেকে জোর করে দাঁড় করাবো। কারণ শয়তান চায় আমরা ইবাদাত ছেড়ে দিই। তাই মনে ইচ্ছা না থাকলেও আল্লাহর জন্য নিজেকে ঠেলে এগিয়ে নেওয়া সবচেয়ে মূল্যবান ইবাদাত।

শেষ কথা হলো ইবাদাতের সময় যদি অনীহা থাকেও, তবুও তা শেষ করলে দেখা যাবে, এক ধরনের অদ্ভুত প্রশান্তি হৃদয়ে নেমে এসেছে। সেই প্রশান্তিই প্রমাণ করে আল্লাহ আমাদের দিকে ফিরেছেন। তাই দেরি না করে, আজ থেকেই এই অনীহাকে জয় করতে শুরু করুন।


মৃত্যুর পর মানুষের ৯টি করুণ আফসোস

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৬ ০৮:৫৯:১৫
মৃত্যুর পর মানুষের ৯টি করুণ আফসোস

মানুষের জীবনের সবচেয়ে গভীর উপলব্ধিগুলো আসে তখন, যখন আর কিছুই করার থাকে না- মৃত্যুর পরে। কোরআনে এমনই কিছু হৃদয়বিদারক অনুশোচনার কথা এসেছে, যা পরকালীন বাস্তবতার দিকে আমাদের দৃষ্টি ফেরায়। কিয়ামতের দিন, যখন প্রতিটি ব্যক্তি তার কৃতকর্মের ফলভোগে অক্ষম, তখন তার হৃদয়জুড়ে তৈরি হয় অসীম পেছানোর যন্ত্রণা, হতাশা ও দুঃখ। নিচে কোরআনের বিভিন্ন সূরার আলোকে সেই ৯টি মারাত্মক আফসোস তুলে ধরা হলো, যা মানুষ মৃত্যুর পরে করবে- যা আজই আমাদের চিন্তাজগতে নাড়া দেওয়ার মতো।

১. "হায়! আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম!" – (সূরা আন-নাবা, ৪০)এটি একজন কুফরকারীর সর্বশেষ চরম হতাশা। কেয়ামতের ভয়াবহতা, বিচার ও শাস্তির মুখোমুখি হয়ে সে এমন আকুতি করবে যেন সে অস্তিত্বহীন থাকত। এই বাক্যটি প্রকাশ করে, তারা কতটা ভীত, অসহায় ও দিশেহারা হয়ে পড়বে।

২. "হায়! যদি আমি পরকালের জন্য কিছু করতাম!" – (সূরা আল-ফজর, ২৪)মানুষ যখন মৃত্যুর পর উপলব্ধি করবে যে দুনিয়ার ভোগ-বিলাসে ডুবে থেকে আখিরাতের জন্য কিছুই সংরক্ষণ করেনি, তখন এই অনুশোচনার আগুনে জ্বলবে। তখন আর ফিরে যাওয়ার পথ থাকবে না।

৩. "হায়! আমাকে যদি আমার আমলনামা না দেওয়া হতো!" – (সূরা হাক্কাহ্, ২৫)গোনাহগাররা তাদের কর্মফল হাতে পেয়ে আতঙ্কিত হবে। তারা চাইবে যেন তাদের জীবনের সকল কর্মমালা গায়েব হয়ে যেত। আমলনামার প্রতিটি লাইন তাদের জন্য হয়ে উঠবে শাস্তির দলিল।

৪. "হায়! আমি যদি শয়তানকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করতাম!" – (সূরা ফুরকান, ২৮)সেইসব মানুষ যারা দুনিয়াতে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে গোনাহে জড়িত ছিল, তারা আফসোস করবে কেন তারা সেই পথ অবলম্বন করেছিল। দুনিয়ার মিথ্যা আরামে ডুবে তারা শয়তানকেই পথপ্রদর্শক মেনে নিয়েছিল।

৫. "হায়! আমরা যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করতাম!" – (সূরা আহযাব, ৬৬)তাদের এই আফসোস দেখায়, কিভাবে তারা নিজেদের হাতে নিজেদের ধ্বংস ডেকে এনেছিল। আল্লাহ ও রাসূলের স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও অবাধ্যতা তাদের শেষ করে দেয়।

৬. "হায়! আমি যদি রাসূলের পথ অনুসরণ করতাম!" – (সূরা ফুরকান, ২৭)সত্যের দরজা যখন খোলা ছিল, তখন তারা বেছে নেয় অন্য পথ। কিয়ামতের দিন তাদের আফসোস হবে কেন তারা হেদায়েত ও নবীর পথ পরিত্যাগ করেছিল।

৭. "হায়! আমি যদি তাদের সঙ্গে থাকতাম, তাহলে আমি বিজয়ী হতাম!" – (সূরা আন-নিসা, ৭৩)যারা দুনিয়াতে দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশ নেয়নি, বরং নিজেকে নিরাপদে রেখেছিল, তারা আফসোস করবে কেন তারা আল্লাহর রাস্তায় আত্মত্যাগে পিছপা হয়েছিল।

৮. "হায়! আমি যদি আমার প্রভুর সঙ্গে কাউকে শরীক না করতাম!" – (সূরা কাহাফ, ৪২)শিরকের ভয়াবহ ফল বুঝতে পারবে তখন, যখন আর কোন সুযোগ থাকবে না। যারা দুনিয়াতে মূর্তিপূজা বা আত্মমুগ্ধতায় নিমগ্ন ছিল, তারা তখন বুঝবে তাদের গন্তব্য কত ভয়ংকর।

৯. "হায়! যদি আমাদের আবার দুনিয়াতে ফেরত পাঠানো হতো!" – (সূরা আনআম, ২৭)তারা অনুরোধ করবে নতুন সুযোগের জন্য, প্রতিজ্ঞা করবে তারা এবার সত্য গ্রহণ করবে, আল্লাহর পথে চলবে। কিন্তু এটি হবে ব্যর্থ আকুতি। কারণ ফিরে যাওয়ার দরজা চিরতরে বন্ধ।

এই ৯টি আফসোস শুধু মৃতদের নয় জীবিতদের জন্য কঠিন সতর্কবার্তা। প্রতিটি আয়াতে এমন এক বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে, যা আমাদের আত্মজিজ্ঞাসায় ডুব দেয়: আমরা কি সেই অনুশোচনার তালিকায় থাকতে চাই?


রিজিকে বরকত কমে যাওয়ার কারণ ও করণীয়: কোরআন-হাদিসের আলোকে সতর্কতা

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৪ ১৮:০৫:৫৮
রিজিকে বরকত কমে যাওয়ার কারণ ও করণীয়: কোরআন-হাদিসের আলোকে সতর্কতা

রিজিক বা জীবিকার সংস্থান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামত। হালাল রিজিক শুধু জীবন ধারণের মাধ্যম নয়, বরং ইবাদত কবুলেরও অন্যতম শর্ত। আমাদের দেশের বহু মানুষ পরিশ্রম করে হালাল রিজিক উপার্জন করেন। তবে অনেক সময় দেখা যায়, পরিশ্রম সত্ত্বেও আয়-রোজগারে বরকত থাকে না, রিজিক কমে যেতে থাকে। এর পেছনে রয়েছে কিছু কারণ, যেগুলো সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে সতর্ক করা হয়েছে।

আল্লাহতায়ালা কোরআনে বলেন—

“তোমার রব যাকে ইচ্ছা রিজিক দেন প্রশস্তভাবে, আবার যাকে ইচ্ছা দেন সীমিত করে। কিন্তু অনেক মানুষই এটা বুঝে না।” (সুরা সাবা: ৩৬)

চলুন জেনে নিই— রিজিকে বরকত কমে যাওয়ার প্রধান কারণগুলো কী এবং কীভাবে তা থেকে বাঁচা যায়:

১. হারাম উপার্জন

কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী, রিজিক কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হারাম পথে উপার্জন করা। আল্লাহ বলেন—“হে মানবজাতি, তোমরা পৃথিবী থেকে হালাল ও পবিত্র বস্তু ভক্ষণ কর।” (সুরা বাকারা: ১৬৮)

নবীজি (সা.) বলেছেন—“যে ব্যক্তি হালাল ও বৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন করে, তাকে বরকত দান করা হয়।” (মুসলিম: ১০৫২)

২. পাপ কাজে লিপ্ত থাকা

অবিরত পাপাচার রিজিক কমিয়ে দেয়।হাদিসে এসেছে—“সৎকর্ম আয়ু বাড়াতে পারে এবং দোয়া তাকদির পরিবর্তন করতে পারে। আর পাপের কারণে মানুষ প্রাপ্য রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়।” (ইবনে মাজাহ: ৪০২২)

৩. সুদের কারবারে জড়িয়ে পড়া

সুদের লেনদেন ব্যবসার বরকত ধ্বংস করে দেয়।আল্লাহ বলেন—“আল্লাহ সুদকে ধ্বংস করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন।” (সুরা বাকারা: ২৭৬)

৪. প্রতারণা ও মিথ্যা কসম

প্রতারণা বা মিথ্যা কসম ব্যবসার বরকত নষ্ট করে।রাসুল (সা.) বলেন—“মিথ্যা কসমে পণ্য বিক্রি হয়, কিন্তু বরকত নষ্ট হয়ে যায়।” (মুসলিম: ১৬০৭)

৫. অকৃতজ্ঞতা

প্রাপ্ত নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা না জানালে রিজিক কমে যেতে পারে।আল্লাহ বলেন—“আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তবে মনে রেখো, আমার শাস্তি বড়ই কঠোর।” (সুরা ইবরাহিম: ৭)

রিজিকে বরকত পাওয়ার জন্য হালাল উপার্জনের পাশাপাশি আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা জানানো, পাপ ও প্রতারণা থেকে বিরত থাকা এবং সুদ ও হারামের পথ পরিহার করা জরুরি। তাহলেই জীবনে শান্তি, বরকত ও সফলতা আসতে পারে।

/আশিক


রাসুলের (সা.) হাসির পেছনের রহস্য: জান্নাতপ্রাপ্ত সেই শেষ মানুষটি

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৪ ১২:৩৯:২৯
রাসুলের (সা.) হাসির পেছনের রহস্য: জান্নাতপ্রাপ্ত সেই শেষ মানুষটি
ছবিঃ সংগৃহীত

ইসলাম ধর্মে জান্নাত এবং জাহান্নাম বিষয়ক শিক্ষাগুলো গভীর আধ্যাত্মিক ও নৈতিক গুরুত্ব বহন করে। বিশেষ করে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসসমূহে আল্লাহর করুণা, রহমত ও বিচারবিধির সূক্ষ্ম ও গভীর দিকসমূহ স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এসব বর্ণনার মধ্যে অন্যতম একটি হলো “শেষ জাহান্নামী” এবং “সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী” ব্যক্তির সংক্রান্ত বর্ণনা, যা আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত পবিত্র কুদসী হাদিসে পাওয়া যায়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি যিনি সর্বশেষ জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবেন, সে একসময় জাহান্নামের গভীর থেকে হামাগুড়ি দিয়ে উঠে আসবেন। এই ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে প্রবেশের আদেশ দেবেন। সে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং সেখানে জান্নাতকে সম্পূর্ণ ও পরিপূর্ণ অনুভব করবে।

কিন্তু এরপরও সে ফিরে এসে আবার আল্লাহর নিকট জান্নাতের সেই দৃশ্যের বর্ণনা দেবে এবং জানাবে যে, সে জান্নাত পূর্ণ পেয়েছে। তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে পুনরায় জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেবেন এবং পুনরায় জান্নাতের পূর্ণতা ধারণ করতে বলবেন। এই ঘটনাটি কয়েকবার পুনরাবৃত্তি হবে। সর্বশেষ আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের এমন এক অংশের স্বাদ দেবেন, যার আয়তন দুনিয়ার সমান অথবা তার দশগুণ বিশাল।

এই অপার মহিমা দেখে সে অবাক হয়ে বলবে, “হে আমার রব! আপনি কি আমার সঙ্গে মজা করছেন, নাকি আমাকে নিয়ে হাসছেন? অথচ আপনি রাজাধিরাজ।” এমন প্রশ্নের মধ্যে রয়েছে মানুষের চরম বিস্ময় ও আনন্দের অনুভূতি, যা মানুষের সীমাবদ্ধ বোধগম্যতার বাইরে।

রাসুল (সা.) নিজেও এই বর্ণনা শোনার সময় হাসলেন, তার হাসি এতটা প্রাণবন্ত ছিল যে, তার মাড়ির দাঁতগুলো প্রকাশ পেল। এরপর এ বলা হয়, “এ হচ্ছে মর্যাদার বিবেচনায় সবচেয়ে নিম্ন জান্নাত।”

আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী যখন আল্লাহর কাছে যাবতীয় আকাঙ্খা ও প্রার্থনা উপস্থাপন করবেন, আল্লাহ তায়ালা তাকে অনবরত দান করে যাবেন যতক্ষণ না তার আর কোনো চাওয়ার অবকাশ থাকবে না। পরিশেষে আল্লাহ তায়ালা তাকে স্মরণ করিয়ে দিবেন যে, তার জন্য আরও অনেক কিছু রয়েছে এবং তা দশগুণ বৃদ্ধি সহ তাকে প্রদান করা হবে।

এই বর্ণনা মানব জীবনের চাওয়া-প্রার্থনার সীমা ও আল্লাহর অফুরন্ত দানের অসীম ক্ষমতার এক অসাধারণ প্রকাশ। এখানে স্পষ্ট যে, জান্নাতের আনন্দ ও পরিতৃপ্তি মানুষের সর্বোচ্চ আকাঙ্খাকে ছাড়িয়ে যায়।


প্রতিদিন সাতটি আজওয়া খেজুর: হাদিসে সুপারিশ ও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০২ ১০:১২:৩২
প্রতিদিন সাতটি আজওয়া খেজুর: হাদিসে সুপারিশ ও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ

আজওয়া খেজুর: সুন্নাহভিত্তিক বরকতময় খাদ্য, যাদু ও বিষ থেকেও রক্ষা করে আজওয়া খেজুরকে শুধু পুষ্টিকর ফল নয়, বরং বরকতময় সুন্নাহ হিসেবেও গণ্য করা হয়। ইসলামি শিক্ষায় এই খেজুরের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি হাদিস অনুযায়ী, নিয়মিত সাতটি আজওয়া খেজুর খেলে যাদু ও বিষের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে—

“যে ব্যক্তি প্রত্যেক দিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খায়, সেদিন কোনো বিষ ও যাদু তার ক্ষতি করতে পারবে না।”—সহিহ বুখারি (৫৪৪৫), সহিহ মুসলিম (২০৪৭)

এই হাদিসটি কেবল আধ্যাত্মিক নিরাপত্তার কথা বলেই থেমে যায়নি; এটি মুসলিম সমাজে স্বাস্থ্য রক্ষার একটি সুন্নাহ অভ্যাস হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

আধ্যাত্মিক গুরুত্বের পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক সত্যতা

আধুনিক গবেষণাগুলোও আজওয়া খেজুরের উপকারিতা নিশ্চিত করেছে। বিশেষ করে এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং রোগপ্রতিরোধী উপাদানগুলো মানবদেহে বিষক্রিয়া প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে—

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান হিসেবে এতে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েডস ও পলিফেনলস, যা শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান দূর করতে সহায়তা করে।

অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ শরীরের সুরক্ষা দেয় বিভিন্ন জীবাণু আক্রমণ থেকে।

ইমিউনোস্টিমুল্যান্ট ক্ষমতা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখে।

এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিদিন গড়ে ২.৭ গ্রাম আজওয়া খেজুর খেলে রক্তে কোলেস্টেরল কমে ও হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। (Hussain et al., 2023; PMC10274311)

আরও এক গবেষণা বলছে, এটি ডায়াবেটিস, লিভার এবং কিডনি সমস্যার প্রতিরোধেও সহায়ক হতে পারে। (Al-Yahya et al., 2016; PMID: 27134893)

সুন্নাহ ও বিজ্ঞান যেখানে মিলে যায় আজওয়া খেজুর ইসলামের সুন্নাহভিত্তিক খাদ্যতালিকার অংশ হলেও এটি আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানেও স্বীকৃত একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। যারা নিয়মিত এই খেজুর খেয়ে থাকেন, তারা শুধু আধ্যাত্মিকভাবেই নয়, বরং শারীরিকভাবেও উপকৃত হন।

সারকথা, আজওয়া খেজুর এমন একটি ফল, যা সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং বহু গুণে পরিপূর্ণ। ইসলামী শিক্ষা ও আধুনিক গবেষণা এই বিষয়ে একমত—আজওয়া খেজুর আমাদের জন্য বরকতের পাশাপাশি স্বাস্থ্যরক্ষার একটি কার্যকর উপায়।

/আশিক

পাঠকের মতামত: