ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

সাকিব আল হাসান: মাঠের বাইরের লড়াই ও বিতর্কে জর্জরিত এক ‘অলরাউন্ড’ জীবন

২০২৫ এপ্রিল ১৮ ১৪:৩৩:২২
সাকিব আল হাসান: মাঠের বাইরের লড়াই ও বিতর্কে জর্জরিত এক ‘অলরাউন্ড’ জীবন

সত্য নিউজ: বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয়, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারসাকিব আল হাসান শুধু খেলোয়াড়ই নন—তিনি রাজনীতিবিদ, উদ্যোক্তা এবং সাম্প্রতিক সময়ে নানা বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুও। ক্রিকেট মাঠে যেমন দক্ষতায় বারবার নিজেকে প্রমাণ করেছেন, ঠিক তেমনি মাঠের বাইরে নানা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে শিরোনামে থেকেছেন তিনি। তবে গত কয়েক মাসে তার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ ও মামলা, দেশ ত্যাগ, সম্পদ জব্দ—সব মিলিয়ে শাকিবের জীবন যেন এক নতুন অধ্যায়ের মুখোমুখি।

ব্যবসা-বাণিজ্যে সাকিব: লাভ না লোকসান?

সম্প্রতি দেশের একটি ইংরেজি দৈনিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারেসাকিব আল হাসান বলেন, তিনি মূলত দুটি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত—একটি কাঁকড়ার খামার এবং অন্যটি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ।সাকিব জানান, “ক্রিকেট ছাড়া অন্য কিছুর প্রতি তেমন মনোযোগ দিতে পারিনি, স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসা ও লাভেও মনোযোগ ছিল না।”

কাঁকড়ার খামার সম্পর্কে তিনি বলেন, করোনা মহামারির আগে এই ব্যবসায় ভালো অবস্থানে ছিলেন। কিন্তু কোভিড-পরবর্তী ক্ষতি, উৎপাদন থেমে যাওয়া এবং লোকসানের কারণে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। তার দাবি, “আমি খামারটির মাত্র ৩৫ শতাংশ মালিক। বাকি ৬৫ শতাংশ অন্যদের হলেও, ভুলের দায় একমাত্র আমার ওপর চাপানো হচ্ছে।” তিনি অভিযোগ করেন, প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া সাড়ে চার কোটি টাকার ঋণে তার অংশ মাত্র ১.২ কোটি টাকা হলেও, তার সম্পত্তি যেভাবে ক্রোক করা হয়েছে, সেটি অপ্রত্যাশিত।

শেয়ারবাজার নিয়েও তার বক্তব্য স্পষ্ট। “বাংলাদেশের স্টক মার্কেটে কীভাবে কারসাজি করতে হয়, আমি জানি না। আমার ফোনে কোনো ট্রেডিং অ্যাপও নেই,” বলেন সাকিব। তিনি দাবি করেন, “আমি বিনিয়োগের জন্য একজনকে টাকা দিয়েছিলাম, কিন্তু পুরো টাকাটাই লোকসানে যায়।”

মামলার মুখে সাকিব: আত্মপক্ষ সমর্থনে স্পষ্ট বার্তা

বর্তমানেসাকিবের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অভিযোগ—শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি, জুয়া ব্যবসা, কাঁকড়া ব্যবসায় প্রতারণা, নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপন, এমনকি আদাবরে একটি হত্যা মামলার আসামিও হয়েছেন তিনি। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তার বিরুদ্ধে ৬টি অভিযোগের তদন্তের আবেদন জমা পড়েছে।

এই পরিস্থিতিতে সাকিব বলেন, “আমি কিছুই লুকাচ্ছি না কিংবা কোনো কিছু চুরি করে পালিয়ে যাচ্ছি না। যদি তদন্তের স্বার্থে দেশে আসতে হয়, আমি খুশিমনে প্রস্তুত।”

রাজনীতিতে পা রাখা: ভুল না অভিপ্রায়?

২০২৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাগুরা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাকিব। রাজনীতিতে আসা নিয়ে প্রশ্ন তুললে তিনি বলেন, “রাজনীতিতে যোগ দেওয়া যেকোনো নাগরিকের অধিকার। আমি বিশ্বাস করি, আমি আমার এলাকার মানুষের জন্য কিছু করতে পারি বলেই এসেছি।”

তবে পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ক্রিকেটেই মনোযোগ দিতে বলেন।সাকিব জানিয়েছেন, “আমি সে পরামর্শ মেনে চলেছি। আমার কোনো গোপন এজেন্ডা ছিল না। আমার পরিকল্পনা ছিল চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলে ধীরে ধীরে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া।”

জীবনের ভারসাম্য: রাজনীতি, ব্যবসা ও ক্রিকেট

সাকিবের কথায় উঠে আসে এক কঠিন বাস্তবতা—“আমি রাজনীতিতে মাত্র ছয় মাস ছিলাম, তার মধ্যে তিন দিন মাগুরায় ছিলাম। বাকিটা সময় ক্রিকেট খেলেছি বা দেশের বাইরে ছিলাম। তাহলে কখন ঠিকঠাক রাজনীতি করলাম?” মাঠের অলরাউন্ডারের জীবন যেন এখন বাস্তব জীবনেও হয়ে উঠেছে একই রকম ভারসাম্যের লড়াই।

সাকিব আল হাসান এখন এক সংকটময় সময় পার করছেন, যেখানে মাঠের বাইরের পরিস্থিতি তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারকেও ছায়া দিতে পারে। তবে তার বক্তব্যে একরকম দৃঢ়তা রয়েছে—অপরাধ না করে থাকলে শাস্তির যোগ্য নন তিনি। এখন দেখার বিষয়, মাঠের বাইরে এই লড়াইয়ে তিনি কতটা সফল হতে পারেন।