‘গাড়ি চলার আগেই তেল শেষ’—উন্নয়ন ব্যয়ের ব্যঙ্গচিত্রে বাণিজ্য উপদেষ্টা

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৬ ১২:৫১:৪৬
‘গাড়ি চলার আগেই তেল শেষ’—উন্নয়ন ব্যয়ের ব্যঙ্গচিত্রে বাণিজ্য উপদেষ্টা

দেশে অবকাঠামো উন্নয়নের নামে বিপুল পরিমাণ অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হয়েছে—এমন মন্তব্য করে কড়া সমালোচনা করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ‘যেমন কেউ গাড়ি কেনার আগে ভাবে তেল খরচ কেমন হবে, আমাদের রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে সে চিন্তা নেই। এমন গাড়ি কেনা হয়েছে যার তেল আধারাস্তায় ফুরিয়ে যায়, পরে ভিক্ষা করতে হয় আইএমএফের কাছে।’

বুধবার (২৫ জুন) অর্থ ও বাণিজ্যবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘অটোমোবাইল পলিসি ফর গ্রিন গ্রোথ অ্যান্ড কম্পিটিটিভ ইকোনমি’ শীর্ষক সেমিনারে এসব মন্তব্য করেন তিনি।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, "আমরা পদ্মা সেতু, এমআরটি, কর্ণফুলী টানেল—একটার পর একটা প্রকল্প করছি, কিন্তু একবারও ভাবিনি এই 'গাড়ি' কতদূর চলবে। আমাদের যে উন্নয়ন হয়েছে, তার বড় অংশই অপ্রয়োজনীয় এবং অপচয়মূলক।"

তিনি আরও বলেন, “আগে এক টাকার কাজ ২০ টাকায় হতো, তাও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে। এ ভুলগুলো এখনই সংশোধন করতে হবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।”

তিনি দেশের লজিস্টিক খাতের দুর্বলতার কথাও তুলে ধরেন। তার ভাষায়, “বাংলাদেশে পণ্যের বাজার ১৫০ বিলিয়ন ডলারের হলেও, আমাদের নিজস্ব কোনো লজিস্টিক কাঠামো নেই। ফলে প্রতি বছর ১০ কোটি টন খাদ্য আমদানির পরেও লজিস্টিক ব্যয় উন্নত বিশ্বের চেয়েও বেশি।”

এক সময় গঞ্জ বা বাজার কেন্দ্রিক অঞ্চলগুলো ছিল স্থানীয় লজিস্টিক হাব, যা এখন বিকল হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। "আমাদের ২০০টি নদী আছে—যদি সেগুলো ব্যবহার করা যেত, তাহলে ভবিষ্যৎ আরও সুন্দর হতো।"

অটোমোবাইল শিল্প নিয়েও উপদেষ্টার সমালোচনা ছিল তীব্র। তিনি বলেন, “একসময় গাড়ি উৎপাদনের নামে শুধু চারটা চাকা লাগানো হতো, অথচ বডি আসত বিদেশ থেকে। এত বছরেও খাতটিতে দৃশ্যমান মানোন্নয়ন হয়নি।”

সেমিনারে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত পরিবহন খাতের শৃঙ্খলা নিশ্চিত না হবে, ততক্ষণ লজিস্টিক খরচ কমবে না। এজন্য বড় ও সুসংহত নীতি দরকার।”

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, “গণপরিবহন ছাড়া দেশের উন্নয়ন চিন্তাই করা যায় না। বড় গাড়িতে বসে থাকা লোকগুলো যদি একদিন গণপরিবহনে উঠে, তখনই বোঝা যাবে উন্নয়ন কীভাবে ঘটছে।”

তিনি নীতিগত স্থিতিশীলতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। "বারবার পলিসি পরিবর্তনের ফলে ব্যবসায়ীরা অনিশ্চয়তায় পড়েন, সরকার ব্যবসায়ী স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, অথচ বৃহৎ চিত্র ভুলে যায়।"

রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আবদুল হক অভিযোগ করেন, “বর্তমান নীতির কারণে আমরা এখন শুধু জাপান থেকেই গাড়ি আনতে পারি। ছোট গাড়িতে কর বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষ তা কিনতে পারে না। কর কমালে রাজস্ব কমবে না, বরং আমদানি বাড়বে।”

উত্তরা মোটরসের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, “দেশে গাড়ি সংযোজনে ভ্যালু এডিশন হয় না। কারণ, এনবিআর নীতিমালায় এত জটিলতা তৈরি করেছে যে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও এগিয়ে আসেনি।”

সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ। সভায় সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

—সত্য প্রতিদিন/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

আমেরযত কাহিনি

আমেরযত কাহিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ ‘আম’ শুধু একটি ফল নয়, বরং এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে গভীরভাবে প্রোথিত এক... বিস্তারিত