নির্বাচনের দিন জেনে তবেই অর্থ ছাড়—আইএমএফের শর্ত ফাঁস করলেন উপদেষ্টা

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশে তাদের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় জানতে চেয়েছিল বলে জানিয়েছেন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে—এই নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই আইএমএফসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা বাজেট সহায়তার অর্থ ছাড় করতে শুরু করেছে।

বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। এর দুই দিন আগে আইএমএফের নির্বাহী বোর্ড চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি মিলিয়ে ১.৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১৩৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার) ছাড়ের অনুমোদন দিয়েছে। এর আগে বিশ্বব্যাংক ৫০ কোটি, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৯০ কোটি এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ৪০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা অনুমোদন করেছে—যার অর্থ ৩০ জুনের মধ্যে ছাড় হওয়ার কথা রয়েছে।

আইএমএফ অর্থ ছাড়ের পাশাপাশি তাদের বিবৃতিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অর্থ উপদেষ্টা এ প্রসঙ্গে বলেন, “সংস্কার বা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সফল করতে রাজনৈতিক পরিবেশই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখন একটি নির্দিষ্ট নির্বাচনী সময় জানানো হয়েছে, এতে আইএমএফসহ অন্যান্য সংস্থা সন্তুষ্ট।”

তিনি আরও বলেন, “তাদের মধ্যে সংশয় ছিল—ফেব্রুয়ারিতে আদৌ নির্বাচন হবে কি না। আমরা তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি।”

অর্থ উপদেষ্টা জানান, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি, এএফডি—প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সংস্কারের অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট হয়ে অর্থ ছাড় করেছে। এখন আর কোনো প্রতিষ্ঠান অনুমোদন স্থগিত রাখেনি।

বিনিময় হার উন্মুক্ত করার বিষয়েও তিনি বলেন, “আমাদের মধ্যে শঙ্কা ছিল, এটি পাকিস্তানের মতো কিছু ঘটিয়ে ফেলবে কি না। কিন্তু সঠিকভাবে সামাল দিতে পেরেছি। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি আস্থা তৈরি হয়েছে, যেটি ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে।”

রিজার্ভ পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়েছে বলে জানান সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, “বাজেট সহায়তা আসায় রিজার্ভ বেড়েছে। রপ্তানি ভালো যাচ্ছে, রেমিট্যান্সও সন্তোষজনক। সৌদি আরবে গিয়ে জেনেছি, সাধারণ প্রবাসীরা আমাদের (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) আসায় টাকা পাঠাতে এখন স্বস্তি বোধ করছেন।”

তিনি আরও বলেন, “এর আগে প্রবাসীরা টাকা পাঠিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতেন—টাকা আদৌ পৌঁছায় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল।”

সম্প্রতি ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে হরমুজ প্রণালী হয়ে জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওপর কোনো তাৎক্ষণিক নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা। বরং তিনি বলেন, “তেল কেনার ক্ষেত্রে আমরা দরপত্র পুনরায় ডেকে ৫ থেকে ১০ ডলার পর্যন্ত কম মূল্যে পণ্য পেয়েছি। এতে প্রায় ৭০–৮০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে, যা জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একটি সাফল্য।”

তিনি জানান, মরক্কো ও তিউনিসিয়া থেকে আমদানি করা সারের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ কোনো বিকল্প উপায় ছিল না।