“ভ্যাকসিন নীতি অন্ধকারের পথে” — সতর্ক করলেন নোবেলজয়ী ওয়েইসম্যানের

২০২৩ সালের চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেলজয়ী এবং কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ব্যবহৃত mRNA ভ্যাকসিনের পথিকৃৎ ড্রু ওয়েইসম্যান গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিন নীতির বর্তমান গতিপথ নিয়ে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান মার্কিন স্বাস্থ্য সচিব রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের নেতৃত্বাধীন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ভ্যাকসিনবিরোধী ব্যক্তিদের প্রভাবের ফলে ভবিষ্যতে নতুন কোনো ভ্যাকসিন অনুমোদন পেতে নাও পারে।

মেক্সিকো সিটিতে এক সফরের সময় এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়েইসম্যান বলেন, “আমার ভয় হচ্ছে, এখন আর কোনো নতুন ভ্যাকসিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদন পাবে না।”

তাঁর এই মন্তব্য আসে এমন একদিনে, যখন কেনেডি নিয়োগপ্রাপ্ত একটি নতুন ভ্যাকসিন পর্যালোচনা প্যানেল তাদের প্রথম সভা করে।

রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র, যিনি দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাকসিন নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর জন্য সমালোচিত, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সচিব পদে আসীন হন। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি ভ্যাকসিন পর্যালোচনাকারী ১৭ সদস্যের কমিটির সবাইকে বরখাস্ত করেন এবং তাদের পরিবর্তে ৮ জন নতুন সদস্য নিয়োগ দেন। এই নতুন সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন বিজ্ঞানী রবার্ট ম্যালোন, যিনি কোভিড মহামারির সময় অসত্য তথ্য প্রচার করে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেন।

প্যানেলটির সামনে প্রথম বড় সিদ্ধান্ত আসছে বৃহস্পতিবার, যখন তারা নবজাতকদের জন্য RSV (Respiratory Syncytial Virus) প্রতিরোধী একটি নতুন অ্যান্টিবডি থেরাপি অনুমোদনের বিষয়ে ভোট দেবে। এটি এমন শিশুদের জন্য প্রযোজ্য যাদের মায়েরা গর্ভাবস্থায় RSV ভ্যাকসিন নেননি।

ওয়েইসম্যান বলেন, “এই প্রথম কোনো সরকার এমন কাউকে নিয়োগ দিয়েছে, যার ভ্যাকসিনবিরোধী অবস্থান সুস্পষ্ট। এটি ভয়ানক রকমের আত্মঘাতী ও বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত।”

ডিসেম্বর মাসে, ওয়েইসম্যানসহ বহু নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের কাছে একটি খোলা চিঠি পাঠিয়ে কেনেডির মনোনয়নের বিরোধিতা করেন। চিঠিতে বলা হয়, “ভ্যাকসিন বিষয়ে অভিজ্ঞতার ঘাটতি ও ভুল তথ্য ছড়ানোর ইতিহাস তাকে এ পদে অযোগ্য করে তোলে।”

তিনি আরও বলেন, “২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে হাম রোগ একপ্রকার নির্মূল হয়েই গিয়েছিল। কিন্তু এখন তা আবার বাড়ছে, কারণ অনেক মানুষ সন্তানদের ভ্যাকসিন দিচ্ছেন না। আমাদের এমন সরকার দরকার, যারা ভ্যাকসিনের গুরুত্ব বোঝে, না যে ভ্যাকসিনবিরোধীদের দায়িত্ব দেয়।”

ওয়েইসম্যানের এই মন্তব্য জনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারণে বিজ্ঞানের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে।

-আলমগীর হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদক