যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কম এবং কম ঝুকিপূর্ণ

শেয়ারবাজার ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৩ ১০:৩৫:০০
যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কম এবং কম ঝুকিপূর্ণ

দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা এতটাই প্রকট হয়ে উঠেছে যে, বিশ্বমানের বিনিয়োগ নির্দেশক বলে পরিচিত মূল্য-আয় অনুপাত (Price to Earnings Ratio বা P/E Ratio) অত্যন্ত আকর্ষণীয় অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারেও বিনিয়োগের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি বাজার ব্যবস্থার প্রতি চরম অনাস্থা ও তথ্য-ভিত্তিক বিনিয়োগ সংস্কৃতির অভাবের বহিঃপ্রকাশ।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ডিএস-৩০ সূচকে অন্তর্ভুক্ত শীর্ষ ৩০টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টির সর্বশেষ পিই রেশিও ১০-এর নিচে অবস্থান করছে। এই রেশিও সাধারণত বিনিয়োগকারীদের জন্য ‘কম ঝুঁকির’ ইঙ্গিত বহন করে এবং এসব কোম্পানি থেকে দ্রুত বিনিয়োগ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। তবে বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কিছু এই ১৬টির মধ্যে ১৫টিরই দরপতন ঘটেছে সদ্যসমাপ্ত সপ্তাহে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ধারাবাহিক দরপতনের মূল কারণ হচ্ছে বাজারে গভীর আস্থার সংকট এবং কোম্পানিগুলোর প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সন্দেহ। বিশেষ করে ব্যাংক ও জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে এই সন্দেহ প্রবল।

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের শিক্ষক মোহাম্মদ মুসা বলেন, "বিনিয়োগকারীরা বিশ্বাস করেন না, ব্যাংকগুলো যেভাবে মুনাফা দেখায় তা বাস্তবসম্মত। ফলে পিই রেশিও যতই কম হোক না কেন, সে তথ্যের ওপর আস্থা না থাকলে বিনিয়োগকারীরা তাতে আগ্রহী হন না।"

ডিএসইর তথ্য বলছে, পিই রেশিওর দিক থেকে সবচেয়ে নিচে রয়েছে ব্যাংক খাত যেখানে ৩৬টি ব্যাংকের গড় পিই রেশিও মাত্র ৫.৪৫। এরপর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত (৫.৬২), সেবা ও আবাসন (৮.৮৮), বস্ত্র (৯.৩৮) এবং সিমেন্ট (৯.৭৬)।

বিশেষ করে কিছু ব্যাংক ও জ্বালানি খাতের কোম্পানির রেশিও ৫-এরও নিচে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাইম ব্যাংকের রেশিও ২.৯৫, পদ্মা অয়েলের ৩.৩৫, যমুনা অয়েলের ৩.৫৮ এবং বিএসআরএম লিমিটেডের ৩.৮২। সাধারণভাবে, কোনো কোম্পানির পিই রেশিও ৩-এর নিচে থাকলে অর্থনৈতিকভাবে তা অত্যন্ত লাভজনক বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়।

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, “বর্তমানে কিছু ভালো কোম্পানির শেয়ারের দাম খুবই অবমূল্যায়িত। অথচ বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁদের কাছে ভালো–খারাপ কোম্পানি এখন বিষয় নয়; গুরুত্বপূর্ণ হলো, লোকসান এড়াতে বাজার থেকে দ্রুত বেরিয়ে যাওয়া। এটা একটি অস্বাস্থ্যকর বিনিয়োগচর্চা, যা বাজারের ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর।”

বিশ্লেষকেরা বলছেন, যখন কোনো বিনিয়োগকারী আস্থাহীনতার কারণে কম দামে ভালো শেয়ারও কিনতে চান না, তখন বাজারে স্বাভাবিক চক্র ব্যাহত হয়। একদিকে বাজারমূল্য পড়ে, অন্যদিকে লেনদেন কমে যায়, যা একটি দুষ্টচক্র তৈরি করে।

বিশ্ববিখ্যাত বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেটের মতে, "কম দামে সাধারণ মানের কোম্পানি নয়; বরং ন্যায্য দামে ভালো কোম্পানির শেয়ার কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ।" কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে এই শিক্ষাও এখন উপেক্ষিত। সাধারণ মানের শেয়ারে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হলেও, ভালো শেয়ারের মূল্য পড়ে যাচ্ছে অবহেলার কারণে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রয়োজন তথ্যের স্বচ্ছতা, আর্থিক প্রতিবেদন যাচাইয়ের কার্যকর প্রক্রিয়া, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সক্রিয়তা এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা।

বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে বাজারকে হতে হবে তথ্যনির্ভর, প্রবেশযোগ্য এবং ন্যায্য। তা না হলে, যতই ভালো কোম্পানি হোক না কেন, বাজারে মূল্যায়নহীনতা ও বিনিয়োগ বিমুখতা দীর্ঘমেয়াদে পুরো অর্থনীতির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত