শরীয়তপুরের ডিসির নারী কেলেঙ্কারি ও ভিডিও ফাঁস: সর্বশেষ আপডেট

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের একটি আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তাকে ঘিরে প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তাকে ঢাকায় বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে সংযুক্ত করে বর্তমান পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে।

ভিডিও ভাইরাল ও অভিযোগের বিবরণ

শুক্রবার (২০ জুন) সকালে প্রবাসী সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝর তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেইজে একটি ভিডিও এবং কিছু স্থিরচিত্র প্রকাশ করেন, যাতে জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিনকে এক নারীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা যায়। ৫৭ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি দ্রুত সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়।

ভিডিওর ক্যাপশনে দাবি করা হয়, ডিসি আশরাফ উদ্দিন ওই নারীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং তারই প্ররোচনায় নারীটি তার স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করেন। পরে ডিসি তাকে বিয়ে না করে উল্টো হুমকি দিতে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি শারীরিকভাবে নির্যাতনও করেছেন।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওর বিষয়ে জেলা প্রশাসককে ফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। স্থানীয় সাংবাদিকরা ভিডিওতে থাকা নারীর সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হন। তিনি জানান, তার বাড়ি ময়মনসিংহে হলেও বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করেন। ওই নারী বলেন, “তিনি আমার নিকটাত্মীয় ছিলেন। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাকে ডিভোর্স করান। এখন বিয়ে না করে হুমকি দিচ্ছেন, এমনকি শারীরিক নির্যাতনও করেছেন। তার জন্য আমি সমাজে মুখ দেখাতে পারি না।”

প্রশাসনের অবস্থান ও তদন্ত

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং এটি তদন্তাধীন রয়েছে। খুব দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান। জানা গেছে, রোববারের (২১ জুন) মধ্যেই আশরাফ উদ্দিনকে ওএসডি করা হতে পারে।

কর্মস্থলে অনুপস্থিতির তথ্য

শুক্রবার বিকেল থেকেই আশরাফ উদ্দিন শরীয়তপুরে নেই বলে নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মাসুদুল আলম। তিনি বলেন, “কোথায় গেছেন, তা আমরা জানি না।” অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আসলাম হোসাইনও বলেন, “তিনি অফিস শেষে বাসায় ফিরেছেন, তবে এখন জেলায় নেই।”

সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা

এই ঘটনার পর শরীয়তপুর শহরজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির বলেন, “ডিসির কাছ থেকে এমন আচরণ জনগণ প্রত্যাশা করে না। তার এমন আচরণ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি রাখে।”

আইনজীবী ও নাগরিক সংগঠনের সদস্য আজিজুর রহমান রোকন বলেন, “এ ধরনের কর্মকাণ্ড একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক ও অনভিপ্রেত।”

পূর্ব ইতিহাস ও প্রশাসনিক পরিচয়

আশরাফ উদ্দিন ২৭তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। তিনি ২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন। এর আগে তিনি নিউরো ডেভলপমেন্ট ও প্রতিবন্ধী ট্রাস্টের পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। অতীতে তার বিরুদ্ধে নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগও উঠেছিল।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে জামালপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের একটি বিতর্কিত ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় তদন্ত শেষে তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়।

-আশিক, নিজস্ব প্রতিবেদক।