মেয়ে দেখার বিনিময়ে নির্যাতন! সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ

অপরাধ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৮ ১৪:৫০:৩৪
মেয়ে দেখার বিনিময়ে নির্যাতন! সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ

ঢাকার নবাবগঞ্জে সাবেক স্বামীর ভাড়া বাসায় আটকে রেখে এক মাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ১৫ মাস ধরে নিখোঁজ মেয়েকে দেখতে গিয়ে এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বাসিন্দা তাবাসসুম লামিয়া। পরে ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। তবে সেই সুযোগে পালিয়ে যান সাবেক স্বামী মেহেদী হাসান ও তাঁদের কন্যাসন্তান।

ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (১৮ জুন) দুপুরে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার কাশিমপুর এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। ওই দিন সন্ধ্যায় ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সংসার ভাঙার পর শুরু হয় মেয়েকে ফিরে পাওয়ার সংগ্রাম২০১৩ সালে দিনাজপুরের তাবাসসুম লামিয়ার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ঢাকার নবাবগঞ্জের কোমরগঞ্জ এলাকার মহিউদ্দিনের ছেলে মেহেদী হাসান (ওরফে সেলিম)। দাম্পত্য জীবনে তাঁদের ঘরে জন্ম নেয় এক কন্যাসন্তান—আফিয়া মায়ামিন, বয়স বর্তমানে ছয় বছর। তবে পারিবারিক কলহের জেরে ২০২৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি স্ত্রীকে না জানিয়ে মেয়েকে নিয়ে ঢাকার নিকেতন থেকে চলে যান মেহেদী।

এরপর থেকেই শুরু হয় তাবাসসুমের ছুটে চলা। কখনও পুলিশের সহায়তায়, কখনও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে নিয়ে মেয়ের খোঁজে নবাবগঞ্জে ছুটে আসেন। গত ১৫ মাসে তিনি আট থেকে দশবার সাবেক স্বামীর খোঁজে এলেও, মেহেদী বাসা বদলে বারবার জায়গা পরিবর্তন করায় মেয়ে দেখা তো দূরের কথা, সন্ধান পাওয়া পর্যন্ত ছিল কঠিন।

অবশেষে দেখা, তবে হঠাৎ ভয়াবহ পরিণতিখবর পেয়ে মঙ্গলবার বিকেলে তাবাসসুম যান নবাবগঞ্জের কাশিমপুরের আদনান ভিলার একটি বাসায়। সেখানেই সাবেক স্বামী মেহেদীর বাসায় মেয়েকে দেখে কোলে নিতে গেলে হঠাৎ করেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। অভিযোগ অনুযায়ী, মেহেদী তখন জোরপূর্বক তাঁকে একটি কক্ষে আটকে রাখেন এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন।

তাঁর সঙ্গে থাকা স্বজনেরা জাতীয় জরুরি নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করলে দ্রুত নবাবগঞ্জ থানা পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে। এ সুযোগে মেহেদী আবারও বাসা ছেড়ে অজানার পথে পাড়ি জমান মেয়েকে নিয়ে।

‘মেয়েকে ফিরে পেতে চাই, আমি শুধু একজন মা’তাবাসসুম লামিয়া বলেন,

“আমার মেয়ে ১৫ মাস ধরে আমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন। আমি একবারের জন্য তার মুখ দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার সাবেক স্বামী মেহেদী বরাবরই চেয়েছেন মেয়েকে আমার কাছ থেকে আড়াল করতে। আজ যখন মেয়েকে কোলে নিলাম, তখন তিনি আমাকে জোর করে কক্ষে আটকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। আমি আমার মেয়েকে ফিরে পেতে চাই—আমি শুধু একজন মা।”

মেহেদীর সাফাই: 'আদালতে মামলা চলছে'এই বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেদী হাসান ওরফে সেলিম মুঠোফোনে বলেন,

“শিশুকে নিয়ে আদালতে মামলা আছে। তাই বিষয়টির নিষ্পত্তি আদালতই করবেন। কাউকে নির্যাতন করা হয়নি।”

থানার বক্তব্য: ‘মামলা থাকলে আমাদের এখতিয়ার সীমিত’এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ থানার ওসি মমিনুল ইসলাম বলেন,

“৯৯৯-এ ফোন পেয়ে আমরা গৃহবধূকে উদ্ধার করেছি। মেহেদীর পরিবারের সদস্যরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে আদালতে মামলা চলমান থাকলে আমাদের এখতিয়ার সীমিত।”

এই ঘটনাটি একদিকে যেমন একটি মায়ের নিরন্তর লড়াই ও সামাজিক-মানবিক বাস্তবতার প্রতিফলন, অন্যদিকে পারিবারিক সম্পর্ক ও সন্তান অভিভাবকত্ব নিয়ে বিদ্যমান আইনি জটিলতারও এক প্রতিচ্ছবি।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

আমেরযত কাহিনি

আমেরযত কাহিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ ‘আম’ শুধু একটি ফল নয়, বরং এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে গভীরভাবে প্রোথিত এক... বিস্তারিত