ইরান- ইসরায়েল সংঘাত

চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের ১০টি বড় ক্ষতি

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২০ ১৭:০০:০৯
চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের ১০টি বড় ক্ষতি

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতি নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সামরিক সংঘাত এখন আর শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নেই এর অভিঘাত ছড়িয়ে পড়ছে অর্থনীতি, কূটনীতি, অবকাঠামো এবং নাগরিক জীবনের প্রতিটি স্তরে। একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষক সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, ততই ইসরায়েল এক গভীর বহুমাত্রিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।

নিচে ইরানের সঙ্গে চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের ১০টি বড় ক্ষতি বিশ্লেষণধর্মীভাবে তুলে ধরা হলো:

১. বিপুল সামরিক ব্যয়: অর্থনীতিতে ধস নামাচ্ছে যুদ্ধপ্রতিদিন গড়ে ৭০০ থেকে ৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যুদ্ধ ব্যয়ে খরচ করছে ইসরায়েল। রক্ষা ব্যবস্থায় ব্যবহৃত ডেভিড’স স্লিং ও অ্যারো সিস্টেমের প্রতিটি ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্রের দাম ১ থেকে ৪ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে। যুদ্ধের শুরুর প্রথম দুই দিনেই দেশটির সামরিক ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ১.৪৫ বিলিয়ন ডলার। এই আর্থিক চাপ জাতীয় বাজেটে ঘাটতি তৈরি করছে এবং রিজার্ভে চাপ ফেলছে।

২. অস্ত্রভাণ্ডার সংকটে: প্রতিরক্ষার সামর্থ্য ক্রমশ ক্ষীণইরান ইতোমধ্যেই ৪০০’র বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। ইসরায়েল প্রতিটি হামলা প্রতিহত করতে একাধিক ইন্টারসেপ্টর ব্যবহার করছে, যার ফলে অস্ত্রভাণ্ডার দ্রুত খালি হয়ে পড়ছে। পুনরায় মজুদে সময় ও অর্থ দুই-ই প্রয়োজন, যা তাৎক্ষণিক প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।

৩. বেসামরিক স্থাপনায় হামলা: হাসপাতালেও রেহাই নেইইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলের সরোকা মেডিকেল সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আহত হয় শতাধিক। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো একে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে।

৪. জ্বালানি ও বিদ্যুৎ পরিকাঠামোতে গুরুতর আঘাতইরানি আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, তেল ও গ্যাস ডিপো এবং পানি পরিশোধন প্ল্যান্ট। এর ফলে একাধিক অঞ্চলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। শিল্প খাতে উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে এবং ব্যয় বাড়ছে।

৫. বাণিজ্যিক অবরোধ ও বিমা খরচে উল্লম্ফনইসরায়েলি সমুদ্রবন্দরগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক জাহাজ পরিবহন বিমা তিন গুণ বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিক আদান-প্রদান ব্যাহত হচ্ছে। বহু বহুজাতিক কোম্পানি ঝুঁকি এড়াতে কার্যক্রম স্থগিত করেছে।

৬. শেয়ারবাজারে ধস ও বিনিয়োগ সংকটযুদ্ধের অভিঘাতে তেল রিজার্ভে ক্ষতি এবং স্টক এক্সচেঞ্জে অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়ায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা টালমাটাল। আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলো ইসরায়েলের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বহু কোম্পানি কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।

৭. নাগরিক জীবনের বিপর্যয়: অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু সংকটহাজার হাজার ইসরায়েলিকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে হয়েছে। বন্ধ হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সীমিত হয়েছে বিমান চলাচল। নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক, উদ্বেগ ও মানসিক চাপ বাড়ছে, যা সামাজিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলছে।

৮. বাজেট ঘাটতি: সামাজিক খাত কোণঠাসাসরকার যুদ্ধের জন্য প্রতিরক্ষা বাজেট প্রায় দ্বিগুণ করে ১১৮ বিলিয়ন শেকেল (৩৩.৬ বিলিয়ন ডলার) করেছে। এর ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব পড়বে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিতে।

৯. যুক্তরাষ্ট্রনির্ভরতা বৃদ্ধি: কৌশলগত দুর্বলতাইসরায়েল এখন যুক্তরাষ্ট্রের থাড ও প্যাট্রিয়ট সিস্টেমের সহায়তায় আকাশ প্রতিরক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই নির্ভরতা রাজনৈতিকভাবে ইসরায়েলকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে, বিশেষ করে যদি ওয়াশিংটন কৌশলগত অবস্থান পরিবর্তন করে বা সহায়তা সীমিত করে দেয়।

১০. দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের সম্ভাবনা: ১২ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির শঙ্কাবিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধ যদি ৩০ দিনের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে ইসরায়েলের আর্থিক ক্ষতি ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এমনকি রসদ ও অস্ত্র সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিলে যুদ্ধের ফলাফল ইসরায়েলের অনুকূলে না-ও থাকতে পারে।

ইরান দাবি করছে, এখনো তারা পুরোপুরি সামরিক শক্তি ব্যবহার করেনি। যদি এই দাবি সত্য হয়, তাহলে ইসরায়েলের জন্য সামনে অপেক্ষা করছে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি। এই বাস্তবতায় আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন ইসরায়েল এখন কেবল যুদ্ধ করছে না, বরং তার অস্তিত্ব রক্ষার এক জটিল সমীকরণে আটকে পড়েছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত