কেন এই নারীকে যমের মতো ভয় পান পুতিন?

২০২৫ জুন ১০ ১৩:৩৫:১৬
কেন এই নারীকে যমের মতো ভয় পান পুতিন?

বর্তমান বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ভ্লাদিমির পুতিনের কঠোরতা, কৌশল ও দমননীতির কথা সর্বজনবিদিত। রুশ প্রেসিডেন্ট দীর্ঘদিন ধরে বিরোধীদের দমন করে ক্ষমতার শীর্ষে টিকে আছেন। তবে এমন এক নারী রয়েছেন, যাকে পুতিন কার্যত যমের মতো ভয় পান। তার নাম দারিয়া সেরেনকো। পুরুষতান্ত্রিক রাশিয়ার ভিত কাঁপিয়ে তোলা এই নারী হয়ে উঠেছেন পুতিন প্রশাসনের এক ভয়ংকর মাথাব্যথার নাম।

মঙ্গলবার (১০ জুন) ইয়াহু নিউজের এক প্রতিবেদনে সেরেনকোর সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর দ্বিতীয় দিনেই দারিয়া সেরেনকো প্রতিষ্ঠা করেন ‘ফেমিনিস্ট অ্যান্টি-ওয়ার রেজিস্ট্যান্স’ (Feminist Anti-War Resistance) নামক আন্দোলন। সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ এই সংগঠনটি রাশিয়ার অন্তত ৮০টি শহরে হাজার হাজার নারীকে যুদ্ধবিরোধী সচেতনতায় একত্র করেছে।

সেরেনকোর নেতৃত্বে এই আন্দোলন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুদ্ধবিরোধী কবিতা ও স্লোগান ছড়ানো, দোকানের মূল্য ট্যাগে বার্তা লেখা, পোস্টকার্ড ও চিঠির মাধ্যমে ইউক্রেনীয় নারীদের অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দেওয়ার মতো কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এক পোস্টকার্ডে লেখা হয়, “আবার যুদ্ধ। কেউ এ নিয়ে কথা বলে না। আমাদের পূর্বপুরুষদের হৃদয় ব্যথিত হয় যখন আমরা সৈনিকের পোশাক পরি, যখন আমরা প্রতিবেশীর বিরূদ্ধে যুদ্ধে যাই।”

ক্রেমলিন এই আন্দোলনের শক্তি ও প্রভাব উপলব্ধি করতেই একের পর এক দমনমূলক পদক্ষেপ নেয় সেরেনকোর বিরুদ্ধে। ২০২৩ সালে তাকে 'বিদেশি এজেন্ট' হিসেবে আখ্যায়িত করে রুশ সরকার। এরপর তার গড়া সংগঠনকে ‘অপ্রীতিকর সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যার ফলে তার বিরুদ্ধে ছয় বছরের কারাদণ্ডের ঝুঁকি তৈরি হয়।

২০২২ সালের মার্চে পুতিনের নিপীড়নের মুখে সেরেনকো জর্জিয়ায় নির্বাসনে চলে যেতে বাধ্য হন। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে রাশিয়া তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে এবং নতুন পাসপোর্ট দেওয়ার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। বর্তমানে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন।

দারিয়া সেরেনকো সংবাদমাধ্যম ডেইলি বিস্টকে বলেন, “যুদ্ধ শুরুর পরপরই আমি কারাগারে ছিলাম। তখন আমার দরজায় একটি সাইন পেয়েছিলাম, যাতে লেখা ছিল: ‘জনগণের শত্রু।’”

২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি, মস্কোর একটি আদালত তাকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেন। তার অপরাধ ছিল ইনস্টাগ্রামে একটি লাল বিস্ময়বোধক চিহ্ন পোস্ট করা, যা বিরোধীদলীয় ‘স্মার্ট ভোট’ কৌশলের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।

এর আগেই ২০১৯ সালে রাশিয়ার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তাকে অ্যাক্টিভিজমের জন্য বরখাস্ত করেন। তার বস তাকে আলটিমেটাম দেন— হয় তিনি সরকারের পছন্দমতো কাজ করবেন, নয়তো চাকরি ছাড়বেন। সেরেনকো বেছে নেন পদত্যাগ।

যদিও পশ্চিমা বিশ্বে দারিয়া সেরেনকো এখনও তুলনামূলকভাবে অখ্যাত, রাশিয়ায় তিনি একটি প্রতীক হয়ে উঠেছেন— নারীর কণ্ঠ, যুদ্ধবিরোধী নৈতিকতা ও কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মূর্ত প্রতীক।

তিনি এখন ইউরোপে রাজনৈতিক আশ্রয়ের অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে তার আন্দোলন থেমে নেই। নির্বাসন থেকেও তিনি পুতিন সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে রুশ সমাজে সচেতনতা ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

দারিয়া সেরেনকোর লড়াই প্রমাণ করে, একটি কণ্ঠ, একটি প্রতিজ্ঞা এবং একটি আন্দোলন কখনো কখনো বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতাকেও কাঁপিয়ে দিতে পারে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

আমেরযত কাহিনি

আমেরযত কাহিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ ‘আম’ শুধু একটি ফল নয়, বরং এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে গভীরভাবে প্রোথিত এক... বিস্তারিত