বন্ধু নেশাগ্রস্ত? কীভাবে পাশে থাকবেন তার…

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৬ ১০:৩৯:১৫
বন্ধু নেশাগ্রস্ত? কীভাবে পাশে থাকবেন তার…

রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে বারবার বেজে উঠছে ফোন। বিরক্ত মুখে ফোন ধরতেই অপর প্রান্ত থেকে কাঁপা কণ্ঠে ভেসে এল, ‘‌তাড়াতাড়ি থানায় আয়, রাফিকে পুলিশ ধরে নিয়েছে... নেশাগ্রস্ত অবস্থায়।’ রিফাতের শরীর যেন মুহূর্তেই জমে গেল। চোখের সামনে ভেসে উঠল রাফির সেই মুখ—সবচেয়ে প্রাণবন্ত, সবচেয়ে চঞ্চল ছেলেটি, যার সঙ্গে প্রতিদিন দেখা না হলে দিনটাই অসম্পূর্ণ লাগত। কীভাবে? কবে সে এতটা বদলে গেল?

বন্ধু মানে শুধু হেসে খেলার সঙ্গী নয়, বরং দরকার হলে চোখের জলে ভিজেও ভুল পথ থেকে টেনে আনার মানুষ। কিন্তু প্রিয়জন যখন ধীরে ধীরে নিজেকে হারিয়ে ফেলে অন্ধকারে, তখন আপনি কী করবেন? কীভাবে বোঝাবেন তাকে, ফিরিয়ে আনবেন আগের সত্তায়?

১৯৮৭ সালের ৭ ডিসেম্বর, জাতিসংঘ সিদ্ধান্ত নেয় প্রতি বছর ২৬ জুন পালিত হবে মাদকদ্রব্য অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে। এর মূল উদ্দেশ্য—একটি মাদকমুক্ত তরুণ সমাজ গড়ে তোলা এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করা এই যুদ্ধে।

একজন মানুষ হুট করে মাদক নেয় না। এর পেছনে থাকে নানা ব্যর্থতা, মানসিক চাপ, পারিবারিক অশান্তি, বন্ধুর ভুল প্ররোচনা কিংবা সম্পর্কের ভাঙন। প্রথমে হয়তো কৌতূহলবশে সিগারেট, তারপর গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল—একসময় সে নিজেই নিজের পরিচয় হারিয়ে ফেলে।

আপনার বন্ধুর আচরণে পরিবর্তন এলেই রেগে যাবেন না। বরং বুঝতে চেষ্টা করুন—সে কেন বদলাচ্ছে? পারছে না বলতে, নাকি বলতে ভয় পাচ্ছে? তাকে সময় দিন, আগের মতো আড্ডা দিন, নিজের অনুভূতিগুলোও শেয়ার করুন। নেশা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করলে অনেক সময় সে গুটিয়ে যেতে পারে। আগলে রাখুন, শুনুন।

‘‌তুই কী করছিস এসব?’ না বলে বলুন, ‘‌তুই এমন ছিলি না... আমি তোর জন্য চিন্তিত।’ বা ‘‌আমি তোর জায়গায় থাকলেও হয়তো এমন হতো, কিন্তু এখনো সময় আছে, আমি আছি তোর পাশে।’ কারণ ভালোবাসার ভাষা অনেক বেশি কার্যকর হয় রাগের চেয়ে।

অনেক সময় পরিবার, সমাজ এমনকি বন্ধুরাও মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলে। এতে সে আরও একা হয়ে পড়ে। অথচ আপনি পাশে থাকলে, সে বুঝবে—সে একা নয়। মাঝেমধ্যে সিনেমা দেখতে নিয়ে যান, কোথাও ঘুরতে যান, তার ভালোলাগা ব্যাপারগুলো মনে করিয়ে দিন।

‘‌তুই ক্লাসে সবার চেয়ে ভালো খেলতিস’, ‘‌তুই তো দারুণ ছবি আঁকতি।’ এমন কথায় হয়তো আবার জেগে উঠবে তার আত্মবিশ্বাসের শিখা। আত্মবিশ্বাস ভেঙে গেলে কেউ আর পরিবর্তনের পথ খুঁজে পায় না।

যদি মনে হয় সমস্যাটা গভীর, তাহলে দেরি না করে পেশাদার কাউন্সিলর, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা নিরাময়কেন্দ্রের সাহায্য নিন। তবে খেয়াল রাখুন—জোর করে নয়, বোঝাতে বোঝাতে তাকে রাজি করান। বোঝান যে আপনি তার পাশে থাকবেন পুরো সময়।

বাংলাদেশে বর্তমানে মাদকের ভয়াবহতা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ কোনো না কোনোভাবে মাদকাসক্ত। যার মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই তরুণ। আর ভয়ংকর বিষয় হলো, মাদক গ্রহণ শুরু করার গড় বয়স এখন ১৫ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে।

মাদক সেবনের প্রভাব শুধু ভুক্তভোগী ব্যক্তির উপর নয়, তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং সমাজের উপরও পড়ে। পরিবার ভেঙে যায়, পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়, কর্মজীবন ধ্বংস হয়ে যায়, এমনকি কেউ কেউ অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। একটি সম্ভাবনাময় জীবন ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।

আপনার বন্ধুকে মাদকে আসক্ত কিনা তা বোঝার উপায়ও রয়েছে—হঠাৎ অতিরিক্ত চুপচাপ হয়ে যাওয়া, চোখ লাল হয়ে থাকা, আচরণে খিটখিটে ভাব, অস্বাভাবিকভাবে টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করা, পড়াশোনা বা কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক হোন।

একজন বন্ধু যখন ধ্বংসের দিকে পা বাড়ায়, তখন নীরব থাকার মানে তার পতনে অংশ নেওয়া। রাফির মতো অনেকেই এখনো হয়তো ফিরে আসতে পারে, যদি পাশে থাকে এমন একজন বন্ধু, যে কেবল বাহবা দেয় না, দরকার হলে আঁচল পেতে কান্নাও ভাগ করে নেয়।

বন্ধুত্বের আসল পরিচয় তখনই বোঝা যায়, যখন কেউ অন্ধকারে হারিয়ে যেতে চায়, আর আপনি হাতে আলো নিয়ে এগিয়ে যান।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

আমেরযত কাহিনি

আমেরযত কাহিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ ‘আম’ শুধু একটি ফল নয়, বরং এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে গভীরভাবে প্রোথিত এক... বিস্তারিত