তিন বছরে পদ্মা সেতুর আয় যত হাজার কোটি টাকা

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৬ ১২:২৩:৫২
তিন বছরে পদ্মা সেতুর আয় যত হাজার কোটি টাকা

আজ পদ্মা সেতুতে যান চলাচলের তিন বছর পূর্ণ হলো। ২০২২ সালের ২৬ জুন সকালে যখন প্রথমবারের মতো সাধারণ যানবাহনের জন্য খুলে দেওয়া হয় বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু, তখনই ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবনে। এর পর থেকে এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ হয়নি এই দেশের গর্বের স্থাপনাটিতে যান চলাচল। তিন বছরে এই সেতু দিয়ে পাড়ি জমিয়েছে প্রায় ১ কোটি ৯৫ লাখ যানবাহন, যার টোল আদায় ছাড়িয়ে গেছে ২ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা।

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়েদ জানান, গতকাল ২৫ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, সেতু দিয়ে সর্বমোট ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৭টি যান পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ২,৫৭৯ কোটি ১ লাখ ৫২ হাজার ৬০০ টাকা। প্রতিদিন গড়ে হাজার হাজার যানবাহন সেতুটি ব্যবহার করছে, যা শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থাকেই গতিশীল করেনি, বরং দেশের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনেও অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে।

পদ্মা সেতু শুধু একটি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নয়, এটি একটি দ্বৈতস্তরবিশিষ্ট স্থাপনা। সেতুর ওপর দিয়ে চলে যানবাহন, আর নিচ দিয়ে ছুটছে ট্রেন। ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর সেতুর রেলপথ উদ্বোধন করা হয় এবং ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর পুরোপুরি চালু হয় পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প। ওই দিন থেকেই রাজধানী ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা, নড়াইল ও যশোর হয়ে সরাসরি খুলনা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

বর্তমানে রাজধানী থেকে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায় খুলনা ও বেনাপোল পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ এখন সড়ক ও রেল উভয় পথের সুফল পাচ্ছে সমানভাবে। এতে কৃষিপণ্য পরিবহন, পণ্য রপ্তানি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান সবক্ষেত্রেই এসেছে নাটকীয় পরিবর্তন।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর শুধু নদী পারাপারের দুর্ভোগই কমেনি, এর মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবনমানে এসেছে দৃশ্যমান পরিবর্তন। বিশেষ করে কৃষিপণ্যের দ্রুত পরিবহন, শিল্প-বাণিজ্যের প্রসার, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি এবং পর্যটন খাতে নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে সেতুটি। এমনকি গ্রামীণ অর্থনীতির গতিশীলতায় ভূমিকা রাখছে নতুন সড়ক ও রেল যোগাযোগ।

পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে নির্মিত হয়েছে উন্নত সড়ক অবকাঠামো, যেখানে আধুনিক ক্যামেরা ও নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে। এই নজরদারি সিস্টেম যানবাহনের চলাচল, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন এবং জরুরি পরিস্থিতি তদারকিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। পুরো ১০ কিলোমিটারব্যাপী (মূল সেতু ৬.১৫ কিমি, অ্যাপ্রোচসহ প্রায় ১০ কিমি) এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কাজ করে চলেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পদ্মা সেতু এখন আর শুধু একটি ভৌত অবকাঠামো নয়, এটি বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের প্রতীক। একদিকে এটি যেমন রাষ্ট্রের আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ, অন্যদিকে জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের একটি কার্যকর মডেল।

সেতু ব্যবহারে সরকারের টোল আদায়ের বিপুল অঙ্ক ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষকের ভাষ্যমতে, ভবিষ্যতে এই সেতু আরও বেশি রাজস্ব এনে দিতে সক্ষম হবে।

প্রথম তিন বছরেই পদ্মা সেতু হয়ে উঠেছে একটি কার্যকর ‘লাইফলাইন’। শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল নয়, গোটা দেশের অর্থনীতিকে যেভাবে গতি দিয়েছে, তা এক কথায় অভূতপূর্ব। রাজনৈতিক সংকল্প, প্রকৌশল দক্ষতা ও জনগণের প্রত্যাশার সমন্বয়ে নির্মিত এই সেতু আজ সত্যিই "বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রতীক"। টোল, যান চলাচল, রেল সংযোগ এবং আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের সমন্বয়ে পদ্মা সেতু এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার দিকচিহ্ন হয়ে উঠেছে।

-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

আমেরযত কাহিনি

আমেরযত কাহিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ ‘আম’ শুধু একটি ফল নয়, বরং এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে গভীরভাবে প্রোথিত এক... বিস্তারিত