ইরান- ইসরায়েল সংঘাত

তবে কি বন্ধ হতে যাচ্ছে ইরানের পরমাণু কার্যক্রম, যা জানা গেল

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২২ ০৮:১৯:৫৭
তবে কি বন্ধ হতে যাচ্ছে ইরানের পরমাণু কার্যক্রম, যা জানা গেল

পশ্চিমা চাপ ও সাম্প্রতিক হামলার প্রেক্ষাপটেও ইরান তার পরমাণু কার্যক্রম বন্ধ করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মাসুদ পেজেশকিয়ান। তিনি বলেছেন, বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত পারমাণবিক প্রকল্প ইরানের বৈধ অধিকার এবং তা থেকে কোনোভাবেই পিছু হটা হবে না।

শনিবার (২১ জুন) এক টেলিফোন সংলাপে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে এসব কথা জানান পেজেশকিয়ান। ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা জানায়, ফোনালাপে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান জোর দিয়ে বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাব এবং এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক পরিদর্শন ও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে প্রস্তুত। তবে হুমকি, চাপ কিংবা আগ্রাসনের মাধ্যমে এই অধিকার কেড়ে নেওয়া চলবে না।”

ইরানি প্রেসিডেন্ট তাঁর বক্তব্যে বেসামরিক পরমাণু কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, “চিকিৎসা, কৃষি, বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ বিভিন্ন বেসামরিক খাতে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার আজকের বৈজ্ঞানিক বিশ্বে স্বীকৃত। এ ধরনের কার্যক্রম ইরানের জনগণের ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-র কাঠামোর মধ্যেই কাজ করছি এবং করব। এই খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা আমাদের প্রতিশ্রুতি।”

সম্প্রতি ইসরায়েলের সাথে সংঘাত এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান সতর্ক করেন, “ইসরায়েলের যেকোনো আগ্রাসনের জবাব দেওয়া হবে এবং পরবর্তী প্রতিক্রিয়া হবে আরও বেশি বিধ্বংসী, যাতে তারা উপলব্ধি করতে পারে ইরানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা কত গভীরে প্রোথিত।”

তিনি দাবি করেন, ইসরায়েল ও তার মিত্রদের অপপ্রচারের মাধ্যমে ইরানের বৈধ পারমাণবিক কার্যক্রমকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টা সফল হবে না।

টেলিফোনালাপে পেজেশকিয়ান ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে পারমাণবিক ইস্যু ও মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা সংকট সমাধানের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “আঞ্চলিক শান্তি কেবলমাত্র সম্মান, সমতা ও কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমেই অর্জন সম্ভব। একতরফা চাপ কিংবা সামরিক পদক্ষেপ এই অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদে আরও অস্থিরতা সৃষ্টি করবে।”

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্য একটি দ্বিমুখী কৌশলের প্রতিফলন। একদিকে তিনি শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচিতে স্বচ্ছতা ও আন্তর্জাতিক আইন মানার আশ্বাস দিচ্ছেন, অন্যদিকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে কঠোর বার্তা দিয়ে দেশটির ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান জোরদার করছেন।

তেহরানভিত্তিক কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. সামিরা রাফি বলেন, “পেজেশকিয়ানের বক্তব্যে ভারসাম্য রয়েছে। তিনি পশ্চিমাদের আশ্বস্ত করছেন, আবার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির দাবিতেও সাড়া দিচ্ছেন। এতে বোঝা যায়, ইরান যুদ্ধ নয়, শান্তির পথে থাকতে চায় তবে আত্মরক্ষায় কোনো ছাড় দেবে না।”

ইরান নতুন করে প্রমাণ করছে, তারা পারমাণবিক অধিকার প্রশ্নে আপস করবে না। কিন্তু একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সংলাপের দরজাও খোলা রাখছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বিশ্ব সম্প্রদায় এই ‘কৌশলগত বার্তা’ কীভাবে গ্রহণ করে এবং তা ভবিষ্যতের পরমাণু কূটনীতিকে কোন দিকে পরিচালিত করে?

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত