খুলনা
রূপসায় খুন-ধর্ষণ-মাদক: তাণ্ডবে জনজীবন

খুলনার রূপসা উপজেলায় সম্প্রতি একের পর এক হামলা, গুলি, হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বিচ্ছিন্ন অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হলেও তদন্তে উঠে এসেছে ভয়াবহ এক চিত্র—এসব ঘটনার মূলে রয়েছে মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের দ্বন্দ্ব।
প্রতিদিনের মতো স্বাভাবিক জনজীবনের আড়ালে রূপসার জনপদে যেন নীরবেই বিস্তার ঘটছে এক ভয়াল ছায়াযুদ্ধ। প্রশাসনের একাধিক সূত্র বলছে, খুলনা শহর কেন্দ্রিক সন্ত্রাস দমন কার্যক্রম জোরদার হওয়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা রূপসা উপজেলাকে তাদের ‘নতুন ঘাঁটি’ হিসেবে বেছে নিয়েছে।
অপরাধের ধারাবাহিকতায় জর্জরিত রূপসাগত কয়েক সপ্তাহে রূপসায় ঘটে যাওয়া কিছু ভয়াবহ ঘটনার সংক্ষিপ্ত তালিকা নিম্নরূপ:
১৩ জুন (রাত): রূপসার বনি আমিন নামের এক যুবককে গুলি করে অর্থ লুট করে নেয় একদল দুর্বৃত্ত।
৯ জুন: আঠারবাকি নদীর চরে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের গলিত মরদেহ উদ্ধার করে নৌপুলিশ।
৮ জুন: আইচগাতী উত্তরপাড়ায় প্রবাসীর স্ত্রী সুমাইয়া খাতুন জান্নাতের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। একই রাতে এক যুবককে আটক করে নির্যাতন ও তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়।
৭ জুন: শ্রীফলতলা গ্রামে কলাবাগান থেকে ভ্যানচালক রবিউল ইসলামের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার।
২৫ মে: মোছাব্বরপুর গ্রামে দুর্বৃত্তের গুলিতে রনি ওরফে কালো রনি নিহত হন।
এই সমস্ত ঘটনার পেছনে একই ধরনের অস্ত্রধারী অপরাধ চক্রের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
মাদক-পাচার ও সন্ত্রাসের সমান্তরাল পথভৌগোলিক দিক থেকে রূপসা উপজেলা একটি কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে। উত্তরে তেরখাদা, দক্ষিণে বটিয়াঘাটা ও ফকিরহাট, পূর্বে মোল্লাহাট ও পশ্চিমে খুলনা শহরের সংযোগ থাকায় এটি মাদক পাচারের আদর্শ করিডোরে পরিণত হয়েছে। প্রধান সড়ক ছাড়া অন্য রুটগুলোতে নেই পর্যাপ্ত টহল বা চেকপোস্ট, যা মাদকচক্রকে নির্বিঘ্নে চলাচলের সুযোগ করে দিচ্ছে।
খুলনা জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন,
“রূপসায় যে মাদক-সহিংসতা চলছে, তার পেছনে রয়েছে একটি সুসংগঠিত অস্ত্রধারী চক্র। এরা শুধু মাদক ব্যবসা করে না, নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে গুলি, হত্যা ও ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।”
অন্য এক বাস্তবতা: কিশোরদের ব্যবহারে উদ্বেগবিশেষ প্রতিবেদনে জানা যায়, এসব অপরাধে জড়িত রয়েছে একাধিক গ্রুপ ও শতাধিক কিশোর। অল্প বয়সেই তারা মাদক বহনকারী বা 'ক্যারিয়ার' হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এদের অনেকে ধীরে ধীরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ বার্তা বহন করে।
প্রশাসনের নজরদারি ও প্রতিশ্রুতিরূপসা থানার ওসি মাহফুজুর রহমান বলেন,
“ঘটনাগুলোর তদন্ত চলমান। সন্ত্রাসী ও মাদকচক্রকে চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।”
এদিকে খুলনা জেলা পুলিশ সুপার টি এম মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন,
“রূপসার পরিস্থিতিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে।”
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- শেয়ারবাজারে এল বড় সুখবর!
- স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ
- রিজার্ভের দাপট: বিদ্যুৎ খাতের ১৪ কোম্পানি বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতার বাড়িতে সেনা অভিযান:উদ্ধার ইয়াবা ও ধারালো অস্ত্র!
- মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের নতুন কৌশল: চীন ও রাশিয়া কী করবে?
- তিন মাসেই যে ১০ বেসরকারি ব্যাংকে ৩২ হাজার কোটি টাকার আমানত বৃদ্ধি!
- তারেক রহমানের দেশেফেরার সম্ভাব্য সময় জানালেনমির্জা ফখরুল
- লন্ডনে তারেক-ইউনূসের বৈঠকের পরে পর পর ২টি স্ট্যাটাসে কি বললেন পিনাকী?
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- ২৮ জুন ঢাকায় জনতার ঢল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মহাসমুদ্র!
- ডিএসইতে সাধারণ বীমা খাতের প্রান্তিক বিশ্লেষণ:মুনাফা বৃদ্ধির শীর্ষে কারা?
- নির্বাচিত নারী, অলঙ্কার নয়: গণতন্ত্রে নারীর শক্তির সন্ধান