গাংনীতে বিএনপি অফিসের সামনে ‘বোমা’ আতঙ্ক!

মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার নওদা মটমুড়া গ্রামে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকাল ৭টার দিকে স্থানীয় বিএনপি অফিসের সামনে থেকে দুটি বোমা সদৃশ বস্তু এবং একটি উসকানিমূলক চিরকুট উদ্ধার করেছে গাংনী থানা পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার অন্যতম রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু নওদা বাজার এলাকায়, যেখানে প্রতিদিন শত শত মানুষ চলাচল করে। ফলে বিষয়টি সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্থানীয় একজন ওষুধ ব্যবসায়ী আবির হোসেন অফিস খুলতে গিয়ে প্রথমে দেখতে পান যে বিএনপি অফিসের সামনে পড়ে রয়েছে দুটি মোড়ানো বস্তু একটি লাল টেপ দিয়ে এবং অপরটি কালো টেপ দিয়ে মোড়ানো। বস্তুর গঠন ও অবস্থান দেখে তাৎক্ষণিকভাবে এলাকাবাসীর মনে বোমা বা বিস্ফোরক জাতীয় জিনিসের আশঙ্কা দেখা দেয়। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় গাংনী থানা পুলিশের একটি দল।

পুলিশের উপস্থিতিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বস্তুগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়। একই স্থানে পাওয়া যায় একটি হাতে লেখা চিরকুট, যেখানে লেখা ছিল: “শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে তো কি হয়েছে, জায়গার মাল জায়গায় বসে আছি। ভবিষ্যতে ক্ষমতা পেলে ফিলিস্তিনের মতো হবে।”চিরকুটটির ভাষা রাজনৈতিকভাবে স্পষ্ট উসকানিমূলক ও হুমকিমূলক, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টিতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত একটি প্রচেষ্টা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গাংনী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল করিম গণমাধ্যমকে জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে বস্তু দুটি বোমা সদৃশ হলেও এগুলো প্রকৃত বিস্ফোরক কিনা তা নিশ্চিত হতে বিশেষায়িত বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ইউনিটের সহায়তায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাণী ইসরাইল বলেন,“ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আমরা দুটি বোমা সদৃশ বস্তু এবং একটি চিরকুট উদ্ধার করেছি। এগুলো থানায় আনা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

এই ঘটনার পরপরই পুরো বাজার এলাকা ও বিএনপি অফিস সংলগ্ন অঞ্চলজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সন্দেহভাজনদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে এবং স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার উৎস জানার চেষ্টা চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রয়োজনে সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল টাওয়ার লোকেশন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নিয়ে জড়িতদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এ ধরনের বিস্ফোরক সদৃশ বস্তু রেখে আতঙ্ক সৃষ্টি করাকে বিশ্লেষকরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার কৌশল হিসেবেই দেখছেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানো, জনমনে ভীতির সঞ্চার এবং প্রশাসনকে চাপে রাখার অপকৌশল হিসেবে এমন কর্মকাণ্ডকে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশাসনের কাছ থেকে দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের শনাক্ত করে উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা বাড়তে পারে যদি কঠোর নিরাপত্তা ও নজরদারি আরোপ না করা হয়। জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, তারা সর্বোচ্চ সতর্কতায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তুতি রয়েছে।

এই ঘটনার পর স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে, যদিও কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে দায় স্বীকার করেনি। তদন্ত শেষে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের মাধ্যমে এ ধরনের অপচেষ্টা প্রতিরোধে কঠোর বার্তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সুশীল সমাজের নেতারা।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক