শেয়ারবাজারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে যে ৯টি কোম্পানির 

শেয়ারবাজার ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৩ ১১:১০:২৫
শেয়ারবাজারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে যে ৯টি কোম্পানির 

২০২৫ সালের মে মাসে দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে ৯টির প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগে উল্লেখযোগ্য হ্রাস পরিলক্ষিত হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রকাশিত সর্বশেষ শেয়ারহোল্ডিং প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। বিনিয়োগ হ্রাস পাওয়া এই কোম্পানিগুলোর তালিকায় রয়েছে ইনট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ডোরিন পাওয়ার, লুব-রেফ, পদ্মা অয়েল, পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ, শাহজীবাজার পাওয়ার এবং ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড।

প্রাতিষ্ঠানিক পুঁজি প্রত্যাহারে শীর্ষে ইনট্রাকো রিফুয়েলিং

এই তালিকার মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন লক্ষ্য করা গেছে ইনট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশনে, যেখানে এক মাসের ব্যবধানে প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানা ১৪.৩৪ শতাংশ থেকে কমে ১২.৫৮ শতাংশে নেমে এসেছে। একই সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭.৩২ শতাংশে। এটি ইঙ্গিত করে যে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক কিছু বিনিয়োগকারী হয় মুনাফা তুলে নিয়েছেন অথবা কোম্পানির মৌলিক সূচক নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সিভিও পেট্রোকেমিক্যালে বিদেশি পুঁজি সরে যাওয়ার ইঙ্গিত

সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ১৭.৩০ শতাংশ থেকে কমে ১৬.৬৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে কমে ০.৪৪ শতাংশ থেকে ০.১৬ শতাংশে নেমে আসে, যা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার প্রতিফলন হতে পারে। যদিও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশ বেড়েছে, তথাপি প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি পুঁজি প্রত্যাহার ভবিষ্যৎ মুনাফা নিয়ে অনিশ্চয়তা বা কৌশলগত পুনর্বিন্যাসের ইঙ্গিত দেয়।

ডেসকো ও পাওয়ার গ্রিডে সামান্য হ্রাস

সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ডেসকোতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ২৩.৬৬ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ২৩.৬৩ শতাংশে। একইভাবে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশেও ১৪.৬৩ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৪.৫৯ শতাংশে। এই হ্রাস সামান্য হলেও এটিকে অবহেলা করা যাবে না, কারণ এটি বৃহৎ বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনার কৌশলগত ভারসাম্য পুনর্বিন্যাস নির্দেশ করতে পারে।

ডোরিন ও শাহজীবাজারে উল্লেখযোগ্য পতন

ডোরিন পাওয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ এপ্রিল থেকে মে মাসে ১.৮ শতাংশ কমে ১৭.৫৮ শতাংশ হয়েছে। একই সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশ বেড়েছে, যা পুঁজির অভ্যন্তরীণ রদবদল নির্দেশ করে। শাহজীবাজার পাওয়ারেও একই রকম প্রবণতা লক্ষ করা গেছে, যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার ১৭.৩৪ থেকে কমে ১৬.৪২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

লুব-রেফ ও ইউনাইটেড পাওয়ারে সূক্ষ্ম পরিবর্তন

লুব-রেফ ও ইউনাইটেড পাওয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ হ্রাসের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম যথাক্রমে ০.০৫ এবং ০.০১ শতাংশ। যদিও পরিবর্তন সামান্য, এটি বিনিয়োগকারীদের গভীর পর্যবেক্ষণ ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ইঙ্গিত দিতে পারে। বিশেষ করে ইউনাইটেড পাওয়ারে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ৯০ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকলেও, বাজারে তাদের দৃশ্যমান কার্যক্রম কম দেখা যায়।

পদ্মা অয়েলে সরকারি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ভারসাম্য

পদ্মা অয়েলে প্রাতিষ্ঠানিক অংশীদারিত্ব ৩১.৪৯ থেকে ৩১.২২ শতাংশে কমে এসেছে। অন্যদিকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশ বেড়ে ১৬.৩১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সরকারি মালিকানার অংশ অপরিবর্তিত ৫০.৩৫ শতাংশে রয়েছে, যা কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ কাঠামোতে কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় না।

এই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ হ্রাস একাধিক ইঙ্গিত বহন করে। প্রথমত, কিছু কোম্পানির আর্থিক ফলাফল বা পরিচালন ব্যবস্থাপনায় অনিশ্চয়তা থাকায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পজিশন কমিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, সম্ভাব্য মুনাফা তুলে নেওয়ার কৌশল হিসেবে এই হ্রাস ঘটেছে। তৃতীয়ত, বাজারে সামগ্রিক আস্থাহীনতা এবং দীর্ঘমেয়াদি নীতিগত অনিশ্চয়তা এই বিনিয়োগ সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে।

এছাড়া এটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উপরও প্রভাব ফেলছে। কারণ, প্রাতিষ্ঠানিক পুঁজি প্রত্যাহার বাজারে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে পারে, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়ায়।

এই প্রেক্ষাপটে বাজার বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, কেবলমাত্র পিই রেশিও, লভ্যাংশ বা সাময়িক দর বাড়া-কমা দিয়ে বিনিয়োগের চিত্র ব্যাখ্যা করা যথেষ্ট নয়। বরং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের পরিবর্তনগুলো গভীর পর্যবেক্ষণ, স্বচ্ছ কোম্পানি পরিচালনা এবং তথ্যের বিশ্বস্ততার ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত