রায়পুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষের রাজত্ব!

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৮ ১১:৩৩:৪২
রায়পুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষের রাজত্ব!

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ঘুষ, জালিয়াতি ও অনিয়মে জর্জরিত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অভিযোগ উঠেছে, ঘুষ না দিলে কার্যত কোনো কাজই হয় না। সাব রেজিস্ট্রার মো. ইউনুসের বিরুদ্ধে রয়েছে ঘুষ গ্রহণ, নিয়মবহির্ভূত দলিল রেজিস্ট্রি এবং কর ফাঁকি দিয়ে সম্পত্তির হস্তান্তরের মতো গুরুতর অভিযোগ। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে অফিসের ঝাড়ুদার মো. সোহেল এবং অফিস সহকারী আছমা বেগমের 'সংকেত'ই যথেষ্ট সাব রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর আদায়ে।

সোহেল, যিনি একজন ঝাড়ুদার ও নৈশপ্রহরী, প্রায়শ অফিস সহায়কের দায়িত্বে বসে ঘুষের লেনদেন পরিচালনা করেন। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনি আয়েশে গুণে গুণে টাকা নিচ্ছেন, যা ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। এই ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান চালায় এবং সোহেলকে ঘুষের টাকাসহ হাতেনাতে আটক করে।

মো. ইউনুস ২০২৪ সালের ২৪ জুলাই রায়পুর কার্যালয়ে যোগদানের পর থেকে একের পর এক অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিয়ম ভেঙে দাতার অনুপস্থিতিতে দলিল রেজিস্ট্রি করেছেন, এজলাসে না এসে ব্যক্তিগত কক্ষে বসেই কর ফাঁকি দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করেছেন। এমনকি দলিল টেম্পারিং, বায়না দলিল এবং আম মোক্তার দলিলের নামে ভুয়া রেজিস্ট্রির অভিযোগও পাওয়া গেছে।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এক নাটকীয় ঘটনায় দেখা যায়, চর মোহনা ইউনিয়নের বিল্লাল হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে এনে জিম্মি করে জমি রেজিস্ট্রি করানো হয়। সাব রেজিস্ট্রার বিল্লালের উপস্থিতি ছাড়াই ২০ শতাংশ জমি হস্তান্তর করে দেন। এ ঘটনায় মামলা হলে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং আদালত দলিল জব্দের নির্দেশ দেন।

রায়পুর দলিল লেখক ও ভেন্ডার কল্যাণ সমিতির সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জানান, বছরজুড়ে প্রায় ৬ হাজার দলিল রেজিস্ট্রি হয় এই অফিসে। এর মধ্যে অধিকাংশই নানা অনিয়ম ও ঘুষের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। অনেক দলিল লেখক, জনপ্রতিনিধি ও ভুক্তভোগীরা দাবি করেন, সাব রেজিস্ট্রার নিয়মিত অফিস করেন না, আর অফিসে এলেও অল্প সময় অবস্থান করেন। সোহেল-আছমাই হয়ে ওঠেন মূল দালাল।

রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম মিঠু বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় তুলেছেন এবং ঘুষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান খান বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে সাব রেজিস্ট্রার ইউনুস দাবি করেন, অফিসের বাইরে কেউ টাকা নিলে তিনি দায়ী নন। তার ভাষায়, “আমি এক কাপ চাও খাই না।” তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে ঘুষ ও জালিয়াতির কারণে কিছু দলিল লেখক ও নকলনবিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সোহেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বদলি করলেও তিনি পরে আবার রায়পুরে ফিরে এসেছেন বলে জানা যায়।

অন্যদিকে, অফিস সহকারী আছমা বেগম দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে এবং অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ