বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়া:চিকিৎসা নয়, হয়েছে কেবল নির্মাণ

সত্য নিউজ:রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত শিশু হাসপাতালে ঢুকে চোখে পড়ে অত্যাধুনিক সাজানো একটি খালি কক্ষ। দরজার বাইরে লেখা—“হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ)”, যা করোনা মহামারির সময় গৃহীত ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু ভবন প্রস্তুত থাকলেও আজও আসেনি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, ফলে ইউনিটটি চালু করা যায়নি।
দুর্নীতির ছোবলে অসমাপ্ত প্রকল্প
বিশ্বব্যাংক ও এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (AIIB) ঋণে নেওয়া এই প্রকল্পের মোট বাজেট ছিল ৬ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৫ হাজার ৯১৪ কোটি ছিল বৈদেশিক ঋণ। সরকারের নিজস্ব অনুদান ছিল ৪৭২ কোটি টাকা। মহামারিকালে জরুরি চিকিৎসা সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্য থাকলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে—সেই লক্ষ্য ব্যর্থতার গহ্বরে।
২০২০ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৫ সালের জুনে। কিন্তু গত ডিসেম্বরেই বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগে প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ার পর সরকার একতরফাভাবে এটি সমাপ্ত ঘোষণা করে। এর ফলে দেশের বহু স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো রয়ে গেছে অর্ধসমাপ্ত, আর কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি না আসায় হাসপাতালগুলো কার্যত ব্যবহারযোগ্য হয়নি।
দৃষ্টান্তমূলক দুর্নীতির দলিল হয়ে উঠেছে এই প্রকল্প
সরকারের নিজেরই নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প অডিট অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই প্রকল্পে ৪৬৫ কোটি টাকার ৭৬টি নিরীক্ষা আপত্তি রয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ৮০ কোটি টাকার আপত্তি নিষ্পত্তি হয়েছে, বাকিগুলো অনিষ্পন্ন।
পিপিই, মাস্ক, থার্মোমিটারসহ বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী কেনায় হিসাবের গরমিল দেখা গেছে প্রায় ৩৪ কোটি টাকার। এমনকি কেনা হয়েছে নিম্নমানের সরঞ্জাম, যেখানে মান যাচাইয়ের কোনো প্রক্রিয়াই অনুসরণ করা হয়নি। অনভিজ্ঞ ও অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয় চুক্তিতে। এতে সরকারের বাড়তি খরচ হয়েছে প্রায় ৫৯ কোটি টাকা।
অসমাপ্ত স্থাপনা, অচল যন্ত্রপাতি
শুধু শিশু হাসপাতাল নয়, দেশের ৫০টি জেলার সদর হাসপাতালে নির্মিত হয়েছে এক হাজার আইসোলেশন ইউনিট এবং ৪৮টি আইসিইউ। কিন্তু এই ইউনিটগুলোর অধিকাংশেই নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি।
৪৮টি আইসিইউর মধ্যে মাত্র ১৩টি তে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে, বাকিগুলো অকেজো পড়ে আছে। ১৪টি মেডিকেল কলেজে স্থাপিত পেডিয়াট্রিক কেয়ার ইউনিটেও এখন পর্যন্ত যন্ত্রপাতির দরপত্র আহ্বানই করা হয়নি। ২০টি হাসপাতালের জন্য পরিকল্পিত মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্টের মধ্যে যন্ত্রপাতি সরবরাহ বাতিল করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবার বড় মঞ্চে জনস্বার্থের পরাজয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, “এ প্রকল্পে দুর্নীতি প্রতিষ্ঠিত সত্য। তবে তার চেয়ে বড় বাস্তবতা হলো, এখনো মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত। তাই যারা দুর্নীতিতে জড়িত তাদের বিচারের পাশাপাশি প্রকল্পের অপূর্ণ অংশ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।”
শিশু হাসপাতালের পরিচালক মো. মাহবুবুল হক জানান, “এইচডিইউ চালু করতে অন্তত চার কোটি টাকা প্রয়োজন, কিন্তু তা হাসপাতালের বাজেটে নেই। ইউনিটটি চালু থাকলে শিশুদের জরুরি চিকিৎসা নিশ্চিত করা যেত। এখন তা হয়ে আছে এক অপূর্ণ স্বপ্ন।”
জনগণের খেসারত: নীতিনির্ধারকদের দায়ভার
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক পরিচালক গেইল মার্টিন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, প্রকল্পে দুর্নীতির যথাযথ প্রমাণ পেয়ে তা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে, যা পরে দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক শেখ সায়েদুল হক জানিয়েছেন, “আইএমইডির প্রতিবেদন এখনো হাতে পাইনি। কিছু অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি হয়েছে, বাকিগুলোর বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কোভিড মোকাবিলায় গৃহীত এ প্রকল্পের ব্যর্থতা শুধু একটি অর্থনৈতিক নয়, এক মানবিক বিপর্যয়ের প্রতিচ্ছবি। কোটি কোটি টাকার অপচয়, ব্যবহৃত না হওয়া অবকাঠামো, এবং অচল যন্ত্রপাতির পাহাড় যেন ভবিষ্যতের জন্য এক সতর্কবার্তা। দুর্নীতি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা এবং অসমাপ্ত প্রকল্পগুলো দ্রুত সম্পন্ন করাই হতে পারে জনগণের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতার প্রকৃত প্রমাণ।
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান: রাষ্ট্র নির্মাণের এক উজ্জ্বল প্রতিমূর্তি
- নতুন রাজনৈতিক সমীকরণে কারা টিকে থাকবে, কারা হারিয়ে যাবে?
- জবি’র সাবেক অধ্যাপক আনোয়ার বেগম হত্যাচেষ্টা মামলায় সুত্রাপুরে আটক
- দেশের ৬ জেলায় ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা, নদীবন্দরে ২ নম্বর সতর্কতা
- তারকা পরিচিতি: রক্ষাকবচ না কি সমাজবিমুখ অব্যাহতি?
- সড়ক দুর্ঘটনায় সেনা কর্মকর্তা নিহত
- সোনাক্ষীর ‘নিকিতা রায়’-এর মুক্তি পেছাল, ঘোষণা দিলেন নতুন তারিখ
- “ভারতের দালালরা ঘাপটি মেরে বসে আছে”: মুফতি রেজাউল করিম
- নাহিদের স্পষ্ট বার্তা: এনসিপিতে নেই দুই উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজ
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৪০৫ কোটি টাকার লোকসান
- বিএনপির সালাউদ্দিনকে নিয়ে কি লিখলেন প্রেস সচিব শফিকুল?
- জেনে নিন ঈদের ছুটিতে কোন কোন এলাকায় ব্যাংক খোলা থাকবে
- "ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সব রাজনৈতিক দল অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে"
- নারীকে লাথি মারা আকাশ চৌধুরী জামায়াতের কর্মী ছিলেন, বহিষ্কার করল দল
- মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসনের ভবিষ্যৎ কেন অনিশ্চিত