হিটলার কেন ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিলেন? নেপথ্যের কারণ কী?

২০২৫ অক্টোবর ১৩ ২০:৫৭:০১
হিটলার কেন ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিলেন? নেপথ্যের কারণ কী?
ছবিঃ সংগৃহীত

১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সাল, এই পাঁচ বছরের মধ্যে অ্যাডলফ হিটলার প্রায় ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিলেন। এই ভয়াবহ গণহত্যার পর তিনি বলেছিলেন যে, কিছু ইহুদিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন কারণ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন জানতে পারে কেন তিনি এই হত্যাযজ্ঞে মেতেছিলেন। গ্যাস চেম্বার, কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প বা গণগুলি বর্ষণের মতো ভয়ানক উপায়ে হিটলার ইহুদি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছিলেন। শুধু ইহুদি নয়, তিনি ১ লাখ সমকামী পুরুষকেও হত্যা করেছিলেন।

আত্মহত্যার আগে, ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল, হিটলার একটি নোটে লিখেছিলেন যে, কয়েক শতাব্দী পর ইহুদিরা পৃথিবীতে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড চালাবে এবং ইউরোপীয়রা এই রক্তপাতের জন্য দায়ী থাকবে।

ইহুদিদের প্রতি হিটলারের ঘৃণার কারণ:

নিকৃষ্ট জীব ও অশান্তির মূল: হিটলার ইহুদিদেরকে 'নিকৃষ্ট জীব' (আর্গানিমাস নিদ্রিম নিভেউ) বলে অভিহিত করতেন। ১৯২৫ সালে প্রকাশিত তার আত্মজীবনী 'মাইন ক্যাম্প' (Mein Kampf) বইয়ে তিনি লেখেন, "পৃথিবীর সকল অশান্তির মূল ইহুদিরাই। নর্দমার কিটের মতো তাদের আচরণ, এরা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার মতো ছড়িয়ে পড়ে মানব সমাজের ধ্বংস শুরু করে"।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা:

আর্ট স্কুলের প্রত্যাখ্যান: জন্মসূত্রে অস্ট্রিয়ান হিটলারের স্বপ্ন ছিল চিত্রশিল্পী হওয়ার। কিন্তু ভিয়েনার আর্ট স্কুল একাডেমি টানা দুই বছর তার ভর্তির আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। শোনা যায়, সেই আর্ট স্কুলের রেক্টর ছিলেন একজন ইহুদি, এবং ধারণা করা হয় এখান থেকেই তার ইহুদি বিদ্বেষের সূত্রপাত।

মায়ের চিকিৎসকের ধর্ম: হিটলারের মা ক্লারা হিটলার স্তন ক্যান্সারে মারা যান। তার চিকিৎসা করেছিলেন একজন ইহুদি চিকিৎসক ডক্টর এডোয়ার্ড ব্লক। কিছু মানুষ দাবি করে, মায়ের মৃত্যুর কারণে ইহুদিদের প্রতি হিটলারের ক্ষোভ বেড়েছিল, যদিও এই যুক্তি যথেষ্ট দুর্বল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়: ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির শোচনীয় পরাজয় হয়। হিটলার নিজে একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে জার্মান আর্মির সঙ্গে কাজ করেছিলেন। তিনি এবং অনেক জার্মান জাতীয়তাবাদী বিশ্বাস করতেন যে, জার্মানি যুদ্ধে পরাজিত হয়নি, বরং দেশের অভ্যন্তরে থাকা ইহুদি ও সমাজতান্ত্রিকরাই জার্মানির বুকে ছুরি মেরেছে। এই ধারণা থেকেই হিটলার ইহুদিদেরকে 'বেইমান জাতি' মনে করতে শুরু করেন এবং তাদের কারণেই জার্মানির পরাজয় হয়েছে বলে বিশ্বাস করতেন।

ক্ষমতায় আগমন ও জনসমর্থন: ১৯৩৩ সালে অ্যাডলফ হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর অর্থনৈতিক সংকট, বেকারত্ব এবং হতাশায় ভোগা জার্মান জনগণকে তিনি আশার আলো দেখিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বে দেশ উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে এবং দেশের বিরুদ্ধে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর হবে—এই বিশ্বাস তিনি জনগণের মধ্যে জাগিয়ে তুলেছিলেন। এই বিপুল জনসমর্থন ছাড়া হিটলারের পক্ষে ইহুদি নিধনযজ্ঞ চালানো সম্ভব হতো না।

হলোকাস্ট ও ফাইনাল সলিউশন:

১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে সংঘটিত ইহুদি নিধনের এই প্রয়াসকে 'হলোকাস্ট' (Holocaust) বলা হয়। হিটলারের 'ফাইনাল সলিউশন' (Final Solution) নীতির ওপর ভিত্তি করে হলোকাস্ট বাস্তবায়িত হয়েছিল। 'ফাইনাল সলিউশন' বলতে হিটলারের সেই চূড়ান্ত পরিকল্পনাকে বোঝায়, যার লক্ষ্য ছিল ইউরোপ থেকে ইহুদি জাতিকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। এই পরিকল্পনাটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৪২ সালে ওয়ানসি কনফারেন্সে গৃহীত হয়।

ইউরোপীয় গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

হিটলারের ইহুদি গণহত্যার খবর প্রচারের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় গণমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে একপেশে নীতি অনুসরণের অভিযোগ রয়েছে। বলা হয়, গণমাধ্যমগুলো হিটলারের নৃশংসতা এবং ৬০ লাখ ইহুদি হত্যার ঘটনাকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরলেও, কী কারণে তিনি এতটা ইহুদি-বিদ্বেষী হয়ে উঠেছিলেন, সেই প্রেক্ষাপটকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এড়িয়ে যায়।

অভিযোগ রয়েছে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পেছনে ইহুদিদের কথিত ষড়যন্ত্রের মতো বিষয়গুলো ইউরোপীয় গণমাধ্যম সচেতনভাবে চেপে রাখে। একইভাবে, হিটলারের কিছু ভিন্ন দিক, যেমন তাঁর ধূমপান-বিরোধী কঠোর প্রচারণা বা সমকামিতার বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান, এগুলো নিয়েও আলোচনা করা হয় না বলে মনে করা হয়।

ধারণা করা হয়, এই একপেশে প্রচারণার মূল কারণ হলো, গণহত্যার পেছনের কারণগুলো প্রকাশ পেলে ইহুদিদের কথিত ষড়যন্ত্র এবং তাতে ইউরোপীয়দের স্বার্থ জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতে পারে, যা গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়।


পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক পাখি কারা? জানুন ভয়ংকর তথ্য

২০২৫ ডিসেম্বর ০৪ ১৩:২০:৫৩
পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক পাখি কারা? জানুন ভয়ংকর তথ্য
ছবি: সংগৃহীত

১৯৬৩ সালে আলফ্রেড হিচকক নির্মাণ করেন তাঁর ক্যারিয়ারের অন্যতম বিখ্যাত থ্রিলার দ্য বার্ডস। ছবিতে দেখানো হয়, যদি হঠাৎ অসংখ্য পাখি একযোগে কোনও উপকূলীয় শহরকে আক্রমণ করে, তবে কী ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। সিনেমাটি পুরোপুরি কল্পকাহিনি নয়। ১৯৬১ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাপিটোলা শহরে ঘটে যাওয়া এক রহস্যময় ঘটনার ওপর ভিত্তি করেই ছবিটির নির্মাণ। সে সময় সুটি শিয়ারওয়াটার প্রজাতির হাজারো পাখি বিষাক্ত ডায়াটমে আক্রান্ত অ্যাঙ্কোভি খেয়ে বিভ্রান্ত হয়ে বাড়িঘরের ছাদে আছড়ে পড়ে, রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে মৃতদেহ। এই অদ্ভুত ঘটনাই পরবর্তীতে হিচককের কল্পনাকে উসকে দেয়।

আজও দ্য বার্ডস বা দ্য হ্যাপেনিং এর মতো চলচ্চিত্রে প্রকৃতির হঠাৎ প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠার কাহিনি দেখা যায়। কিন্তু সত্য হলো, বাস্তব জীবনেও পাখির আক্রমণ কখনো কখনো মারাত্মক হতে পারে। বিশেষ করে, এলাকা রক্ষা ও ছানাদের সুরক্ষার বিষয়টি পাখিদের কাছে অত্যন্ত সংবেদনশীল। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু প্রজাতির পাখি এমনভাবে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে যে তা মানুষের জীবনকেও হুমকির মুখে ফেলে দেয়।

ক্যাসোয়ারি: পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক পাখি

অস্ট্রেলিয়া ও নিউগিনির ঘন বনে বসবাসকারী ক্যাসোয়ারিকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক পাখি বলা হয়। উড়তে না পারা এ পাখির পায়ের ভেতরের আঙুলে থাকে লম্বা ছুরির মতো ধারালো নখ। এই নখের এক আঘাতে মানুষ পর্যন্ত মারা যেতে পারে। ক্যাসোয়ারি ঘণ্টায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার গতিতে দৌড়াতে পারে, আর কৌতূহলবশত মানুষের কাছে ঘন ঘন চলে আসে।

ক্যাসোয়ারির আক্রমণ খুব বেশি ঘটে না, তবে সাধারণত হয় খাবারের লোভে। ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার এক পর্যটককে ক্যাসোয়ারি লাথি মেরে পানিতে ফেলে দেয়, যদিও বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটে ১৯২৬ সালে, যখন ক্যাসোয়ারি শিকারে যাওয়া এক কিশোরকে পাখিটি মাটিতে ফেলে তার তীক্ষ্ণ নখ দিয়ে জুগুলার শিরা কেটে ফেলে।

অস্ট্রিচ: দানবাকার পাখি, ভয়ংকর লাথির শক্তি

আফ্রিকার তৃণভূমিতে বসবাসকারী উটপাখি বিশ্বের সবচেয়ে বড় জীবিত পাখি। পুরুষ উটপাখির উচ্চতা ৯ ফুট পর্যন্ত হতে পারে, ওজন ১৫০ কেজির বেশি। তারা ঘণ্টায় প্রায় ৭২ কিলোমিটার গতিতে দৌড়াতে পারে। তবে শত্রুর মুখোমুখি হলে উটপাখি ভয়ংকর লাথি মারতে সক্ষম, যা বড় শিকারী প্রাণীকেও মেরে ফেলতে পারে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উটপাখির আক্রমণ ঘটে মানুষের উত্তেজনা বা প্ররোচনার কারণে। ১৯৮১ সালে বিখ্যাত আমেরিকান গায়ক জনি ক্যাশ নিজ বাড়ির কাছে হাঁটার সময় একটি আক্রমণাত্মক উটপাখির মুখোমুখি হন। পাখিটি তার পেটে ধারালো নখ দিয়ে আঘাত করে—সৌভাগ্যবশত শক্ত বেল্ট বাকলের কারণে প্রাণঘাতী ক্ষতি হয়নি।

ইমু: দ্রুত দৌড়বিদ কিন্তু বিপজ্জনক প্রতিরক্ষক

ইমু ক্যাসোয়ারির ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। প্রায় ৫০ কিলোমিটার গতিতে দৌড়াতে পারে, তবে কোণঠাসা হলে ভয়ংকর লাথি দিতে সক্ষম। ইমুর আক্রমণে মানব মৃত্যুর ঘটনা প্রায় নেই বললেই চলে, তবে চিড়িয়াখানা ও খামারে ইমুর আক্রমণে আহত হওয়ার ঘটনা বহুবার নথিবদ্ধ হয়েছে। ২০০৯ সালে এক বছরেই বিশ্বজুড়ে ১০০টিরও বেশি ইমু আক্রমণের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়।

ল্যামারগায়ার: আকাশে ভাসমান অস্থিখাদক শকুন

হিমালয় থেকে আফ্রিকার পাহাড়ি অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত ল্যামারগায়ার বা দাড়িওয়ালা শকুন তাদের অনন্য খাদ্যাভ্যাসের জন্য পরিচিত। এরা বড় হাড় আকাশ থেকে পাথরের ওপর ফেলে ভেঙে ভেতরের মজ্জা খায়। আক্রমণাত্মক আচরণ মানুষের প্রতি খুব কম দেখা গেলেও প্রাচীন গ্রিক নাট্যকার এস্কাইলাসকে নাকি এমন একটি পাখি কচ্ছপ ফেলে ভুলবশত হত্যা করেছিল—যদিও আধুনিক বিশেষজ্ঞরা এটিকে কিংবদন্তি বলেই মনে করেন।

প্যাঁচা: নীরব শিকারি, ভয়ংকর প্রতিরক্ষামোড

প্যাঁচা সাধারণত লাজুক হলেও বাসা বা ছানার সুরক্ষায় অস্বাভাবিক আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেট-হর্নড ও বার্ড প্যাঁচার আক্রমণের বহু ঘটনা রয়েছে। ২০১২ সালে সিয়াটলে একাধিক মানুষ একই গ্রেট-হর্নড প্যাঁচার আক্রমণের শিকার হন। ওরেগনে এক দৌড়বিদের মাথায় বারবার আঘাত করে আরেকটি প্যাঁচা।

গ্রেট-হর্নড প্যাঁচার টালন বা নখর ৫০০ পিএসআই শক্তিতে চাপ দিতে পারে, যা গার্ড ডগের কামড়ের সমান। আক্রমণের সময় তারা সাধারণত মানুষের মাথা ও মুখ লক্ষ্য করে।

প্যাঁচা-সম্পর্কিত সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার মধ্যে রয়েছে উত্তর ক্যারোলিনার একটি হত্যা মামলা, যেখানে দাবি করা হয় যে এক নারীর মাথায় প্যাঁচার আঘাত থেকে শুরু হওয়া দুর্ঘটনাতেই তার মৃত্যু ঘটে।


বাস্তবতা বনাম প্রচারণা: টাইটানিক রহস্য উন্মোচন

২০২৫ ডিসেম্বর ০৪ ১২:৩৬:৪২
বাস্তবতা বনাম প্রচারণা: টাইটানিক রহস্য উন্মোচন
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের অন্যতম বড় সামুদ্রিক দুর্ঘটনা টাইটানিক ডুবে যাওয়ার পরই “আনসিঙ্কেবল” বা ‘অডুবিত’ জাহাজ–সংক্রান্ত গল্পটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়। কিন্তু জাহাজটি ডুবে যাওয়ার আগেও কি সেটিকে সত্যিই অডুবিত বলা হয়েছিল? ইতিহাসের দলিল-দস্তাবেজ বলছে, হ্যাঁ যদিও বিষয়টি ছিল অনেকটা প্রচারণার অংশ, নিরাপত্তা নিয়ে মানুষের আস্থার ব্যাপারে।

টাইটানিক নির্মাণ করেছিলেন বিখ্যাত ডিজাইনার থমাস অ্যান্ড্রুস। ৫০ হাজার টনেরও বেশি ওজনের এই জাহাজটিকে তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে আধুনিক ও নিরাপদ যাত্রীবাহী জাহাজ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল। জাহাজটির প্রচারণা ও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বহু প্রতিবেদনে এটিকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ‘অডুবিত’ বলে দাবি করা হয়েছিল। সেই দাবি এতটাই গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে যে জাহাজ ডোবার মুহূর্তেও অনেক যাত্রী আতঙ্কিত হননি।

জাহাজ ডোবার সময়ও হোয়াইট স্টার লাইনের একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্কিন কংগ্রেসকে জানিয়েছিলেন, প্রথমে তিনি টাইটানিক ডুবছে—এই খবরই বিশ্বাস করতে পারেননি, কারণ তার ধারণা ছিল জাহাজটি অডুবিত।

নিরাপত্তা নকশাই জন্ম দিল ‘অডুবিত’ তকমা

টাইটানিককে অডুবিত মনে করার প্রধান কারণ ছিল জাহাজটির অত্যাধুনিক সুরক্ষা ব্যবস্থা। এর হালের ভেতরে ছিল ১৬টি বিশাল ওয়াটারটাইট কম্পার্টমেন্ট, যেগুলোর দরজা একটিমাত্র সুইচ টিপে বন্ধ করে ফেলা যেত। ধারণা ছিল, জাহাজের কোনও অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই কম্পার্টমেন্টগুলো খুব দ্রুত সিল করে দিলে জাহাজ ভেসে থাকতে পারবে।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নকশায় ত্রুটি ছিল। কম্পার্টমেন্টগুলো উপরের দিকে সম্পূর্ণ সিল করা ছিল না, ফলে আইসবার্গে ধাক্কা লাগার পর পানি এক কম্পার্টমেন্ট থেকে পরেরটিতে গড়িয়ে পড়ে পুরো জাহাজকে ডুবিয়ে দেয়।

বিলাসিতা, প্রচারণা এবং ট্র্যাজেডির পর জন্ম নেওয়া একটি ‘মিথ’

ডুবির আগ পর্যন্ত টাইটানিকের মূল আকর্ষণ ছিল এর বিলাসবহুল কেবিন, বিশাল আকার ও অভিজাত সুবিধা। যাত্রীরা এটি বেছে নিয়েছিলেন নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং এর আভিজাত্যের জন্য। সংবাদমাধ্যমেও জাহাজটির বিলাসিতা নিয়ে বেশি লেখা হতো, নিরাপত্তা নিয়ে নয়।

জাহাজ ডোবার পরই ‘আনসিঙ্কেবল’ তকমাটি যেন নাটকীয়তা বাড়ানোর জন্য আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে। অথচ বাস্তবতা হলো, জাহাজটিকে সম্পূর্ণ অডুবিত বলা হলেও, সেই দাবি ছিল অতিরঞ্জিত। তবে এটাও সত্য প্রচারণা, বিজ্ঞাপন ও সংবাদ প্রতিবেদনে টাইটানিককে ‘অত্যন্ত নিরাপদ’ বলা হয়েছিল বারবার।

টাইটানিক দুর্ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক, প্রকৃতিকে অবমূল্যায়ন করার সুযোগ নেই। জাহাজটি অডুবিত এই আত্মবিশ্বাসই অনেককে দেরিতে লাইফবোটে উঠতে বাধ্য করেছিল এবং বাড়িয়েছে প্রাণহানির সংখ্যা।

সূত্র: ব্রিটানিকা


শীতে সাদা হয়ে যায় যে সাত প্রাণী, জানুন তাদের রহস্য

২০২৫ ডিসেম্বর ০৩ ১২:৫৯:০৮
শীতে সাদা হয়ে যায় যে সাত প্রাণী, জানুন তাদের রহস্য
ছবি: সংগৃহীত

উত্তর গোলার্ধে শীত নেমে আসতেই প্রকৃতিতে ঘটে বিস্ময়কর এক পরিবর্তন। বরফের সঙ্গে মিশে যেতে কিছু প্রাণী বাদামি বা ধূসর রঙ ত্যাগ করে হয়ে ওঠে একেবারে সাদা। গ্রীষ্মে যাদের দেখা যায় সাধারণ রঙে, শীতে তারাই অল্প সময়ে রূপ নেয় বরফসাদা আচ্ছাদনে। যদিও আর্কটিক অঞ্চলের অনেক প্রাণী সারাবছরই সাদা থাকে, যেমন ধবলভালুক বা স্নো-অাওল, তবে এই সাত প্রাণী মৌসুমি রঙ পরিবর্তনের অনন্য ক্ষমতা দেখায়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধু আড়াল বা ক্যামোফ্লাজ নয়, বরং তাপ সংরক্ষণ, শক্তি ব্যবস্থাপনা এবং ফটোপিরিয়ডের প্রভাবও এই রঙ পরিবর্তনের পেছনে বড় ভূমিকা রাখে। মেলানিনহীন সাদা লোমের ভেতরে সৃষ্টি হওয়া বায়ুফাঁক শীতে অতিরিক্ত উষ্ণতা ধরে রাখতে সাহায্য করে, যা বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

নীচে একে একে তুলে ধরা হলো শীতে রঙ বদলানো সাত প্রাণীর বৈজ্ঞানিক রহস্য-

১. খরগোশজাতীয় প্রাণী: ফটোপিরিয়ডের জাদু

আর্কটিক হেয়ার, মাউন্টেন হেয়ার ও স্নোশু হেয়ার শীতের শুরুতেই বাদামি ও ধূসর লোম বদলে সাদা হয়ে যায়। দিনের আলোর পরিমাণ কমতে থাকলে চোখের রেটিনা সেই সংকেত মস্তিষ্কে পাঠায়, এবং শরীরে নতুন সাদা লোম গজাতে শুরু করে। প্রথমে পা, কান ও বাহ্যিক অংশ সাদা হয়, পরে পুরো শরীর।

গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তুষারাবরণ দ্রুত কমে গেলে এই প্রাণীরা সাদা হয়ে পড়ে মাটির রঙের বিপরীতে ফলে শিকারিদের কাছে সহজ টার্গেট হয়।

২. বেজি বা উইজেল: রাজকীয় পোশাকের উৎস

তিন প্রজাতির উইজেল লিস্ট উইজেল, লং-টেইল্ড উইজেল এবং স্টোট শীতে বরফসাদা লোম পায়। স্টোটের সাদা লোমকেই মধ্যযুগ থেকে পরিচিত ‘আরমাইন’ নামে, যা রাজা-রাজড়াদের পোশাকের গলায় ব্যবহৃত হতো। দক্ষিণাঞ্চলে থাকা উইজেলরা রঙ না বদলালেও উত্তরাঞ্চলের উইজেলরা পুরোপুরি সাদা হয়। গবেষণা বলছে, এদের রঙ পরিবর্তনও তাপমাত্রার কারণে নয়, বরং ফটোপিরিয়ডের প্রভাবে ঘটে।

৩. পিয়ারি ক্যারিবু: একমাত্র রঙ বদলানো ক্যারিবু উপপ্রজাতি

কানাডা ও গ্রিনল্যান্ডের উচ্চ আর্কটিকে পাওয়া পিয়ারি ক্যারিবু শীতে রূপ নেয় সম্পূর্ণ সাদা আচ্ছাদনে। অন্য উপপ্রজাতির ক্যারিবুরা সারাবছর বাদামি-ধূসরই থাকে। ছোট আকার, ভিন্ন শিং কাঠামো ও রঙ বদলানোর ক্ষমতার কারণে এগুলোকে একসময় আলাদা প্রজাতি ভাবা হতো।

৪. কলার্ড লেমিং: অদ্ভুত শীতের নখর

ডিক্রোস্টনিক্স গণের লেমিংগুলো শীতে পুরোপুরি সাদা হয়ে যায়। যদিও এরা বেশিরভাগ সময়ই বরফের নিচে বাস করে, যেখানে ক্যামোফ্লাজ খুব দরকার নেই, তবুও বিবর্তনে এ বৈশিষ্ট্য রয়ে গেছে। শীতকালে তাদের পায়ের পাতায় গজায় বিশেষ ‘শীতের নখর’ যা বরফ খুঁড়ে বাসা বানাতে সাহায্য করে।

৫. পটারমিগান: পালকের জাদু

পটারমিগান তিন প্রজাতির পাখি, যারা শীতে বাদামি বা ছোপ ছোপ পালক ত্যাগ করে দেহজুড়ে সাদা পালক ধারণ করে। উইলো ও রক পটারমিগানের লেজে কিছু কালো পালক থাকে, তবে হোয়াইট-টেইলড পটারমিগান পুরোপুরি সাদা হয়ে যায়। এমনকি মাথা থেকে পা পর্যন্ত ‘হোয়াইট বুট’ গজায়, যা তুষারের ওপর হাঁটতে সুবিধা দেয়। সাদা রঙের উজ্জ্বলতা আসে পালকের ভিতরে থাকা বায়ুফাঁকের কারণে।

৬. সাইবেরিয়ান হ্যামস্টার: ঘরের আলোয়ও বদলায় রঙ

একমাত্র গৃহপালিত প্রজাতি হিসেবে এই তালিকায় রয়েছে সাইবেরিয়ান হ্যামস্টার, যাকে অনেকে ‘উইন্টার হোয়াইট’ নামেও চেনে। যদি এদের এমন ঘরে রাখা হয় যেখানে প্রাকৃতিক আলো প্রবেশ করে, তবে শীতে তারা ধূসর-রূপালি রঙ থেকে সাদা হয়ে যায়। তাপমাত্রা নয়, আলোই নিয়ন্ত্রণ করে এদের মোল্টিং চক্র।

৭. আর্কটিক ফক্স: রঙ বদলের প্রতিযোগীতা

গ্রীষ্মে বাদামি-ধূসর আর শীতে বরফসাদা এই দারুণ পরিবর্তনের জন্য আর্কটিক ফক্স বিখ্যাত। তবে আলাস্কা ও কানাডার উপকূলীয় এলাকায় এদের ‘নীল রঙের’ ভ্যারিয়েন্টও পাওয়া যায়, যারা শীতে কেবল অল্প হালকা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে লাল শেয়াল এখন আর্কটিক অঞ্চলে ঢুকে পড়ছে, এবং খাদ্য প্রতিযোগিতায় অনেক সময় আর্কটিক ফক্সকে হারিয়ে দিচ্ছে।

তথ্যসূত্র: ব্রিটানিকা


সুগার বিট: পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ চিনির উৎস

ফিচার ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ০২ ০৮:৩৬:১৭
সুগার বিট: পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ চিনির উৎস
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের চিনি উৎপাদনে আখের পরেই যে ফসলটি সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে, তা হলো সুগার বিট বা বিটা ভালগারিস। আধুনিক কৃষি, খাদ্যশিল্প ও বায়োটেকনোলজির অগ্রগতির কারণে এই ফসল এখন ইউরোপসহ পৃথিবীর বহু অঞ্চলের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। উচ্চমাত্রার সুক্রোজসমৃদ্ধ রসের জন্য সুগার বিটকে আজ চিনি শিল্পের প্রধান শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সুগার বিট মূলত অ্যামারান্থেসি পরিবারের উদ্ভিদ এবং বহু শতাব্দী ধরে এটি পুষ্টিকর সবজি ও পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ১৭৪৭ সালে জার্মান রসায়নবিদ আন্দ্রেয়াস মার্গগ্রাফ প্রথমবারের মতো বিট থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চিনি উৎপাদন করেন। তবে শিল্পকারখানায় বিট থেকে চিনি তৈরির যাত্রা শুরু হয় ১৮০২ সালে সিলেশিয়ায় প্রথম বিট সুগার ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।

ন্যাপোলিয়ন ১৮১১ সালে এ শিল্পের প্রসারের প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখান। ব্রিটিশ অবরোধে যখন ফরাসি সাম্রাজ্যের আখের চিনি আমদানি বন্ধ হয়ে যায়, তখন তিনি বিকল্প হিসেবে বিট সুগার উৎপাদনকে রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার দেন এবং চারোনদিকে দ্রুত কারখানা স্থাপন শুরু হয়। যদিও ন্যাপোলিয়নের পতনের পর শিল্পটি সাময়িকভাবে ম্লান হয়েছিল, তবে ১৮৪০-এর দশক থেকে ইউরোপজুড়ে এর বিস্তার দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে। ১৮৮০ সালের মধ্যেই ইউরোপে বিটের উৎপাদন আখকে ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় শতভাগ চিনি উৎপাদন বিট থেকে হয়।

চাষাবাদ ও উৎপাদন চক্র

সুগার বিট সাধারণত শীতল নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন ফসল হিসেবে চাষ হয়; তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের উষ্ণ অঞ্চলে এটি শীতকালীন ফসল হিসেবেও ব্যাপক প্রচলিত হয়েছে। সাধারণত ১৭০ থেকে ২০০ দিনের ফসলচক্রে এটি পূর্ণবয়স্ক হয়।

বীজ বপন থেকে শেকড় পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত আবহাওয়া তুলনামূলক ঠান্ডা হলে ফলন বাড়ে এবং সুক্রোজের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। উপযুক্ত অবস্থায় প্রতিটি বিটের ওজন ১ থেকে ২ কেজি পর্যন্ত হতে পারে এবং এতে ৮ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত সুক্রোজ পাওয়া যায়।

সুগার বিটের জন্য আদর্শ মাটি হচ্ছে হিউমাসসমৃদ্ধ লোম; তবে বালুকামাটি থেকে শুরু করে ভারী মাটি পর্যন্ত বিভিন্ন মাটিতেই এটি চাষ করা যায়। শিল্পোন্নত কৃষি খামারে গভীর চাষ, যথাযথ সারের ব্যবহার, প্রিসিশন ড্রিলিং, কীটনাশক ও হার্বিসাইড ব্যবহারের মাধ্যমে উচ্চমানের ফসল উৎপাদন করা হয়।

রোগবালাই ও কীটপতঙ্গের হুমকি

কালো রুট রট, সারকোসপোরা লিফ স্পটসহ নানান ছত্রাকঘটিত রোগ সুগার বিটের শেকড়ের ওজন ও সুক্রোজ মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়া নিমাটোড, পোকামাকড় ও বিভিন্ন ধরনের গুবরেপোকার আক্রমণ ফসলের বড় অংশ নষ্ট করে দিতে সক্ষম। এজন্য নিয়মিত ফসল ঘুরিয়ে চাষ এবং রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করা হয়।

জেনেটিক উন্নয়ন ও ব্রিডিং

উচ্চ সুক্রোজমাত্রা, রোগপ্রতিরোধ এবং ভারী শেকড় নিশ্চিত করার জন্য বহু দেশে উন্নত হাইব্রিড ও পলিপ্লয়েড জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে গ্লাইফোসেট-সহনশীল জিএম (জেনেটিকালি মডিফাইড) সুগার বিট এখন বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত।

ফলন, রোগপ্রতিরোধ, অভিযোজনশক্তি এবং চিনি আহরণশীলতা—এই চারটি বৈশিষ্ট্য বাড়াতে বিশ্বব্যাপী গবেষণা অব্যাহত রয়েছে।


শুক্রগ্রহে বজ্রগতির বাতাস: নতুন রহস্য উদঘাটন

২০২৫ ডিসেম্বর ০২ ০৮:১৪:২৯
শুক্রগ্রহে বজ্রগতির বাতাস: নতুন রহস্য উদঘাটন
ছবি: সংগৃহীত

শুক্রগ্রহে এমন অবিশ্বাস্য গতির ঝড়ো বাতাস বইছে, যার শক্তি পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর হারিকেনকেও ছাড়িয়ে যায়। এই তীব্র বায়ুপ্রবাহ ঘণ্টায় ১০০ মিটারেরও বেশি গতিতে পুরো গ্রহ প্রদক্ষিণ করে, যা আমাদের দৃষ্টিতে বিপর্যয়কর হলেও শুক্রে এটি বায়ুমণ্ডলের একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত। বিজ্ঞানীরা এই বিস্ময়কর ঘটনাকে বলেন ‘সুপাররোটেশন’, অর্থাৎ গ্রহের পৃষ্ঠের তুলনায় তার বায়ুমণ্ডলের ঘূর্ণন অনন্ত গুণ দ্রুত হওয়া।

শুক্রগ্রহ নিজের অক্ষে একবার ঘুরতে সময় নেয় প্রায় ২৪৩ পৃথিবী–দিন, যা আমাদের সৌরজগতের মধ্যে সবচেয়ে ধীর ঘূর্ণনগুলোর একটি। অথচ তার বায়ুমণ্ডল মাত্র চার পৃথিবী–দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ গ্রহ প্রদক্ষিণ সম্পন্ন করে। এই বৈপরীত্য বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীদের কাছে একটি বড় রহস্য ছিল।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় পাওয়া নতুন তথ্য বলছে, সূর্যের তাপে সৃষ্ট ‘দৈনিক বায়ু–জোয়ার’ বা ডায়ার্নাল টাইডই শুক্রের বায়ুমণ্ডলের এই অস্বাভাবিক সুপাররোটেশনের প্রধান চালিকা শক্তি। প্রতিদিন সূর্যের তাপে বায়ুমণ্ডলে যে ওঠানামা তৈরি হয়, সেটিই শক্তি সঞ্চালনের মাধ্যমে বাতাসকে দ্রুত বাড়িয়ে তোলে। গবেষকদের মতে, এই টাইড অন্য যেকোনো প্রক্রিয়ার তুলনায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। যদিও সেমিডায়ার্নাল টাইড (দিনে দুইবার তাপজোয়ার), গ্রহজ–তরঙ্গ এবং উত্তর–দক্ষিণমুখী বায়ুপ্রবাহও কিছু মাত্রায় ভূমিকা রাখে, তবুও প্রধান নিয়ামক হলো দৈনিক তাপজোয়ার।

গবেষণায় ২০০৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার ভেনাস এক্সপ্রেস এবং জাপানের আকাতসুকি উপগ্রহ শুক্রের বায়ুমণ্ডলে রেডিও তরঙ্গের বাঁক (রেডিও অকালটেশন) পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বহু মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করে। পাশাপাশি উন্নত কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে বায়ুমণ্ডলের ভেতরে শক্তি কীভাবে স্থানান্তরিত হয় এবং সুপাররোটেশন কীভাবে সৃষ্টি হয় তা পরীক্ষা করা হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, সূর্যের তাপ থেকে উৎপন্ন এই বায়ু–জোয়ার বুঝতে পারলে শুক্রের বায়ুমণ্ডলীয় গতিশীলতার আরও গভীর ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে। পাশাপাশি এর মাধ্যমে অন্যান্য গ্রহের বায়ুমণ্ডলের আচরণ বোঝার পথও সুগম হবে, যা ভবিষ্যতের গ্রহ–বিজ্ঞান গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে।

-রাফসান


৩৬০ আউলিয়ার দেশ সিলেটে ইসলামের পতাকা ওড়ার নেপথ্য কাহিনী

ফিচার ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ৩০ ২০:৫৬:৩৮
৩৬০ আউলিয়ার দেশ সিলেটে ইসলামের পতাকা ওড়ার নেপথ্য কাহিনী

সিলেট, যাকে বলা হয় ৩৬০ আউলিয়ার দেশ। বাংলাদেশের এই উত্তর-পূর্ব জনপদের প্রতিটি ধূলিকণায় মিশে আছে আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়া। কিন্তু এই পবিত্র ভূমিতে ইসলামের বিজয়ের ইতিহাসটি ছিল এক বিশাল সংঘাত ও অলৌকিক ঘটনার সমষ্টি। ইতিহাসের পাতা ও লোকমুখে প্রচলিত কাহিনী অনুযায়ী, ইয়েমেনের মাটি থেকে আসা সুফি সাধক হযরত শাহজালাল (রহ.) এবং তৎকালীন সিলেটের অত্যাচারী রাজা গৌর গোবিন্দের মধ্যে যে লড়াই হয়েছিল, তা কেবল অস্ত্রশস্ত্রে সীমাবদ্ধ ছিল না; এটি ছিল সত্যের আধ্যাত্মিক শক্তির সঙ্গে মিথ্যার কালো জাদুর লড়াই।

গৌর গোবিন্দের অত্যাচার ও বুরহান উদ্দিনের আর্তনাদ

চতুর্দশ শতাব্দীর শুরুর দিকে সিলেট (তৎকালীন শ্রীহট্ট) শাসন করতেন রাজা গৌর গোবিন্দ। তিনি ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী কিন্তু নিষ্ঠুর শাসক। ঐতিহাসিক বর্ণনা মতে, রাজ্যে মুসলমানরা বসবাস করলেও তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ছিল অত্যন্ত সীমিত। ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন শেখ বুরহান উদ্দিন নামক এক মুসলিম তার নবজাতক পুত্রের জন্ম উপলক্ষে একটি গরু জবাই করেন। এই খবর রাজার কানে পৌঁছালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বুরহান উদ্দিনের নবজাতক শিশুটিকে হত্যা করেন এবং তার হাত কেটে ফেলার নির্দেশ দেন।

হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর আগমন

নিরুপায় বুরহান উদ্দিন বিচারের আশায় দিল্লির সুলতানের দ্বারস্থ হন। সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক তার ভাগ্নে সিকান্দার গাজীর নেতৃত্বে সৈন্য পাঠান, কিন্তু গৌর গোবিন্দের যাদুবিদ্যা ও শক্তির কাছে তারা পরাস্ত হন। পরবর্তীতে হযরত শাহজালাল (রহ.) তার ৩৬০ জন সফরসঙ্গী বা আউলিয়াকে নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তার আধ্যাত্মিক শক্তি এবং আল্লাহভীরুতা ছিল তার মূল সম্বল।

কালো জাদু বনাম আধ্যাত্মিক শক্তি

লোকশ্রুতি রয়েছে, রাজা গৌর গোবিন্দ তার রাজ্যকে রক্ষা করতে কালো জাদুর আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি তার প্রাসাদের চারপাশে জাদুকরী আগুনের বেষ্টনী তৈরি করেছিলেন এবং লোহার বিশাল সব বল ছুড়ে মুসলিম বাহিনীকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিলেন। সাধারণ অস্ত্রের মাধ্যমে এই জাদু প্রতিহত করা সম্ভব ছিল না।

কথিত আছে, হযরত শাহজালাল (রহ.) ও তার সঙ্গীরা যখন সুরমা নদীর তীরে পৌঁছান, তখন নদী পার হওয়ার কোনো নৌকা ছিল না। তখন শাহজালাল (রহ.) তার জায়নামাজ বিছিয়ে অলৌকিকভাবে নদী পার হন। এরপর যখন গৌর গোবিন্দের জাদুকরী প্রতিরোধের সম্মুখীন হন, তখন হযরত শাহজালাল (রহ.) তার সঙ্গীদের আজান দেওয়ার নির্দেশ দেন। আজানের সুমধুর ও শক্তিশালী ধ্বনিতে গৌর গোবিন্দের জাদুকরী প্রাসাদ কাঁপতে শুরু করে এবং তার সমস্ত কালো জাদু নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।

সিলেট বিজয় ও ইসলামের প্রচার

অবশেষে ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে রাজা গৌর গোবিন্দ পরাজিত হয়ে পালিয়ে যান এবং সিলেটে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন হয়। হযরত শাহজালাল (রহ.) কেবল একজন বিজেতাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন সংস্কারক। তার আগমনের মাধ্যমেই সিলেটে এবং পরবর্তীতে বাংলার এই অঞ্চলে ইসলামের সুমহান বাণী ছড়িয়ে পড়ে। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ তার আধ্যাত্মিকতার ছায়াতলে আশ্রয় নেয়।

সিলেটে ইসলাম বিজয়ের এই ইতিহাস আজও মানুষের মনে জীবন্ত। হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভিড় করেন। গৌর গোবিন্দের দম্ভ চূর্ণ করে যেভাবে সত্য ও ন্যায়ের বিজয় হয়েছিল, তা ইতিহাসের পাতায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।


শীতের ভোরে প্রকৃতির অপূর্ব সাজ

২০২৫ নভেম্বর ২৭ ০৮:৪৫:১৯
শীতের ভোরে প্রকৃতির অপূর্ব সাজ
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশজুড়ে শীত এখন পুরোপুরি তার আবহ নিয়ে হাজির। কুয়াশায় মোড়ানো আকাশ, হিমেল বাতাসের তীব্র ছোঁয়া, ভোরের আলোয় ঝলমলে শিশিরবিন্দু, খেজুরের রস বিক্রেতার ডাক সব মিলিয়ে শীতের সকাল যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব শিল্পকর্ম। বছরের সবচেয়ে শীতল ঋতু হিসেবে শীত সাধারণত বাংলা ক্যালেন্ডারের পৌষ ও মাঘ মাস জুড়ে থাকে এবং এই সময়ে প্রকৃতি, মানুষ ও সংস্কৃতিতে নানা বৈচিত্র্যময় পরিবর্তন দেখা যায়।

শীতের ভোরে প্রাকৃতিক দৃশ্য হয়ে ওঠে মনোমুগ্ধকর। আকাশে হালকা বা ঘন কুয়াশার চাদর, দূর থেকে দেখা যায় গাছপালা আর পথঘাট ধূসর পর্দায় মোড়া। ঘাসের ডগায় ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু রোদ উঠলে মুক্তোর মতো আলো ছড়ায়। পুকুরপাড়, কৃষিজমি, গ্রামের রাস্তা সবকিছুই যেন স্নিগ্ধ ঠান্ডার কোমল ছোঁয়ায় নতুন রূপ পায়।

আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্যে দেখা যায়, শীতের সকালে বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা থাকে বেশ উঁচু। এর ফলে শীত আরও তীব্র অনুভূত হয়। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ পঞ্চগড়, নীলফামারী, দিনাজপুর, রংপুরে কনকনে ঠান্ডা ও হালকা শৈত্যপ্রবাহ অনুভূত হওয়া এখন নিয়মিত। এসব অঞ্চলে সকালে ঘরের বাইরে বের হওয়া মানেই ঠান্ডার সঙ্গে যুদ্ধ।

শীতে মানুষের জীবনধারা বদলে যায়। সকালবেলা রাস্তা ঘাটে দেখা যায় গরম কাপড়ে মুড়ানো মানুষদের ব্যস্ত যাতায়াত। অফিসগামী মানুষের হাতে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ জড়িয়ে থাকে উষ্ণতার আরাম। অনেকেই আবার ঘরে বসে উপভোগ করেন খেজুরের পাটালি কিংবা খেজুরের রস। গ্রামাঞ্চলে ভোরবেলা রস সংগ্রহের দৃশ্য শীতের অন্যতম আনন্দময় অনুষঙ্গ।

শীতকাল নানা পুষ্টিকর ফলমূল ও সবজির মৌসুম। কমলা, কুল, সফেদা, ডালিম, গাজর, ব্রোকলি, ফুলকপি, পালং শাক এসব সবজি ও ফল শুধু স্বাদেই নয়, স্বাস্থ্য উপকারিতায়ও অনন্য। শীতের সকাল তাই হয়ে ওঠে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের উপযুক্ত সময়।

সাংস্কৃতিকভাবে শীতের সকাল বাঙালির জীবনকে বরাবরই প্রভাবিত করে এসেছে। বাংলা কবিতা, গান, গল্পে শীতের সকাল তার নিজস্ব সৌন্দর্য নিয়ে বারবার স্থান দখল করেছে। কুয়াশা, শিশির, শীতের রোদ, খেজুরের রস এসবই বাঙালির লোকজ স্মৃতি, আবেগ ও সংস্কৃতির অংশ হয়ে আছে যুগ যুগ ধরে।


সাগরের তল থেকে মরুভূমির বুক আসলে কী রহস্য লুকিয়ে আছে এখানে

২০২৫ নভেম্বর ২৬ ১৬:৫৯:২৫
সাগরের তল থেকে মরুভূমির বুক আসলে কী রহস্য লুকিয়ে আছে এখানে
ছবিঃ সংগৃহীত

আমাদের এই পৃথিবী তার গভীরে ঠিক কত রহস্য লুকিয়ে রেখেছে তা মানুষের কল্পনারও অতীত। ইতিহাসের ধুলোমাখা পাতা থেকে শুরু করে আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণাগার পর্যন্ত এমন কিছু প্রশ্ন রয়েছে যার উত্তর আজও মেলেনি। গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর বর্ণনায় থাকা হারিয়ে যাওয়া শহর থেকে শুরু করে নির্জন মরুভূমিতে একা একা হেঁটে চলা পাথর সবকিছুর মধ্যেই যেন এক অলৌকিক আখ্যান মিশে আছে। প্রকৃতির এই খেয়ালি আচরণ আর ইতিহাসের অমীমাংসিত অধ্যায়গুলো যুগে যুগে মানুষের কৌতূহলকে বাঁচিয়ে রেখেছে।

রহস্যের কথা উঠলেই সবার আগে যে নাম ভেসে আসে তা হলো আটলান্টিস। দার্শনিক প্লেটোর বর্ণনায় উঠে আসা এই উন্নত সভ্যতাটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতাত্ত্বিকদের ভাবিয়ে তুলেছে। ধারণা করা হয় সমৃদ্ধ এই নগরীটি মাত্র একদিনের প্রলয়ে সমুদ্রের অতলে তলিয়ে গিয়েছিল। এটি কি শুধুই প্লেটোর কোনো দার্শনিক উপকথা নাকি এর বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব ছিল তা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। তবে সমুদ্রের গভীরে যখনই কোনো প্রাচীন কাঠামোর সন্ধান মেলে তখনই নতুন করে আটলান্টিসকে খুঁজে পাওয়ার নেশা জেগে ওঠে। এই হারানো সভ্যতার গল্প বারবার মানুষকে মনে করিয়ে দেয় যে প্রকৃতির বিশালতার কাছে মানুষের জ্ঞান ও ক্ষমতা কতটা তুচ্ছ।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালিতে রয়েছে এক অবিশ্বাস্য প্রাকৃতিক রহস্য যা সেইলিং স্টোনস নামে পরিচিত। এখানকার বিশাল পাথরগুলো মরুভূমির শুকনো মাটির ওপর দিয়ে যেন নিজে থেকেই এগিয়ে চলে এবং পেছনে রেখে যায় দীর্ঘ ও গভীর দাগ। বছরের পর বছর ধরে বিজ্ঞানীরা এই অদ্ভুত চলাচলের কারণ খুঁজতে গিয়ে বিভ্রান্ত হয়েছেন। একসময় মনে করা হতো এটি কোনো চুম্বকীয় বা অলৌকিক শক্তির প্রভাব। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে রাতের তীব্র ঠান্ডায় মরুভূমির কাদামাটি জমে যখন বরফের পাতলা আস্তরণ তৈরি করে তখন বাতাসের সামান্য ধাক্কাতেই এই পাথরগুলো পিছলে সামনে এগিয়ে যায়। বরফ গলে গেলে শুধু পাথরের এগিয়ে যাওয়ার চিহ্নটিই পড়ে থাকে যা দর্শকদের অবাক করে দেয়।

প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে চিলির ইস্টার দ্বীপের মোয়াই মূর্তিগুলোও যেন ভিন্ন এক সময়ের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আগ্নেয় শিলা দিয়ে তৈরি এই বিশাল আকৃতির মূর্তিগুলোকে রাপানুই জনগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষদের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। তবে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া ছাড়া সেই আদিম যুগে মানুষ কীভাবে পাথর কাটার সরঞ্জাম ছাড়াই এত বিশাল মূর্তি তৈরি করেছিল তা এক বড় বিস্ময়। তার চেয়েও বড় রহস্য হলো এই ভারী মূর্তিগুলো দ্বীপের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পরিবহন করা হয়েছিল কীভাবে। বিভিন্ন তত্ত্বে বলা হয়েছে কাঠ বা দড়ির সাহায্যে মূর্তিগুলোকে দাঁড় করিয়ে হাঁটানোর কৌশলে হয়তো পরিবহন করা হতো। তবে এই মূর্তিগুলোর প্রকৃত ইতিহাস আজও পুরোপুরি উন্মোচিত হয়নি।

মধ্য এশিয়ার দেশ তুর্কমেনিস্তানের দারভাজা গ্রামে রয়েছে এক জ্বলন্ত গর্ত যা নরকের দরজা বা দারভাজা গ্যাস ক্র্যাটার নামে পরিচিত। প্রায় ১৯০ ফুট চওড়া এবং ৭০ ফুট গভীর এই গর্তে গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দিনরাত আগুন জ্বলছে। তবে এই আগুনের উৎস প্রাকৃতিক নয় বরং এর পেছনে রয়েছে মানুষের হস্তক্ষেপ। ১৯৭১ সালে একটি প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র খননের সময় মাটি ধসে এই বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়। তখন বিষাক্ত মিথেন গ্যাসের বিস্তার ঠেকাতে বিজ্ঞানীরা গর্তটিতে আগুন ধরিয়ে দেন এবং ভেবেছিলেন কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তা নিভে যাবে। কিন্তু সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করে মরুভূমির বুকে এটি আজও জ্বলছে। রাতের আঁধারে এই জ্বলন্ত গর্ত এক ভয়ঙ্কর সুন্দর দৃশ্যের অবতারণা করে যা মানুষকে প্রকৃতির ওপর মানুষের হস্তক্ষেপের পরিণতির কথা মনে করিয়ে দেয়।

আটলান্টিসের মায়া থেকে শুরু করে নরকের দরজার লেলিহান শিখা পর্যন্ত এই পৃথিবী যেন রহস্যের এক অফুরন্ত ভাণ্ডার। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যতই এগিয়ে যাক কিছু বিস্ময় হয়তো চিরকালই অমীমাংসিত থেকে যাবে। আর এই অজানা রহস্যগুলোই মানুষকে নতুন করে ভাবতে শেখায় এবং প্রকৃতি ও ইতিহাসকে আরও নিবিড়ভাবে জানার আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়।


দাদা-দাদী-নানা-নানীর অতিরিক্ত আদরে বাড়ছে 'সিক্স পকেট সিনড্রোম', জানুন বিস্তারিত

২০২৫ নভেম্বর ২৩ ১৩:১৬:৩২
দাদা-দাদী-নানা-নানীর অতিরিক্ত আদরে বাড়ছে 'সিক্স পকেট সিনড্রোম', জানুন বিস্তারিত
ছবি: সংগৃহীত

শহুরে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত সমাজে গত দুই দশকে শিশু লালন-পালনের ধরনে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। পরিবার ছোট হচ্ছে, সন্তান সংখ্যা কমছে, কর্মজীবী বাবা-মায়ের উপস্থিতি বাড়ছে এবং যৌথ পরিবারের ভূমিকা পুনর্নির্মিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনের কেন্দ্রেই জন্ম নিয়েছে নতুন একটি সামাজিক–মনস্তাত্ত্বিক প্রবণতা, যার নাম “Six Pocket Syndrome” বা ছয় পকেট সিনড্রোম। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে শিশুকে কেন্দ্র করে ছয়জন অভিভাবকের (বাবা, মা, দাদা, দাদী, নানা, নানী) ভালোবাসা, অর্থনৈতিক সমর্থন, উপহার, মনোযোগ ও সুযোগ অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রবাহিত হতে থাকে।

এই সিনড্রোম একদিকে শিশুর জীবনকে আনন্দময় ও বিলাসিতায় ভরিয়ে তুললেও, অন্যদিকে তার ব্যক্তিত্ব গঠন, দায়িত্ববোধ ও মানসিক শক্তিকে বিপজ্জনকভাবে দুর্বল করে দেয়। সমাজবিজ্ঞানীরা জানান, বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে সাংস্কৃতিকভাবে সন্তানকে অত্যাধিক আদর করার প্রবণতা আগে থেকেই প্রবল, সেখানে সিক্স পকেট সিনড্রোমের বিস্তার আরও দ্রুত হচ্ছে।

শিশুকে কেন্দ্র করে ছয় পকেটের অদৃশ্য বৃত্ত

প্রথাগত বড় পরিবারে সন্তানকে ভালোবাসেন অনেকেই, কিন্তু আধুনিক নিউক্লিয়ার পরিবারে যখন একমাত্র সন্তান থাকে, তখন তার চারপাশে তৈরি হয় এক বিরাট নিরাপত্তা–সুবিধা–স্নেহ–আর্থিক প্রাচুর্যের বৃত্ত।

এই বৃত্ত তৈরি হয় ছয়জন প্রাপ্তবয়স্কের আর্থ-সামাজিক শক্তি থেকে - বাবা, মা, দাদা, দাদী, নানা, নানী।

শিশুটি এই ছয়জনের আর্থিক “পকেট” থেকে যা চায়, তা পেয়ে যায়। ফলাফল শিশুর চারপাশে তৈরি হয় অতিরিক্ত সুবিধা ও অতিরিক্ত প্রাচুর্যের অভ্যস্ততা, যা তার জীবনদর্শন, আচরণ, আত্মনিয়ন্ত্রণ, ধৈর্য, আবেগীয় পরিপক্বতা সব কিছুকে ধীরে ধীরে পরিবর্তিত করে ফেলে।

একটি বাস্তবচিত্র: একমাত্র সন্তান রাজ

এই প্রবণতা বোঝার জন্য একটি সাধারণ উদাহরণ যথেষ্ট।ধরা যাক, একটি শিশু রাজ। রাজের বাবা-মা দুজনেই কর্মজীবী এবং দুজনেই পরিবারে একমাত্র সন্তান। ফলে রাজের চারজন দাদা-দাদী–নানা-নানী আছেন, যাঁরা রাজের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে চান। পরিবারের প্রতিটি মানুষই আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত।

রাজের যে কোনো চাহিদা নতুন জামা, দামি খেলনা, মোবাইল, ট্যাব, ভিডিও গেম, বাইরে ঘুরতে যাওয়া, পার্টি, কোচিং, বিশেষ ক্লাস সঙ্গে সঙ্গে পূরণ হয়ে যায়।

রাজ কোনো ইচ্ছা মনে মনে করার আগেই বাস্তবে পেয়ে যায়। মন একটু খারাপ হলে দিদা খেলনা দেন, বাবা খাবার নিয়ে আসেন, নানী নতুন জামা দেন, দাদা তাকে ঘুরতে নিয়ে যান।

ধীরে ধীরে রাজ বুঝতে শেখে “আমি চাইলে পাই। আমি যা বলি, তা হবেই।” এই মানসিক কাঠামোই হলো সিক্স পকেট সিনড্রোমের সূচনা।

অতিরিক্ত সুবিধা কীভাবে শিশুর মানসিক বিকাশকে বিকৃত করে?

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, শিশুর বিকাশের জন্য শুধু ভালোবাসা নয়- সীমাবদ্ধতা, শৃঙ্খলা, অপেক্ষা করা, ব্যর্থতা মোকাবিলা ও দায়িত্ব পালন এসব শেখাও জরুরি।

কিন্তু সিক্স পকেট সিনড্রোমে সন্তান এগুলো থেকে বঞ্চিত হয়।

১. ধৈর্য ও অপেক্ষার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে

শিশু মনে করে সবকিছু “এখনই” চাই। জীবনের বাস্তব সংগ্রাম তাকে ভয় পাইয়ে দেয়।

২. সহানুভূতি দুর্বল হয়

কেউ কষ্ট পাচ্ছে, অপেক্ষা করছে, অভাবে আছে—এসব অনুভব করার ক্ষমতা কমে যায়।

৩. ব্যর্থতার ভীতি তৈরি হয়

সামান্য পরীক্ষায় খারাপ ফল, খেলায় হেরে যাওয়া, বন্ধুর সঙ্গে সমস্যা—এসবই তাকে অস্থির করে তোলে।

৪. ‘না’ শুনতে পারে না

যে কারণে শিক্ষাজীবন, পেশাজীবন ও ব্যক্তিজীবনে সে বাস্তবতার সঙ্গে সংঘাতে জড়ায়।

৫. ভোগবাদী মানসিকতা তৈরি হয়

এই ভুল ধারণায় সে আবেগীয় পরিপক্বতা হারায়।

৬. আত্মনিয়ন্ত্রণ কমে

সময় মেনে কাজ করা, পড়া, নিজের জিনিস নিজের হাতে রাখা—এসব অভ্যাস গড়ে ওঠে না।

সমাজে এর প্রভাব

এই সিনড্রোম শুধু পরিবার নয়, সমাজের ভবিষ্যৎ কর্মশক্তির ওপরও প্রভাব ফেলে।সিক্স পকেট সিনড্রোম আক্রান্ত শিশুরা-

  • বাস্তব প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে
  • মানসিক চাপ সহ্য করতে পারে না
  • দায়িত্ব নেওয়া শিখে না
  • দলগতভাবে কাজ করতে সমস্যা বোধ করে
  • ‘অভিযোগমূলক মানসিকতা’ তৈরি হয়

মনোবিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন- এমন শিশুরাই বড় হয়ে সহজে হাল ছেড়ে দেওয়া, হতাশায় ভুগা, আত্মকেন্দ্রিকতা ইত্যাদি সমস্যায় পড়ার ঝুঁকি বেশি।

কেন এই সিনড্রোম দ্রুত বাড়ছে?

১. ছোট পরিবার–এক সন্তান নীতি

একটি পরিবারে যখন একটিই সন্তান থাকে, তখন তার দিকে সবাই ঝুঁকে যায়।

২. কর্মজীবী বাবা-মায়ের অপরাধবোধ

সময় দিতে না পারার বদলে তাঁরা বস্তুগত উপহার দিয়ে ক্ষতিপূরণ করতে চান।

৩. দাদা-দাদী-নানী-নানার আবেগীয় দুর্বলতা

তাদের কাছে নাতি–নাতনি মানেই খালি হাত ভরা।

৪. বাড়তি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা

পরিবারে অনেকেরই আয় থাকায় শিশুর চারপাশে অতি-প্রাচুর্য সৃষ্টি হয়।

৫. সামাজিক প্রতিযোগিতা

অনেকে মনে করেন, “বাচ্চাকে সেরা জিনিস দিলেই সে সেরা হবে।”ফলে উপহার, টিউশন, কোচিং, ক্লাস, ডিভাইস সবই অতিরিক্ত মাত্রায় দেওয়া হয়।

সমাধান: ভালোবাসার সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা

১. “না” বলার সাহস রাখুন

সব অধিকার দিলে শিশু অধিকার চিনতে শেখে না।

২. দায়িত্ব দিন

নিজের বিছানা, ঘর, জিনিসপত্র, স্কুলব্যাগ—এসবের দায়িত্ব পালন করতে দিন।

৩. উপহারের বদলে অভ্যাস শেখান

প্রচেষ্টা, সময়ানুবর্তিতা, অধ্যবসায়ের প্রশংসা করুন।

৪. ভাগাভাগি ও শেয়ারিং শেখান

এটি সামাজিক বিকাশের মূল চাবিকাঠি।

৫. পারিবারিক নীতিতে সবাইকে এক করুন

দাদা-দাদী/নানা-নানী যেন “গোপনে সবকিছু দিয়ে দেওয়ার” নীতি না নেন।

৬. আত্মিক ও নৈতিক মূল্যবোধ শেখান

জীবনের সত্যিকারের সফলতা পাওয়া থেকে নয়শেখা, চেষ্টা, সততা, শৃঙ্খলা ও ধৈর্য থেকে আসে।

সিক্স পকেট সিনড্রোম ভালোবাসার অতিরিক্ততার ফল। কিন্তু শিশুকে শুধু সুবিধা দেওয়া নয় নিজেকে গড়ে তোলার সুযোগ দেওয়া যেটি অনেক বেশি মূল্যবান।

পাঠকের মতামত:

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

রাষ্ট্রের ধারণাটি একসময় কেবল প্রশাসনিক ক্ষমতা, আইনের শাসন এবং নিরাপত্তা প্রদানের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে রাষ্ট্রের ভূমিকা এখন... বিস্তারিত