৯ পানীয়ের ভয়াবহ সত্য, হার্ভার্ডের চিকিৎসকের সতর্কবার্তা

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০২ ১৪:৩৭:১৮
৯ পানীয়ের ভয়াবহ সত্য, হার্ভার্ডের চিকিৎসকের সতর্কবার্তা

হার্ভার্ড ও স্ট্যানফোর্ড থেকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডা. সৌরভ শেঠি সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন, যা এখন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের মধ্যে প্রবল আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভিডিওটিতে তিনি ৯টি জনপ্রিয় পানীয়কে লিভারের জন্য কতটা উপকারী বা ক্ষতিকর, তার ভিত্তিতে ১ থেকে ১০ স্কোরে রেটিং দেন। তবে এই রেটিং অনেকের বিশ্বাস ও ধারণাকে একেবারে ওলট-পালট করে দিয়েছে।

ডা. শেঠি জানিয়েছেন, “আমার কাছে বহু মানুষ জানতে চান, কোন পানীয়গুলো আসলে লিভারের জন্য নিরাপদ। তাই আমি বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এই ভিডিওটি তৈরি করেছি।” তিনি কফি, জুস, স্মুদি, এনার্জি ড্রিংকসসহ বেশ কিছু পানীয়ের স্বাস্থ্যঝুঁকি ব্যাখ্যা করে এমন কিছু তথ্য দিয়েছেন, যা জানলে সত্যিই যে কেউ চমকে উঠবেন।

প্রথমেই তিনি বলেন, দোকানে কেনা ফলের রস (ফ্রুট জুস) সবচেয়ে ক্ষতিকর। এটিকে তিনি দিয়েছেন মাত্র ১/১০ স্কোর। তার ব্যাখ্যা, এই জুসগুলোতে প্রকৃত ফলের চেয়ে চিনি, কৃত্রিম স্বাদ ও সংরক্ষণকারী রাসায়নিকের পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে, মানুষ ‘ফলের রস’ ভেবে যা খাচ্ছেন, তা আসলে লিভারের জন্য একধরনের বিষের মতো কাজ করছে।

এরপর আসে চিনি দেওয়া চা যেমন বোতলজাত লেমন টি বা ঠান্ডা চা। এগুলো পেয়েছে ২/১০ স্কোর। অতিরিক্ত চিনি এবং কৃত্রিম ফ্লেভারিংয়ের কারণে এগুলো লিভারের ওপর দীর্ঘমেয়াদি চাপ সৃষ্টি করে।

বাড়িতে বানানো ফলের রস অনেকেই নিরাপদ বলে ভাবেন। কিন্তু সেটিও ডা. শেঠির মতে খুব বেশি উপকারী নয়। তিনি এই ঘরোয়া জুসকে দিয়েছেন ৪/১০। কারণ, ফল ব্লেন্ড করে জুস বানালে তার ফাইবার নষ্ট হয়ে যায়, আর ফ্রুকটোজ সরাসরি লিভারে গিয়ে জমা হতে থাকে, যা ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়ায়।

পরবর্তী পানীয়, গ্রিন স্মুদি যেটি স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু ডা. শেঠি বলেন, এতে যদি অতিরিক্ত ফল বা মিষ্টি উপাদান মেশানো হয়, তবে এটি আর লিভারবান্ধব থাকে না। এর স্কোর দিয়েছেন ৫/১০। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, স্মুদিতে শুধু সবজি থাকলে এবং চিনি বা মধু এড়িয়ে চললে তা কিছুটা উপকারী হতে পারে।

লেবু পানি একটি বহু প্রচলিত পানীয়। সকালের শুরুতে খালি পেটে অনেকে এটি গ্রহণ করেন শরীর ডিটক্সের আশায়। এই পানীয়কে তিনি দিয়েছেন ৬/১০। যদিও এটি শরীর হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে, কিন্তু এর উপকারিতা অনেকাংশেই সীমিত। অতিরিক্ত প্রত্যাশা রাখা উচিত নয়।

বিটের রস একটি তুলনামূলকভাবে ভালো বিকল্প হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ডা. শেঠি। এই পানীয়টি পেয়েছে ৭/১০ নম্বর। বিটের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং নাইট্রেট লিভারের ইনফ্ল্যামেশন কমাতে সাহায্য করে। এটি হজম ব্যবস্থাও উন্নত করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

সবচেয়ে ভালো রেটিং পেয়েছে চিনিমুক্ত সবজির জুস। এর স্কোর ৮/১০। এই পানীয়ে থাকে ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবার যা লিভারের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালাতে সহায়তা করে। তবে শর্ত একটাই তাতে যেন কোনো প্রকার প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম চিনি যোগ না করা হয়।

চমকপ্রদভাবে, ব্ল্যাক কফি পেয়েছে ৯/১০। চিনিহীন কফি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ এবং এটি লিভার রোগ যেমন হেপাটাইটিস, সিরোসিস বা ফ্যাটি লিভারের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরক্ষা দেয়। তবে ডা. শেঠি সতর্ক করেছেন চিনি বা ক্রিম মেশালে এর উপকারিতা নষ্ট হয়ে যায়।

সবশেষে, সবার ওপরে স্থান পেয়েছে পানি। সাধারণ বিশুদ্ধ পানিকে তিনি দিয়েছেন ১০/১০। তিনি বলেন, “পানি হল প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার। এটি শুধু লিভার নয়, শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করার পরামর্শ দেন তিনি।”

ডা. শেঠির এই র‍্যাঙ্কিং আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় কোন পানীয়টি আসলেই স্বাস্থ্যকর আর কোনটি ‘ভুল পরিচয়ে’ আমাদের দেহের ক্ষতি করছে। আজকের বাজারে ‘হেলদি’ বলে যেসব পানীয় বিক্রি হয়, সেগুলোর প্যাকেটের বাইরে যেমন চমৎকার বিজ্ঞাপন, ভেতরে তেমনি বিপজ্জনক উপাদান।

তাই এখনই সময় সচেতন হওয়ার। স্বাস্থ্যবান্ধব লাইফস্টাইল মানে শুধু জিমে যাওয়া বা সালাদ খাওয়া নয়, বরং প্রতিদিন কী পান করছেন তাতেও রয়েছে লুকানো স্বাস্থ্য ঝুঁকি।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ