ঠাকুরগাঁওয়ে এনসিপির দাবি: জুলাই-আগস্টেই ঘোষণাপত্র, বন্ধ হোক সীমান্ত হত্যা

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৫ ০০:৩৫:৩৭
ঠাকুরগাঁওয়ে এনসিপির দাবি: জুলাই-আগস্টেই ঘোষণাপত্র, বন্ধ হোক সীমান্ত হত্যা

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আজ এক পথসভায় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জুলাই-আগস্টের মধ্যেই একটি ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করার জন্য, যা গণ-আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে একটি নতুন সাংবিধানিক দিকনির্দেশনা দিতে পারবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শীর্ষক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঠাকুরগাঁও শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ডে আয়োজিত এই পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র, মৌলিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার, জুলাই গণহত্যার বিচার এবং একটি নতুন সংবিধান প্রতিষ্ঠাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”

নাহিদ ইসলাম স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “এই ঘোষণাপত্র হবে সাংবিধানিক ভিত্তিতে দেশের নতুন নির্মাণের রূপরেখা। এটা হবে সেই বাংলাদেশ, যেখানে মানুষ জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে—তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথনির্দেশ।”

তিনি মনে করিয়ে দেন, “জুলাই-আগস্টে ঠাকুরগাঁও-সহ সারা দেশেই হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে এসে ফ্যাসিবাদী স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। কিন্তু সেই ফ্যাসিস্ট কাঠামো আজও পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়নি। আগের ব্যবস্থাই আজও অনেকাংশে টিকে আছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা সেই পুরনো, দমনমূলক ব্যবস্থাকে চিরতরে বিলুপ্ত করে একটি নতুন গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দেশ গঠনের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি, যেখানে তরুণ নেতৃত্ব, বিকল্প চিন্তা এবং মানুষের স্বপ্নই হবে প্রাধান্যপ্রাপ্ত।”

পথসভায় নাহিদ ইসলাম ঠাকুরগাঁওবাসীর স্থানীয় সমস্যা নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, “এই অঞ্চলের কৃষক সমাজ বছরের পর বছর ধরে অবহেলার শিকার। তারা ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় না। অথচ এই কৃষকদের সন্তানরাই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, এবং তারাই কিন্তু এই অভ্যুত্থানের ভিত্তি নির্মাণ করেছে।”

সীমান্ত হত্যা ও ভারতীয় পুশইন প্রসঙ্গে কঠোর হুঁশিয়ারি

ঠাকুরগাঁও সীমান্তবর্তী এলাকায় বিএসএফ-এর হাতে বাংলাদেশের নাগরিকদের নির্বিচার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, “সীমান্ত হত্যা একটি জাতীয় লজ্জা। আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, এই হত্যা বন্ধ করতেই হবে—যেকোনো মূল্যে। এটি শুধুই ঠাকুরগাঁওয়ের সমস্যা নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের প্রশ্ন।”

তিনি ভারতের মুসলিমদের অবৈধ অভিবাসী আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশে পুশইন করার চেষ্টারও তীব্র প্রতিবাদ জানান। তার কণ্ঠে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, “এটা আর হাসিনার বাংলাদেশ নয়। এটা গণ-অভ্যুত্থানের পর ছাত্র-জনতার বাংলাদেশ। এই দেশ চলবে বাংলাদেশপন্থী জনগণের দ্বারা, কোনো বিদেশি এজেন্ডার দ্বারা নয়।”

সভায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দ ও সংগঠনের বার্তা

পথসভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। সঞ্চালনার দায়িত্বও তিনিই পালন করেন।

সভায় আরও বক্তব্য দেন এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক গোলাম মর্তুজা (সেলিম), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা।

বক্তারা একযোগে জানান, এনসিপি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাংগঠনিক বিস্তার লাভ করছে এবং জনগণের অংশগ্রহণে একটি নতুন রাজনৈতিক ভবিষ্যতের রূপরেখা তৈরি করছে।

এনসিপি নেতারা জনগণকে আহ্বান জানান বিকল্প রাজনীতির এই যাত্রায় তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে এবং “জুলাই ঘোষণাপত্র” প্রণয়নের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান, ন্যায়ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির পথে যাত্রা নিশ্চিত করতে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ