রাতে বিছানায় ত্বক চুলকানি? জানুন কারণ ও প্রতিকার

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০২ ১৭:২৭:৫৬
রাতে বিছানায় ত্বক চুলকানি? জানুন কারণ ও প্রতিকার

রাতে ঘুমানোর সময় অনেকের ত্বকে চুলকানি শুরু হয়, যা বিরক্তি তৈরি করে এবং ঘুমের স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত করে। এমন ত্বক চুলকানির পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে কিছুই সহজে চোখে পড়ে না। রাতে ত্বক চুলকানো হলে তা কখনও কখনও ত্বকের কোনো সাধারণ সমস্যা থেকে শুরু করে গুরুতর রোগের লক্ষণও হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সমস্যা উপেক্ষা না করে সঠিক চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

স্ক্যাবিস: পরজীবী সংক্রমণের অন্যতম কারণ

স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া হলো একটি পরজীবী সংক্রমণ, যা ত্বকে প্রচণ্ড চুলকানির প্রধান কারণ। এই পরজীবী রাতের বেলায় বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে, ফলে চুলকানি তীব্রতর হয়। পরজীবীগুলো ত্বকে ডিম পাড়ে এবং ত্বকের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ার কারণে তাদের কার্যকলাপ বাড়ে। এতে ত্বকে ফুসকুড়ি সৃষ্টি হয় এবং রাত্রিকালীন ত্বক চুলকানোর মাত্রা বেড়ে যায়। স্ক্যাবিসে আক্রান্ত ব্যক্তি না শুধুমাত্র নিজে অসুস্থ হন, তার পারিবারিক সদস্যরাও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই এই রোগ ধরা পড়লে পরিবারসহ সবাইকে একসঙ্গে চিকিৎসা নেওয়া আবশ্যক।

শুষ্ক ত্বক: রাতের অদৃশ্য সমস্যা

শুষ্ক ত্বকও রাতে ত্বক চুলকানোর অন্যতম কারণ। থাইরয়েড, জেরোসিস, সোরিয়াসিসসহ বিভিন্ন রোগের কারণে ত্বক অতিমাত্রায় শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, যা বিশেষ করে রাতে তীব্র হয়। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে থাকার ফলে ত্বকের শুষ্কতা আরও বেড়ে যায়। ত্বকের এই শুষ্কতা ও চুলকানি রোধে ঘুমানোর আগে ভালো মানের ত্বক মসৃণকারী (ইমোলিয়েন্ট) ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি।

ডায়াবেটিস: স্নায়ুজনিত কারণে রাতের চুলকানি

ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ুতে সমস্যার (নিউরোপ্যাথি) ফলে পায়ের ত্বকের আর্দ্রতা ও ঘাম নিঃসরণে ব্যাঘাত ঘটে। এই কারণে রাতে পায়ে জ্বালাপোড়া ও চুলকানি শুরু হতে পারে, যা বিছানায় বিশ্রামের সময় বেশ বিরক্তিকর হয়ে দাঁড়ায়।

গর্ভাবস্থায় ত্বকের পরিবর্তন

গর্ভাবস্থায় শরীরের হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ত্বকের সংবেদনশীলতা বাড়ে এবং রাতে চুলকানি বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষ করে রাতে হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়।

ক্যানসারের সম্ভাব্য লক্ষণ

কিছু রক্ত ক্যান্সার যেমন লিম্ফোমা ও লিউকেমিয়া-র ক্ষেত্রে ত্বকে রাতের বেলায় চুলকানি, ঘাম বেশি হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাই দীর্ঘস্থায়ী ও নিয়মিত ত্বক চুলকানি হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

অ্যালার্জি ও পরিবেশগত কারণ

বিছানা, চাদর, পর্দা বা মাদুরে পোকামাকড়, ছারপোকা থাকা কিংবা মশার কামড়েও রাতে চুলকানি হতে পারে। পরিবেশগত এই কারণগুলোও দমবন্ধ করা ত্বক চুলকানির পেছনে ভূমিকা রাখে।

করণীয় ও প্রতিকার

১. স্ক্যাবিস হলে পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে। চিকিৎসার পাশাপাশি গরম পানিতে বিছানার সব চাদর, বালিশের কভার, পোশাক ও তোয়ালে ধুয়ে সঠিকভাবে রোদে শুকাতে হবে, যাতে পরজীবী সম্পূর্ণ নিধন হয়।

২. শুষ্ক ত্বকের জন্য রাতে ঘুমানোর আগে ত্বকে ইমোলিয়েন্ট ব্যবহার করুন, বিশেষ করে পায়ের ত্বকে। অতিরিক্ত শুষ্কতার পেছনে থাইরয়েড, ডায়াবেটিস কিংবা অন্যান্য রোগ আছে কি না, পরীক্ষা করানো উচিত।

৩. ঘুমানোর আগে গোসল করতে পারেন এবং পরিষ্কার ও শুষ্ক বিছানা ব্যবহার করুন।

৪. রাতে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে।

৫. দীর্ঘস্থায়ী চুলকানি, বিশেষ করে অন্য কোনো লক্ষণের সঙ্গে থাকলে ডার্মাটোলজিস্ট বা অন্য কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

রাতের ত্বক চুলকানি শুধু একান্ত ত্বকের সমস্যা নয়, এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ জটিলতার একটি প্রতীক হতে পারে। তাই এ ধরণের সমস্যা উপেক্ষা না করে যথাসময়ে চিকিৎসা গ্রহণই সঠিক পথ। ত্বকের সঠিক যত্ন, পরিচ্ছন্নতা ও প্রয়োজনে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের মাধ্যমে ঘুমের ব্যাঘাত রোধ করে সুস্থ জীবন যাপন সম্ভব।

-ডা. মো. আসিফুজ্জামান: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, চর্মরোগ বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ