ইতিহাস, দর্শন ও ইসলাম

হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.): ন্যায়, প্রজ্ঞা ও বিশ্বনেতৃত্বের এক স্বর্ণযুগ

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৮ ১০:৫৬:৫৮
হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.): ন্যায়, প্রজ্ঞা ও বিশ্বনেতৃত্বের এক স্বর্ণযুগ

ইসলামের ইতিহাসে হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) এমন এক মহান ব্যক্তিত্ব যিনি শক্তি, সাহস, ন্যায়বিচার, প্রজ্ঞা এবং আল্লাহভীতি দ্বারা বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা, নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সাহাবি, এবং এমন এক নেতা যাঁর শাসনকাল মুসলিম সভ্যতার সোনালি যুগ হিসেবে পরিচিত। তাঁর শাসনামলে শুধু ইসলামী সাম্রাজ্য ভৌগোলিকভাবে বিস্তৃত হয়নি, বরং প্রশাসনিক কাঠামো, বিচারব্যবস্থা, করনীতি, সামাজিক কল্যাণ এবং ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী সংস্কার হয়েছে। পশ্চিমা ঐতিহাসিকরাও স্বীকার করেছেন, তাঁর শাসন ছিল মানব ইতিহাসের অন্যতম সফল, সুশৃঙ্খল ও ন্যায়নিষ্ঠ শাসনব্যবস্থার উদাহরণ।

প্রাথমিক জীবন ও পারিবারিক পটভূমি

হযরত ওমর (রা.) ৫৮৩ খ্রিষ্টাব্দে মক্কায় কুরাইশ গোত্রের বানু আদী শাখায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম ছিল খাত্তাব ইবনে নুফাইল এবং মাতার নাম হাতমা বিনতে হাশিম। তাঁর পরিবার কুরাইশদের মধ্যে সামাজিক মর্যাদার দিক থেকে সম্মানিত ছিল, তবে ধনী ছিল না। শৈশব থেকেই ওমর (রা.) ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, সাহসী এবং শারীরিকভাবে বলবান। তিনি তলোয়ার চালনা, ঘোড়সওয়ারি, উটপালন এবং ক্রীড়ায় পারদর্শী ছিলেন।

শিক্ষাজীবনে তিনি আরবি সাহিত্য, কবিতা, বংশাবলি বিদ্যা এবং বক্তৃতাশৈলীতে দক্ষতা অর্জন করেন। সেই সময়ের মক্কার সমাজে বংশগৌরব, বাগ্মিতা এবং শারীরিক সক্ষমতা ছিল নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা—যা ওমর (রা.)-এর মধ্যে শৈশব থেকেই স্পষ্ট ছিল। ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি মক্কার বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন এবং কুরাইশদের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন।

ইসলাম গ্রহণের পূর্ববর্তী জীবন

ইসলাম আবির্ভাবের প্রথম দিকে ওমর (রা.) ছিলেন নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কঠোর বিরোধীদের একজন। তিনি মুসলমানদের প্রতি শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব পোষণ করতেন এবং তাঁদের ওপর নির্যাতনে অংশ নিতেন। তাঁর কঠোর স্বভাব ও দৃঢ় বিশ্বাস তাঁকে ইসলামের অন্যতম প্রধান প্রতিপক্ষ করে তুলেছিল। অনেক ঐতিহাসিক বর্ণনায় এসেছে যে, এক পর্যায়ে তিনি নবীজীকে হত্যা করার সংকল্প করেছিলেন, যাতে মুসলমানদের আন্দোলন পুরোপুরি দমন করা যায়।

ইসলাম গ্রহণের ঘটনা

তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায় এক ঐতিহাসিক ঘটনায়। নবীজীকে হত্যার উদ্দেশ্যে পথে বের হয়ে তিনি শুনলেন, তাঁর বোন ফাতিমা বিনতে খাত্তাব ও ভগ্নীপতি সাঈদ ইবনে যায়েদ ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে তিনি কুরআন তিলাওয়াত শুনতে পান। সুরা ত্বা-হা’র আয়াত শুনে তাঁর হৃদয় কেঁপে ওঠে। পবিত্র কুরআনের বাণী তাঁর অন্তরে গভীর প্রভাব ফেলে, এবং তিনি উপলব্ধি করেন যে, এটি মানুষের রচিত কোনো কথা নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সত্য।

এই অভিজ্ঞতার পর তিনি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। মুসলমানদের জন্য এটি ছিল এক বিশাল বিজয়, কারণ ওমর (রা.)-এর সাহস, প্রভাব এবং নেতৃত্বগুণ মুসলিম সমাজকে নতুন শক্তি যোগায়। তাঁর ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই মুসলমানরা প্রকাশ্যে ইবাদত করতে শুরু করেন।

গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও ভূমিকা

১. নবীজীর সহচর হিসেবে ভূমিকা: ইসলাম গ্রহণের পর হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) শুধুমাত্র একজন সাধারণ অনুসারী হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকেননি; বরং তিনি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর অন্যতম নিকটতম ও বিশ্বস্ত সহচরে পরিণত হন। বদর, উহুদ, খন্দক, খাইবার এবং হুনায়েনসহ প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ গাজওয়ায় তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং প্রতিটি যুদ্ধে তাঁর অসীম সাহস ও কৌশলগত দক্ষতা নবীজীর জন্য অপরিহার্য হয়ে ওঠে। বদরের যুদ্ধে তাঁর যুদ্ধদক্ষতা মুসলিম বাহিনীর মনোবল বৃদ্ধি করে এবং শত্রুপক্ষের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।

ওমর (রা.)-এর চরিত্রে ছিল দৃঢ়তা ও নির্ভীকতা, যা মুসলিম বাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা ও আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলত। তিনি কেবল যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পরামর্শেও নবীজীর কাছে মূল্যবান ছিলেন। তাঁর কঠোর মনোভাব এবং সত্যের পক্ষে আপসহীন অবস্থান ইসলামের শত্রুদের মনে এক ধরনের ভয় এবং মুসলমানদের মনে নিরাপত্তার অনুভূতি সৃষ্টি করেছিল।

২. হিজরত: মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের সময় অধিকাংশ মুসলমান গোপনে রাতের আঁধারে শহর ত্যাগ করেছিলেন, কারণ কুরাইশরা মুসলমানদের হিজরত ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছিল। কিন্তু ওমর (রা.)-এর সাহস ছিল অতুলনীয়। তিনি প্রকাশ্যে মক্কার কাবাঘরে গিয়ে কুরাইশদের নেতৃবৃন্দের সামনে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন,

“যে তার স্ত্রীকে বিধবা করতে চায়, সন্তানকে পিতৃহীন করতে চায়, সে যেন পথে এসে আমাকে বাধা দেয়।”

এই ঘোষণা শুধু ব্যক্তিগত সাহসিকতার প্রকাশই ছিল না, বরং এটি মুসলমানদের জন্য এক বিশাল প্রেরণা হয়ে ওঠে। তাঁর এই কর্মে মক্কার ইসলামের শত্রুরা বুঝে যায় যে মুসলমানরা আর ভীত-সন্ত্রস্ত জনগোষ্ঠী নয়; বরং তারা দৃঢ় বিশ্বাস ও আত্মত্যাগের মানসিকতা অর্জন করেছে। ইসলামী ইতিহাসে এ ঘটনা অনন্য উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

৩. হুদায়বিয়ার সন্ধি ও পরবর্তী ঘটনা: হিজরতের ছয় বছর পর ৬ হিজরিতে (৬২৮ খ্রিঃ) নবী মুহাম্মদ (সা.) ও মুসলিম বাহিনী কাবা শরিফে ওমরাহ আদায়ের উদ্দেশ্যে মক্কার দিকে অগ্রসর হন। কুরাইশদের বাধার কারণে মক্কার উপকণ্ঠে হুদায়বিয়া নামক স্থানে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা মুসলমানদের জন্য আপাতদৃষ্টিতে অসম এবং অপমানজনক মনে হয়েছিল। চুক্তির শর্তগুলোর মধ্যে ছিল—সেই বছর মুসলমানরা উমরাহ করতে পারবে না, এবং মক্কা থেকে কেউ মদিনায় গেলে তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে; তবে মদিনা থেকে কেউ মক্কায় গেলে তাকে ফেরত দিতে হবে না।

এই শর্তগুলো শুনে ওমর (রা.)-এর মন বিদীর্ণ হয়ে যায়। তিনি নবীজীর কাছে প্রশ্ন করেন, “আমরা কি সত্য ধর্মে নেই? আল্লাহ কি আমাদের সহায় নন?” নবীজী ধৈর্যের সাথে উত্তর দেন, “অবশ্যই।” তবুও তাঁর অন্তরে কষ্ট থেকে যায়। কিন্তু কয়েক মাস পর এই চুক্তির সুফল স্পষ্ট হয়—যুদ্ধবিরতির সুযোগে ইসলাম দ্রুত প্রসার লাভ করে, বহু মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ইসলাম গ্রহণ করে এবং মুসলিম রাষ্ট্র কূটনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়। তখন ওমর (রা.) স্বীকার করেন, নবীজীর দূরদর্শিতা সত্যিই অসাধারণ ছিল এবং এই চুক্তি ছিল কৌশলগত বিজয়ের এক মাইলফলক।

৪. নবীজীর ইন্তেকালের পর: ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ইন্তেকালের সংবাদ শোনার পর ওমর (রা.) গভীর শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তিনি প্রথমে বাস্তবতা মেনে নিতে অস্বীকার করেন এবং ক্রোধভরে বলেন, “যে বলবে মুহাম্মদ (সা.) ইন্তেকাল করেছেন, আমি তার মাথা উড়িয়ে দেব। বরং তিনি মূসা (আ.)-এর মতো আল্লাহর কাছে গেছেন এবং আবার ফিরে আসবেন।”

এই পরিস্থিতিতে আবু বকর সিদ্দিক (রা.) মসজিদে এসে কুরআনের আয়াত পাঠ করেন—

“মুহাম্মদ কেবল একজন রাসূল; তাঁর পূর্বে বহু রাসূল অতিবাহিত হয়েছেন। তিনি যদি মারা যান অথবা নিহত হন, তবে কি তোমরা পেছনে ফিরে যাবে?” (সূরা আলে ইমরান: ১৪৪)

এই আয়াত শোনার পর ওমর (রা.) যেন বাস্তবতায় ফিরে আসেন এবং তাঁর চোখ দিয়ে অশ্রুধারা প্রবাহিত হয়। তিনি উপলব্ধি করেন, আল্লাহর রাসূলের ইন্তেকাল এক বাস্তবতা এবং উম্মাহকে এখন ঐক্যবদ্ধ থেকে নতুন নেতৃত্বের অধীনে অগ্রসর হতে হবে। এই ঘটনার মাধ্যমে তাঁর আন্তরিকতা, নবীজীর প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং সত্য মেনে নেওয়ার বিনয়ী মানসিকতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

খেলাফতকাল (৬৩৪–৬৪৪ খ্রিঃ): হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর ইন্তেকালের পর ৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দে হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর দশ বছরের শাসনকাল ইসলামী ইতিহাসের এক সুবর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত, কারণ এই সময়ে ইসলামী রাষ্ট্র অভূতপূর্ব ভূখণ্ড বিস্তার, প্রশাসনিক কাঠামো উন্নয়ন, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং অর্থনৈতিক সংস্কারে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করে।

প্রশাসনিক সংস্কার

প্রদেশ ব্যবস্থা: ওমর (রা.)-এর শাসনামলে দ্রুত বিস্তৃত সাম্রাজ্যকে কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য তিনি একে বিভিন্ন প্রদেশ ও প্রশাসনিক অঞ্চলে ভাগ করেন। প্রতিটি প্রদেশে গভর্নর (আমির) নিয়োগ করা হতো, যাঁরা প্রশাসন, কর আদায়, আইনশৃঙ্খলা ও জনগণের কল্যাণের দায়িত্ব পালন করতেন। বড় প্রদেশগুলো আবার জেলায় বিভক্ত ছিল, যাতে স্থানীয় পর্যায়ে শাসন কার্যক্রম দ্রুত ও দক্ষতার সাথে পরিচালিত হয়।

দায়িত্বরতদের জবাবদিহিতা: ওমর (রা.) কর্মকর্তাদের আর্থিক ও নৈতিক জবাবদিহিতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। তিনি গভর্নর ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব রাখতে বাধ্য করতেন এবং দায়িত্ব গ্রহণের আগে ও পরে তাঁদের সম্পদ তালিকা সংগ্রহ করতেন, যাতে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যায়। দায়িত্বে অবহেলা বা অনিয়ম প্রমাণিত হলে তিনি বিনা দ্বিধায় তাঁদের অপসারণ করতেন।

দেওয়ান ব্যবস্থা: তাঁর আমলে প্রবর্তিত দেওয়ান ছিল প্রশাসনিক নথিপত্র সংরক্ষণ ও বেতন ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সুশৃঙ্খল রেজিস্ট্রি সিস্টেম। এতে সেনাবাহিনীর সদস্যদের নাম, পদমর্যাদা, দায়িত্ব ও বেতন নির্ধারণের রেকর্ড রাখা হতো। এটি ছিল মুসলিম রাষ্ট্রে প্রথম আধুনিক আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর ভিত্তি।

জনগণের সাথে সরাসরি যোগাযোগ: ওমর (রা.) মদিনার মসজিদে নিয়মিত বসে জনতার অভিযোগ ও পরামর্শ শুনতেন। এভাবে তিনি সাধারণ জনগণকে শাসকের সাথে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ দেন, যা একাধারে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করত। তিনি রাত্রিকালীন টহলেও বের হতেন, যাতে নিজ চোখে জনগণের অবস্থা দেখতে পারেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যা সমাধান করতে পারেন।

অর্থনৈতিক সংস্কার

বায়তুল মাল প্রতিষ্ঠা: ওমর (রা.) রাষ্ট্রীয় অর্থব্যবস্থাকে কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনার জন্য বায়তুল মাল প্রতিষ্ঠা করেন। এতে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ, কর, খাজনা ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় আয় জমা রাখা হতো এবং তা জনকল্যাণে ব্যয় করা হতো। তিনি এই তহবিলের অপচয় বা ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছিলেন।

ভূমি কর ও খাজনা ব্যবস্থা: তিনি কৃষিজমি ও অন্যান্য উৎপাদনশীল সম্পদের ওপর ন্যায়সঙ্গত কর আরোপ করেন। মুসলিম ও অমুসলিম উভয়েই কর দিত, তবে করহার ছিল সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে নির্ধারিত। যুদ্ধবন্দী ও চুক্তিভিত্তিক অমুসলিম প্রজারা জিজিয়া কর দিত, কিন্তু বিনিময়ে রাষ্ট্র তাঁদের জীবন, সম্পদ ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করত।

গরিব ও এতিমদের জন্য ভাতা:তাঁর শাসনামলে দরিদ্র, এতিম, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের জন্য নিয়মিত ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা ছিল, যা ইতিহাসে প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উদাহরণ। শিশুদের জন্য দুধ ও খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।

বিচার ব্যবস্থা

কাজী নিয়োগ: তিনি প্রতিটি প্রদেশে স্বতন্ত্র বিচার বিভাগ গঠন করেন এবং সেখানকার জন্য ন্যায়পরায়ণ ও যোগ্য বিচারক (কাজী) নিয়োগ করেন। কাজীরা স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করতেন, এবং শাসক পর্যন্ত তাঁদের সিদ্ধান্ত মেনে চলতেন।

আইনের শাসন: ওমর (রা.) দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, শাসকসহ সকলেই আইনের অধীন। একাধিক ঘটনায় দেখা যায়, তিনি সাধারণ নাগরিকের মতো আদালতে হাজির হয়েছেন এবং মামলার রায় নিজের বিপক্ষে গেলে তা বিনা আপত্তিতে মেনে নিয়েছেন। তাঁর এই নীতি আইনের শাসনের প্রকৃত রূপ তুলে ধরে, যা আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।

সামরিক ও ভূখণ্ড বিস্তার: হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.)-এর খেলাফতকাল ইসলামী সাম্রাজ্যের ভূখণ্ড বিস্তারের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব সময় হিসেবে চিহ্নিত। মাত্র দশ বছরের শাসনামলে তিনি ইসলামী রাষ্ট্রকে আরব উপদ্বীপের বাইরে প্রসারিত করে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং পারস্যের বিশাল অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করেন। এই বিস্তার ছিল শুধু সামরিক শক্তির ফল নয়, বরং দক্ষ কৌশল, শৃঙ্খলাবদ্ধ সেনাবাহিনী, ন্যায়নিষ্ঠ শাসননীতি এবং বিজিত জনগণের সাথে মানবিক আচরণের সমন্বিত ফল।

পারস্য জয়: পারস্যের সাসানীয় সাম্রাজ্য তখনকার বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সাম্রাজ্য ছিল। তবে ধারাবাহিক সংঘর্ষে তারা দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং ওমর (রা.)-এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী এই সুযোগকে কাজে লাগায়।

কাদিসিয়ার যুদ্ধ (৬৩৬ খ্রিঃ): এই ঐতিহাসিক যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী সাসানীয় সেনাদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে। যুদ্ধটি কয়েক দিন ধরে চলে এবং মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন সা'দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)।

নাহাওয়ান্দের যুদ্ধ (৬৪২ খ্রিঃ): “বিজয়ের বিজয়” নামে পরিচিত এই যুদ্ধের মাধ্যমে সাসানীয় সাম্রাজ্যের পতন সম্পূর্ণ হয়। পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যেই পারস্য সম্পূর্ণ মুসলিম শাসনের অধীনে আসে।এই বিজয় শুধু ভৌগোলিক বিস্তারই নয়, বরং ইসলামী সভ্যতার সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করে, কারণ পারস্যের উন্নত প্রশাসনিক পদ্ধতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ইসলামী রাষ্ট্রে যুক্ত হয়।

রোমান ভূখণ্ড জয়:পূর্ব রোমান বা বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যও তখন মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিশালী প্রভাব বিস্তার করছিল। তবে একাধিক যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী ধারাবাহিক সাফল্য অর্জন করে।

ইয়ামুকের যুদ্ধ (৬৩৬ খ্রিঃ): সিরিয়ার ইয়ামুক নদীর তীরে সংঘটিত এই যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী বিশাল বিজয় অর্জন করে, যার ফলে সিরিয়া এবং প্যালেস্টাইন মুসলিম শাসনের অধীনে আসে। এই যুদ্ধে খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) অসামান্য নেতৃত্বের পরিচয় দেন।

মিশর বিজয় (৬৩৯–৬৪২ খ্রিঃ): আমর ইবনে আস (রা.)-এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী মিশর জয় করে। মিশরের কপটিক খ্রিস্টান জনগণ রোমান শাসনের নিপীড়ন থেকে মুক্তি পেয়ে মুসলিম শাসনকে স্বাগত জানায়।

এই বিজয়গুলো মুসলিম রাষ্ট্রকে সমুদ্রপথে বাণিজ্য ও কৌশলগত অবস্থানে শক্তিশালী করে তোলে।

জেরুজালেম দখল:

জেরুজালেম ছিল খ্রিস্টান ও ইহুদিদের জন্য পবিত্র নগরী। ইয়ামুক যুদ্ধে বাইজান্টাইন বাহিনী পরাজিত হওয়ার পর নগরীর নেতারা আত্মসমর্পণের শর্তে ওমর (রা.)-এর কাছে চাবি হস্তান্তর করতে সম্মত হয়, তবে শর্ত ছিল যে, খলিফা নিজে এসে চাবি গ্রহণ করবেন।

ওমর (রা.) সাধারণ পোশাকে, এক উট ও একজন খাদেমসহ মদিনা থেকে জেরুজালেমে আসেন। তাঁর সরলতা, ন্যায়বিচার ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতা খ্রিস্টান নেতাদের মুগ্ধ করে। তিনি শহরে প্রবেশ করে খ্রিস্টান ও ইহুদিদের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দেন এবং তাঁদের উপাসনালয় রক্ষা করার নির্দেশ দেন। এই ঘটনা ইসলামী শাসনের সহিষ্ণুতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

সাফল্য ও অবদান

ন্যায়বিচারের প্রতীক – “আল-ফারুক”: ওমর (রা.)-এর অটল ন্যায়পরায়ণতার কারণে তিনি “আল-ফারুক” উপাধি লাভ করেন, যার অর্থ সত্য ও মিথ্যার মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্যকারী। তাঁর শাসনে ধনী-গরিব, মুসলিম-অমুসলিম—সকলের জন্য সমান বিচার নিশ্চিত করা হতো।

রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের আধুনিকীকরণ: তাঁর শাসনে প্রদেশভিত্তিক প্রশাসনিক কাঠামো, কর ব্যবস্থা, সেনাবাহিনীর রেজিস্ট্রি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, ডাক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। এটি ছিল মুসলিম বিশ্বের প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক সংস্কার।

সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা: তিনি দরিদ্র, এতিম, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের জন্য নিয়মিত ভাতা চালু করেন। যুদ্ধাহত সৈনিকদের জন্যও রাষ্ট্রীয় সহায়তার ব্যবস্থা করেন।

শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তার: নতুন অঞ্চলে মসজিদ ও মক্তব প্রতিষ্ঠা করে কুরআন শিক্ষা ও সাধারণ জ্ঞানচর্চার প্রসার ঘটান। বিজিত এলাকায় ইসলামী শিক্ষা ও স্থানীয় জ্ঞানের মেলবন্ধন ঘটাতে সহায়তা করেন।

ধর্মীয় সহিষ্ণুতা: বিজিত অমুসলিম জনগণকে তাঁদের ধর্ম পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা দেন এবং তাঁদের উপাসনালয় সংরক্ষণ করেন। তিনি চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা ও কর ব্যবস্থার মাধ্যমে মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে সহাবস্থান নিশ্চিত করেন।

রাস্তা ও অবকাঠামো উন্নয়ন: তিনি সড়ক, সেতু, কূপ, খাল এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা উন্নত করেন। ডাক ব্যবস্থা ও সীমান্ত প্রতিরক্ষা জোরদার করেন, যা বাণিজ্য, যোগাযোগ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।

শহীদ হওয়া

৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ফজরের নামাজ আদায়ের সময় এক অমুসলিম দাস আবু লুলু ফিরোজ তাঁকে ছুরিকাঘাত করে। কয়েকদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে তিনি শুরা কমিটি গঠন করে পরবর্তী খলিফা নির্বাচন করার নির্দেশ দেন। তাঁকে মদীনায় নবীজীর পাশে দাফন করা হয়।

ইতিহাসে স্থান ও প্রভাব

হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) কেবল ইসলামের দ্বিতীয় খলিফাই নন, তিনি ছিলেন এমন এক দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক, যিনি নেতৃত্ব, প্রশাসনিক প্রজ্ঞা ও নৈতিক দৃঢ়তার মাধ্যমে বিশ্ব ইতিহাসে স্থায়ী ছাপ রেখে গেছেন। তাঁর কঠোর ন্যায়বিচার, দৃঢ় প্রশাসন, স্বচ্ছ জবাবদিহিতা এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণে অবিচল মনোভাব তাঁকে মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে।

তাঁর শাসনকাল প্রমাণ করেছে যে একটি রাষ্ট্র কেবল সামরিক শক্তি বা ভূখণ্ড বিস্তারের মাধ্যমে নয়, বরং সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং নৈতিক শৃঙ্খলার মাধ্যমে স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ হতে পারে। ওমর (রা.) এমন এক কাঠামোগত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন, যেখানে প্রদেশভিত্তিক শাসন, করনীতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সামরিক সংগঠন এবং সামাজিক নিরাপত্তা একে অপরের সাথে সমন্বিত ছিল। এই মডেল পরবর্তী শতাব্দীগুলিতে মুসলিম সাম্রাজ্যের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।

আধুনিক ঐতিহাসিক, বিশেষত পশ্চিমা গবেষকরাও তাঁকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। ব্রিটিশ ঐতিহাসিক থমাস আর্নল্ড ও জর্জ সার্টন তাঁর শাসনকে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও নৈতিক নেতৃত্বের বিরল সমন্বয় বলে অভিহিত করেছেন। এমনকি অমুসলিম গবেষকরাও স্বীকার করেছেন, তাঁর শাসনব্যবস্থা ছিল অগ্রসরমান রাষ্ট্র পরিচালনার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

তাঁর নেতৃত্বে ইসলামী রাষ্ট্র শুধু ভূখণ্ডগতভাবে নয়, বরং প্রশাসনিক ও নৈতিক ক্ষেত্রেও এক সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী রূপ লাভ করে। তিনি রাষ্ট্রে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে যেমন কঠোর ছিলেন, তেমনি দরিদ্র, এতিম, বিধবা ও অমুসলিম নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় ছিলেন অসীম সহৃদয়। ফলে বিজিত অঞ্চলের অনেক জনগণ মুসলিম শাসনকে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করে, যা ইসলামের শান্তিপূর্ণ বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ওমর (রা.)-এর মৃত্যুর পরও তাঁর প্রবর্তিত নীতি, আইন ও সংস্কার শতাব্দীর পর শতাব্দী মুসলিম শাসনব্যবস্থায় কার্যকর ছিল। তাঁর ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা, এবং জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপ পরবর্তী খলিফা, শাসক ও নেতাদের জন্য আদর্শ হয়ে থাকে।

হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) ছিলেন এমন এক বিরল চরিত্র, যাঁর জীবন মুসলিম উম্মাহর জন্য অনন্ত অনুপ্রেরণা ও দিকনির্দেশনার উৎস। ইসলাম গ্রহণের আগে একজন দৃঢ় প্রতিপক্ষ থেকে তিনি রূপান্তরিত হয়েছিলেন ইসলামের এক অকুতোভয় রক্ষক ও সংস্কারক নেতায়। তাঁর খেলাফতের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল ঈমান, সাহস, ন্যায়বিচার, বিনয় এবং জনকল্যাণমূলক উদ্যোগের প্রতিফলন।

তিনি প্রমাণ করেছিলেন, একজন শাসকের শক্তি কেবল সামরিক ক্ষমতায় নয়, বরং ন্যায়পরায়ণতা, সততা, এবং প্রজাদের কল্যাণে নিবেদিত নেতৃত্বে নিহিত। তাঁর প্রতিষ্ঠিত নীতি ও দৃষ্টান্ত কেবল ইসলামী সভ্যতার সোনালি অধ্যায় রচনা করেনি, বরং মানব ইতিহাসেও আদর্শ রাষ্ট্রনায়কত্বের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তাঁর জীবন ও শাসন আজও আমাদের শেখায়—ন্যায় ও সত্যের পথে অবিচল থাকলে একটি জাতি শুধু টিকে থাকে না, বরং ইতিহাসে অমর হয়ে যায়।


ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আজকের নামাজের সময়সূচি

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৬ ০৯:১১:৩৯
ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আজকের নামাজের সময়সূচি
ছবিঃ সংগৃহীত

আজ বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ এবং ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য আজকের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচি ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা-এর সূত্র অনুযায়ী নিচে দেওয়া হলো।

আজ জোহরের সময় শুরু হবে সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে। এরপর আসরের সময় শুরু হবে বিকেল ৩টা ৪১ মিনিটে। সন্ধ্যায় মাগরিবের সময় শুরু হবে ৫টা ২০ মিনিটে এবং এশার সময় শুরু হবে ৬টা ৩৫ মিনিটে।

এছাড়াও, আগামীকাল শুক্রবারের (৭ নভেম্বর ২০২৫) ফজর নামাজের সময় শুরু হবে ভোর ৪টা ৫৪ মিনিটে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত হবে সন্ধ্যা ৫টা ১৮ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় হবে সকাল ৬টা ০৬ মিনিটে।


ইতিহাসের একমাত্র অপরাজিত বীর খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রাঃ):তাঁর রণকৌশলে বদলে যায় পৃথিবীর মানচিত্র!

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৫ ১৯:০৭:০৫
ইতিহাসের একমাত্র অপরাজিত বীর খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রাঃ):তাঁর রণকৌশলে বদলে যায় পৃথিবীর মানচিত্র!

ইতিহাসে জুলিয়াস সিজার, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, বা চেঙ্গিস খানের মতো বহু বিখ্যাত সেনাপতির নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। কিন্তু এমন একজন সেনাপতি ছিলেন, যিনি তার জীবনে ১০০টিরও বেশি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও একটিতেও পরাজিত হননি। তিনি হলেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাহাবী খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রাঃ), যিনি 'সাইফুল্লাহ' বা 'আল্লাহর তরবারি' উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। তার অবিশ্বাস্য সামরিক প্রজ্ঞা, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং অভিনব রণকৌশল আধুনিক সামরিক ইতিহাসেও এক বিস্ময়ের বস্তু।

খালিদ ইবনে ওয়ালিদের সামরিক প্রতিভার প্রথম ঝলক দেখা যায় মু'তার যুদ্ধে। মুসলিম দূতের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে এই যুদ্ধের সূচনা হয়, যেখানে মাত্র ৩,০০০ মুসলিম সেনার বিপরীতে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় এক লক্ষ (বা তারও বেশি)। যুদ্ধের এক পর্যায়ে মুসলিম বাহিনীর তিনজন সেনাপতি—জায়েদ ইবনে হারিসা, জাফর বিন আবু তালিব, এবং আব্দুল্লাহ বিন রাওয়া (রাঃ)—শাহাদাত বরণ করলে মুসলিম বাহিনী যখন প্রায় ধ্বংসের মুখে, তখন খালিদ (রাঃ) নিজ হাতে যুদ্ধের পতাকা তুলে নেন।

তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এই অসম যুদ্ধে সরাসরি জয় অসম্ভব। তার লক্ষ্য ছিল মুসলিম বাহিনীকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা। তিনি এক অভূতপূর্ব রণকৌশল অবলম্বন করেন। তিনি তার সৈন্যদের দলগুলোকে ক্রমাগত শাফলিং (সামনে থেকে পেছনে, পেছন থেকে সামনে) করতে থাকেন। এতে বাইজেন্টাইন বাহিনী মনে করে, মুসলিমদের জন্য নতুন নতুন সাহায্যকারী দল (রিইনফোর্সমেন্ট) আসছে। এই মনস্তাত্ত্বিক চাপের মুখে শত্রুপক্ষ দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তারা একটি ফাঁদে পা দেওয়ার ভয়ে পিছু হটতে শুরু করে। এই সুযোগে খালিদ (রাঃ) অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে পুরো মুসলিম বাহিনীকে প্রায় অক্ষত অবস্থায় মদিনায় ফিরিয়ে আনেন। এটি ছিল এক পরাজয় নিশ্চিত যুদ্ধকে কৌশলের মাধ্যমে ড্র করার এক অনন্য উদাহরণ।

পারস্য বিজয়

প্রথম খলিফা আবু বকর (রাঃ)-এর সময় খালিদ (রাঃ)-কে পারস্য (সাসানীয়) সাম্রাজ্য জয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পারস্য বাহিনীর প্রধান শক্তি ছিল তাদের ভারী বর্ম ও অস্ত্র, যা তাদের ধীরগতির করে তুলেছিল। অন্যদিকে, খালিদ (রাঃ)-এর বাহিনীর শক্তি ছিল উট ও ঘোড়ার আরোহী দলের অবিশ্বাস্য গতি (মোবিলিটি)।

ব্যাটল অফ চেইনস (শৃঙ্খলের যুদ্ধ)

খালিদ (রাঃ) পারস্য গভর্নর হরমুজকে চিঠি পাঠান এক পথ (কাজিমা) দিয়ে, কিন্তু নিজে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মরুভূমির পথ ধরে অগ্রসর হন। হরমুজ তার ভারী বর্ম পরিহিত সৈন্যদের নিয়ে কাজিমার দিকে অগ্রসর হয়ে মুসলিমদের না পেয়ে আবার হুফায়ারের দিকে ছোটেন। খালিদ (রাঃ) শত্রুকে এই মরুভূমিতে বারবার হাঁটিয়ে ক্লান্ত ও তৃষ্ণার্ত করে তোলেন। যখন ক্লান্ত পারস্য বাহিনী কাজিমায় ফিরে আসে, তখন সতেজ মুসলিম বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে তারা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।

ব্যাটল অফ রিভার (নদীর যুদ্ধ)

এই যুদ্ধে তিনি 'ফেইন্ড রিট্রিট' বা নকল পশ্চাদপসরণের এক নিখুঁত উদাহরণ তৈরি করেন। তিনি তার বাহিনীকে এমনভাবে আক্রমণ করতে বলেন যেন তারা বিশৃঙ্খল এবং সহজেই পরাজিত হচ্ছে। পারস্য বাহিনী এই ফাঁদে পা দিয়ে মুসলিমদের ধাওয়া করতে গিয়ে তাদের সুশৃঙ্খল গভীর ব্যূহ (ফর্মেশন) ভেঙে ফেলে। ঠিক সেই মুহূর্তে খালিদ (রাঃ)-এর লুকিয়ে রাখা অশ্বারোহী বাহিনী দুই পাশ থেকে তাদের ঘিরে ফেলে। পারস্য বাহিনীর সৈন্যরা পালানোর কোনো পথ না পেয়ে টাইগ্রিস (দজলা) নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং বিশাল এক বাহিনী ধ্বংস হয়ে যায়।

ইয়ারমুকের যুদ্ধ

খালিদ (রাঃ)-এর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ যুদ্ধ মনে করা হয় ইয়ারমুকের যুদ্ধকে। পারস্য অভিযান শেষ না হতেই তাকে খলিফার আদেশে রোমান (বাইজেন্টাইন) সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সিরিয়া রণাঙ্গনে যোগ দিতে হয়।

ইয়ারমুকের ময়দানে প্রায় ৪০,০০০ মুসলিম সেনার বিপরীতে রোমান বাহিনীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার। রোমানরা খালিদ (রাঃ)-এর অশ্বারোহী বাহিনীর ফ্ল্যাঙ্কিং (পাশ থেকে আক্রমণ) সম্পর্কে সচেতন ছিল। তাই তারা মুসলিমদের ফজরের নামাজের সময় অতর্কিত হামলা করার পরিকল্পনা করে।

কৌশলের জবাব কৌশল খালিদ (রাঃ) এই আক্রমণের আশঙ্কা করেছিলেন। তিনি তার বাহিনীকে যুদ্ধক্ষেত্রেই যুদ্ধের বিন্যাসে (ব্যাটল ফর্মেশন) দাঁড়িয়ে ফজরের নামাজ আদায় করার নির্দেশ দেন। ফলে রোমানরা সারপ্রাইজ অ্যাটাক করতে এসে উল্টো প্রস্তুত মুসলিম বাহিনীর সামনে পড়ে যায়।

যুদ্ধের চতুর্থ দিনটি ছিল মুসলিমদের জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর, যা 'ডে অফ লস্ট আইজ' নামে পরিচিত। রোমান তীরন্দাজদের প্রবল আক্রমণে অসংখ্য মুসলিম সৈন্য তাদের চোখ হারান। মুসলিম বাহিনীর ডান ও বাম উভয় উইং যখন প্রায় ভেঙে পড়ছে, তখন ক্যাম্প থেকে মুসলিম নারীরাই কাপুরুষ বলে ভর্ৎসনা করে এবং পাথর ছুঁড়ে সৈন্যদের আবার যুদ্ধের ময়দানে ফেরত পাঠান।

খালিদের মাস্টারস্ট্রোক

যুদ্ধের পঞ্চম দিনে (বিশ্রামের দিন) খালিদ (রাঃ) তার চূড়ান্ত পরিকল্পনা সাজান। ষষ্ঠ দিনে তিনি তার সমস্ত অশ্বারোহী বাহিনীকে নিজের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। তিনি একটি ছোট দলকে বিশাল মরুভূমি ঘুরপথে পাঠান রোমানদের ঠিক পেছনে অবস্থান নেওয়ার জন্য। এরপর তিনি মূল বাহিনী নিয়ে রোমানদের এক পাশে প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু করেন। রোমানরা যখন তাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে সেই আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে খালিদ (রাঃ)-এর সেই গোপন অশ্বারোহী দলটি রোমানদের পেছন থেকে আক্রমণ করে। তিন দিক থেকে আক্রান্ত হয়ে রোমান বাহিনী সম্পূর্ণ ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে এবং মুসলিমরা এক অবিশ্বাস্য বিজয় লাভ করে।

খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রাঃ) এমন একজন সেনাপতি ছিলেন যিনি শুধু তলোয়ারের জোরে নয়, বরং তার প্রখর বুদ্ধিমত্তা, শত্রুর মনস্তত্ত্ব বোঝার ক্ষমতা এবং প্রতিবার নতুন নতুন রণকৌশল উদ্ভাবনের মাধ্যমে যুদ্ধ জয় করতেন। তিনি মরুভূমির পরিবেশকে নিজের শক্তির জায়গায় পরিণত করেছিলেন এবং প্রতিপক্ষের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। তার ১০০% জয়ের রেকর্ড তাকে ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সামরিক কৌশলবিদদের কাতারে এক অনন্য স্থান দিয়েছে।


কারা পাবেন বিনা হিসাবে জান্নাত? হাদিসের আলোকে জানুন সৌভাগ্যবানদের বিশেষ গুণাবলী

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৪ ২০:৪৫:৪৮
কারা পাবেন বিনা হিসাবে জান্নাত? হাদিসের আলোকে জানুন সৌভাগ্যবানদের বিশেষ গুণাবলী
ছবিঃ সংগৃহীত

মানবজীবনের সবচেয়ে বড় আকাঙ্ক্ষা হলো চিরস্থায়ী মুক্তি ও জান্নাত লাভ করা। তবে জান্নাতের পথ সহজ নয়; সেখানে পৌঁছানোর জন্য হিসাব-নিকাশ, প্রশ্নোত্তর এবং আল্লাহর বিচারের কঠোরতা অতিক্রম করতে হয়। তবুও মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় রাসুল মুহাম্মাদ (সা.)-এর উম্মতের প্রতি বিশেষ দয়া প্রদর্শন করেছেন। কারণ এই উম্মতের মধ্যে এমন কিছু সৌভাগ্যবান মানুষ থাকবেন, যাদের জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যাবে বিনা হিসাবেই।

হজরত আবূ উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি—

"‏ وَعَدَنِي رَبِّي أَنْ يُدْخِلَ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِي سَبْعِينَ أَلْفًا لاَ حِسَابَ عَلَيْهِمْ وَلاَ عَذَابَ مَعَ كُلِّ أَلْفٍ سَبْعُونَ أَلْفًا وَثَلاَثُ حَثَيَاتٍ مِنْ حَثَيَاتِهِ ‏"‏"

অর্থাৎ, ‘আমার প্রভু আমার সঙ্গে অঙ্গীকার করেছেন যে, তিনি আমার উম্মাতের মধ্যে সত্তর হাজার লোককে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যাদের কোনো হিসাবও নেওয়া হবে না এবং শাস্তিও প্রদান করা হবে না। আর প্রতি হাজারের সঙ্গে থাকবে আরও সত্তর হাজার। আর আমার পরোয়ারদিগারের তিনমুঠি পরিমাণ।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৪৩৭)

হাদিসের মর্মার্থ ও ব্যাখ্যা

এই হাদিসটিতে আল্লাহর রহমত ও উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রতি বিশেষ মর্যাদার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। মুহাদ্দিসগণ হাদিসের ব্যবহৃত সংখ্যাগুলোর প্রতীকি ও আক্ষরিক উভয় অর্থেই ব্যাপকতা তুলে ধরেছেন

আরবিতে "সত্তর হাজার" (سبعين ألفا) সংখ্যাটি কেবল একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা নয়, বরং প্রাচুর্য বা অসংখ্যতার প্রতীক। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা তাঁর সীমাহীন দয়ার প্রকাশ ঘটিয়ে অসংখ্য মানুষকে বিনা হিসাবেই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।

হাদিসে যখন বলা হয়েছে "مَعَ كُلِّ أَلْفٍ سَبْعُونَ أَلْفًا"—অর্থাৎ "প্রতি হাজারের সঙ্গে থাকবে আরও সত্তর হাজার", তখন এর অর্থ দাঁড়ায় এক গণনাযোগ্য বিশাল সংখ্যা।

এর পরেও বলা হয়েছে "وَثَلاَثُ حَثَيَاتٍ مِنْ حَثَيَاتِهِ"—অর্থাৎ "আর আমার প্রভুর তিন মুঠো পরিমাণ"—এই অংশ দ্বারা এমন অসংখ্য অতিরিক্ত লোককে বোঝানো হয়েছে, যাদের সংখ্যা কেবল আল্লাহই জানেন। ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, এই ‘মুঠি’ হচ্ছে রহমতের রূপক প্রকাশ।

ইবনে হাজার (রহ.) তাঁর ফাতহুল বারী গ্রন্থে বলেন, এই হাদিসে আল্লাহর রহমতের ব্যাপকতা ও নবী ﷺ-এর উম্মতের বিশেষ মর্যাদা প্রতিফলিত হয়েছে।

বিনা হিসাবে জান্নাত লাভের গুণাবলী

এই সৌভাগ্যবান ব্যক্তিরা কারা, তা অন্য একটি সহিহ হাদিসে (বুখারি ও মুসলিমে) স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে। এরা এমন লোক—

"لاَ يَسْتَرْقُونَ، وَلاَ يَكْتَوُونَ، وَلاَ يَتَطَيَّرُونَ، وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ"

অর্থাৎ, “যারা রুকইয়া করাতে বলে না, দগ্ধ চিকিৎসা নেয় না, অশুভ লক্ষণ গ্রহণ করে না এবং সর্বাংশে তাদের রবের ওপর ভরসা রাখে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৪৭২; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২০) এই গুণাবলী প্রমাণ করে যে, তারা সম্পূর্ণভাবে তাওয়াক্কুল (আল্লাহর ওপর নির্ভরতা)-এর এক উচ্চতম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তাদের অন্তর দুনিয়াবি ভরসা থেকে মুক্ত এবং তারা নিজেদের সর্বদা আল্লাহর হাতে সোপর্দ করে দেয়।

ইমাম নববী (রহ.) লিখেছেন, এই হাদিসটি আল্লাহর পক্ষ থেকে উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রতি এমন একটি সম্মান, যা অন্য কোনো উম্মত পায়নি।

এই হাদিসটি মুমিনদের মাঝে আশার আলো জাগায় এবং আল্লাহর সীমাহীন দয়ার দলিল হিসেবে কাজ করে। এই হাদিস থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাগুলো হলো

বিনা হিসাবের জান্নাত পাওয়ার জন্য একমাত্র আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা (তাওয়াক্কুল), একান্ত ঈমান ও অবিচল আস্থা অর্জন করা জরুরি।

মানুষকে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখার শিক্ষা দেয়—অর্থাৎ চিকিৎসা, রুকইয়া বা ভাগ্যনির্ভর কুসংস্কারের উপর নির্ভর না করে একমাত্র আল্লাহর ওপর নির্ভর করতে হবে।

আমাদের উচিত—আমল ও তাওয়াক্কুলের মাধ্যমে সেই সৌভাগ্য অর্জনের আন্তরিক প্রচেষ্টা করা এবং নবী ﷺ-এর শিক্ষা অনুসারে জীবন গঠন করা।


আজকের নামাজের সময়সূচি: ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৪ ১১:৩৩:৫৪
আজকের নামাজের সময়সূচি: ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য
ফাইল ছবি

ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ হিসেবে নামাজ মুসলমান জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ibadah। নামাজ কেবল আল্লাহর সঙ্গে নৈকট্য স্থাপনের মাধ্যম নয়, এটি মানুষের জীবনে শৃঙ্খলা, মনসংযম এবং সময়নিষ্ঠার প্রতীকও বটে। বিশেষ করে যারা নির্ধারিত সময়ে মসজিদে উপস্থিত হয়ে নামাজের জন্য অপেক্ষা করেন, তাদের জন্য ফেরেশতারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। এটি স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, সময়মতো নামাজ আদায় কেবল ধর্মীয় কর্তব্য নয়, বরং আধ্যাত্মিক প্রতিদান অর্জনের এক মাধ্যম।

হজরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, “যে ব্যক্তি মসজিদে নামাজের জন্য অপেক্ষা করে, সে যেন নামাজের মধ্যে অবস্থান করে। এবং যতক্ষণ সে মসজিদে থাকে, ফেরেশতারা তার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকে, ‘হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করুন।’ অজু শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই দোয়া অব্যাহত থাকে।” (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩০) এই হাদিস মুসলমানদের সময়মতো নামাজের গুরুত্ব এবং মসজিদে উপস্থিত থাকার মর্যাদা তুলে ধরে।

আজ মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৯ কার্তিক ১৪৩২, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭, ঢাকা এবং আশেপাশের এলাকায় নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ:

জোহর: ১১টা ৪৫ মিনিট

আসর: ৩টা ৪২ মিনিট

মাগরিব: ৫টা ২১ মিনিট

এশা: ৬টা ৩৬ মিনিট

আগামীকাল ফজর: ৪টা ৫৩ মিনিট

ঢাকায় সূর্যাস্ত আজ ৫টা ১৮ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় হবে ৬টা ০৬ মিনিটে।

অন্যান্য অঞ্চলের জন্য নামাজের সময় সামান্য পরিবর্তিত হতে পারে। চট্টগ্রামে ৫ মিনিট বিয়োগ করতে হবে, সিলেটে ৬ মিনিট বিয়োগ। খুলনায় ৩ মিনিট, রাজশাহীতে ৭ মিনিট, রংপুরে ৮ মিনিট এবং বরিশালে ১ মিনিট সময় যোগ করতে হবে।

ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী


০৪ নভেম্বর বাংলাদেশের প্রধান অঞ্চলের নামাজের সময়সূচি

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৩ ২১:৩৯:৩৫
০৪ নভেম্বর বাংলাদেশের প্রধান অঞ্চলের নামাজের সময়সূচি
Blue Mosque in Istanbul/ছবিঃ সংগৃহীত

মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫ ইংরেজি তারিখের জন্য ঢাকা এবং বাংলাদেশের অন্যান্য প্রধান বিভাগের দৈনিক নামাজের সময়সূচি নিচে দেওয়া হলো। (এই সময়সূচি বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য ইসলামিক ক্যালেন্ডার থেকে সংগৃহীত। স্থানীয় তারতম্যের জন্য ২/১ মিনিট ভিন্ন হতে পারে)।

ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সময়সূচি

ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য ফজর ০৪টা ৪৯ মিনিটে (AM), সূর্যোদয় ০৬টা ০৩ মিনিটে (AM), জোহর ১১টা ৪৫ মিনিটে (AM), আসর ০৩টা ৪৩ মিনিটে (PM), মাগরিব ০৫টা ২৩ মিনিটে (PM), এবং ইশা ০৬টা ৩৮ মিনিটে (PM)।

(সাহরির শেষ সময় থাকবে ০৪টা ৪৩ মিনিটে (ভোর), এবং ইফতারের সময় হবে ০৫টা ২৩ মিনিটে (সন্ধ্যা)।)

অন্যান্য প্রধান বিভাগীয় শহরের আনুমানিক সময়সূচি

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রধান বিভাগীয় শহরগুলোর সময়সূচিতে সামান্য পার্থক্য আসে। ০৪ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখের জন্য প্রধান বিভাগগুলোর নামাজের আনুমানিক সময়সূচি নিম্নরূপ:

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে ফজর ০৪টা ৪৪ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৫টা ৫৬ মিনিটে, জোহর ১১টা ৪৯ মিনিটে, আসর ০৩টা ৫৯ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৩৯ মিনিটে এবং ইশা ০৬টা ৫৪ মিনিটে।

খুলনা: খুলনায় ফজর ০৪টা ৫১ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৬টা ০৪ মিনিটে, জোহর ১১টা ৫২ মিনিটে, আসর ০৪টা ০৫ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৪৬ মিনিটে এবং ইশা ০৭টা ০০ মিনিটে।

রাজশাহী: রাজশাহীতে ফজর ০৪টা ৫০ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৬টা ০৩ মিনিটে, জোহর ১১টা ৫৩ মিনিটে, আসর ০৪টা ০৬ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৪৭ মিনিটে এবং ইশা ০৭টা ০২ মিনিটে।

সিলেট: সিলেটে ফজর ০৪টা ৪৪ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৫টা ৫৬ মিনিটে, জোহর ১১টা ৪৭ মিনিটে, আসর ০৪টা ০২ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৩৪ মিনিটে এবং ইশা ০৬টা ৫০ মিনিটে।

রংপুর: রংপুরে ফজর ০৪টা ৪৯ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৬টা ০২ মিনিটে, জোহর ১১টা ৫১ মিনিটে, আসর ০৪টা ০৩ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৪২ মিনিটে এবং ইশা ০৬টা ৫৯ মিনিটে।

বরিশাল: বরিশালে ফজর ০৪টা ৪৯ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৬টা ০৩ মিনিটে, জোহর ১১টা ৪৯ মিনিটে, আসর ০৪টা ০৩ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৪০ মিনিটে এবং ইশা ০৬টা ৫৬ মিনিটে।


বোনের কোরআন পাঠে হার মানল দম্ভ; হজরত ওমর (রা.) এর ইসলাম গ্রহণের বিস্তারিত ঘটনা

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৩ ২১:২৭:৪৭
বোনের কোরআন পাঠে হার মানল দম্ভ; হজরত ওমর (রা.) এর ইসলাম গ্রহণের বিস্তারিত ঘটনা
ছবিঃ সংগৃহীত

ইসলামের মহান চার খলিফার অন্যতম দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.)-এর ইসলাম গ্রহণকে ইসলামের ইতিহাসে একটি বৈপ্লবিক ঘটনা হিসেবে অভিহিত করা হয়। কারণ তাঁর ইসলাম গ্রহণের পরই মুসলমানেরা প্রকাশ্যে তাদের ধর্ম প্রচারের সুযোগ পান। হজরত ওমর (রা.) ছিলেন তৎকালীন আরবের অন্যতম অসামান্য সাহসী এবং বাগ্মী নেতা। তাঁর ব্যক্তিত্ব ও দাপটের কারণে কাফেররা তাঁর মুখোমুখি হতে বা মোকাবিলা করতে ভয় পেত।

নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর একটি হাদিসে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, যদি তাঁর পরে কাউকে নবী করা হতো, তবে তিনি হতেন হজরত ওমর (রা.)।

আল্লাহর কাছে রসুল (সা.)-এর বিশেষ দোয়া

রসুল (সা.)-এর কাছে ইসলামের প্রথম দিকে যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন, তাদের ওপর নেমে আসে মক্কার প্রভাবশালী নেতাদের ভয়াবহ ও অমানবিক নির্যাতন। সেই কঠিন সময়েও দুর্বল সাহাবিরা ইমানের ওপর ছিলেন অটল। মক্কার প্রভাবশালীদের উৎপীড়নে ব্যথিত হয়ে রসুল (সা.) একপর্যায়ে আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করলেন, "হে আল্লাহ! ওমর ইবনে খাত্তাব এবং আবু জেহেলের মধ্যে তোমার কাছে যে বেশি পছন্দনীয়, তাকে ইসলাম গ্রহণের সুযোগ দাও এবং তার দ্বারা ইসলামের শক্তি বৃদ্ধি করো।" মহান আল্লাহ্‌র কাছে রসুল (সা.)-এর এই বিশেষ দোয়াটি অচিরেই কবুল হয় এবং আল্লাহ্‌ হজরত ওমর (রা.)-এর অন্তরকে ইসলামের জন্য পরিবর্তন করে দেন।

ইসলাম গ্রহণের ঘটনা

হজরত ওমর (রা.) ছিলেন তৎকালীন আরবের গুটিকয় শিক্ষিত লোকের অন্যতম। একইসঙ্গে তিনি ছিলেন কুস্তিগির, মল্লযোদ্ধা ও একজন সুপরিচিত বক্তা। একসময় তিনি রসুল (সা.)-কে হত্যা করার উদ্দেশ্যে উন্মুক্ত তলোয়ার হাতে নিয়ে মক্কার পথে রওনা হয়েছিলেন।

পথিমধ্যে তিনি সাহাবি নাইম বিন আবদুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। নাইম হজরত ওমর (রা.)-এর উদ্দেশ্য আঁচ করতে পেরে তাকে জানান, রসুলকে হত্যার আগে নিজের বোন ফাতিমা এবং ভগ্নিপতি সাইদের খোঁজ নেওয়া উচিত, কারণ তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। এ কথা শুনে ক্রোধে ফেটে পড়ে ওমর (রা.) ছুটে চললেন বোনের বাড়ির দিকে।

ঘরে ঢোকার আগেই তিনি শুনতে পান যে তার বোন ফাতিমা রসুল (সা.)-এর ওপর নাজিল হওয়া কোরআন পাঠ করছেন। পায়ের শব্দ কানে আসা মাত্রই ফাতিমা চুপ হয়ে যান এবং কোরআনের পাতা লুকিয়ে ফেলেন। ঘরে ঢুকেই ক্ষুব্ধ ওমর (রা.) জানতে চান, তারা কী পড়ছিলেন। এরপর তিনি তাদের ধর্মত্যাগী হওয়ার জন্য দোষারোপ করে ভগ্নিপতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। স্বামীকে রক্ষা করতে বোন এগিয়ে এলে ওমর (রা.) তাকেও আঘাত করেন, ফলে ফাতিমা এবং তার স্বামী দু'জনেই রক্তাক্ত হন।

রক্তাক্ত অবস্থায়ও ইমানের বলে বলীয়ান হয়ে বোন ফাতিমা দৃঢ়কণ্ঠে তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন, "ভাই, তুমি যা ইচ্ছা করতে পারো। আমরা সব সহ্য করব। শুধু জেনে রাখো, আমরা ইসলাম ত্যাগ করব না।"

বোনের এমন তেজোদীপ্ত কথা শুনে দম্ভ ও ক্রোধে থাকা ওমর (রা.) থমকে দাঁড়ালেন। তাঁর কঠিন হৃদয় মোমের মতো গলে গেল। তিনি শান্ত হয়ে বললেন, "আচ্ছা! তোমরা যা পাঠ করছিলে, আমাকে একটু পড়তে দাও দেখি, তাতে এমন কী আকর্ষণ আছে, যা তোমাদের এমন দৃঢ়চেতা করে তুলেছে।"

কিন্তু তাঁর বোন ফাতিমা বললেন, "তুমি এখন নাপাক। এ কিতাব শুধু পাক-পবিত্র লোকই স্পর্শ করতে পারে।" তখন হজরত ওমর (রা.) গোসল করে পবিত্র হলেন। তারপর কোরআন পাঠ করে তিনি গভীরভাবে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। কুরাইশদের অন্যতম এই প্রভাবশালী নেতা মুহূর্তেই পাল্টে যান।

প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা

হজরত ওমর (রা.) সেই তলোয়ার হাতেই রসুল (সা.)-এর দরবারে ছুটে চললেন। তাঁর পায়ের শব্দ শুনে সাহাবিরা কিছুটা শঙ্কিত হলেও, আরবের অন্যতম সেরা বীর হজরত হামজা (রা.) সাহসের সঙ্গে বললেন, "ওমর এসেছে তো কী হয়েছে, দরজা খুলে দাও। যদি খারাপ উদ্দেশ্যে এসে থাকে, তবে তার তলোয়ার দিয়েই আমরা তাকে শেষ করে দেব।"

এই ঘটনার সময় রসুল (সা.) দরবারের ভিতরের দিকে ছিলেন এবং সে সময় তাঁর ওপর ওহি নাজিল হচ্ছিল। ওহি নাজিল হওয়ার পর রসুল (সা.) হজরত ওমরের কাছে এলেন এবং তাঁর পরিধানের পোশাক ও তলোয়ারের একাংশ ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন, "হে আল্লাহ! ওমর ইবনে খাত্তাবের দ্বারা দীনের শক্তি ও সম্মান দান করো।"

এ কথা শুনে হজরত ওমর (রা.) রসুল (সা.)-এর হাত ধরে বললেন, "আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং আপনি আল্লাহর রসুল।" হজরত ওমরের কলমা পাঠ শোনামাত্র ভিতরে উপস্থিত সকল সাহাবিরা উচ্চস্বরে 'আল্লাহু আকবার' ধ্বনি দিয়ে উঠলেন।

হজরত ওমর (রা.)-এর ইসলাম গ্রহণের একটি বিশেষত্ব রয়েছে। তিনি বাদে অন্য সবাই প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন গোপনে। কিন্তু ওমরের ইসলাম গ্রহণ এবং মুসলমান হিসেবে তৎপরতা ছিল সম্পূর্ণ প্রকাশ্যে। তাঁর ইমানদারির মধ্যে ছিল কুরাইশদের বিরুদ্ধে এক প্রকার বিদ্রোহের সুর।

মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের আগে তিনি প্রথমে কাবা তাওয়াফ করলেন। তারপর কুরাইশদের মজলিসে গিয়ে প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন, "আমি মদিনায় হিজরত করব। যদি কেউ তার মাকে পুত্রশোক দিতে চায়, সে যেন এ উপত্যকার অন্য প্রান্তে আমার মুখোমুখি হয়।" এমন একটি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি মদিনার পথে রওনা দেন। কিন্তু তাঁর এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার সাহস কেউ দেখাতে পারেনি।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন।


তওবার সঠিক প্রক্রিয়া: আল্লাহর কাছে ফিরে আসার ৫টি শর্ত

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৩ ১২:২৫:৫৯
তওবার সঠিক প্রক্রিয়া: আল্লাহর কাছে ফিরে আসার ৫টি শর্ত
ছবি: সংগৃহীত

তওবা শব্দের মূল অর্থ হলো ‘ফিরে আসা’। ইসলামী শিক্ষা অনুযায়ী এর উদ্দেশ্য হলো গুনাহ থেকে ফিরে আসা এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করা।

কোরআন ও সুন্নাহর ভাষায় তওবা বোঝায় পূর্ববর্তী গুনাহের জন্য আন্তরিক অনুতপ্ত হওয়া এবং ভবিষ্যতে সেই গুনাহ থেকে নিজেকে বিরত রাখা।

বিশুদ্ধ তওবার শর্তসমূহ:,

প্রথম শর্ত হলো, তওবা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে হতে হবে।

দ্বিতীয়ত, যে গুনাহ থেকে তওবা করা হচ্ছে তা যত দ্রুত সম্ভব ত্যাগ করতে হবে।

তৃতীয় শর্ত হলো, সেই গুনাহটি করার জন্য অন্তরের মধ্যে অনুতপ্তি এবং লজ্জা অনুভব করা।

চতুর্থত, ভবিষ্যতে সেই গুনাহ আর পুনরায় না করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করতে হবে।

পঞ্চম শর্ত, যদি গুনাহটি অন্য কোনো বান্দার অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, তবে তার সঙ্গে মিটমাট বা সমঝোতা করতে হবে এবং যার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে, তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

তওবার সুফল ও আল্লাহর কবুলযোগ্যতা:

যদি কোনো ব্যক্তির তওবা খাঁটি ও আন্তরিক হয়, তবে আল্লাহ তায়ালা তা গ্রহণ করবেন এবং সেই ব্যক্তির আমলনামা থেকে পূর্বের সমস্ত গুনাহ মুছে যাবে।পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর, খাঁটি তওবা; আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত, নবী এবং তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সেদিন আল্লাহ লাঞ্ছিত করবেন না। তাদের আলো তাদের সামনে ও ডানে প্রবাহিত হবে। তারা বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমাদের জন্য আমাদের আলো পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন; নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে সর্বক্ষমতাবান।” (সুরা তাহরিম, আয়াত : ৮)

এই আয়াত স্পষ্টভাবে নির্দেশ করছে যে খাঁটি ও আন্তরিক তওবার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর দয়া, ক্ষমা এবং জান্নাত অর্জন করতে পারে।


ঢাকা আজকের নামাজের সময়সূচি প্রকাশ

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৩ ১০:৪২:৪৫
ঢাকা আজকের নামাজের সময়সূচি প্রকাশ
ছবি: সংগৃহীত

আজ সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫ (১৮ কার্তিক ১৪৩২, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭) ঢাকার নামাজের সময়সূচি প্রকাশ করা হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা এ তথ্য অনুযায়ী তাদের দৈনন্দিন ইবাদতের সময় নির্ধারণ করতে পারবেন।

ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকায় জোহরের নামাজ শুরু হবে সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে। এরপর আসরের নামাজের সময় নির্ধারিত হয়েছে বিকেল ৩টা ৪২ মিনিটে। সূর্যাস্তের সঙ্গে মিলিয়ে মাগরিব নামাজ পড়া যাবে বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে। এশার নামাজ শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টা ৩৭ মিনিটে।

আগামীকাল ফজরের নামাজের সময় নির্ধারিত হয়েছে ভোর ৪টা ৫৩ মিনিটে। সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সময়ও জানানো হয়েছে; আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত ঘটবে বিকেল ৫টা ১৮ মিনিটে, আর আগামীকাল সূর্যোদয় হবে ভোর ৬টা ০৬ মিনিটে।

এই সময়সূচি প্রকাশ করেছে ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা। ধর্মপ্রাণরা এই সময় অনুযায়ী নামাজ, সওয়াবের আমল ও অন্যান্য ইবাদতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।


০৩ নভেম্বর: ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের নামাজের সময়সূচি

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০২ ২১:৪৭:১১
০৩ নভেম্বর: ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের নামাজের সময়সূচি
Qolsharif Mosque, Kazan (Russia)/ছবিঃ সংগৃহীত

সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫ ইংরেজি তারিখের জন্য ঢাকা এবং বাংলাদেশের অন্যান্য প্রধান বিভাগের দৈনিক নামাজের সময়সূচি নিচে দেওয়া হলো। (এই সময়সূচি বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য ইসলামিক ক্যালেন্ডার থেকে সংগৃহীত। স্থানীয় তারতম্যের জন্য ২/১ মিনিট ভিন্ন হতে পারে)।

ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সময়সূচি

ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য ফজর ০৪টা ৪৯ মিনিটে (ভোর), সূর্যোদয় ০৬টা ০৩ মিনিটে (AM) (আনুমানিক), জোহর ১১টা ৪৫ মিনিটে (দুপুর), আছর ০৩টা ৪৩ মিনিটে (বিকেল), মাগরিব ০৫টা ২৩ মিনিটে (সন্ধ্যা), এবং ইশা ০৬টা ৩৮ মিনিটে (রাত)।

নফল রোজার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সাহরির শেষ সময় থাকবে ০৪টা ৪৩ মিনিটে (ভোর)।

এবং ইফতারের সময় হবে ০৫টা ২৩ মিনিটে (সন্ধ্যা)।

অন্যান্য প্রধান বিভাগীয় শহরের আনুমানিক সময়সূচি

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রধান বিভাগীয় শহরগুলোর সময়সূচিতে সামান্য পার্থক্য আসে। ০৩ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখের জন্য প্রধান বিভাগগুলোর নামাজের আনুমানিক সময়সূচি নিম্নরূপ:

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে ফজর ০৪টা ৪৪ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৫টা ৫৬ মিনিটে, জোহর ১১টা ৪৯ মিনিটে, আসর ০৩টা ৫৯ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৩৯ মিনিটে এবং ইশা ০৬টা ৫৪ মিনিটে।

খুলনা: খুলনায় ফজর ০৪টা ৫১ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৬টা ০৪ মিনিটে, জোহর ১১টা ৫২ মিনিটে, আসর ০৪টা ০৫ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৪৬ মিনিটে এবং ইশা ০৭টা ০০ মিনিটে।

রাজশাহী: রাজশাহীতে ফজর ০৪টা ৫০ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৬টা ০৩ মিনিটে, জোহর ১১টা ৫৩ মিনিটে, আসর ০৪টা ০৬ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৪৭ মিনিটে এবং ইশা ০৭টা ০২ মিনিটে।

সিলেট: সিলেটে ফজর ০৪টা ৪৪ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৫টা ৫৬ মিনিটে, জোহর ১১টা ৪৭ মিনিটে, আসর ০৪টা ০২ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৩৪ মিনিটে এবং ইশা ০৬টা ৫০ মিনিটে।

রংপুর: রংপুরে ফজর ০৪টা ৪৯ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৬টা ০২ মিনিটে, জোহর ১১টা ৫১ মিনিটে, আসর ০৪টা ০৩ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৪২ মিনিটে এবং ইশা ০৬টা ৫৯ মিনিটে।

বরিশাল: বরিশালে ফজর ০৪টা ৪৯ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৬টা ০৩ মিনিটে, জোহর ১১টা ৪৯ মিনিটে, আসর ০৪টা ০৩ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৪০ মিনিটে এবং ইশা ০৬টা ৫৬ মিনিটে।

পাঠকের মতামত:

গবেষণা ভিত্তিক শিক্ষা: বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য এক নতুন দিগন্ত

গবেষণা ভিত্তিক শিক্ষা: বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য এক নতুন দিগন্ত

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠদান, দীর্ঘদিন ধরে পাঠ্যপুস্তকনির্ভর শিক্ষা ও পরীক্ষাকেন্দ্রিক মূল্যায়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এই ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের... বিস্তারিত

হাউসকা দুর্গের ভূগর্ভ আর ‘শয়তানের বাইবেল’ কোডেক্স গিগাস: কিংবদন্তি, ইতিহাস ও ভয়ের মনস্তত্ত্ব

হাউসকা দুর্গের ভূগর্ভ আর ‘শয়তানের বাইবেল’ কোডেক্স গিগাস: কিংবদন্তি, ইতিহাস ও ভয়ের মনস্তত্ত্ব

বোহেমিয়ার অরণ্যমালায় একটি দুর্গ, হাউসকা ক্যাসেল, আর তার কয়েক মাইল দূরে এক সন্ন্যাসীর লেখা বিশাল এক পুঁথি, কোডেক্স গিগাস। শতাব্দীজুড়ে... বিস্তারিত

ক্যানসার চিকিৎসায় মহা সাফল্য: নতুন ভ্যাকসিনের প্রাথমিক পরীক্ষায় শতভাগ কার্যকারিতা

ক্যানসার চিকিৎসায় মহা সাফল্য: নতুন ভ্যাকসিনের প্রাথমিক পরীক্ষায় শতভাগ কার্যকারিতা

ক্যানসার চিকিৎসায় বিজ্ঞানীরা এক যুগান্তকারী অগ্রগতি অর্জন করেছেন। নতুন এক ধরনের ক্যানসার ভ্যাকসিনের প্রাথমিক মানবদেহে পরীক্ষায় শতভাগ সাড়া পাওয়ার দাবি... বিস্তারিত