ইতিহাস, দর্শন ও ইসলাম
হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.): ন্যায়, প্রজ্ঞা ও বিশ্বনেতৃত্বের এক স্বর্ণযুগ

ইসলামের ইতিহাসে হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) এমন এক মহান ব্যক্তিত্ব যিনি শক্তি, সাহস, ন্যায়বিচার, প্রজ্ঞা এবং আল্লাহভীতি দ্বারা বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা, নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সাহাবি, এবং এমন এক নেতা যাঁর শাসনকাল মুসলিম সভ্যতার সোনালি যুগ হিসেবে পরিচিত। তাঁর শাসনামলে শুধু ইসলামী সাম্রাজ্য ভৌগোলিকভাবে বিস্তৃত হয়নি, বরং প্রশাসনিক কাঠামো, বিচারব্যবস্থা, করনীতি, সামাজিক কল্যাণ এবং ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী সংস্কার হয়েছে। পশ্চিমা ঐতিহাসিকরাও স্বীকার করেছেন, তাঁর শাসন ছিল মানব ইতিহাসের অন্যতম সফল, সুশৃঙ্খল ও ন্যায়নিষ্ঠ শাসনব্যবস্থার উদাহরণ।
প্রাথমিক জীবন ও পারিবারিক পটভূমি
হযরত ওমর (রা.) ৫৮৩ খ্রিষ্টাব্দে মক্কায় কুরাইশ গোত্রের বানু আদী শাখায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম ছিল খাত্তাব ইবনে নুফাইল এবং মাতার নাম হাতমা বিনতে হাশিম। তাঁর পরিবার কুরাইশদের মধ্যে সামাজিক মর্যাদার দিক থেকে সম্মানিত ছিল, তবে ধনী ছিল না। শৈশব থেকেই ওমর (রা.) ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, সাহসী এবং শারীরিকভাবে বলবান। তিনি তলোয়ার চালনা, ঘোড়সওয়ারি, উটপালন এবং ক্রীড়ায় পারদর্শী ছিলেন।
শিক্ষাজীবনে তিনি আরবি সাহিত্য, কবিতা, বংশাবলি বিদ্যা এবং বক্তৃতাশৈলীতে দক্ষতা অর্জন করেন। সেই সময়ের মক্কার সমাজে বংশগৌরব, বাগ্মিতা এবং শারীরিক সক্ষমতা ছিল নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা—যা ওমর (রা.)-এর মধ্যে শৈশব থেকেই স্পষ্ট ছিল। ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি মক্কার বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন এবং কুরাইশদের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন।
ইসলাম গ্রহণের পূর্ববর্তী জীবন
ইসলাম আবির্ভাবের প্রথম দিকে ওমর (রা.) ছিলেন নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কঠোর বিরোধীদের একজন। তিনি মুসলমানদের প্রতি শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব পোষণ করতেন এবং তাঁদের ওপর নির্যাতনে অংশ নিতেন। তাঁর কঠোর স্বভাব ও দৃঢ় বিশ্বাস তাঁকে ইসলামের অন্যতম প্রধান প্রতিপক্ষ করে তুলেছিল। অনেক ঐতিহাসিক বর্ণনায় এসেছে যে, এক পর্যায়ে তিনি নবীজীকে হত্যা করার সংকল্প করেছিলেন, যাতে মুসলমানদের আন্দোলন পুরোপুরি দমন করা যায়।
ইসলাম গ্রহণের ঘটনা
তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায় এক ঐতিহাসিক ঘটনায়। নবীজীকে হত্যার উদ্দেশ্যে পথে বের হয়ে তিনি শুনলেন, তাঁর বোন ফাতিমা বিনতে খাত্তাব ও ভগ্নীপতি সাঈদ ইবনে যায়েদ ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে তিনি কুরআন তিলাওয়াত শুনতে পান। সুরা ত্বা-হা’র আয়াত শুনে তাঁর হৃদয় কেঁপে ওঠে। পবিত্র কুরআনের বাণী তাঁর অন্তরে গভীর প্রভাব ফেলে, এবং তিনি উপলব্ধি করেন যে, এটি মানুষের রচিত কোনো কথা নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সত্য।
এই অভিজ্ঞতার পর তিনি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। মুসলমানদের জন্য এটি ছিল এক বিশাল বিজয়, কারণ ওমর (রা.)-এর সাহস, প্রভাব এবং নেতৃত্বগুণ মুসলিম সমাজকে নতুন শক্তি যোগায়। তাঁর ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই মুসলমানরা প্রকাশ্যে ইবাদত করতে শুরু করেন।
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও ভূমিকা
১. নবীজীর সহচর হিসেবে ভূমিকা: ইসলাম গ্রহণের পর হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) শুধুমাত্র একজন সাধারণ অনুসারী হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকেননি; বরং তিনি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর অন্যতম নিকটতম ও বিশ্বস্ত সহচরে পরিণত হন। বদর, উহুদ, খন্দক, খাইবার এবং হুনায়েনসহ প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ গাজওয়ায় তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং প্রতিটি যুদ্ধে তাঁর অসীম সাহস ও কৌশলগত দক্ষতা নবীজীর জন্য অপরিহার্য হয়ে ওঠে। বদরের যুদ্ধে তাঁর যুদ্ধদক্ষতা মুসলিম বাহিনীর মনোবল বৃদ্ধি করে এবং শত্রুপক্ষের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।
ওমর (রা.)-এর চরিত্রে ছিল দৃঢ়তা ও নির্ভীকতা, যা মুসলিম বাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা ও আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলত। তিনি কেবল যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পরামর্শেও নবীজীর কাছে মূল্যবান ছিলেন। তাঁর কঠোর মনোভাব এবং সত্যের পক্ষে আপসহীন অবস্থান ইসলামের শত্রুদের মনে এক ধরনের ভয় এবং মুসলমানদের মনে নিরাপত্তার অনুভূতি সৃষ্টি করেছিল।
২. হিজরত: মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের সময় অধিকাংশ মুসলমান গোপনে রাতের আঁধারে শহর ত্যাগ করেছিলেন, কারণ কুরাইশরা মুসলমানদের হিজরত ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছিল। কিন্তু ওমর (রা.)-এর সাহস ছিল অতুলনীয়। তিনি প্রকাশ্যে মক্কার কাবাঘরে গিয়ে কুরাইশদের নেতৃবৃন্দের সামনে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন,
“যে তার স্ত্রীকে বিধবা করতে চায়, সন্তানকে পিতৃহীন করতে চায়, সে যেন পথে এসে আমাকে বাধা দেয়।”
এই ঘোষণা শুধু ব্যক্তিগত সাহসিকতার প্রকাশই ছিল না, বরং এটি মুসলমানদের জন্য এক বিশাল প্রেরণা হয়ে ওঠে। তাঁর এই কর্মে মক্কার ইসলামের শত্রুরা বুঝে যায় যে মুসলমানরা আর ভীত-সন্ত্রস্ত জনগোষ্ঠী নয়; বরং তারা দৃঢ় বিশ্বাস ও আত্মত্যাগের মানসিকতা অর্জন করেছে। ইসলামী ইতিহাসে এ ঘটনা অনন্য উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
৩. হুদায়বিয়ার সন্ধি ও পরবর্তী ঘটনা: হিজরতের ছয় বছর পর ৬ হিজরিতে (৬২৮ খ্রিঃ) নবী মুহাম্মদ (সা.) ও মুসলিম বাহিনী কাবা শরিফে ওমরাহ আদায়ের উদ্দেশ্যে মক্কার দিকে অগ্রসর হন। কুরাইশদের বাধার কারণে মক্কার উপকণ্ঠে হুদায়বিয়া নামক স্থানে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা মুসলমানদের জন্য আপাতদৃষ্টিতে অসম এবং অপমানজনক মনে হয়েছিল। চুক্তির শর্তগুলোর মধ্যে ছিল—সেই বছর মুসলমানরা উমরাহ করতে পারবে না, এবং মক্কা থেকে কেউ মদিনায় গেলে তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে; তবে মদিনা থেকে কেউ মক্কায় গেলে তাকে ফেরত দিতে হবে না।
এই শর্তগুলো শুনে ওমর (রা.)-এর মন বিদীর্ণ হয়ে যায়। তিনি নবীজীর কাছে প্রশ্ন করেন, “আমরা কি সত্য ধর্মে নেই? আল্লাহ কি আমাদের সহায় নন?” নবীজী ধৈর্যের সাথে উত্তর দেন, “অবশ্যই।” তবুও তাঁর অন্তরে কষ্ট থেকে যায়। কিন্তু কয়েক মাস পর এই চুক্তির সুফল স্পষ্ট হয়—যুদ্ধবিরতির সুযোগে ইসলাম দ্রুত প্রসার লাভ করে, বহু মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ইসলাম গ্রহণ করে এবং মুসলিম রাষ্ট্র কূটনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়। তখন ওমর (রা.) স্বীকার করেন, নবীজীর দূরদর্শিতা সত্যিই অসাধারণ ছিল এবং এই চুক্তি ছিল কৌশলগত বিজয়ের এক মাইলফলক।
৪. নবীজীর ইন্তেকালের পর: ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ইন্তেকালের সংবাদ শোনার পর ওমর (রা.) গভীর শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তিনি প্রথমে বাস্তবতা মেনে নিতে অস্বীকার করেন এবং ক্রোধভরে বলেন, “যে বলবে মুহাম্মদ (সা.) ইন্তেকাল করেছেন, আমি তার মাথা উড়িয়ে দেব। বরং তিনি মূসা (আ.)-এর মতো আল্লাহর কাছে গেছেন এবং আবার ফিরে আসবেন।”
এই পরিস্থিতিতে আবু বকর সিদ্দিক (রা.) মসজিদে এসে কুরআনের আয়াত পাঠ করেন—
“মুহাম্মদ কেবল একজন রাসূল; তাঁর পূর্বে বহু রাসূল অতিবাহিত হয়েছেন। তিনি যদি মারা যান অথবা নিহত হন, তবে কি তোমরা পেছনে ফিরে যাবে?” (সূরা আলে ইমরান: ১৪৪)
এই আয়াত শোনার পর ওমর (রা.) যেন বাস্তবতায় ফিরে আসেন এবং তাঁর চোখ দিয়ে অশ্রুধারা প্রবাহিত হয়। তিনি উপলব্ধি করেন, আল্লাহর রাসূলের ইন্তেকাল এক বাস্তবতা এবং উম্মাহকে এখন ঐক্যবদ্ধ থেকে নতুন নেতৃত্বের অধীনে অগ্রসর হতে হবে। এই ঘটনার মাধ্যমে তাঁর আন্তরিকতা, নবীজীর প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং সত্য মেনে নেওয়ার বিনয়ী মানসিকতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
খেলাফতকাল (৬৩৪–৬৪৪ খ্রিঃ): হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর ইন্তেকালের পর ৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দে হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর দশ বছরের শাসনকাল ইসলামী ইতিহাসের এক সুবর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত, কারণ এই সময়ে ইসলামী রাষ্ট্র অভূতপূর্ব ভূখণ্ড বিস্তার, প্রশাসনিক কাঠামো উন্নয়ন, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং অর্থনৈতিক সংস্কারে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করে।
প্রশাসনিক সংস্কার
প্রদেশ ব্যবস্থা: ওমর (রা.)-এর শাসনামলে দ্রুত বিস্তৃত সাম্রাজ্যকে কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য তিনি একে বিভিন্ন প্রদেশ ও প্রশাসনিক অঞ্চলে ভাগ করেন। প্রতিটি প্রদেশে গভর্নর (আমির) নিয়োগ করা হতো, যাঁরা প্রশাসন, কর আদায়, আইনশৃঙ্খলা ও জনগণের কল্যাণের দায়িত্ব পালন করতেন। বড় প্রদেশগুলো আবার জেলায় বিভক্ত ছিল, যাতে স্থানীয় পর্যায়ে শাসন কার্যক্রম দ্রুত ও দক্ষতার সাথে পরিচালিত হয়।
দায়িত্বরতদের জবাবদিহিতা: ওমর (রা.) কর্মকর্তাদের আর্থিক ও নৈতিক জবাবদিহিতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। তিনি গভর্নর ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব রাখতে বাধ্য করতেন এবং দায়িত্ব গ্রহণের আগে ও পরে তাঁদের সম্পদ তালিকা সংগ্রহ করতেন, যাতে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যায়। দায়িত্বে অবহেলা বা অনিয়ম প্রমাণিত হলে তিনি বিনা দ্বিধায় তাঁদের অপসারণ করতেন।
দেওয়ান ব্যবস্থা: তাঁর আমলে প্রবর্তিত দেওয়ান ছিল প্রশাসনিক নথিপত্র সংরক্ষণ ও বেতন ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সুশৃঙ্খল রেজিস্ট্রি সিস্টেম। এতে সেনাবাহিনীর সদস্যদের নাম, পদমর্যাদা, দায়িত্ব ও বেতন নির্ধারণের রেকর্ড রাখা হতো। এটি ছিল মুসলিম রাষ্ট্রে প্রথম আধুনিক আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর ভিত্তি।
জনগণের সাথে সরাসরি যোগাযোগ: ওমর (রা.) মদিনার মসজিদে নিয়মিত বসে জনতার অভিযোগ ও পরামর্শ শুনতেন। এভাবে তিনি সাধারণ জনগণকে শাসকের সাথে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ দেন, যা একাধারে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করত। তিনি রাত্রিকালীন টহলেও বের হতেন, যাতে নিজ চোখে জনগণের অবস্থা দেখতে পারেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যা সমাধান করতে পারেন।
অর্থনৈতিক সংস্কার
বায়তুল মাল প্রতিষ্ঠা: ওমর (রা.) রাষ্ট্রীয় অর্থব্যবস্থাকে কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনার জন্য বায়তুল মাল প্রতিষ্ঠা করেন। এতে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ, কর, খাজনা ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় আয় জমা রাখা হতো এবং তা জনকল্যাণে ব্যয় করা হতো। তিনি এই তহবিলের অপচয় বা ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছিলেন।
ভূমি কর ও খাজনা ব্যবস্থা: তিনি কৃষিজমি ও অন্যান্য উৎপাদনশীল সম্পদের ওপর ন্যায়সঙ্গত কর আরোপ করেন। মুসলিম ও অমুসলিম উভয়েই কর দিত, তবে করহার ছিল সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে নির্ধারিত। যুদ্ধবন্দী ও চুক্তিভিত্তিক অমুসলিম প্রজারা জিজিয়া কর দিত, কিন্তু বিনিময়ে রাষ্ট্র তাঁদের জীবন, সম্পদ ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করত।
গরিব ও এতিমদের জন্য ভাতা:তাঁর শাসনামলে দরিদ্র, এতিম, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের জন্য নিয়মিত ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা ছিল, যা ইতিহাসে প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উদাহরণ। শিশুদের জন্য দুধ ও খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।
বিচার ব্যবস্থা
কাজী নিয়োগ: তিনি প্রতিটি প্রদেশে স্বতন্ত্র বিচার বিভাগ গঠন করেন এবং সেখানকার জন্য ন্যায়পরায়ণ ও যোগ্য বিচারক (কাজী) নিয়োগ করেন। কাজীরা স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করতেন, এবং শাসক পর্যন্ত তাঁদের সিদ্ধান্ত মেনে চলতেন।
আইনের শাসন: ওমর (রা.) দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, শাসকসহ সকলেই আইনের অধীন। একাধিক ঘটনায় দেখা যায়, তিনি সাধারণ নাগরিকের মতো আদালতে হাজির হয়েছেন এবং মামলার রায় নিজের বিপক্ষে গেলে তা বিনা আপত্তিতে মেনে নিয়েছেন। তাঁর এই নীতি আইনের শাসনের প্রকৃত রূপ তুলে ধরে, যা আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সামরিক ও ভূখণ্ড বিস্তার: হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.)-এর খেলাফতকাল ইসলামী সাম্রাজ্যের ভূখণ্ড বিস্তারের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব সময় হিসেবে চিহ্নিত। মাত্র দশ বছরের শাসনামলে তিনি ইসলামী রাষ্ট্রকে আরব উপদ্বীপের বাইরে প্রসারিত করে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং পারস্যের বিশাল অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করেন। এই বিস্তার ছিল শুধু সামরিক শক্তির ফল নয়, বরং দক্ষ কৌশল, শৃঙ্খলাবদ্ধ সেনাবাহিনী, ন্যায়নিষ্ঠ শাসননীতি এবং বিজিত জনগণের সাথে মানবিক আচরণের সমন্বিত ফল।
পারস্য জয়: পারস্যের সাসানীয় সাম্রাজ্য তখনকার বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সাম্রাজ্য ছিল। তবে ধারাবাহিক সংঘর্ষে তারা দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং ওমর (রা.)-এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী এই সুযোগকে কাজে লাগায়।
কাদিসিয়ার যুদ্ধ (৬৩৬ খ্রিঃ): এই ঐতিহাসিক যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী সাসানীয় সেনাদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে। যুদ্ধটি কয়েক দিন ধরে চলে এবং মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন সা'দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)।
নাহাওয়ান্দের যুদ্ধ (৬৪২ খ্রিঃ): “বিজয়ের বিজয়” নামে পরিচিত এই যুদ্ধের মাধ্যমে সাসানীয় সাম্রাজ্যের পতন সম্পূর্ণ হয়। পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যেই পারস্য সম্পূর্ণ মুসলিম শাসনের অধীনে আসে।এই বিজয় শুধু ভৌগোলিক বিস্তারই নয়, বরং ইসলামী সভ্যতার সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করে, কারণ পারস্যের উন্নত প্রশাসনিক পদ্ধতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ইসলামী রাষ্ট্রে যুক্ত হয়।
রোমান ভূখণ্ড জয়:পূর্ব রোমান বা বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যও তখন মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিশালী প্রভাব বিস্তার করছিল। তবে একাধিক যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী ধারাবাহিক সাফল্য অর্জন করে।
ইয়ামুকের যুদ্ধ (৬৩৬ খ্রিঃ): সিরিয়ার ইয়ামুক নদীর তীরে সংঘটিত এই যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী বিশাল বিজয় অর্জন করে, যার ফলে সিরিয়া এবং প্যালেস্টাইন মুসলিম শাসনের অধীনে আসে। এই যুদ্ধে খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) অসামান্য নেতৃত্বের পরিচয় দেন।
মিশর বিজয় (৬৩৯–৬৪২ খ্রিঃ): আমর ইবনে আস (রা.)-এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী মিশর জয় করে। মিশরের কপটিক খ্রিস্টান জনগণ রোমান শাসনের নিপীড়ন থেকে মুক্তি পেয়ে মুসলিম শাসনকে স্বাগত জানায়।
এই বিজয়গুলো মুসলিম রাষ্ট্রকে সমুদ্রপথে বাণিজ্য ও কৌশলগত অবস্থানে শক্তিশালী করে তোলে।
জেরুজালেম দখল:
জেরুজালেম ছিল খ্রিস্টান ও ইহুদিদের জন্য পবিত্র নগরী। ইয়ামুক যুদ্ধে বাইজান্টাইন বাহিনী পরাজিত হওয়ার পর নগরীর নেতারা আত্মসমর্পণের শর্তে ওমর (রা.)-এর কাছে চাবি হস্তান্তর করতে সম্মত হয়, তবে শর্ত ছিল যে, খলিফা নিজে এসে চাবি গ্রহণ করবেন।
ওমর (রা.) সাধারণ পোশাকে, এক উট ও একজন খাদেমসহ মদিনা থেকে জেরুজালেমে আসেন। তাঁর সরলতা, ন্যায়বিচার ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতা খ্রিস্টান নেতাদের মুগ্ধ করে। তিনি শহরে প্রবেশ করে খ্রিস্টান ও ইহুদিদের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দেন এবং তাঁদের উপাসনালয় রক্ষা করার নির্দেশ দেন। এই ঘটনা ইসলামী শাসনের সহিষ্ণুতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
সাফল্য ও অবদান
ন্যায়বিচারের প্রতীক – “আল-ফারুক”: ওমর (রা.)-এর অটল ন্যায়পরায়ণতার কারণে তিনি “আল-ফারুক” উপাধি লাভ করেন, যার অর্থ সত্য ও মিথ্যার মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্যকারী। তাঁর শাসনে ধনী-গরিব, মুসলিম-অমুসলিম—সকলের জন্য সমান বিচার নিশ্চিত করা হতো।
রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের আধুনিকীকরণ: তাঁর শাসনে প্রদেশভিত্তিক প্রশাসনিক কাঠামো, কর ব্যবস্থা, সেনাবাহিনীর রেজিস্ট্রি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, ডাক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। এটি ছিল মুসলিম বিশ্বের প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক সংস্কার।
সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা: তিনি দরিদ্র, এতিম, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের জন্য নিয়মিত ভাতা চালু করেন। যুদ্ধাহত সৈনিকদের জন্যও রাষ্ট্রীয় সহায়তার ব্যবস্থা করেন।
শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তার: নতুন অঞ্চলে মসজিদ ও মক্তব প্রতিষ্ঠা করে কুরআন শিক্ষা ও সাধারণ জ্ঞানচর্চার প্রসার ঘটান। বিজিত এলাকায় ইসলামী শিক্ষা ও স্থানীয় জ্ঞানের মেলবন্ধন ঘটাতে সহায়তা করেন।
ধর্মীয় সহিষ্ণুতা: বিজিত অমুসলিম জনগণকে তাঁদের ধর্ম পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা দেন এবং তাঁদের উপাসনালয় সংরক্ষণ করেন। তিনি চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা ও কর ব্যবস্থার মাধ্যমে মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে সহাবস্থান নিশ্চিত করেন।
রাস্তা ও অবকাঠামো উন্নয়ন: তিনি সড়ক, সেতু, কূপ, খাল এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা উন্নত করেন। ডাক ব্যবস্থা ও সীমান্ত প্রতিরক্ষা জোরদার করেন, যা বাণিজ্য, যোগাযোগ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।
শহীদ হওয়া
৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ফজরের নামাজ আদায়ের সময় এক অমুসলিম দাস আবু লুলু ফিরোজ তাঁকে ছুরিকাঘাত করে। কয়েকদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে তিনি শুরা কমিটি গঠন করে পরবর্তী খলিফা নির্বাচন করার নির্দেশ দেন। তাঁকে মদীনায় নবীজীর পাশে দাফন করা হয়।
ইতিহাসে স্থান ও প্রভাব
হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) কেবল ইসলামের দ্বিতীয় খলিফাই নন, তিনি ছিলেন এমন এক দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক, যিনি নেতৃত্ব, প্রশাসনিক প্রজ্ঞা ও নৈতিক দৃঢ়তার মাধ্যমে বিশ্ব ইতিহাসে স্থায়ী ছাপ রেখে গেছেন। তাঁর কঠোর ন্যায়বিচার, দৃঢ় প্রশাসন, স্বচ্ছ জবাবদিহিতা এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণে অবিচল মনোভাব তাঁকে মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে।
তাঁর শাসনকাল প্রমাণ করেছে যে একটি রাষ্ট্র কেবল সামরিক শক্তি বা ভূখণ্ড বিস্তারের মাধ্যমে নয়, বরং সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং নৈতিক শৃঙ্খলার মাধ্যমে স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ হতে পারে। ওমর (রা.) এমন এক কাঠামোগত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন, যেখানে প্রদেশভিত্তিক শাসন, করনীতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সামরিক সংগঠন এবং সামাজিক নিরাপত্তা একে অপরের সাথে সমন্বিত ছিল। এই মডেল পরবর্তী শতাব্দীগুলিতে মুসলিম সাম্রাজ্যের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।
আধুনিক ঐতিহাসিক, বিশেষত পশ্চিমা গবেষকরাও তাঁকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। ব্রিটিশ ঐতিহাসিক থমাস আর্নল্ড ও জর্জ সার্টন তাঁর শাসনকে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও নৈতিক নেতৃত্বের বিরল সমন্বয় বলে অভিহিত করেছেন। এমনকি অমুসলিম গবেষকরাও স্বীকার করেছেন, তাঁর শাসনব্যবস্থা ছিল অগ্রসরমান রাষ্ট্র পরিচালনার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
তাঁর নেতৃত্বে ইসলামী রাষ্ট্র শুধু ভূখণ্ডগতভাবে নয়, বরং প্রশাসনিক ও নৈতিক ক্ষেত্রেও এক সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী রূপ লাভ করে। তিনি রাষ্ট্রে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে যেমন কঠোর ছিলেন, তেমনি দরিদ্র, এতিম, বিধবা ও অমুসলিম নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় ছিলেন অসীম সহৃদয়। ফলে বিজিত অঞ্চলের অনেক জনগণ মুসলিম শাসনকে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করে, যা ইসলামের শান্তিপূর্ণ বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ওমর (রা.)-এর মৃত্যুর পরও তাঁর প্রবর্তিত নীতি, আইন ও সংস্কার শতাব্দীর পর শতাব্দী মুসলিম শাসনব্যবস্থায় কার্যকর ছিল। তাঁর ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা, এবং জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপ পরবর্তী খলিফা, শাসক ও নেতাদের জন্য আদর্শ হয়ে থাকে।
হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) ছিলেন এমন এক বিরল চরিত্র, যাঁর জীবন মুসলিম উম্মাহর জন্য অনন্ত অনুপ্রেরণা ও দিকনির্দেশনার উৎস। ইসলাম গ্রহণের আগে একজন দৃঢ় প্রতিপক্ষ থেকে তিনি রূপান্তরিত হয়েছিলেন ইসলামের এক অকুতোভয় রক্ষক ও সংস্কারক নেতায়। তাঁর খেলাফতের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল ঈমান, সাহস, ন্যায়বিচার, বিনয় এবং জনকল্যাণমূলক উদ্যোগের প্রতিফলন।
তিনি প্রমাণ করেছিলেন, একজন শাসকের শক্তি কেবল সামরিক ক্ষমতায় নয়, বরং ন্যায়পরায়ণতা, সততা, এবং প্রজাদের কল্যাণে নিবেদিত নেতৃত্বে নিহিত। তাঁর প্রতিষ্ঠিত নীতি ও দৃষ্টান্ত কেবল ইসলামী সভ্যতার সোনালি অধ্যায় রচনা করেনি, বরং মানব ইতিহাসেও আদর্শ রাষ্ট্রনায়কত্বের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তাঁর জীবন ও শাসন আজও আমাদের শেখায়—ন্যায় ও সত্যের পথে অবিচল থাকলে একটি জাতি শুধু টিকে থাকে না, বরং ইতিহাসে অমর হয়ে যায়।
মৃত্যু কেন মুমিনের কাছে প্রিয়? হাদিসের আলোকে ব্যাখ্যা
মৃত্যু মানবজীবনের এক অবশ্যম্ভাবী সত্য, যা নিয়ে মানুষের মনে ভয়, আশা ও আকাঙ্ক্ষার দোলাচল থাকে। কেউ মৃত্যুকে জীবনের শেষ মনে করে আতঙ্কিত হয়, আবার মুমিনের কাছে এটি হয় আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের এক মহাসুযোগ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন যে মৃত্যুর মুহূর্তে মানুষের আসল চেহারা প্রকাশ পায়।
হাদিসের শিক্ষা
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ أَحَبَّ لِقَاءَ اللهِ أَحَبَّ اللهُ لِقَاءَهُ وَمَنْ كَرِهَ لِقَاءَ اللهِ كَرِهَ اللهُ لِقَاءَهُ قَالَتْ عَائِشَةُ أَوْ بَعْضُ أَزْوَاجِهِ إِنَّا لَنَكْرَهُ الْمَوْتَ قَالَ لَيْسَ ذَاكِ وَلَكِنَّ الْمُؤْمِنَ إِذَا حَضَرَهُ الْمَوْتُ بُشِّرَ بِرِضْوَانِ اللهِ وَكَرَامَتِهِ فَلَيْسَ شَيْءٌ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا أَمَامَهُ فَأَحَبَّ لِقَاءَ اللهِ وَأَحَبَّ اللهُ لِقَاءَهُ وَإِنَّ الْكَافِرَ إِذَا حُضِرَ بُشِّرَ بِعَذَابِ اللهِ وَعُقُوبَتِهِ فَلَيْسَ شَيْءٌ أَكْرَهَ إِلَيْهِ مِمَّا أَمَامَهُ كَرِهَ لِقَاءَ اللهِ وَكَرِهَ اللهُ لِقَاءَهُ
উবাদাহ ইবনু সামিত (রা.) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
"যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ পছন্দ করে, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ পছন্দ করে না, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন।"
এই হাদিসের ব্যাখ্যায় আয়িশাহ (রা.) অথবা তাঁর অন্য কোনো স্ত্রী যখন মৃত্যুকে অপছন্দ করার কথা বলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট করে দেন যে, স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুকে ভয় পাওয়া বা কষ্টকর মনে করা আল্লাহর সাক্ষাৎ অপছন্দ করা এক বিষয় নয়।
মুমিনের ক্ষেত্রে যখন মুমিনের মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন ফেরেশতারা তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাতের সুসংবাদ দেন। এই সময় পৃথিবীর কষ্ট ও মৃত্যুর যন্ত্রণা তার কাছে গৌণ হয়ে যায়। তার হৃদয় আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় পূর্ণ হয়। এ কারণেই সে মৃত্যুকে পছন্দ করতে শুরু করে, কারণ তার সামনে জান্নাত ও আল্লাহর সাক্ষাতের সুখবর থাকে।
কাফিরের ক্ষেত্রে কাফিরের যখন মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন তাকে আল্লাহর গজব, শাস্তি ও অভিশাপের কথা জানানো হয়। আখিরাতের ভয়ংকর আজাব তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সে তখন মৃত্যু ও পরবর্তী জীবনের সাক্ষাৎ ভীষণ ঘৃণা করতে থাকে। ফলে আল্লাহও তার সাক্ষাৎকে অপছন্দ করেন, অর্থাৎ আল্লাহ তার জন্য আখিরাতে সুখ বা সন্তুষ্টি নয়, বরং গজব নির্ধারণ করে রেখেছেন।
এই হাদিস থেকে আমরা যে শিক্ষা পাই তা হলো:
আল্লাহর সাক্ষাৎ পছন্দ করতে হলে আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক জীবনযাপন করতে হবে।
পাপাচার, কুফর ও বিদআতের জীবন আল্লাহর সাক্ষাৎকে ভীতিকর করে তুলবে।
আখিরাতের জন্য প্রস্তুত থাকা মানেই মৃত্যুকে ভয় না পাওয়া।
মৃত্যু আসলে মুমিনের জন্য প্রিয় আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে মিলনের সেতু, আর কাফিরের জন্য এটি ভয়ংকর আজাবের দরজা।
জুমার দিনে মসজিদে কাঁধ ডিঙিয়ে সামনে যাওয়া কেন নিষিদ্ধ?
সপ্তাহের দিনগুলোর মধ্যে জুমা মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ। আল্লাহ তায়ালা এই দিনটিকে বিশেষভাবে সম্মানিত করেছেন এবং রাসুল (সা.) একে সূর্য উদিত হওয়া দিনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বরকতময় দিন হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এ দিনে মুসলিম উম্মাহর জন্য কিছু বিশেষ করণীয় রয়েছে, যা পালন করলে অপার সওয়াব লাভ করা যায়।
জুমার নামাজে আগে যাওয়ার গুরুত্ব
জুমার দিনে একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো আজানের সঙ্গে সঙ্গে আগেভাগে মসজিদে গমন করা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আহ্বান জানানো হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ছুটে চলো এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম—যদি তোমরা বুঝতে পারো।’ (সুরা জুমআ: ৯)
হাদিসেও আগেভাগে মসজিদে যাওয়ার ব্যাপারে বিশাল প্রতিদান ও সওয়াবের কথা বলা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ফরজ গোসলের মতো গোসল করে এবং প্রথম প্রহরে মসজিদে যায়, সে যেন একটি উট কোরবানি করল। দ্বিতীয় প্রহরে গেলে গরু কোরবানির সওয়াব, তৃতীয় প্রহরে গেলে ভেড়া, চতুর্থ প্রহরে গেলে মুরগি এবং পঞ্চম প্রহরে গেলে ডিম কোরবানির সওয়াব পাবে। এরপর যখন ইমাম খুতবা দিতে মিম্বারে ওঠেন, তখন ফেরেশতারা আর আমল লেখেন না, তারা খুতবা শুনতে থাকেন।’ (বোখারি: ৮৮১)
কাঁধ ডিঙিয়ে সামনে যাওয়ার বিষয়ে শরিয়তের বিধান
অভিযোগ আছে, আমাদের দেশে অনেক মুতাওয়াল্লি বা স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জুমার দিন আগে থেকেই মসজিদের সামনের কাতারে নিজেদের জন্য জায়গা দখল করে রাখেন। পরে তারা দেরিতে আসলেও অন্যদের কাঁধ ডিঙিয়ে সেই জায়গায় গিয়ে বসেন।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, এই ধরনের কাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মানুষকে কষ্ট দিয়ে সামনে যাওয়াকে নবী করিম (সা.) জাহান্নামের ব্রিজ অতিক্রম করে জাহান্নামে যাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, “মসজিদ ইবাদতের জায়গা। এখানে সবাই সমান। কে মুতওয়াল্লি আর কে সাধারণ মুসল্লি, কোনো পার্থক্য নেই। মানুষকে কষ্ট দিয়ে ইমামের পেছনে সামনের কাতারে জায়নামাজ দিয়ে জায়গা জুড়ে রাখা জাহেলি বর্বরতা। এটা কোনো সভ্যতা নয়।”
শায়খ আহমাদুল্লাহ আরও বলেন, মসজিদে যে আগে আসবে সে আগে বসবে। আগে থেকে জায়গা দখল করে রাখা বা কাউকে ডিঙিয়ে সামনে বসা সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও গুনাহের কাজ। হাদিস শরিফে এসেছে, একবার রাসুল (সা.) জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি এক ব্যক্তিকে অন্যদের কাঁধ ডিঙিয়ে সামনে যেতে দেখে বললেন, ‘বসে পড়, তুমি দেরি করে এসেছ, মানুষকে কষ্টও দিচ্ছো।’ (আবু দাউদ: ১১১৮)
সুতরাং ইমামের কাছাকাছি বসার জন্য মসজিদে দ্রুত উপস্থিত হতে হবে। যদি কোনো কারণে দেরি হয়ে যায়, তাহলে যেখানে খালি জায়গা পাওয়া যায়, সেখানেই বসে পড়া উচিত। অন্যদের কষ্ট দিয়ে সামনে গেলে সওয়াবের বদলে গুনাহের ভাগিদার হতে হবে।
ঢাকা ও বিভাগীয় শহরের নামাজের সময়সূচি প্রকাশিত
আজ মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ এবং ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। রাজধানী ঢাকা এবং এর আশপাশের এলাকার জন্য আজকের নামাজের সময়সূচি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে।
নামাজের সময়সূচি (ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকা)
- ফজর: ভোর ৪টা ৩০ মিনিটে আদায় করা যাবে।
- জোহর: দুপুর ১১টা ৫৭ মিনিটে শুরু হবে।
- আসর: বিকেল ৪টা ১৯ মিনিটে পড়তে হবে।
- মাগরিব: আজ সূর্যাস্তের পর ৬টা ০৬ মিনিটে মাগরিবের নামাজের সময় হবে।
- ইশা: রাত ৭টা ২০ মিনিট থেকে ইশার নামাজ আদায় করা যাবে।
এছাড়া, আজকের সূর্যোদয়ের সময় সকাল ৫টা ৪৫ মিনিট, আর সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৬টা ০১ মিনিট।
বিভাগীয় শহরের জন্য সময় পরিবর্তন
ঢাকার প্রকাশিত নামাজের সময়সূচির সঙ্গে দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরের জন্য কিছুটা সময় যোগ বা বিয়োগ করতে হবে।
বিয়োগ করতে হবে:
- চট্টগ্রাম: ৫ মিনিট
- সিলেট: ৬ মিনিট
- যোগ করতে হবে:
- খুলনা: ৩ মিনিট
- রাজশাহী: ৭ মিনিট
- রংপুর: ৮ মিনিট
- বরিশাল: ১ মিনিট
অর্থাৎ, সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় শহরের মুসল্লিদের জন্য নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুসারে কয়েক মিনিটের তারতম্য ঘটবে।
ঢাকা ও বিভাগীয় শহরের নামাজের সময় ঘোষণা
আজ শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২ বাংলা এবং ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার আজকের নামাজ ও সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের সময়সূচি প্রকাশ করা হয়েছে।
ঢাকায় আজ ফজরের নামাজের সময় ভোর ৪টা ২৯ মিনিটে, জোহরের নামাজ দুপুর ১১টা ৫৮ মিনিটে, আসরের নামাজ বিকেল ৪টা ২১ মিনিটে, মাগরিবের নামাজ সন্ধ্যা ৬টা ৮ মিনিটে এবং ইশার নামাজ রাত ৭টা ২৩ মিনিটে আদায় করা হবে। আজ সূর্যোদয়ের সময় নির্ধারিত হয়েছে সকাল ৫টা ৪৩ মিনিটে এবং সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে।
বিভাগীয় শহরগুলোর জন্য নির্দিষ্ট সময়সূচিতে কিছুটা যোগ-বিয়োগ করতে হবে। চট্টগ্রামের নামাজের সময় থেকে ৫ মিনিট এবং সিলেটের সময় থেকে ৬ মিনিট কমাতে হবে। অপরদিকে খুলনায় নামাজের সময় ৩ মিনিট, রাজশাহীতে ৭ মিনিট, রংপুরে ৮ মিনিট এবং বরিশালে ১ মিনিট যোগ করতে হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিদিন নামাজের সময়সূচি পরিবর্তিত হয় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। তাই মুসল্লিদের উচিত সঠিক সময়ে নামাজ আদায়ের জন্য সরকারি ঘোষিত সময়সূচি অনুসরণ করা।
তথ্যসূত্র: ইসলামিক ফাউন্ডেশন
শির্কের ভয়াবহতা বুঝতে সহজ উদাহরণ
শির্ক- আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরিক করা ইসলামের দৃষ্টিতে সবচেয়ে ভয়াবহ অপরাধ। কুরআনে একে “মহা জুলুম” বলা হয়েছে এবং স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, আল্লাহ শির্ককে ক্ষমা করবেন না, যদিও এর বাইরে অন্য সব গুনাহ তিনি ইচ্ছামতো ক্ষমা করতে পারেন। এই গুরুতর বিষয়টি কীভাবে সন্তানদের বা অন্য কাউকে বোঝানো যায়, তা ব্যাখ্যা করেছেন ইসলামি চিন্তাবিদ ড. আবু বকর যাকারিয়া।
তিনি শির্কের ভয়াবহতা বোঝাতে একটি বাস্তব উদাহরণ টেনে আনেন। তিনি বলেন, সন্তানকে প্রথমে মনে করিয়ে দেওয়া উচিত শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত তার বাবা কত যত্ন, ত্যাগ ও ভালোবাসা দিয়ে তাকে বড় করেছেন। সন্তানের কর্তব্য হলো সেই বাবাকে সম্মান করা, মর্যাদা দেওয়া এবং সেবা করা।
এরপর সন্তানকে প্রশ্ন করা যেতে পারে যদি সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটায়, পরে সেটা মীমাংসা হয় বা অন্য কোনো উপায়ে শেষ হয়ে যায়, তবে কি পিতা-মাতার সঙ্গে তার সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে পারে? উত্তর অবশ্যই হবে হ্যাঁ, সম্পর্ক ফিরে আসতে পারে।
কিন্তু যদি সেই সন্তান তার বাবাকে বলে, “হে বাবা, অমুক আমার কাছেও তোমার সমান মর্যাদা ও ভালোবাসার অধিকারী” তাহলে পিতার অনুভূতি কেমন হবে? পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রতিক্রিয়া কী হবে? এটি কি সহজে ভোলা যাবে? নিশ্চয়ই না। এখানে সন্তান একজন সাধারণ মানুষকে পিতার সমান মর্যাদায় বসিয়েছে এটুকুই এমন এক অপরাধ, যা ক্ষমার অযোগ্য।
ড. যাকারিয়া বলেন, যদি সন্তান পিতার সমান মর্যাদা দিয়ে দেয় কোনো তুচ্ছ সৃষ্টিকে যেমন প্রাণী, মূর্তি বা অন্য কোনো তুচ্ছ বস্তুকে তাহলে সেটা হবে ভয়ংকর অপমান এবং অতি বড় অন্যায়। এটি আসলে ঋণীর পক্ষ থেকে এমন এক ঋণদাতাকে অস্বীকার করা, যার ঋণ কোনোদিন শোধ করা সম্ভব নয়। এই কাজ তাকে পরিবারের ভালোবাসা ও সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, আল্লাহর জন্যই সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত। যিনি মানুষকে দিয়েছেন বাবা-মা, জীবনধারণের জন্য জমিন, খাদ্য, বুদ্ধি ও অসংখ্য নিয়ামত যদি সেই আল্লাহর সমকক্ষ হিসেবে মানুষ অন্য কাউকে ভালোবাসা, আশা, ভয় বা ইবাদতের আসনে বসায়, তবে তা হবে সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধ। এ কারণেই কুরআনে আল্লাহ বলেন: “নিশ্চয়ই শির্ক এক মহা জুলুম।” আবার অন্য আয়াতে বলেন: “আল্লাহ তাঁর সাথে শির্ককে ক্ষমা করেন না; তবে এর বাইরে যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন।”
ড. আবু বকর যাকারিয়া মনে করিয়ে দেন, মুসলিমের অবস্থান শির্ককারীর প্রতি হবে সেই অপরাধীর ভাইদের অবস্থানের মতো, বরং তার চেয়েও কঠোর, যেমন ছিলেন ইবরাহীম (আ.) ও তাঁর সঙ্গীরা। তারা নিজেদের সম্প্রদায়কে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য সব ইলাহ ও উপাস্য থেকে মুক্ত এবং কেবল আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলেই এই বিভেদ শেষ হতে পারে।
শির্কের ভয়াবহতা বোঝাতে হলে মানুষকে সহজ উদাহরণ দিয়ে বুঝাতে হবে, যেন তারা উপলব্ধি করতে পারে পিতার অবমাননার তুলনায় আল্লাহর সাথে শির্ক করা কত বড় অপরাধ। এটি কেবল অকৃতজ্ঞতাই নয়, বরং এক মহা জুলুম, যা মানুষের সমস্ত সম্পর্ক, মর্যাদা এবং আখিরাতের মুক্তি নষ্ট করে দেয়।
স্ত্রীকে আদর করে ‘আপু’ বা ‘বোন’ বলার বিধান
প্রশ্ন: জনৈক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে ভালোবাসা থেকে ‘আপু মনি’ বলে ডাকেন। শরীয়তের দৃষ্টিতে এতে কোনো সমস্যা আছে কি? এই কারণে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক কি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে? স্ত্রীকে বোন বা আপু বলে ডাকার বিধান কী, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তর:
ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে স্ত্রীকে ‘আপু’ বা ‘বোন’ বলে সম্বোধন করা মাকরূহ বা অনুচিত। এটি একটি গুনাহের কাজ। এ ধরনের সম্বোধন থেকে বিরত থাকা উচিত।
হাদিস শরিফে এ বিষয়ে একটি বর্ণনা এসেছে। সুনানে আবু দাউদে (হাদিস: ২২০৪) উল্লেখ আছে, একজন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে ‘বোন’ বলে ডেকেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) এই সম্বোধন শুনে তাকে তা থেকে নিষেধ করেন।
তবে এই ধরনের সম্বোধনের কারণে স্বামী-স্ত্রীর বৈবাহিক সম্পর্কের কোনো ক্ষতি হবে না। এটি সরাসরি তালাকের কারণ হয় না বা সম্পর্ককে হারাম করে দেয় না। শুধুমাত্র নৈতিক ও শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে এ ধরনের সম্বোধন অনুচিত এবং তা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
দান করার যত ফজিলত
ইসলামে দান বা সদকার গুরুত্ব অপরিসীম। এটি এমন একটি ইবাদত যা মানুষকে শুধু দুনিয়াতে নয়, আখেরাতেও কল্যাণ এনে দেয়। কুরআন ও হাদিসে দানের অসংখ্য ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। দান মানুষকে দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্ত করে, সম্পদে বরকত আনে, গুনাহ মাফের কারণ হয় এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়ায় আশ্রয় পাওয়ার অন্যতম উপায় হিসেবে বিবেচিত।
গুনাহ মাফ ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি
দান-সদকা মানুষের গুনাহ মুছে দেয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সদকা যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে ফেলে, তেমনি এটি মানুষের পাপও ধ্বংস করে দেয়। এ কারণে দানকে গুনাহ মাফের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ধরা হয়। একই সঙ্গে এটি জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার সুরক্ষাও প্রদান করে।
বিপদাপদ ও বালা-মুসিবত দূর করে
দান মানুষের জীবনের নানা বিপদ ও দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে। হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, যে ব্যক্তি সদকা করে, আল্লাহ তার জন্য অদৃশ্য থেকে বিপদ দূর করেন। অর্থাৎ দান শুধু আখেরাতেই নয়, দুনিয়ার জীবনেও নিরাপত্তা ও সুরক্ষার কারণ হয়।
সম্পদে বরকত বৃদ্ধি
দানের অন্যতম উপকার হলো আল্লাহ সম্পদে বরকত দান করেন। দান করার মাধ্যমে সম্পদ কমে না, বরং বাড়ে। এটি আর্থিক জীবনে স্থিতিশীলতা এবং মনোবল জাগিয়ে তোলে।
কিয়ামতের দিন আরশের নিচে আশ্রয়
গোপন দানের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। হাদিসে এসেছে, কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো আশ্রয় থাকবে না, তখন সাত শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ সেই ছায়ায় রাখবেন। গোপনে দানকারীরা এর মধ্যে অন্যতম। ফলে দান আখেরাতের মুক্তি ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করে।
দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ
দান দুনিয়াতে প্রশান্তি ও শান্তি আনে, আবার আখেরাতে মুক্তি ও নাজাতের কারণ হয়। এভাবে এটি মানুষের উভয় জীবনের কল্যাণের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়।
সহানুভূতি ও ভালোবাসা সৃষ্টি
দান মানুষকে অভাবীদের প্রতি সহানুভূতিশীল করে তোলে। এটি সমাজে ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করে। অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়ানো সমাজের নৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী করে।
রিজিক বৃদ্ধি
রমজানসহ বিশেষ সময়ে দান করলে আল্লাহ রিজিক বৃদ্ধি করেন। ইসলামি শিক্ষায় বলা হয়েছে, দান দারিদ্র্য কমায় না, বরং রিজিক বাড়ায় এবং সম্পদে বরকত আনে।
সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি
দান হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম উপায়। অসহায় ও অভাবীদের সাহায্য করা মানে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কর্তব্য পালন করা। এভাবে দানকারীরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করে।
দান শুধু একটি ইবাদত নয়, এটি মানবিকতা, সহানুভূতি এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতীক। এর মাধ্যমে মানুষ দুনিয়ার শান্তি ও আখেরাতের মুক্তি লাভ করে। দান মানুষের অন্তরকে নির্মল করে, সম্পদে বরকত আনে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ তৈরি করে। তাই দানকে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য।
কোরআনের আলোকে পরকাল: অবিশ্বাসীদের শেষ পরিণতি
সুরা আনআম: পার্থিব জীবনকে পরকালের জন্য কাজে লাগানোর আহ্বান
কোরআনুল কারিম: সুরা আনআম, আয়াত ২৯-৩০
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে
وَ قَالُوۡۤا اِنۡ هِیَ اِلَّا حَیَاتُنَا الدُّنۡیَا وَ مَا نَحۡنُ بِمَبۡعُوۡثِیۡنَ﴿۲۹﴾
وَ لَوۡ تَرٰۤی اِذۡ وُقِفُوۡا عَلٰی رَبِّهِمۡ ؕ قَالَ اَلَیۡسَ هٰذَا بِالۡحَقِّ ؕ قَالُوۡا بَلٰی وَ رَبِّنَا ؕ قَالَ فَذُوۡقُوا الۡعَذَابَ بِمَا كُنۡتُمۡ تَكۡفُرُوۡنَ﴿۳۰﴾
আল্লাহর বাণী, "আর তারা বলে, আমাদের পার্থিব জীবনই একমাত্র জীবন এবং আমাদেরকে পুনরুত্থিতও করা হবে না।" (২৯)
এই আয়াতে আল্লাহ অবিশ্বাসীদের মানসিকতা তুলে ধরেছেন। তারা মনে করে যে এই পার্থিব জীবনই একমাত্র সত্য এবং মৃত্যুর পর আর কোনো জীবন নেই। এই ধারণার বশবর্তী হয়ে তারা পরকালকে অস্বীকার করে এবং পার্থিব জীবনের ভোগ-বিলাসকে প্রাধান্য দেয়। ইবনে কাসিরের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, অবিশ্বাসীরা দুনিয়াতে ফিরে গেলেও একই কথা বলবে।
পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ বলছেন, "আপনি যদি তাদেরকে দেখতে পেতেন, যখন তাদেরকে নিজ প্রতিপালকের সম্মুখে দাঁড় করানো হবে এবং তিনি বলবেন, ‘এ (পুনরুত্থান) কি প্রকৃত সত্য নয়!’ তারা বলবে, ‘আমাদের প্রতিপালকের শপথ! নিশ্চয়ই এটা সত্য।’ তিনি বলবেন, ‘তবে তোমরা যে অবিশ্বাস করতে, তার জন্য তোমরা এখন শাস্তি ভোগ কর।’" (৩০)
এই আয়াতে পরকালের এক ভয়াবহ দৃশ্যের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। যখন কাফের ও পাপীরা আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে, তখন তারা তাদের ভুল উপলব্ধি করবে। কিন্তু তখন তাদের এই স্বীকারোক্তি কোনো কাজে আসবে না। মহান আল্লাহ তাদের মিথ্যাচার ও অবিশ্বাসের জন্য শাস্তি দেবেন।
এই দুটি আয়াত থেকে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো, পার্থিব জীবনকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো। এই জীবন আল্লাহর একটি বিরাট নেয়ামত। তাই ইসলামে আত্মহত্যা বা মৃত্যু কামনা করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আমাদের উচিত এই জীবনকে পরকালের পাথেয় হিসেবে ব্যবহার করা।
ইশরাক-চাশত-আওয়াবীন: কোন সময় কত রাকাআত পড়বেন?
ইসলামে নফল সালাতের বিশেষ কিছু সময় রয়েছে, যেগুলোতে ইবাদত করলে অশেষ ফযীলত অর্জন করা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সালাতুল ইশরাক, সালাতুয যোহা (চাশত) এবং সালাতুল আওয়াবীন। অনেকেই এ তিনটি সালাতকে আলাদা আলাদা মনে করলেও প্রকৃতপক্ষে এগুলো একই নামাযের ভিন্ন ভিন্ন নাম মাত্র।
সালাতুল ইশরাক
‘ইশরাক’ অর্থ সূর্যোদয়। সূর্য উঠার প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর যে সালাত আদায় করা হয়, তাকে বলা হয় সালাতুল ইশরাক। এটি মূলত সালাতুয যোহার প্রারম্ভিক সময় হিসেবেই গণ্য হয়। হাদীসে এ নামাযকে অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ বলা হয়েছে।
একটি হাদীসে এসেছে—
“যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাতে আদায় করে, তারপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকে এবং সূর্য ওঠার পর দুই রাকাআত সালাত আদায় করে, তার জন্য একটি হজ্জ ও একটি উমরার পূর্ণ সওয়াব লেখা হয়।” (তিরমিযী, সহিহ তারগীব ৪৬১)যদিও কিছু মুহাদ্দিস এ হাদীসকে যঈফ বলেছেন, তবে ইমাম আলবানী রহ. এটিকে সহীহ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।
সালাতুয যোহা বা চাশত
‘যোহা’ অর্থ পূর্বাহ্ন। সূর্যের আলো যখন তীব্র হয়, অর্থাৎ যোহরের প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পূর্বে এ সালাত আদায় করা উত্তম। ভারতীয় উপমহাদেশে একে চাশত নামেও ডাকা হয়।
সালাতুল আওয়াবীন
‘আওয়াবীন’ অর্থ আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীরা। সালাতুয যোহাকেই হাদীসে সালাতুল আওয়াবীন বলা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন:“সালাতুয যোহা কেবল সেই ব্যক্তি নিয়মিত আদায় করে, যে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। এটাই হলো সালাতুল আওয়াবীন।” (সহিহ ইবনে খুযাইমা; সহিহ তারগীব তারহীব ১/১৬৪)
আরও একটি হাদীসে যায়দ ইবনে আরকাম (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন:“সালাতুল আওয়াবীনের সময় হলো তখন, যখন সূর্যের তাপে উটের বাচ্চাদের পা গরম হয়ে যায়।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৬৩১)
এ থেকে স্পষ্ট যে, সালাতুল আওয়াবীন বলতে মূলত সালাতুয যোহাকেই বোঝানো হয়েছে। যদিও অনেকেই মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী ছয় রাকাআত নফল সালাতকে সালাতুল আওয়াবীন বলে থাকেন, তবে উপরোক্ত হাদীসের আলোকে তা সঠিক নয়। মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে নফল সালাত পড়া অবশ্যই মুস্তাহাব, তবে তাকে সালাতুল আওয়াবীন বলা ভুল।
সালাতের সময়সীমা
ইশরাক বা যোহা নামায শুরু হয় সূর্য ওঠার প্রায় ১৫–২০ মিনিট পর থেকে। আর এর শেষ সময় হলো সূর্য মাথার উপরে উঠার আগ পর্যন্ত।
রাকাআতের সংখ্যা
এ সালাতের সর্বনিম্ন রাকাআত হলো দুই। তবে নবী (সা.) মক্কা বিজয়ের দিনে আট রাকাআত সালাতুয যোহা পড়েছিলেন। এর সর্বোচ্চ রাকাআত সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। মুসলিম শরীফে আমর ইবনে আবাসাহ (রা.)–এর দীর্ঘ হাদীসে নবী (সা.) বলেছেন, “সূর্য উঠা পর্যন্ত নামায থেকে বিরত থাকো। তারপর সূর্য ওঠার পর নামায আদায় করো। ফেরেশতারা এতে উপস্থিত থাকেন। এভাবে সূর্য মাথার উপর উঠার আগ পর্যন্ত তুমি ইচ্ছেমতো সালাত আদায় করতে পারো।”
অতএব, দুই রাকাআত থেকে শুরু করে ৪, ৬, ৮, ১০, ১২ কিংবা তার বেশি পড়া যায়। অর্থাৎ এটি সীমাহীন নফল ইবাদত।
সালাতুল ইশরাক, সালাতুয যোহা (চাশত) এবং সালাতুল আওয়াবীন- সবগুলো একই নামাযের ভিন্ন ভিন্ন নাম। এর ফযীলত ও সওয়াব বিশাল, বিশেষত ফজরের নামায জামাতে আদায়ের পর নিয়মিত ইশরাক সালাত আদায়কারী ব্যক্তি হজ্জ ও উমরার সমতুল্য সওয়াব লাভ করেন। ইসলামী ফিকহ অনুযায়ী এ সালাতের সর্বোচ্চ রাকাআত নির্দিষ্ট না থাকায় এটি ইচ্ছেমতো আদায় করা যায়। এ নামায শুধু আত্মিক প্রশান্তি দেয় না, বরং মুমিনের আল্লাহর প্রতি অনাবিল প্রত্যাবর্তন ও ভক্তির প্রকাশ ঘটায়।
পাঠকের মতামত:
- তারেক রহমানের নির্দেশে: পূজামণ্ডপ পাহারা দেবে বিএনপি নেতাকর্মীরা
- ডাকসু নির্বাচন: প্রশাসনের গড়িমসির অভিযোগ আনলেন তিন ভিপি প্রার্থী
- ঐক্য ধরে রাখতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ: বিএনপি নেতার ‘খিচুড়ি কূটনীতি’
- গাজায় ‘গণহত্যা’ ঠেকাতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে স্পেনের ‘বড় পদক্ষেপ’
- নিউইয়র্কের জাতিসংঘের মঞ্চে ড. ইউনূস: বাংলাদেশের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত
- গাজা যুদ্ধ ও ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ: জাতিসংঘের মঞ্চে ট্রাম্পের বিস্ফোরক মন্তব্য
- নিউইয়র্কের লাঞ্ছনা: সফরসঙ্গীদের ঘটনায় সরকারের ‘বিশেষ বার্তা’
- বিসিবি নির্বাচনে চমক: খসড়া ভোটার তালিকা ঘিরে চলছে নানা জল্পনা!
- ‘এই সময়’-এর সংবাদে ভুল? মির্জা ফখরুলের নতুন বক্তব্যে দানা বাঁধছে কৌতূহল
- ‘দ্য রেড জুলাই’র প্রতিবাদ: যুক্তরাষ্ট্রে লাঞ্ছনার জবাবে টিএসসিতে এক বিশেষ কর্মসূচি
- ‘দাওয়াত পেলেও যেতাম না’: প্রধান উপদেষ্টার সফর নিয়ে রনির কড়া মন্তব্য
- দেশের জ্বালানি খাতে আসছে নতুন গতি: ৪১৩ কোটি টাকার এক বড় চুক্তি
- গাজা নিয়ে ট্রাম্পের নতুন পরিকল্পনা: মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক
- কারাগারে মহিলা লীগ নেত্রী লিমাসহ ১০
- ৩৩ বছরের অপেক্ষার অবসান! অবশেষে কিং খানের ঘরে সেই কাঙ্ক্ষিত সম্মান
- শাহবাগে এনসিপি’র বিক্ষোভ: নিউইয়র্কে নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদ
- মানবদেহে নতুন অঙ্গের খোঁজ পেল বিজ্ঞানীরা: ক্যানসার চিকিৎসায় আশার আলো
- মির্জা ফখরুলের অভিযোগ: ভারতের পত্রিকা সাক্ষাৎকার বিকৃত করেছে
- যুক্তরাষ্ট্রে আখতার ও জারাকে লাঞ্ছিত: নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
- প্রতীক ‘শাপলা’ না হলে নির্বাচন কীভাবে হয় দেখে নেবো: সারজিস
- চাকসু ও রাকসু নির্বাচনে নতুন সময়সূচি
- কৌতূহলবশত বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ারে ঢুকে বিদেশে ১৩ বছরের কিশোর
- সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ আবদুল আজিজ আর নেই
- আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করলে রাজনীতি নাই হয়ে যাবে: নাহিদ ইসলাম
- ডিএসইতে আজকের শেয়ারবাজারের সারসংক্ষেপ
- ডিএসইতে আজকের লেনদেন শেষে টপ লুজার তালিকা প্রকাশ
- ডিএসইতে আজকের লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- বিসিবির কোষাগারে ১৩৯৮ কোটি টাকা রেখে দায়িত্ব ছাড়ছে বিদায়ী পর্ষদ
- পুলিশ পাবে ৪০ হাজার বডি ক্যামেরা: নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে সরকারের নতুন উদ্যোগ
- শাপলা প্রতীক পাবে না এনসিপি
- টানা বৃষ্টি ও নতুন লঘুচাপ: তাপমাত্রা নিয়ে আবহাওয়া অফিসের সতর্ক বার্তা
- আখতারের ওপর হামলা নিয়ে ঢাবি ছাত্রদলের কড়া হুঁশিয়ারি
- আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে নিয়ে নির্বাচন চান মির্জা ফখরুল
- জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের পক্ষে বিশ্বনেতারা
- সিরি আ’তে টানা চতুর্থ জয়ে শীর্ষে নাপোলি
- কক্সবাজারে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে অস্ট্রেলিয়ার নতুন প্রতিশ্রুতি
- বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত নয়, ‘সবুজ সংকেত’ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর ষড়যন্ত্র: রিজভী
- ফিলিস্তিনবিরোধী অবস্থান: ম্যানেজারকে ছাঁটাই করলেন ডুয়া লিপা
- এনসিপি নেতা আখতারের উপর হামলা: হাসনাত আব্দুল্লাহর তীব্র ক্ষোভ ও হুঁশিয়ারি
- কড়া নিরাপত্তা ফাঁকি দিয়ে জোড়া খুনের আসামি পালালো বগুড়া আদালত থেকে
- ফোলা পা থেকে শ্বাসকষ্ট: কিডনি বিকল হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ৫ ইঙ্গিত
- হামাসকে অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের
- “আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা আমার দায়িত্ব”—শোকাহত পরিবারকে প্রধান উপদেষ্টা
- ফেব্রুয়ারির শুরুতেই বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচন, যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকবে: প্রধান উপদেষ্টা
- বিশ্ব বদলের ডাক: তরুণদের ‘থ্রি-জিরো ক্লাব’ গড়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের
- নিউইয়র্কে মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বেলজিয়ামের রানি ম্যাথিল্ডের বৈঠক
- ‘ভারত নাকি অস্ট্রেলিয়া, ওভাবে চিন্তা করছি না’: প্রতিপক্ষ নিয়ে নির্ভার মাহেদী
- মাকে পাশে নিয়ে ব্যালন ডি’অর হাতে নিলেন উসমান ডেম্বেলে
- যুক্তরাষ্ট্রে এনসিপি নেতা আখতারকে ডিম ছুড়ে হামলা
- দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ: স্বর্ণের দামে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতা
- রেনেসাঁর দর্শন ও দিশা: গ্রিক-রোমান জ্ঞান, মুসলিম দার্শনিকদের ভূমিকা ও আধুনিকতার উন্মেষ
- অটোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাস: উত্থান, পতন ও সভ্যতা–বিজ্ঞানে অবদান
- ডিএসইতে রবিবারের লেনদেন শেষে টপ লুজার তালিকা প্রকাশ
- ডিএসইতে আজকের লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- গ্রেফতার বিএনপি নেতা হাজতে সিগারেট–ফোনে ব্যস্ত, ফাঁস হলো ছবি
- আফগানিস্তানে নারী লেখকদের বই নিষিদ্ধ করল তালেবান
- বরিশালে ১৭ বিয়ে কাণ্ড: বন কর্মকর্তা কবির হোসেন বরখাস্ত
- আদালত চত্বরে ব্যারিস্টার সুমনের বারবার উচ্চারণ: ‘ভালো থাকুক বাংলাদেশ’
- ডিএসইতে সোমবারের লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- বলিউডের গ্ল্যামার থেকে ব্যক্তিগত সংগ্রামের গল্প: জিনাত আমানের জীবন ও ভালোবাসা
- ১৭ সেপ্টেম্বর লেনদেনে উত্থান যে ১০ টি শেয়ারে
- “অপরাধী যে বাহিনীরই হোক, বিচারের আওতায় আনতে হবে”
- ট্রাম্পের তালিকায় ভারত–পাকিস্তান ‘মাদক পাচারকারী’ রাষ্ট্র
- চরিত্র বদলের খেলায় শুভশ্রী গাঙ্গুলি
- প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গানের শিক্ষক নিয়োগের প্রতিবাদে ওলামা-মাশায়েখদের বিক্ষোভ