চাঁদাবাজি অভিযোগে মুখোমুখি বৈষম্যবিরোধী ও জামায়াত

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৫ ২০:১০:৪৬
চাঁদাবাজি অভিযোগে মুখোমুখি বৈষম্যবিরোধী ও জামায়াত

চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নগর সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুই কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ এনেছেন এক নারী, যিনি দাবি করেছেনচাঁদা না দেওয়ায় তাঁর স্বামীকে পুলিশে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন ছাত্রনেতা নিজাম। শনিবার (৩ জুলাই) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন রিয়াজুল জান্নাত নামের ওই নারী, যিনি জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় পর্যায়ের এক নেতার স্ত্রী।

চিঠিতে রিয়াজুল জানান, তাঁর স্বামী নওশেদ জামাল, যিনি মেঘনা পেট্রোলিয়াম এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং জামায়াতে ইসলামীর বাগমনিরাম দক্ষিণ সাংগঠনিক ওয়ার্ডের বর্তমান সেক্রেটারি, তাঁকে গত বৃহস্পতিবার কোতোয়ালি থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। রিয়াজুলের ভাষ্য, কিছুদিন ধরে নিজাম উদ্দিন তাঁর স্বামীর কাছে দুই কোটি টাকা দাবি করে আসছিলেন, এবং চাঁদা না পাওয়ায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাঁকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এই অভিযোগের প্রমাণস্বরূপ ৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও রয়েছে যেখানে নিজাম উদ্দিনকে একটি কক্ষে বসে মোবাইলে কথা বলতে দেখা যায়। ভিডিওতে নিজাম বলেন, “পুলিশ পারে না যে এমন কিছু নাই...আপনার যার প্রতি ক্ষোভ, ওই তিনজনকে করলেই হইছে...দেশে থাকতে হবে, এটা মাথায় রাইখেন।” রিয়াজুলের দাবি, এই কথোপকথন থেকেই স্পষ্ট হয় যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার জন্য পুলিশকে ব্যবহারের চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত নিজাম উদ্দিন ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে দাবি করেন, এটি একটি সাজানো ষড়যন্ত্র। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “ভিডিওটি চার থেকে পাঁচ মাস আগের, পতেঙ্গা থানা এলাকার ঘটনা। অথচ যাঁকে নিয়ে ভিডিও ব্যবহার করা হচ্ছে, তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন মাত্র দুই দিন আগে কোতোয়ালি থানার মামলায়।” তিনি দাবি করেন, ভিডিওতে কোথাও কোনো ‘চাঁদা চাওয়ার’ বিষয় নেই। বরং একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভিডিওর বক্তব্যকে বিকৃত করে তাঁকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার চেষ্টা করছে।

প্রথম আলোকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় নিজাম বলেন, “আমি থানার ওসিকে বলেছিলামযদি নওশেদ আওয়ামী লীগের লোক হয়, ব্যবস্থা নেন। নাহলে ছেড়ে দিন। এখন তাঁরা বলছে আমি তাঁকে ধরিয়ে দিয়েছি। এটি সরাসরি আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের চেষ্টা।”

এদিকে পুলিশ কমিশনার বরাবর পাঠানো অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার মাহমুদা বেগম বলেন, “এ ধরনের অভিযোগ কমিশনার বরাবর গেলে তা সাধারণত সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় অথবা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়।”

ঘটনাটির অন্তরালে রাজনীতির ছায়া?

এ ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, মতাদর্শগত সংঘাত এবং মাঠপর্যায়ে আধিপত্য বিস্তারের সংঘাত কাজ করছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অভিযোগকারী পক্ষ জামায়াতের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, অন্যদিকে অভিযুক্ত নিজাম উদ্দিন একটি বৈষম্যবিরোধী প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। ফলে ঘটনাটি নিছক ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব না হয়ে বড় পরিসরে রাজনৈতিক ব্যবস্থার অসুস্থ প্রতিযোগিতার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

যদিও অভিযোগপত্রে চাঁদাবাজির অভিযোগ জোরালোভাবে তোলা হয়েছে, তবে ভিডিওটি স্পষ্টভাবে সেই দাবি সমর্থন করে কিনাতা একটি স্বাধীন তদন্তেই প্রমাণিত হতে পারে। অন্যদিকে, অভিযুক্ত পক্ষ যেভাবে ঘটনাটিকে 'ষড়যন্ত্র' হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে, তাও খতিয়ে দেখা জরুরি।

চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক এই ঘটনা শুধু একজন ছাত্রনেতা ও একজন রাজনৈতিক কর্মীর দ্বন্দ্ব নয়এটি প্রশাসন, রাজনীতি ও সামাজিক শক্তির এক জটিল মিথস্ক্রিয়ার প্রতিফলন। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতা রক্ষা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে প্রশাসনকে মুক্ত রাখা এবং জনগণের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে জরুরি।

এই অভিযোগ যদি মিথ্যা হয়, তবে তা একজন ছাত্রনেতার প্রতি অন্যায় এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসারই পরিচায়ক। আবার অভিযোগ যদি সত্য হয়, তাহলে তা সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার চরম অপব্যবহারের নজির। তাই নিরপেক্ষ তদন্ত ছাড়া এই ঘটনার সত্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। পুলিশের পক্ষ থেকে এখন সময়োপযোগী ও নিরপেক্ষ পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছে সচেতন নাগরিক সমাজ।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ