বয়স ৫০ এর পর কী খাবেন, কী এড়িয়ে যাবেন

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০১ ১৪:৪০:৪৬
বয়স ৫০ এর পর কী খাবেন, কী এড়িয়ে যাবেন

বয়স যত বাড়ে, ততই শরীরের ভেতর ঘটে নানা রকম পরিবর্তন। বিশেষত ৫০ বছর পেরোলেই মানুষের শরীরের বিপাকক্রিয়া (মেটাবলিজম) ধীর হতে শুরু করে, যা খাওয়া-দাওয়ার ধরন ও পরিমাণে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। আগে যেসব খাবার অনায়াসে হজম হতো, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোর প্রভাব হয়ে পড়ে নেতিবাচক। দেখা দিতে পারে ক্লান্তি, তন্দ্রাচ্ছন্নতা, ওজন বেড়ে যাওয়া, হজমে সমস্যা এবং ডায়াবেটিস বা উচ্চরক্তচাপের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি।

গবেষণার চমকপ্রদ তথ্য

যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হারম্যান পন্টজারের নেতৃত্বে পরিচালিত এক গবেষণায় অংশ নেন ৬,৪০০ জন মানুষ। গবেষণায় দেখা যায়, ৫০ বছর বয়সের পর একজন মানুষের মেটাবলিজম প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। অর্থাৎ, শরীর আগের মতো সহজে শক্তি উৎপন্ন করতে পারে না, খাবার হজমের সময়ও বেড়ে যায়। ফলে আগে যেসব খাবার তরতর করে হজম হয়ে যেত, এখন সেগুলো হজম করতে শরীরকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়।

এই কারণে অনেকেই বলেন, "ডাল-ভাত, ভর্তা ভালো লাগে, কিন্তু কাচ্চি বিরিয়ানি বা পাস্তা আর টানে না।" আসলে এটি কোনো মানসিক পরিবর্তন নয় শরীরের প্রকৃত অবস্থান এবং পরিবর্তনের বহিঃপ্রকাশ।

শরীরের বিপরীতে কাজ করে যেসব অভ্যাস

বয়স ৫০ পেরোনোর পরও যদি আগের মতোই খাবারের রুটিন ও অভ্যাস বজায় থাকে, তাহলে তা হতে পারে শরীরের জন্য ক্ষতিকর। নিচে এমন কিছু সাধারণ অভ্যাসের কথা বলা হলো যা এই বয়সে পরিত্যাগ করাই শ্রেয়:

একবারে অনেক বেশি খাওয়া: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হজমশক্তি কমে যায়। ফলে একবারে অনেক খেলে তা হজমে সমস্যা তৈরি করে এবং ক্লান্তি বাড়ায়।

তেল-মসলা ও চর্বিযুক্ত খাবার: ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত ভাজা, গাঢ় মসলা বা চর্বিযুক্ত খাবার হজমে বাধা দেয়। এগুলো শরীর ভারী করে তোলে ও গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটির সম্ভাবনা বাড়ায়।

চিনি ও প্রসেসড খাবার: কেক, পেস্ট্রি, সফট ড্রিঙ্কস, মিষ্টি সিরিয়াল ইত্যাদি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায় এবং পরে দ্রুত কমে গিয়ে ক্লান্তি ও মাথা ঝিমঝিম ভাব দেখা দেয়।

চা-কফির মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণ: ক্যাফেইন কিছু সময়ের জন্য চনমনে ভাব দিলেও ঘুমে বিঘ্ন ঘটায়। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে পরদিন ক্লান্তি, মনোযোগহীনতা এবং মুড পরিবর্তনের মতো সমস্যা দেখা দেয়।

প্রক্রিয়াজাত খাবার ও সাদা পাউরুটি: এই জাতীয় খাবারে ফাইবার কম থাকায় এগুলো দ্রুত হজম হয়ে যায় কিন্তু পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ করে না। এতে ক্ষুধা বাড়ে, শক্তি কমে, এবং ওজন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

যেসব অভ্যাস আপনাকে রাখবে সক্রিয় ও শক্তিশালী

পরিণত বয়সে সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকতে হলে খাওয়ার প্যাটার্ন ও খাদ্য উপাদানে আনতে হবে সচেতন পরিবর্তন। বিশেষজ্ঞরা নিচের কিছু অভ্যাস গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন:

ছোট ছোট ভাগে বারবার খাওয়া: একবারে অনেক খাবারের বদলে দিনে ৫-৬ বার অল্প পরিমাণে খেলে শরীরের শক্তি ধরে রাখা যায়। রক্তে শর্করার মাত্রাও স্থিতিশীল থাকে।

সকালে নাশতা কখনো বাদ দেবেন না: খালি পেটে দিন শুরু করলে মেটাবলিজম আরও কমে যায়। ফল, ডিম, ডাল বা ওটস জাতীয় খাবার দিয়ে দিন শুরু করা উচিত।

ফাইবার ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার: শাকসবজি, গোটা শস্য, বাদাম, ডিম, মাছ ইত্যাদি খাবারে প্রচুর ফাইবার ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি থাকে। এগুলো দীর্ঘ সময় শক্তি ধরে রাখে ও হজম ভালো রাখে।

স্বাস্থ্যকর চর্বির উৎস: অ্যাভোকাডো, অলিভ অয়েল, বাদাম, আখরোট, চিয়া ও তিসি বীজে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্ক সচল রাখতে সাহায্য করে।

পর্যাপ্ত পানি পান: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তৃষ্ণাবোধ কমে, ফলে পানিশূন্যতা সহজেই হয়। দিনে অন্তত ২-৩ লিটার পানি পান করা উচিত। হারবাল চা, গ্রিন টি বা লেবু পানিও উপকারী হতে পারে।

রাতের খাবার হালকা ও সময়মতো খাওয়া: রাত্রে ভারী খাবার খেলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, যা শরীরের পুনরুদ্ধারে বাধা দেয়। রাত ৮টা থেকে ৮:৩০-এর মধ্যে খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

৫০ মানেই থেমে যাওয়া নয়, বরং নতুন করে শুরু

‘Fifty is the new thirty’ এই কথাটি আজ শুধুই প্রবাদ নয়, বাস্তবতা। অনেকেই ৫০-৬০ বছর বয়সে এসে আরও বেশি কর্মক্ষম, মানসিকভাবে চনমনে এবং স্বাস্থ্যবান থাকছেন, যেটি সম্ভব হচ্ছে সচেতন খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারার কারণে। আর এর কেন্দ্রে রয়েছে সঠিক খাদ্য, পরিমিততা ও সময়ানুবর্তিতা।

বয়স বেড়ে যাওয়ার মানেই শক্তিহীন হয়ে যাওয়া নয়; বরং নিজের যত্ন নেওয়ার একটি নতুন অধ্যায়। আর এই অধ্যায়ের শুরু হয় আপনার প্লেট থেকে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ