ধান আছে, তবু চালের দাম চড়া—চট্টগ্রামে ভোক্তার কষ্টের গল্প

চট্টগ্রাম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৭ ১২:০৬:১৪
ধান আছে, তবু চালের দাম চড়া—চট্টগ্রামে ভোক্তার কষ্টের গল্প

চট্টগ্রামের বাজারে আবারও বাড়ছে চালের দাম। গত এক মাসের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে ৫০ কেজি বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত। এ বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে জনপ্রিয় জিরাশাইল চালের ক্ষেত্রে, যার দাম বেড়েছে প্রতি বস্তায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগামী মাসের শুরুতে বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে পারে।

কোরবানির ঈদের আগমুহূর্তে বোরো মৌসুমের নতুন ধান বাজারে আসায় চালের দাম কিছুটা কমেছিল। সেই সময়ে বস্তাপ্রতি দাম কমে গিয়েছিল প্রায় ৩০০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এক মাস যেতে না যেতেই পুনরায় সরু চালসহ সব ধরণের চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।

চট্টগ্রামের মূল চাল আড়ত পাহাড়তলী ও চাক্তাইয়ে গত জুনে মোটা চাল (গুটি, স্বর্ণা) কেজিপ্রতি ৪৮-৫০ টাকায়, আর জিরাশাইল ৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে সব ধরণের চালেই কেজিপ্রতি ৪ থেকে ৯ টাকা পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

দাম বাড়ার মূল কারণ কী?

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধানের দাম বৃদ্ধি, পরিবহন ভাড়ার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং চালকলগুলোর খরচ বেড়ে যাওয়া—সব মিলিয়েই এই মূল্যবৃদ্ধি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর আগাম মজুত। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো চাষিদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থে চাল কিনে নিচ্ছে, ফলে চালকল মালিকেরা পর্যাপ্ত ধান পাচ্ছেন না।

চাল পরিবহনে খরচও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। আগে যেখানে এক লটে পরিবহন খরচ ছিল ২০ হাজার টাকা, বর্তমানে তা ৩০ হাজার টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। ঈদ উপলক্ষে ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানগুলো পশু ও ফল পরিবহনে ব্যস্ত থাকায় চালের পরিবহন ব্যাহত হয়েছে। এ ছাড়া ঈদের আগে-পরে প্রায় ১৫ দিন চালকলগুলো বন্ধ থাকায় সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে।

চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন,

“মূল সমস্যা পরিবহন ও ধানের দাম। পাশাপাশি বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও বাজারে প্রভাব ফেলছে।”

পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিনও বলেন,

“ঈদের সময় কল বন্ধ ছিল, শ্রমিক ছিল না। পরিবহন খরচ বাড়ছে। এসব মিলেই দামে প্রভাব পড়েছে। তবে সাম্প্রতিক কয়েক দিনে বাজার কিছুটা স্থির হতে শুরু করেছে।”

দেশে চালের বাজার দীর্ঘদিন ধরে অস্থির। কয়েক বছর ধরে চালের দাম ৪০ টাকার নিচে নামেনি। বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, সরকার যদি মজুত ব্যবস্থাপনায় কঠোর হয় এবং কৃষকদের উৎসাহিত করে ধানের উৎপাদন বাড়াতে পারে, তাহলে চালের বাজারে স্থিতিশীলতা আসতে পারে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ