শেখ হাসিনা ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপকে ফেরাতে ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হচ্ছে দুদক

প্লট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বোন শেখ রেহানা ও রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দীককে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফেরানো হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর বা পিপি খান মুহাম্মদ মইনুল হাসান। সোমবার ১ ডিসেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ ৪ এর বিচারক রবিউল আলম মামলার রায় ঘোষণা করলে গণমাধ্যমকে দেওয়া এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
রায়ে মামলার প্রধান আসামি শেখ রেহানার ৭ বছর দ্বিতীয় আসামি টিউলিপের ২ বছর ও তৃতীয় আসামি শেখ হাসিনার ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এই মামলায় জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদসহ আরও কয়েকজন আসামিকে ৫ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে আসামি খুরশীদ আলম কারাগারে আটক রয়েছেন এবং বাকিরা পলাতক থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় দুদকের পিপি মইনুল হাসান বলেন এ রায় আমাদের প্রত্যাশা মতো হয়নি কারণ আমরা সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন চেয়েছিলাম। দুদকের সাথে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পিপি আরও বলেন যেসব দেশে শেখ হাসিনা শেখ রেহানা ও টিউলিপসহ অন্য আসামিরা পলাতক আছেন সেসব দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করা হবে। ইন্টারপোলের সহায়তায় তাঁদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টিউলিপ সিদ্দীক একদিকে বাংলাদেশের নাগরিক আবার যুক্তরাজ্যের নাগরিক। তাই যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে টিউলিপের সাজার বিষয়টি অবহিত করা হবে এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করা হবে।
টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে পিপি জানান টিউলিপ কখনো ফোন কল আবার কখনো অ্যাপস ব্যবহার করে শেখ হাসিনাকে প্লট বরাদ্দের জন্য ক্ষমতা প্রয়োগ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মচারীরা এসে এ বিষয়ে আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন। চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে টিউলিপ যখন জানতে পারেন যে তাঁর খালা শেখ হাসিনা ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজের ও সন্তানদের নামে প্লট নিচ্ছেন তখন তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে তাঁর মা ও ভাইবোনের জন্য প্লট বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে খালা শেখ হাসিনার ওপর চাপ প্রয়োগ ও প্রভাব বিস্তার করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয় সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। তাঁরা বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও গরিব দেখিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার ৬টি প্লট নিজেদের নামে বরাদ্দ দেন। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন শেখ হাসিনা শেখ রেহানা ও তাঁর মেয়ে টিউলিপ সিদ্দীক পৃথিবীর যেখানেই অবস্থান করুক না কেন বিচার করতে কোনো বাধা নেই।
অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে সব আইনি প্রশ্নের অবসান ঘটাল আপিল বিভাগ
অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ ও গঠনকে বৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। বৃহস্পতিবার ৪ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি ডক্টর সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এর মাধ্যমে ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে আইনি লড়াইয়ের চূড়ান্ত পরিসমাপ্তি ঘটল।
আদালতে লিভ টু আপিলের পক্ষে আপিলকারী ও সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ নিজে শুনানি করেন। অন্যদিকে এই মামলায় ইন্টারভেনার বা পক্ষ হিসেবে যুক্ত হওয়া লেখক ফিরোজ আহমেদের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ডক্টর শরীফ ভূঁইয়া। এছাড়া এই মামলায় ইন্টারভেনার হয়ে শুনানি করেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
মামলার প্রেক্ষাপট থেকে জানা যায় ২০২৪ সালের জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বিষয়ে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চেয়ে রেফারেন্স পাঠান। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের ভিত্তিতেই অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা শপথ নেন।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠানো রেফারেন্স ও মতামতের প্রক্রিয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ গত বছরের ডিসেম্বরে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। সেই রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৩ জানুয়ারি রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেন। হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এক ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উপদেশমূলক মতামত গ্রহণ করেন এবং মতামত অনুযায়ী কাজ করেছেন। তাই এটি আইনি দলিল দিয়ে সমর্থিত এবং বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার দ্বারা সমর্থিত।
হাইকোর্টের সেই আদেশের বিরুদ্ধে পরে লিভ টু আপিল করেন আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ। বুধবার শুনানি শেষে আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত সেই লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতার বিষয়টিকেই পুনর্ব্যক্ত করলেন। উল্লেখ্য গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ৮ আগস্ট এই সরকার গঠিত হয়েছিল।
ইন্টারনেট বন্ধ করে হত্যায় সহায়তা: ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় জয়
জুলাই আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করে হত্যাকাণ্ড পরিচালনায় সহায়তার অভিযোগে এবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও সাবেক আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। ট্রাইব্যুনাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রসিকিউশন বলছে আন্দোলন চলাকালে ইন্টারনেট বন্ধ করে সংঘটিতভাবে হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করা হয়। এ অভিযোগে শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হয়েছে। অভিযোগ আছে আন্দোলন তিন সপ্তাহ পার হওয়ার সময় হঠাৎ হঠাৎ বন্ধ করা হতো ইন্টারনেট সেবা। বিশেষ করে ১৭ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত বন্ধ ছিল মোবাইল ইন্টারনেট। এ ছাড়া ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপসহ ইন্টারনেট ভিত্তিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধ ছিল টানা ১৩ দিন যা স্বাভাবিক হয় ৫ আগস্ট দুপুর থেকে।
এদিকে অপর একটি মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করতে যাচ্ছে প্রসিকিউশন। তদন্তে এই দুজনের বিরুদ্ধে আন্দোলন দমনে কারফিউ জারি করে আন্দোলনকারীদের শেষ করে দেওয়াসহ সব হত্যাকাণ্ডের পরামর্শ দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন সংস্থা।
সব ঠিক থাকলে বৃহস্পতিবার অথবা আগামী সপ্তাহে দুই মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয় ও জুনাইদ আহমেদ পলক এবং আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবে প্রসিকিউশন। এর মধ্য দিয়ে জুলাই গণহত্যার বিচারে প্রযুক্তির অপব্যবহার এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দায়বদ্ধতার বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ায় উঠে আসবে।
টিউলিপ সিদ্দিকী মামলায় দুদকের নতুন তথ্য প্রকাশ
ব্রিটিশ এমপি ও শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে প্লট দুর্নীতি মামলার বিচার ও সাজা নিয়ে বিভিন্ন মহলে যে আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটি জানিয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিকীকে ঘিরে মিডিয়ায় যে ধরনের প্রশ্ন উঠেছে, সেগুলো পরিষ্কার করতে তারা সমস্ত প্রসিকিউশন নথি পুনর্বিবেচনা করেছে। একটি স্বাধীন সাংবিধানিক সংস্থা হিসেবে দুদক বলছে, আদালতে পেশ করা প্রমাণসমূহ যথাযথভাবে যাচাই করে তারা নিশ্চিত হয়েছে যে মামলার উপাদানগুলো আইনের চোখে সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য।
মঙ্গলবার প্রকাশিত বিবৃতিতে দুদক জানায়, মামলার নথিতে স্পষ্টভাবে দেখা যায় টিউলিপ সিদ্দিকীর খালা, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মা শেখ রেহানা এবং তাদের নিকট আত্মীয়দের নামে প্লট বরাদ্দকেন্দ্রিক অভিযোগগুলোকেই তদন্তের ভিত্তি করা হয়েছে। একটি মামলায় এমনও উঠে এসেছে যে, শেখ হাসিনা সরকারপ্রধান থাকার সময় টিউলিপও নিজ নামে অতিরিক্ত এক প্লট বরাদ্দ পান। দুদকের দাবি, মামলার বেশ কয়েকজন অভিযুক্তই দীর্ঘদিন বিচার থেকে আত্মগোপনে ছিলেন।
তিনটি মামলার মধ্যে একটি মামলার রায় ইতোমধ্যে ঘোষিত হয়েছে, যেখানে টিউলিপ সিদ্দিকী দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৫ এ চলমান স্পেশাল কেস ১৮/২০২৫–এ অভিযোগ করা হয় যে, তিনি নিজের পরিবারের জন্য ভূমি বরাদ্দ নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনাকে অনৈতিক প্রভাবিত করেছিলেন। এ মামলায় ৩২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। দুদক বলছে, বেশ কয়েকজন সাক্ষী হলফনামায় জানিয়েছেন শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হিসেবে টিউলিপ বহু বরাদ্দে সরাসরি প্রভাব খাটিয়েছেন।
তাদের মতে, সাক্ষ্য ও নথি মিলিয়ে যে পরিস্থিতিগত প্রমাণ উঠে এসেছে, তা টিউলিপের সক্রিয় ভূমিকা স্পষ্ট করে। এসব অপরাধ দণ্ডবিধির ১৬১, ১৬৩, ১৬৪, ১৬৫(ক), ২০১, ২১৭, ২১৬, ৪০৯, ৪২০ ধারার পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭–এর সেকশন ৫(২) অনুযায়ী দণ্ডনীয়।
দুদক আরও বলছে, টিউলিপ সিদ্দিকী যেই প্লটটি ব্যক্তিগতভাবে পেয়েছিলেন (বর্তমানে গুলশান-২ এর রোড ৭১–এর ১১৫ ও ১১-বি নম্বর প্লট), সেটি রাজধানীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল এলাকায় অবস্থিত। এগুলো কোনো কৃষিজমি নয় বরং বহু তলাবিশিষ্ট বাসভবন বা অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণযোগ্য উচ্চমূল্যের জমি, যা মূলত রাজধানীর আবাসন সংকট কমাতে বরাদ্দের জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বরাদ্দ ঘুরে গেছে রাজনৈতিক পরিবারের হাতে। দুদকের মতে, এতে পরিবারভিত্তিক সম্পদ সঞ্চয়ের অনৈতিক প্রবণতাই স্পষ্ট হয়।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, টিউলিপ সিদ্দিকীর সঙ্গে লন্ডনের কয়েকটি সম্পত্তির যোগসূত্র রয়েছে, যেগুলো অফশোর প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় কেনা হয়েছে বলে অভিযোগ। দুদক প্রশ্ন তোলে সরকারি দায়িত্বে থাকা পরিবার কীভাবে বিশ্বের দুই প্রধান শহরে একাধিক সম্পদ কেনার সামর্থ্য পেল? তাদের দাবি, টিউলিপ বিচার কার্যক্রমে অংশ নিয়ে এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি নিজেই অনুপস্থিত থাকার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে ‘জবাব দেওয়ার সুযোগ পাননি’ এমন দাবি সঠিক নয়।
সবশেষে দুদক জানায়, সব তথ্য বিশ্লেষণ করে তাদের অবস্থান স্পষ্ট টিউলিপ সিদ্দিকী দুর্নীতির সহায়তা, উস্কানি এবং প্রভাব বিস্তারের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে যুক্ত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ থেকে তাকে নির্দোষ দেখানোর কোনো আইনি বা পরিস্থিতিগত ভিত্তি নেই।
-রাফসান
সাগর রুনি হত্যা মামলার প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ১২২ বারের মতো পিছোল
ঢাকার একটি আদালত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন। এটি মামলার তদন্ত সংস্থার ১২২তম বার প্রতিবেদন দাখিলের সময় নেওয়ার ঘটনা। রোববার ৩০ নভেম্বর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল কিন্তু তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম নতুন এই দিন ধার্য করেন। মিরপুর মডেল থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলাম রাসেল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া করা বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। এরপর মেহেরুন রুনির ভাই নওশের আলম শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ এক যুগেও এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটিত হয়নি।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট র্যাবকে তদন্ত থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্সকে তদন্তের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৬ মাসের সময় নির্ধারণ করা হয়। তদন্ত শেষে হাইকোর্টের দেওয়া সেই ছয় মাসের সময় ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। তবে রাষ্ট্রপক্ষ জানিয়েছে যে তদন্ত চলমান রয়েছে এবং এতে অগ্রগতি আছে। এ কারণে তারা তদন্ত শেষ করতে আদালতের কাছে আরও ৯ মাস সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে।
মাকে প্রভাবিত করে জালিয়াতির মাধ্যমে প্লট নেওয়ায় দণ্ডিত হলেন জয় ও পুতুল
রাজধানীর পূর্বাচলে রাজউকের প্লট বরাদ্দে জালিয়াতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের করা মামলায় ৫ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার ২৭ নভেম্বর বেলা ১১টা ২৩ মিনিটে ঢাকার বিশেষ জজ ৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এজলাসে এসে এই রায় ঘোষণা করেন। আদালত পুতুল ও জয়ের বিরুদ্ধে পৃথক দুই মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। এছাড়া শেখ হাসিনাকে এই দুই মামলাসহ মোট তিন মামলায় ৭ বছর করে মোট ২১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা যায় সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তাঁরা বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও গরিব দেখিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার ৬টি প্লট নিজেদের নামে বরাদ্দ নেন। বিশেষ করে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে যে তাঁর নামে রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট থাকা সত্ত্বেও তিনি তা হলফনামায় গোপন করেছেন এবং আইন লঙ্ঘন করে মাকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। অন্যদিকে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল মাকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করে রাজউকে কোনো আবেদন না করেই মায়ের কাছে আবদার করে আবেদন পেশ করেন এবং ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন।
এর আগে গত ২৩ নভেম্বর মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। যুক্তিতর্কে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন প্রত্যাশা করেছিল। তবে পলাতক থাকায় শেখ হাসিনাসহ পরিবারের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে গত জানুয়ারিতে পৃথক ৬টি মামলা করে দুদক এবং তদন্ত কর্মকর্তা আফনান জান্নাত কেয়া আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর ৩১ জুলাই শেখ হাসিনাসহ এই তিন মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়।
উল্লেখ্য জুলাই আন্দোলন দমনের চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে শেখ হাসিনাকে এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। দুর্নীতির দায়ে কোনো সাবেক সরকারপ্রধানের সাজার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০১৮ সালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন যদিও আওয়ামী সরকারের পতনের পর আপিল বিভাগ থেকে তিনি খালাস পান। এছাড়া সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদেরও দুর্নীতির কয়েকটি মামলায় সাজার রায় হয়েছিল। তবে শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে একই সঙ্গে হত্যা ও দুর্নীতির দায়ে বড় সাজার রায় এক নজিরবিহীন ঘটনা।
ডিভোর্সের পর সন্তানের কাস্টডি: কার অধিকার বেশি, কী বলে আইন
বাংলাদেশে বিবাহবিচ্ছেদের পর সন্তানের কাস্টডি বা হেফাজত নিয়ে বাবা–মায়ের মধ্যে প্রায়ই জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখানে বাবা–মায়ের ব্যক্তিগত আবেগ বা আর্থিক অবস্থার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সন্তানের সর্বোচ্চ কল্যাণ বা বেস্ট ইন্টারেস্ট অব দ্য চাইল্ড। আদালত সবসময়ই দেখেন, কোন অভিভাবকের কাছে সন্তান সবচেয়ে নিরাপদ, স্থিতিশীল ও পরিচর্যায় উপযুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারবে।
কাস্টডি নির্ধারণে মূলত অনুসরণ করা হয় Guardians and Wards Act, 1890 এবং মুসলিম পার্সোনাল ল। বিশেষ করে মুসলিম পরিবারের ক্ষেত্রে ছোট সন্তানের, বিশেষ করে মেয়েশিশুর কাস্টডির প্রথম অধিকার সাধারণত মায়ের। আদালত মনে করেন, ছোট সন্তানের জন্য মায়ের সান্নিধ্য ও পরিচর্যা সর্বাধিক প্রয়োজনীয়। তাই মায়ের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত না হলে শিশু সাধারণত মায়ের কাছেই থাকে।
শিশুর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাস্টডির রায় পরিবর্তনের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়। যখন শিশুর বয়স ১০–১২ বা এর বেশি হয়, তখন আদালত তার নিজস্ব মতামতকেও বিবেচনায় নেন। শিশুটি কার কাছে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, কে তার পড়াশোনা, মানসিক স্থিতি, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য বেশি উপযোগী এসব বিষয় বিচার করে আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
বাবারা প্রায়ই প্রশ্ন করেন, তারা কি কাস্টডি পাওয়ার সুযোগ রাখেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবশ্যই রাখতে পারেন যদি প্রমাণ করা যায় মা সন্তানের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ দিতে পারছেন না। আদালত তখন বাবার কাছে কাস্টডি দিতে পারেন। তবে শুধুমাত্র আর্থিকভাবে ভালো এ কারণেই বাবা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাস্টডি পেয়ে যাবেন এমনটি নয়। আদালত এখানে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং জীবনযাপনের পরিবেশকেও গুরুত্ব দেন।
আইন অনুযায়ী, বাবা সাধারণত সন্তানদের আইনগত অভিভাবক বা গার্ডিয়ান হলেও, বাস্তবে সন্তান কার কাছে থাকবে বা কাস্টডি কার কাছে যাবে তা আদালত শিশুর কল্যাণ বিবেচনা করে নির্ধারণ করেন। ফলে বাবা আইনগত অভিভাবক হলেও সন্তান মায়ের কাছেই থাকতে পারে, যদি তার কল্যাণে সেটিই বেশি উপযোগী হয়।
সন্তানকে নিয়ে বিবাহবিচ্ছেদের পর বাবা–মায়ের টানাটানি আদালতে প্রায়ই দেখা যায়। কিন্তু আইনবিদরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সন্তান কখনোই কোনো সম্পত্তি নয় যে কে নেবে সে নিয়ে বিতর্ক বা টানাপোড়েন চলবে। সন্তানের জীবন, ভবিষ্যৎ, মানসিক নিরাপত্তা এবং সঠিক দিশা এসবের দায়িত্ব বাবা–মায়ের সম্পর্ক ভেঙে গেলেও সমানভাবে যৌথ থাকে।
বাংলাদেশের আদালতও এই বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তারা সবসময়ই নিশ্চিত করতে চেষ্টা করেন যাতে সন্তান এমন একজন অভিভাবকের কাছে থাকে, যিনি তাকে ভালোবাসা, যত্ন, শিক্ষা, নিরাপত্তা এবং মানসিক স্থিতিশীলতা দিতে সক্ষম। আদালতের লক্ষ্য থাকে সন্তান যেন একটি সুস্থ, শান্ত ও ভালোবাসাপূর্ণ পরিবেশে বড় হতে পারে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিভোর্স যতই তীব্র বা জটিল হোক না কেন, সন্তানের কল্যাণ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটিই সবার প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। কারণ সন্তান কোনো ঝগড়ার বিষয় নয় সে একটি দায়িত্ব, একটি ভবিষ্যৎ, এবং পরিবারের দুইজন মানুষের ভালোবাসা ও সুরক্ষার অধিকারী।
চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি নিয়ে রিটকারীর পেছনে ভোমা বিড়াল বসে আছে: অ্যাটর্নি জেনারেল
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বা এনসিটি পরিচালনায় বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিদেশি কোম্পানির চুক্তির বৈধতা নিয়ে রিটকারীর পেছনে ভোমা বিড়াল বসে আছে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। মঙ্গলবার ২৫ নভেম্বর রিটের শুনানি শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন যিনি এই রিট করেছেন তিনি একজন ফ্যাট ক্যাট বা ভোমা বিড়াল। তিনি ফ্যাট ক্যাটের পক্ষে এসেছেন। মানে পেছনে কোনো ভোমা বিড়াল বসে আছে টাকা পয়সা নিয়ে। তিনি আরও যোগ করেন পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য রেখে সামনে তারা জনস্বার্থের কথা শোনাচ্ছেন যেটাকে আইন পরিভাষায় বলা হয় ফ্যাট ক্যাট। তারা জনস্বার্থের বিষয়ে আসেননি বরং তারা কিছু ভোমা বিড়ালের স্বার্থ রক্ষার জন্য এসেছেন।
অনেক রাজনৈতিক নেতারাও মিছিল করছেন এবং কথা বলছেন এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন তারা তাদেরটা করতে পারেন তবে আমরা আমাদের আইনি যুক্তি তুলে ধরেছি।
এর আগে সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি পরিচালনায় বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিদেশি কোম্পানির চুক্তির বৈধতা নিয়ে জারি করা রুলের শুনানি শেষে এ বিষয়ে আগামী ৪ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে রায়ের দিন নির্ধারণ করেন।
রিট আবেদনের শুনানিতে রিটকারীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ ও ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
উল্লেখ্য গত ১৩ নভেম্বর আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছিলেন রুলের শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এনসিটি বিদেশিদের কাছে হস্তান্তর করা হবে না। এর আগে গত ৩০ জুলাই এনসিটি পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তির প্রক্রিয়া কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।
অবশেষে ঘনিয়ে এল প্লট জালিয়াতি মামলায় শেখ হাসিনা,শেখ রেহানা ও টিউলিপের রায়ের দিনক্ষণ
প্লট বরাদ্দে জালিয়াতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের করা এক মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানাসহ ১৭ জনের রায়ের জন্য ১ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকার বিশেষ জজ ৪ এর বিচারক রবিউল আলম যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এ দিন ধার্য করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায় শেখ রেহানার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি মামলা দায়ের করেন দুদক এর উপ পরিচালক সালাহউদ্দিন। তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।
এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার অতিরিক্ত সচিব অলিউল্লাহ সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন রাজউক এর সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম তন্ময় দাস মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন মেজর ইঞ্জি. সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী অব. সাবেক পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম উপ পরিচালক নায়েব আলী শরীফ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব ১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। এদের মধ্যে আসামি খুরশীদ আলম বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।
এর আগে গত ৩১ জুলাই ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৪ এর বিচারক রবিউল আলম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন। বিচার চলাকালে আলোচিত এই মামলায় মোট ৩২ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে আদালত এখন রায় ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছেন।
শুধু আওয়ামী লীগ করার কারণে যেন বিচার না হয়: আইনজীবী আমির হোসেন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কুষ্টিয়ার ছয়জনকে হত্যার মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আজ এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফসহ চারজন আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন ট্রাইব্যুনালের কাছে বিশেষ আর্জি জানিয়ে বলেন, শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ করা বা রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে যেন বিচার না হয়। মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া বিচারিক কার্যধারায় প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের পর এই বক্তব্য দেন তিনি।
বেলা ১১টা ৫ মিনিটে ট্রাইব্যুনাল দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল নিয়ে বৈঠক শুরু করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ট্রাইব্যুনালের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মঞ্জুরুল বাছিদ। প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম সূচনা বক্তব্যে মামলার ঘটনাপ্রবাহ, হত্যাকাণ্ডের বিবরণ, প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি, তদন্তের ফলাফল এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ আইনের আলোচ্য বিধানগুলো তুলে ধরেন। তিনি জানান, জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে কুষ্টিয়ায় নিরীহ ছাত্র জনতার ওপর হামলা চালিয়ে ছয়জনকে হত্যা করা হয়েছিল এবং এসব অপরাধের সুনির্দিষ্ট ও অকাট্য প্রমাণ রয়েছে।
প্রসিকিউটর আরও বলেন, আসামিরা পলাতক থাকলেও তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার করার আইনি বিধান আওয়ামী লীগ সরকারই প্রণয়ন করেছে। এ মন্তব্যের পর ট্রাইব্যুনাল আইনটির বিধান স্মরণ করিয়ে দেন এবং স্পষ্ট করেন যে এই ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক পক্ষ নিরপেক্ষতা বা প্রতিশোধের জায়গায় দাঁড়িয়ে বিচার করছে না, বরং প্রত্যেক অভিযুক্তের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করাই মূল উদ্দেশ্য।
রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি চাইলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। তিনি বলেন, প্রসিকিউশনের বক্তব্যের কয়েকটি অংশের সঙ্গে তিনি একমত হলেও তাঁর প্রধান উদ্বেগ হলো রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যেন পক্ষপাতমূলক আচরণ না হয়। উত্তরে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আল্লাহকে হাজির নাজির মেনে তারা ন্যায়বিচারের দায়িত্ব নিয়ে বসেছেন, কোনো নির্দোষ ব্যক্তি যেন বিচারের মুখোমুখি না হন সেই নিশ্চয়তা দিতে ট্রাইব্যুনাল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
এই মামলায় মোট সাক্ষীর সংখ্যা ৩৮ জন, যার মধ্যে শহীদ পরিবারের সদস্য, প্রত্যক্ষদর্শী, আহত ব্যক্তি, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী, পুলিশ, সাংবাদিক, জব্দতালিকা প্রণেতা, বিশেষজ্ঞ এবং তদন্ত কর্মকর্তারা রয়েছেন। আজ সাক্ষ্যগ্রহণ হওয়ার কথা থাকলেও প্রসিকিউশনের আবেদনের ভিত্তিতে সাক্ষ্যগ্রহণের নতুন তারিখ ৮ ডিসেম্বর ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
মাহবুবউল আলম হানিফ ছাড়াও মামলার অন্য তিন আসামি হলেন কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সদর উদ্দিন খান, জেলা সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী এবং শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা। চারজনই বর্তমানে পলাতক।
মামলার তদন্তে জানা যায়, ২০২৪ সালের জুলাই আগস্ট আন্দোলনের সময় ৫ আগস্ট পর্যন্ত কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানে ছাত্র জনতার ওপর গুলি চালানো হয়। এতে শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম, সুরুজ আলী বাবু, শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মুস্তাকিন, উসামা, ব্যবসায়ী বাবলু ফরাজী এবং চাকরিজীবী ইউসুফ শেখ নিহত হন। এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয় এবং তদন্ত কর্মকর্তারা সুনির্দিষ্ট তিনটি অভিযোগ প্রমাণসহ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে উসকানিমূলক বক্তব্য, সংগঠিত ষড়যন্ত্র এবং হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অভিযোগ।
-শরিফুল
পাঠকের মতামত:
- ৭ ডিসেম্বর শেয়ারবাজারের পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ
- ৭ ডিসেম্বর ডিএসইতে শীর্ষ ক্ষতিগ্রস্ত ১০ শেয়ারের তালিকা প্রকাশ
- ৭ ডিসেম্বর ডিএসই টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- ৮ ডিসেম্বর চার কোম্পানির শেয়ার লেনদেন ফের চালু
- ১০ ও ৫ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডে কুপন পেতে যা লাগবে
- ২০২৬ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ম্যাচ কবে ও কখন জেনে নিন সময়সূচি
- টাকা বা পেশিশক্তি নয় বরং জনগণের অংশগ্রহণই সবচেয়ে বড় শক্তি: তাসনিম জারা
- সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল
- প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর আগে জেনে নেওয়া জরুরি আজকের টাকার রেট
- আজ ৭ ডিসেম্বর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম
- আজ থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য মোবাইল দোকান বন্ধের ঘোষণা
- বড় ভাইদের প্রশ্রয়ে চট্টগ্রামে ভিন্ন নামে কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডব ও আতঙ্ক
- কুয়াশা আর ভোরের ঠান্ডা বাতাসে কাঁপছে উত্তরের জনপদ
- লা লিগা ও প্রিমিয়ার লিগের রোমাঞ্চ নিয়ে আজকের টিভি গাইড
- রোববার সকালে বের হওয়ার আগে জেনে নিন ঢাকার আজকের গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি
- পার্শ্ববর্তী দেশের সেবাদাস হয়ে ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন শেখ হাসিনা: সালাহউদ্দিন
- আজকের রাশিফল: ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ জেনে নিন আপনার দিনটি কেমন কাটবে
- আজকের নামাজের সময়সূচি ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ রবিবার
- সিন্ডিকেটের কারসাজি ভাঙতে রোববার থেকে আবারও ভারত থেকে পেঁয়াজ আসার সুযোগ
- আজ থেকে জুলাই আন্দোলনে নিহত ১৮২ মরদেহ উত্তোলনের কাজ শুরু
- ভারতে নাইটক্লাবে ভয়াবহ আগুন
- শীতের অনুভূতি বাড়ার দিনে কেমন থাকবে আজকের ঢাকার আবহাওয়া
- নির্বাচন নিয়ে বাইরে পজিটিভ দেখালেও ভেতরে ভেতরে চলছে নেগেটিভ তৎপরতা
- ওষুধ ছাড়াই বুকজ্বালা কমাতে পারে রান্নাঘরের যে ৪টি সাধারণ পানীয়
- প্রিয় খাবারই যখন কিডনির শত্রু, কিডনি সুস্থ রাখতে পাত থেকে বাদ দিন এই ৫টি খাবার
- ২০২৫ সালের জন্য গুগলের ফ্রি অনলাইন কোর্স, ক্যারিয়ার গড়ার হাতছানি
- শরীয়তপুর ১: বিএনপির কোন্দল বনাম জামায়াতের চ্যালেঞ্জ
- নির্বাচনে ডিসটার্ব করতে আসলে লেজ গুটিয়ে পালাতে হবে ভারতকে: পাটওয়ারী
- প্রস্তুতি থাকলেও তফসিল ঘোষণার তারিখ নিয়ে এখনো অন্ধকারে কমিশন
- শেখ হাসিনা আসন ও টাকা অফার করলেও আপোষ করিনি: নুরুল হক
- যথাসময়ে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান: রিজভী
- লন্ডন বা দিল্লি বসে আর কোন রাজনীতি চলবে না: সাদিক কায়েম
- বাঁকাপথে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখলে সেই সূর্য আর উঠবে না: জামায়াত আমির
- ভারতে শেখ হাসিনা কতদিন থাকবেন তা তাঁকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে: জয়শঙ্কর
- খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় বিদেশ নিতে দেরি হচ্ছে: ডা. জাহিদ হোসেন
- ডিএনএ আসলে কীভাবে কাজ করে, সহজ ব্যাখ্যা জানুন
- মূল বোর্ডে জমজমাট লেনদেন, বিনিয়োগকারীর আগ্রহ বৃদ্ধি
- দামি উপহার নয় বরং ছোট ছোট যত্নই যেভাবে গভীর করে ভালোবাসার সম্পর্ক
- ২১০০ সালের মধ্যে ২০ কোটি মানুষ ঘরহারা হতে পারে, জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ চিত্র
- প্রবৃদ্ধির সুফল গরিবের ঘরে পৌঁছাচ্ছে না বরং ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে
- ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ওপেনিংয়ে ধুরন্ধর নিয়ে রণবীর সিংয়ের নতুন রেকর্ড
- বাগদানের তিন মাস পর ঘরোয়া আয়োজনে সম্পন্ন হলো হান্নান ও জেদনীর বিয়ে
- নূর হোসেন ও ডা. মিলনের আত্মত্যাগের পর যেভাবে এসেছিল ৯০ এর বিজয়
- চিকিৎসার হাল ধরতে এভারকেয়ারে ডা. জোবাইদা
- আজকের নামাজের সময়সূচি ৬ ডিসেম্বর ২০২৫ শনিবার
- আজ স্বর্ণ কিনতে হলে ভরিপ্রতি খরচ কত হবে জানাল বাজুস
- আজকের রাশিফল: ৬ ডিসেম্বর ২০২৫ জেনে নিন আপনার দিনটি কেমন কাটবে
- শনিবার সকালে বের হওয়ার আগে জেনে নিন ঢাকার আজকের কর্মসূচি ও ট্রাফিক আপডেট
- স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই থেকে মাইনাস টু ফর্মুলা ভেস্তে দেওয়া এক অদম্য নেত্রীর গল্প
- শান্তি আলোচনা বিফলের পরই পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তে তুমুল গোলাগুলির খবর
- ফিউচার স্টার বনাম ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা, দেখুন সূচি
- তারেক রহমান নির্বাচন করতে পারবেন কি না জানালেন ইসি সচিব
- বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সংকটাপন্ন অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করল বিশ্ব গণমাধ্যম
- খালেদা জিয়া চিকিৎসা নিতে পারছেন যা ভালো লক্ষণ: ডা. জাহিদ
- আজকের রাশিফল: ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ জেনে নিন আপনার দিনটি কেমন কাটবে
- এবার টাকার ঝনঝনানি আর কৌশলের লড়াইয়ে বিপিএল নিলাম
- এসএসএফ নিরাপত্তা পেলেন খালেদা জিয়া: কী সুবিধা থাকছে
- চট্টগ্রামে দাপুটে জয়ে আয়ারল্যান্ড বধ
- পরীক্ষা সময়মতোই: অনিয়মে কঠোর ব্যবস্থা দেবে মাউশি
- আজকের নামাজের সময়সূচি: ৩ ডিসেম্বর ২০২৫
- একদিনের ব্যবধানে স্বর্ণের দামে বড় পতন
- আজকের রাশিফল: ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ জেনে নিন আপনার দিনটি কেমন কাটবে
- ব্যথানাশক নিয়েই খেলতে নেমে হ্যাটট্রিক করলেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার
- আজকের রাশিফল: ৬ ডিসেম্বর ২০২৫ জেনে নিন আপনার দিনটি কেমন কাটবে
- শরীরের নীরব শত্রু থাইরয়েড ক্যানসার চেনার ৫টি প্রাথমিক লক্ষণ








