স্টারলিংক চালু, সরকারের দ্রুত সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কি?

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২১ ১৭:২৯:৩৮
স্টারলিংক চালু, সরকারের দ্রুত সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কি?

সত্য নিউজ: যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করেছে। দ্রুত গতিতে দেশের আইনি কাঠামো প্রস্তুত করে লাইসেন্স প্রদান এবং ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টিতে অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদের সফলতা হিসেবে দেখছে এই উদ্যোগকে।

সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এই সেবাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আগ্রহ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হয়েছে, যা দেশের ইন্টারনেট অবকাঠামোর মান উন্নয়নে সম্ভাব্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। তবে এই দ্রুত প্রসারে সরকারি পক্ষের ‘তাড়াহুড়া’ এবং ‘অতি প্রচার’ নিয়ে বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে স্টারলিংকের জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ ও গ্লোবাল চাপ

প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের আইসিটি বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এই তাড়াহুড়াকে দেশের ইন্টারনেট সমস্যার সমাধানে ‘জনস্বার্থ’ রক্ষা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্রুতগতির, মানসম্পন্ন ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে স্টারলিংক একটি কার্যকর বিকল্প।”

আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন প্রশাসন বিভিন্ন দেশে স্টারলিংকের ব্যবসা সম্প্রসারণে চাপ প্রয়োগ করেছে। পুলিৎজার বিজয়ী ‘প্রোপাবলিকা’ সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশেও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা স্টারলিংকের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।

বিশেষ করে বাইডেন প্রশাসনের আমলে শুরু হওয়া উদ্যোগ ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে সফলতার মুখ দেখেছে, যেখানে মাস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের যোগাযোগ স্থাপনের জন্য কাজ করা হয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের সক্রিয় উদ্যোগ ও দ্রুত গতির সিদ্ধান্ত গ্রহণ

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস দুবাই থেকে ইলন মাস্কের সঙ্গে আলোচনায় বসেন, যার ফলশ্রুতিতে মাত্র ৯০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশে স্টারলিংকের বাণিজ্যিক সেবা চালুর পথ সুগম হয়।

অধিকারিক সূত্রে জানা যায়, বিটিআরসি দ্রুত ‘নন-জিওস্টেশনারি অরবিট স্যাটেলাইট অপারেটর’ লাইসেন্সিং নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং স্টারলিংকের আবেদন অনুমোদন দেয়। এর পর মাত্র এক মাসের মধ্যেই সেবা চালু হওয়ার ঘোষণা আসে।

স্টারলিংকের সুবিধা ও সরকারের প্রত্যাশা

সরকার মনে করছে, স্টারলিংক দেশের নিকৃষ্ট মানের ইন্টারনেটের বিকল্প হবে, যা ফ্রিল্যান্সার, তরুণ উদ্যোক্তা, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীসহ অনেক ক্ষেত্রেই নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। বিশেষ সহকারী তৈয়্যব বলেন, “স্টারলিংকের সেবা গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের জন্য মোবাইল টাওয়ারের সমতুল্য ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান করবে।”

সরকারের পক্ষে এটি একটি ‘রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি’ এবং বিদেশি বিনিয়োগবান্ধব দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ় করার অন্যতম হাতিয়ার।

প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও বাজারের প্রতিক্রিয়া

দেশীয় ইন্টারনেট সেবাদাতারা (আইএসপি) স্টারলিংকের আগমনে গ্রাহক হ্রাসের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। তবে সরকার আইএসপি’দের সতর্ক করে বলেছে, তারা এখনো নিম্নগতির সেবা দিয়ে ‘ব্রডব্যান্ড’ দাবি করতে পারবে না এবং মানসম্মত সেবা দিতে বাধ্য থাকবে।

স্টারলিংকের মোবিলিটি অপশন না রাখায় সরকার স্থানীয় আইএসপি’দের একটি সুযোগ রেখেছে, তবে তাদের মান উন্নয়নে চাপ থাকবে।

নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা

সরকার স্টারলিংকের লাইসেন্স শর্তে স্থানীয় ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) ব্যবহার নিশ্চিত করেছে, যার মাধ্যমে প্রয়োজনে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বর্তমানে ইন্টারনেট শাটডাউন বন্ধ রাখতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সংশ্লিষ্ট আইন পরিবর্তনের পথে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও বিনিয়োগ

স্টারলিংকের বিনিয়োগের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না করলেও, ইন্দোনেশিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্যাটেলাইট ও ডিভাইসের সংখ্যা বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশে ইন্টারনেট অবকাঠামোতে এই নতুন সংযোজন দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হবে।

বাংলাদেশে স্টারলিংক সেবা চালুর দ্রুত প্রক্রিয়া, কূটনৈতিক উদ্যোগ এবং সরকারের তাড়াহুড়া মূলত দেশের ইন্টারনেট মান উন্নয়ন ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গঠনের একটি অংশ। যদিও স্থানীয় সেবা প্রদানকারীদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে, স্টারলিংকের আগমন ডিজিটাল বৈষম্য কমাতে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকারের তৎপরতা ও আন্তর্জাতিক চাপ এই সেবার সফল বাস্তবায়নের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত