কক্সবাজার থেকে এভারেস্ট: শাকিলের জয়যাত্রা

পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশের গর্ব, পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ৪৬ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন। তার এই প্রত্যাবর্তনে কেবল পর্বতারোহণ মহলেই নয়, দেশের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে তৈরি হয়েছে আনন্দের উচ্ছ্বাস।

শাকিল কেবল এভারেস্ট জয় করেননি, তিনি সৃষ্টি করেছেন ইতিহাস। ‘সি টু সামিট’ নামক অভিযানে তিনি কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্রসৈকত থেকে পদযাত্রা শুরু করে প্রায় ১,৩৭২ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে জয় করেছেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট (২৯,০৩১ ফুট)। মাত্র ৯০ দিনের এই অভিযাত্রায় তিনি গড়েছেন নতুন এক বিশ্বরেকর্ড সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পদযাত্রা করে সবচেয়ে কম সময়ে এবং সবচেয়ে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে এভারেস্ট জয়ের রেকর্ড।

শাকিল সপ্তম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করলেও, তার এই অর্জন ব্যতিক্রম। ১৯৯০ সালে অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি পর্বতারোহী টিম ম্যাকার্টনি-স্নেপ ভারতের গঙ্গাসাগর থেকে ৯৬ দিনে প্রায় ১,২০০ কিলোমিটার অতিক্রম করে এভারেস্ট জয় করেন। শাকিল মাত্র ৩১ বছর বয়সে আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সেই রেকর্ড ভেঙেছেন সাত দিন আগে এবং প্রায় ১৭০ কিলোমিটার বেশি হেঁটে।

এই ব্যতিক্রমী অভিযানের আয়োজক ছিল বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব। টাইটেল স্পন্সর ছিল দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ। এছাড়া সহযোগিতায় ছিল জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (UNDP), মিস্টার নুডলস, মাকলু-ই-ট্রেডার্স নেপাল, সিস্টেমা টুথব্রাশ, জাগো নিউজ এবং জাগো এফএম।

২৫ ফেব্রুয়ারি শাকিল যখন ইনানী সৈকত থেকে যাত্রা শুরু করেন, তখন তার চোখে ছিল একটাই লক্ষ্য সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে স্বপ্নের শিখরে পৌঁছানো। বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের পার্বত্য ও সমতল অঞ্চল অতিক্রম করে অবশেষে ১৯ মে তিনি পৃথিবীর ছাদে পা রাখেন।

গাজীপুরের কালিয়াকৈরের সন্তান শাকিল এর আগেও পর্বতারোহণ জগতে নিজের প্রতিভা ও নিষ্ঠার সাক্ষর রেখেছেন। ২০১৩ সালে কলকাতা থেকে ঢাকায় ১১ দিনের পদযাত্রা দিয়ে তার পর্বতারোহণের সূচনা। ২০১৫ সালে কেয়াজো-রি (২০,২৯০ ফুট) জয় করেন এম এ মুহিতের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশি দলের সদস্য হিসেবে। এরপর ২০১৭ সালে লারকে পিক অভিযানে অংশগ্রহণ, ২০১৮ সালে ভারতের নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেইনিয়ারিং থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ, ‘দ্রৌপদী-কা-ডান্ডা-২’ শৃঙ্গ জয় এবং ২০১৯ সালে হিমলুং শৃঙ্গ জয় করে তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সেখানে পৌঁছান।

ইকরামুল হাসান শাকিলের এভারেস্ট জয় কেবল একটি ক্রীড়াবীরের ব্যক্তিগত সাফল্য নয়; এটি এক অনুপ্রেরণার গল্প, একটি জাতির সম্ভাবনার প্রতীক। তার এই দুঃসাহসিক অভিযাত্রা নতুন প্রজন্মের মাঝে সাহস, আত্মবিশ্বাস ও স্বপ্ন দেখার অনুপ্রেরণা জোগাবে নিঃসন্দেহে।

জাতীয় পর্যায়ে তার এই অসামান্য অর্জনকে যথাযথভাবে মূল্যায়নের জন্য ক্রীড়া ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের প্রশংসা এবং আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির দাবি উঠেছে সর্বত্র। দেশের জন্য এই অবিস্মরণীয় গৌরব এনে দেওয়া শাকিলকে অভিনন্দন জানাচ্ছে গোটা জাতি।

- অনন্যা, নিজস্ব প্রতিবেদক