মতামত

নতুন রাজনৈতিক সমীকরণে কারা টিকে থাকবে, কারা হারিয়ে যাবে?

আরিফুল ইসলাম

আরিফুল ইসলাম

রাজনৈতিক বিশ্লেষক

২০২৫ মে ২৪ ১৬:১৫:৪৪
নতুন রাজনৈতিক সমীকরণে কারা টিকে থাকবে, কারা হারিয়ে যাবে?

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুটি দল—আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সংখ্যাগত ভোটে এবং জনসমর্থনের দিক থেকেও যুগপৎভাবে তাদের প্রভাব অনস্বীকার্য। তবে ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক বাস্তবতায় এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন এসেছে।

গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কার্যত নিষিদ্ধ হয়ে পড়েছে। নেতাকর্মীরা দিশেহারা, অনেকেই আত্মগোপনে; প্রথম সারির অনেক নেতা দেশত্যাগ করেছেন বা নিষ্ক্রিয়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। মাঠপর্যায়ে দলটির অস্তিত্ব এখন প্রায় অনুপস্থিত। বাস্তবতা বলছে, এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ গণনার বাইরের একটি শক্তি।

বিপরীতে, বিএনপি অভ্যুত্থানের পরপরই গোটা শক্তি নিয়ে রাজপথে সক্রিয় হয়েছে। দলটির নেতাকর্মীরা আত্মবিশ্বাসে ভাসছে, গণমানসে প্রত্যাশাও জোরদার হচ্ছে—যদি কোনও অপ্রত্যাশিত ‘জাদুকরী ঘটনা’ না ঘটে, তবে অনেকেই মনে করছেন সরকার গঠনের সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি বিএনপির। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্ব এখন অনেক পরিণত ও কৌশলী; আর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের মধ্যে গভীর আস্থার জায়গা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

গত সপ্তাহের ঘটনাপ্রবাহ থেকে দেখা যায়, বিএনপি সামান্য শক্তি নিয়েই ঢাকা দক্ষিন সিটিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে। এই সাফল্য দলীয় সমর্থকদের করেছে আরও উজ্জীবিত। ইশরাক হোসেনের আদালতে জয়লাভের পর সরকারের একাধিক উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনের গতি বেড়েছে।

অন্যদিকে, একই দিন সরকারঘনিষ্ঠ সদ্য-গঠিত রাজনৈতিক সংগঠন এনসিপি নির্বাচন কমিশন ঘেরাওয়ের মাধ্যমে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে গিয়ে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়াত্বের ইঙ্গিত দিয়েছে। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, জনসমর্থনবিহীন এনসিপির এই 'ফিডিং-প্রজেক্ট' বাস্তবায়নের পেছনের কারিগররাও হয়তো এখন ব্যাকফুটে। এনসিপির অকাল পচনের অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে দলটির এক কর্মসূচিতে যমুনার সামনে একাত্তরের স্মৃতিকে ব্যঙ্গ করা—যা তাদের অন্যতম রাজনৈতিক সহযোগী জাশির সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরিয়েছে। জাশি এখন কর্মী সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়েছে, ফলে এনসিপি কার্যত অঙ্কুরেই বিনষ্ট।

সাম্প্রতিক আরেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, উত্তর বঙ্গের প্রভাবশালী প্রশাসনিক কর্মকর্তা তথা "সর্দারজি"র মন্তব্য। তিনি নির্বাচন বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থেকেও এক ধরনের সতর্ক বার্তা দিয়েছেন—যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, তার বক্তব্য প্রাসঙ্গিক ও জরুরি ছিল; কারণ এতে রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নয় বরং গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি—নির্বাচনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

৫ আগস্টের পর অনেকেই নিজেদের মতো করে রাজনৈতিক দোকান খুলে বসেছেন। তবে এখনো সরকারপক্ষ ‘বাজি ধরার মতো’ কোনও সংগঠন খুঁজে পায়নি—এনসিপি ছাড়া আর কেউ সমানভাবে সক্রিয় নয়। এমন প্রেক্ষাপটে এনসিপির পক্ষ থেকেও কিছু উপদেষ্টার পদত্যাগ চাওয়া হয়েছে, যা বিএনপির ছাত্র উপদেষ্টাদের পদত্যাগ দাবির পাল্টা কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে কোন পক্ষই এখনো প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেনি। বরং দ্বৈত নাগরিকত্বধারী কিংবা অতিউৎসাহী উপদেষ্টাদের নিয়েই সমালোচনা চলছে।

রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে গত সপ্তাহের শেষভাগে বিএনপি শুধুমাত্র ঢাকা উত্তরে চাপ বাড়াতেই তরুণদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। অথচ বিএনপি চাচ্ছে একটি সুস্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী রোডম্যাপ—যা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাও প্রকাশ্যে সমর্থন করছেন।

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাংশ জোর প্রচারণা চালাচ্ছে—ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচনবিহীন ক্ষমতায় আনার পক্ষে। এই ‘ভোটবিহীন সংস্কৃতি’ মানুষের মধ্যে যে কতটা প্রোথিত হয়েছে, তা দেখেই হয়তো প্রধান উপদেষ্টা কিছুটা বিব্রত। সেই বিব্রতবোধ থেকেই হয়তো এনসিপি নেতাকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ডেকে সাবধান করেছেন—সংযত না হলে পদত্যাগ করবেন। আর সেই অনুশাসনকেই হয়তো আবেগী এনসিপি নেতা জনসমক্ষে ব্যাখ্যা করেছেন ‘পদত্যাগের ইচ্ছা’ হিসেবে।

বাংলাদেশে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের সংস্কৃতি নেই বললেই চলে। হয়তো ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সেই সংস্কৃতি তৈরি করতেই মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা নিজেই পদক্ষেপ নিতে চাইছেন। এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক ঐতিহ্যের অংশ হয়ে উঠতে পারে।

সবশেষে বলা যায়—চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রধান উপদেষ্টার হাতে। দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে তিনিই হয়তো নিবেন ‘জাদুকরী সিদ্ধান্ত’।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত