বৈদেশিক রিজার্ভে উত্থান: স্বস্তির বার্তা নাকি ভ্রান্ত আশা?

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ০৫ ১১:২৯:৫০
বৈদেশিক রিজার্ভে উত্থান: স্বস্তির বার্তা নাকি ভ্রান্ত আশা?

সত্য নিউজ:২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বাংলাদেশের প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহ আশাব্যঞ্জকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৭৫ কোটি মার্কিন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাসিক রেমিট্যান্স। গত মার্চেই সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলার এসেছিল।

এপ্রিলে শুধুমাত্র ৩০ তারিখেই দেশে এসেছে ১৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এই মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৩৪.৬ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২,৪৫৪ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের (১,৯১১ কোটি ডলার) তুলনায় ২৮.৩ শতাংশ বেশি।

রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির পেছনের কারণ

অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহের পেছনে কয়েকটি প্রভাবশালী কারণ চিহ্নিত করেছেন—

  1. সরকারি প্রণোদনা ও ডলার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা: সরকার বর্তমানে রেমিট্যান্সে ২.৫% হারে প্রণোদনা দিয়ে আসছে, যা প্রবাসীদের বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত করছে। একই সঙ্গে, প্রতি ডলারে ১২২ টাকার স্থিতিশীল বিনিময় হার নিশ্চিত করায় ব্যাংকিং চ্যানেল এখন বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

  2. হুন্ডির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ: অবৈধ পথে অর্থ প্রেরণ বা 'হুন্ডি' বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয়তা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিং ব্যবস্থা কার্যকরভাবে কাজ করেছে। এতে প্রবাসীরা অধিক সংখ্যায় বৈধ চ্যানেল ব্যবহার করছেন।

  3. ব্যাংকিং ব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তর ও সুবিধা: ব্যাংক ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসগুলোর ডিজিটালাইজেশন এবং প্রবাসী বান্ধব সেবা (যেমন মোবাইল অ্যাপ, অনলাইন রেমিট্যান্স প্ল্যাটফর্ম) প্রেরকদের জন্য অর্থ পাঠানোকে সহজ করে তুলেছে।

  4. ঈদ-পরবর্তীও রেমিট্যান্স চাঙ্গা: সাধারণত ঈদ-উল-ফিতরের পূর্বে রেমিট্যান্সে বড় উল্লম্ফন দেখা যায়। কিন্তু এবার ঈদের পরেও রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহত থাকায় বিশ্লেষকরা এটিকে একটি টেকসই ইতিবাচক প্রবণতা হিসেবে দেখছেন।

রেমিট্যান্স প্রবাহ ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ

২০২২ সালে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪,৮০৬ কোটি ডলার। কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আমদানি চাপে পড়ে তা ২০২৪ সালে কমে দাঁড়ায় মাত্র ২,০৩৯ কোটি ডলারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রির পরিবর্তে বর্তমানে বাজার থেকে ক্রয়ের কৌশল নিয়েছে, যার ফলে রিজার্ভ কিছুটা পুনরুদ্ধারের পথ পেয়েছে।

রেমিট্যান্স প্রবাহের এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। এটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সূচকে দেশের অবস্থানকে আরও মজবুত করবে এবং বিদেশি ঋণ বা আমদানি ব্যয়ের চাপ সামাল দিতে সাহায্য করবে।

প্রভাব ও সম্ভাবনা

অর্থনীতিবিদদের মতে, রেমিট্যান্স প্রবাহের এই ইতিবাচক ধারা সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে। এটি দেশের চলতি হিসাবে ঘাটতি কমাতে, বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ও মুদ্রার মান রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তবে তারা সতর্ক করছেন যে, এই প্রবাহ যাতে ক্ষণস্থায়ী না হয়, তার জন্য রেমিট্যান্স নির্ভরশীলতা কমিয়ে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং প্রবাসী শ্রমবাজার বৈচিত্র্যকরণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে নতুন শ্রমবাজার খোঁজা, দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রবাসী সুরক্ষা নিশ্চিত করাও জরুরি।

বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বর্তমানে একটি শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল উৎস হিসেবে উদ্ভাসিত হয়েছে। সরকারের নীতি সহায়তা, প্রবাসীদের আস্থা ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার আধুনিকায়নের সমন্বয়ে এই ধারা যদি বজায় থাকে, তবে অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি হবে স্বস্তির এক দীর্ঘস্থায়ী বার্তা।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত