এবারের হজে কি ধরনের চমক রাখছে সৌদি আরব

চরম তাপদাহের মধ্যেই ২০২৫ সালের হজে অংশ নিতে ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সৌদি আরবে পৌঁছেছেন এক মিলিয়নের বেশি হজযাত্রী। এবারের হজে গরম থেকে হজযাত্রীদের সুরক্ষা দিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), উন্নত ছায়াযুক্ত পরিবেশ এবং আধুনিক কুলিং সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমে হজ ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা যুক্ত করছে সৌদি আরব।

হজবিষয়ক মন্ত্রী তৌফিক আল-রাবিয়াহ এক সাক্ষাৎকারে জানান, গরম থেকে হজযাত্রীদের রক্ষা করাই ২০২৫ সালের হজ ব্যবস্থাপনার প্রধান অগ্রাধিকার। ২০২৪ সালের হজে ৫১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত ১,৩০০ হজযাত্রী, যাদের অধিকাংশেরই হজের অনুমতি ছিল না বলে জানা যায়। এবার এমন ট্র্যাজেডি এড়াতে নেয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা।

এআইভিত্তিক পর্যবেক্ষণ: হজ চলাকালে মক্কা ও মিনায় মানুষের চলাচল, ভিড় ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)। ড্রোন ফুটেজ ও ভিডিও বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

কুলিং সিস্টেম: ৪০০টিরও বেশি কুলিং ইউনিট বসানো হয়েছে, যা তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করবে।

ছায়ার ব্যবস্থা: অতিরিক্ত ৫০,০০০ বর্গমিটার এলাকা ছায়াযুক্ত করা হয়েছে।

সড়কের উন্নয়ন: মসজিদুল হারামের চারপাশে রাস্তা ঠান্ডা রাখতে বিশেষ ধরনের আস্তরণ ব্যবহার করা হচ্ছে।

বিশাল প্রস্তুতি:

• ৪০টির বেশি সরকারি সংস্থা যুক্ত হয়েছে হজ ব্যবস্থাপনায়।
• ২.৫ লাখ কর্মকর্তা ও কর্মচারী হজযাত্রীদের সেবা ও নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন।
• হাজার হাজার চিকিৎসাকর্মী মোতায়েন থাকবেন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে।

হজে অংশগ্রহণের জন্য অনুমতি ছাড়া কেউ যেন প্রবেশ না করতে পারে, সেজন্য চালানো হচ্ছে কঠোর অভিযান। মন্ত্রী জানান, অনুমতি ছাড়া হজ পালন শুধু ব্যক্তির জন্যই নয়, অন্যদের জন্যও বিপজ্জনক হতে পারে। ২০২৪ সালের হজে মৃত্যুবরণ করা ৮০ শতাংশ হজযাত্রীর অনুমতি ছিল না। তাই এবার কঠোর নজরদারি চালানো হচ্ছে এবং জরিমানা ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

অনুমতি ছাড়া হজ করলে:

• গ্রেপ্তার
• নির্বাসন
• ১০ বছরের সৌদি আরব সফরের নিষেধাজ্ঞা

২০২৫ সালের হজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে ৪ জুন, চলবে কমপক্ষে চার দিন। হজ ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল স্তম্ভের অন্যতম, যা শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রতিটি মুসলমানের জন্য জীবনে একবার পালন করা ফরজ। হজ পালন একটি পবিত্র দায়িত্ব—এটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সৌদি সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।

চরম গরম ও অতিরিক্ত ভিড়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এআই প্রযুক্তি, উন্নত অবকাঠামো, ও মানবিক ব্যবস্থাপনার সমন্বয়ে ২০২৫ সালের হজকে নিরাপদ ও আধ্যাত্মিকভাবে সফল করার লক্ষ্যে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি চলছে। হজযাত্রীদের জন্য এটি হবে এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা, যেখানে প্রযুক্তি ও ধর্মীয় অনুশাসন একসঙ্গে কাজ করবে।