রেমিটেন্সে রেকর্ড, শ্রমবাজারে ধস! সমস্যা কোথায়?

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২২ ০৮:৪৮:০২
রেমিটেন্সে রেকর্ড, শ্রমবাজারে ধস! সমস্যা কোথায়?

বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখা দিলেও, অভিবাসী কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। দেশের বৈদেশিক আয় গত এক বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও, একই সময়ের মধ্যে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর হার প্রায় ২২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এই পরস্পরবিরোধী চিত্র অভিবাসন খাতে একটি গভীর কাঠামোগত সমস্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

রেমিট্যান্সে রেকর্ড, কিন্তু বাজার সংকুচিত

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রবাসী আয় দাঁড়িয়েছে ২,১৭৮ কোটি ডলারে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭.৬০% বেশি। মার্চ মাসে ৩২৯ কোটি ডলার পাঠিয়ে প্রবাসীরা এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সের রেকর্ডও গড়েছে।

কিন্তু এই সাফল্যের আড়ালে রয়েছে একটি অস্বস্তিকর বাস্তবতা বিদেশে কর্মী পাঠানোর সংখ্যা কমছে। ২০২৩ সালে ১৩ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে গিয়েছিলেন, অথচ ২০২৪ সালে তা নেমে এসেছে মাত্র ১০ লাখ ১১ হাজারে। এক বছরের ব্যবধানে প্রায় তিন লাখ কর্মী কম পাঠানো হয়েছে, অর্থাৎ ২২ শতাংশ হ্রাস।

শ্রমবাজার সংকোচনের বাস্তবতা

বাংলাদেশের বিভিন্ন কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার কার্যত বন্ধ বা সীমিত হয়ে পড়েছে। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার অঘোষিতভাবে বন্ধ রয়েছে। মালয়েশিয়া, যা ২০২৩ সালে রেকর্ড সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী নিয়েছিল, সেখানে এজেন্সির সিন্ডিকেট ও অতিরিক্ত জনবল পাঠানোর অভিযোগে ২০২৪ সালের ৩১ মে থেকে ভিসা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ওমান ২০২৩ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশি কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয়, ফলে ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত মাত্র ২৪ জন কর্মী সেখানে যেতে পেরেছেন। ইতালির চিত্রও হতাশাজনক, ২০২৩ সালে যেখানে ১৬,৮৭৯ জন গিয়েছিলেন, ২০২৪ সালে তা কমে মাত্র ১,১৬৪ জনে নেমে এসেছে। দক্ষ কর্মী চাহিদা থাকা সত্ত্বেও দক্ষিণ কোরিয়ায় ১০ হাজার কোটা থাকলেও ২০২৪ সালে গিয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ৩৮ জন।

এছাড়া বাহরাইন, লিবিয়া, সুদান, মিশর, মরিশাস ও ব্রুনাইয়ের মতো এক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারগুলোও বর্তমানে কার্যত বন্ধ হয়ে রয়েছে। এই বাস্তবতা দেশের জনশক্তি রপ্তানি খাতে বড় ধরনের সংকেত দিচ্ছে এবং এটি ভবিষ্যতের কৌশল নির্ধারণে গভীর মূল্যায়নের দাবি রাখে।দালাল সিন্ডিকেট ও অনৈতিক অভিবাসন চর্চার ছায়া।

বিশেষজ্ঞ ও অভিবাসনকর্মীদের মতে, এই সংকোচনের অন্যতম কারণ হলো বাংলাদেশের অভিবাসন ব্যবস্থার অনৈতিক চর্চা। মালয়েশিয়া, ওমান, ইতালি, কুয়েতসহ অনেক দেশ ফ্রি ভিসার নামে অতিরিক্ত লোক পাঠানো এবং ভুয়া আবেদন জমা দেওয়ার কারণে ক্ষুব্ধ। ফলে একের পর এক দেশ বাজার বন্ধ করে দিচ্ছে।

শাকিরুল ইসলাম, সভাপতি, ওকাপ: “ইতালিতে নাম-পরিচয়হীন কোম্পানিতে ভুয়া আবেদন পাঠানোয় ১ লাখ ১০ হাজার লোক যেতে পারেনি। এমন পরিস্থিতি মালয়েশিয়া, ওমানেও ঘটেছে।”

দক্ষতার ঘাটতি- আন্তর্জাতিক মানে প্রশিক্ষণ নয়

শুধু দুর্নীতিই নয়, অভিবাসী শ্রমিকদের দক্ষতার অভাবও প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা না থাকায় বাংলাদেশি কর্মীরা কাজ পাচ্ছেন না।

তাসনিম সিদ্দিকী, রামরু: “টিটিসিগুলোর প্রশিক্ষণ আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে ছয় মাসের নিচে প্রশিক্ষণ গ্রহণযোগ্য না হলেও আমাদের এখানে তিন মাসের কোর্স চলে।”

সৌদি আরব ও কাতার- সংখ্যা বাড়লেও সংকটও বেড়েছে

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবে ২০২৪ সালে প্রায় ৬ লাখ ৩০ হাজার শ্রমিক পাঠানো হয়েছে, কিন্তু কাজের অভাব ও বৈধতার জটিলতায় বহু শ্রমিক বেকার অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।

একই পরিস্থিতি কাতারেও ৭৪ হাজার ৪২২ জন গিয়েছেন ২০২৪ সালে, কিন্তু বহু শ্রমিক কাজ না পেয়ে দেশে ফিরে এসেছেন।

নতুন বাজারে অগ্রগতি নেই

রাশিয়া, রোমানিয়া, পোল্যান্ড, লাওস, তুরস্ক, নর্থ সাইপ্রাসের মতো নতুন সম্ভাব্য বাজারে বাংলাদেশ সরকার উদ্যোগী হলেও দৃশ্যমান অগ্রগতি খুবই সীমিত। অনেক দেশে এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) না থাকার কারণে শ্রমিক পাঠানো জটিল হয়ে পড়েছে।

সরকারি অবস্থান ও প্রতিশ্রুতি

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবদুল হাই স্বীকার করেছেন নীতিগত দুর্বলতার কথা। তিনি জানিয়েছেন- “আমাদের পলিসিগত দুর্বলতা রয়েছে। অনেক দেশের সঙ্গেই এমওইউ নেই। এগুলো সমাধান করতে পারলে বাজার বড় হবে।” তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি অভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সরাসরি শ্রমিক আবেদন প্রক্রিয়া থাকলে স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করা যেত।

সমাধান কী হতে পারে?

বাংলাদেশের শ্রমবাজার সংকোচনের বর্তমান বাস্তবতা থেকে উত্তরণের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমাধান সামনে এসেছে। প্রথমত, দক্ষতা উন্নয়নের দিকটি জোরদার করা জরুরি। দেশের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোকে (TTC) আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে। বর্তমানে প্রচলিত তিন মাসের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের পরিবর্তে বাস্তবভিত্তিক ও গভীর ছয় মাসব্যাপী কোর্স চালু করা প্রয়োজন, যাতে শ্রমিকরা বৈশ্বিক চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, অভিবাসন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। দালাল সিন্ডিকেট ও ভুয়া কোম্পানির মাধ্যমে অতিরিক্ত বা অযোগ্য জনবল পাঠানো বন্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন অপরিহার্য। এটি শ্রমবাজারে বাংলাদেশের সুনাম পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।

তৃতীয়ত, নতুন শ্রমবাজার খোঁজা ও কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। রাশিয়া, চীন, তুরস্ক, লাওস, নর্থ সাইপ্রাসের মতো দেশে এমওইউ স্বাক্ষর করে শ্রমিক পাঠানোর পথ সুগম করা যেতে পারে। একই সঙ্গে এসব দেশের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা উন্নয়নেও জোর দিতে হবে।

চতুর্থত, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে। একটি কেন্দ্রীয় ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু করলে নিয়োগপ্রাপ্তি, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা যাচাই, ভিসা ও বিদেশ যাত্রাসহ পুরো অভিবাসন প্রক্রিয়াটি ট্র্যাকযোগ্য ও স্বচ্ছ হবে। এই আধুনিকীকরণ অভিবাসী শ্রমিকদের হয়রানি কমাবে এবং বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নত করবে।

রেমিট্যান্সের প্রবাহ যে গতিতে বাড়ছে, তা অর্থনীতির জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও, শ্রমবাজার সংকোচন ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ সংকেত। স্বল্পমেয়াদি অর্থনৈতিক লাভের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বিনিয়োগ, দক্ষতা উন্নয়ন, রাষ্ট্রীয় জবাবদিহিতা এবং অভিবাসন ব্যবস্থার মৌলিক সংস্কার এখন সময়ের দাবি।

বাংলাদেশকে প্রবাসী আয়ের উপর নির্ভরশীল অর্থনীতি থেকে দক্ষ মানবসম্পদের উপর ভিত্তি করে টেকসই অভিবাসন অর্থনীতির দিকে যাত্রা শুরু করতে হবে এখনই।


বাংলাদেশ জলসীমায় অনুপ্রবেশ: বঙ্গোপসাগর থেকে ভারতীয় ১৪ জেলে আটক

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৯ ১১:০৪:৩৪
বাংলাদেশ জলসীমায় অনুপ্রবেশ: বঙ্গোপসাগর থেকে ভারতীয় ১৪ জেলে আটক
ছবিঃ সংগৃহীত

বঙ্গোপসাগরে অবৈধভাবে মাছ ধরার অভিযোগে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ১৪ জন ভারতীয় জেলেকে আটক করেছে। একই সঙ্গে তাঁদের ব্যবহৃত একটি ট্রলারও জব্দ করা হয়েছে।

নৌবাহিনী জানায়, শুক্রবার রাতে বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকার বাংলাদেশ জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ ধরার সময় ভারতীয় ট্রলার ‘এফবি শুভ যাত্রা’ আটক করা হয়। শনিবার রাতে আটক জেলেদের মোংলা উপজেলার দিগরাজ নৌঘাঁটিতে আনা হয়।

জব্দ করা ট্রলার থেকে প্রায় ৫০০ কিলোগ্রাম মাছ, যার মধ্যে ইলিশও রয়েছে, উদ্ধার করা হয়েছে।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য দপ্তরের তথ্যমতে, আটক জেলেদের রবিবার মোংলা থানা হয়ে বাগেরহাটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হবে।

মোংলা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, নৌবাহিনীর টহলজাহাজ ‘বিএনএস শহীদ আখতার উদ্দিন’ নিয়মিত টহলের সময় ট্রলারটি শনাক্ত করে আটক করে। তিনি আরও জানান, ট্রলারটি বাংলাদেশ জলসীমা অতিক্রম করে অবৈধভাবে মাছ ধরছিল।

আটক জেলেরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।

বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশের ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও একাধিকবার এমন ঘটনা ঘটেছে এবং উভয় দেশের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বঙ্গোপসাগরে মৎস্যসম্পদের প্রাচুর্য ও সীমান্ত নির্ধারণসংক্রান্ত অস্পষ্টতার কারণে প্রায়ই এ ধরনের অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে থাকে।

-হাসানুজ্জামান


এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়াল সরকার

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৯ ১০:৫৩:৫৫
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়াল সরকার
ছবিঃ সংগৃহীত

বেসরকারি স্কুল-কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রবিবার অর্থ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে বলা হয়েছে, এখন থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীরা তাঁদের মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা পাবেন। তবে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা ভাতা নিশ্চিত করা হয়েছে।

নতুন এই নিয়ম ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে। তবে কোনো বকেয়া অর্থ দেওয়া হবে না।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে নতুন জাতীয় বেতন স্কেল চালু হলে এই বাড়িভাড়া ভাতাও তাতে সমন্বয় করতে হবে। এছাড়া এমপিও সংক্রান্ত বর্তমান নীতিমালা—যেমন ২০২১ সালের স্কুল ও কলেজের এমপিও নীতি, ২০১৮ সালের (সংশোধিত ২০২০) মাদ্রাসা নীতি এবং কারিগরি, কৃষি ও মৎস্য ডিপ্লোমা প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা—সবগুলো নিয়ম মেনে চলতে হবে।

ভাতা বিতরণে কোনো অনিয়ম হলে বিল অনুমোদনকারী কর্মকর্তাদের দায়ী করা হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

শিক্ষকরা কয়েকদিন ধরে বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। শনিবার তাঁরা কালো পতাকা মিছিল ও অনশন কর্মসূচি পালন করেন। রবিবার তাঁরা শিক্ষা ভবনের দিকে “ক্ষুধা মিছিল” করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ঠিক তার আগেই সরকার এই ঘোষণা দেয়।

শিক্ষক নেতারা বলেছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত তাঁদের আন্দোলনের ফল। তবে তাঁরা আশা করছেন, বাকি ভাতাগুলোর ক্ষেত্রেও সরকার দ্রুত ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে।

-নাজমুল হাসান


গণভোটের দিনক্ষণ: নির্বাচনের দিন হবে না আগে? সিদ্ধান্ত সরকারের ওপর

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৯ ১০:৪৩:১৭
গণভোটের দিনক্ষণ: নির্বাচনের দিন হবে না আগে? সিদ্ধান্ত সরকারের ওপর
ছবিঃ সংগৃহীত

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ‘চূড়ান্ত রোডম্যাপ’ তৈরির পথে এগিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশন সূত্র জানিয়েছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে প্রথমে একটি বিশেষ আদেশ জারি করা হবে, যা সনদের আইনি ভিত্তি দেবে। এই আদেশের ভিত্তিতেই গণভোটের আয়োজন করা হবে। তবে গণভোট নির্বাচনের দিন হবে নাকি আগে হবে—সেই সিদ্ধান্ত সরকারকেই নিতে বলবে কমিশন।

আদেশই একমাত্র পথ: গণভোটের কাঠামো

গত শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) ২৪টি রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে, তবে সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ রয়ে গেছে।

নামকরণ: বিএনপির আপত্তি থাকায় ‘সাংবিধানিক আদেশ’ জারি করা হবে না। তাই এটি ‘সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’ বা অন্য কোনো নামে জারি হতে পারে।

গণভোট: আদেশেই উল্লেখ থাকবে গণভোট কীভাবে হবে এবং গণভোটে যদি সনদ অনুমোদন পায়, তবে এই আদেশ জারির পদ্ধতি, কর্তৃত্ব এবং আইনগত বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না। কমিশন মনে করছে, পুরো সনদ নিয়েই গণভোট হবে, দুটি পৃথক প্রশ্ন নয়।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ: কমিশনের বিশেষজ্ঞ প্যানেল সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তনের ক্ষমতা দেওয়ার জন্য আগামী সংসদের প্রথম অধিবেশনকে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ হিসেবে ঘোষণা করার পরামর্শ দিয়েছে।

রাজনৈতিক মতবিরোধ

বিএনপির অবস্থান: বিদ্যমান আইনে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচনের দিনে গণভোট করা। গণভোটে সনদ অনুমোদিত হলে তা বাস্তবায়ন করবে পরবর্তী সংসদ। সনদে যেগুলোতে ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্ট) রয়েছে, সেগুলোর সিদ্ধান্তও আগামী সংসদে হবে।

জামায়াত ও এনসিপি: তাদের দাবি, সাংবিধানিক আদেশ জারির মাধ্যমে সনদ কার্যকর করে নির্বাচনের আগে নভেম্বরের মধ্যে গণভোট করা হোক। গণভোটে অনুমোদন পেলে নোট অব ডিসেন্টের গুরুত্ব থাকবে না।

কমিশনের কার্যক্রম

কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ আগামী সোমবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র যেতে পারেন। কমিশন সূত্র জানিয়েছে, আগামী সোমবারের মধ্যে সরকারকে সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি সুপারিশ করার পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের। অধ্যাপক আলী রীয়াজ ২৬ অক্টোবর দেশে ফিরলে ৩১ অক্টোবর কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে।

ঐকমত্য কমিশনের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার সমকালকে বলেন, সনদ বাস্তবায়নে একটি আদেশ জারি করতে হবে, এ নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। কীভাবে, কী নামে জারি করা হবে—এ নিয়ে আলোচনা চলছে।


রাতে ফ্লাইট চালুর চেষ্টা চলছে: কার্গো ভিলেজের আগুন পরিদর্শনে উপদেষ্টা

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৮ ২০:৪৩:৪১
রাতে ফ্লাইট চালুর চেষ্টা চলছে: কার্গো ভিলেজের আগুন পরিদর্শনে উপদেষ্টা
ছবিঃ সংগৃহীত

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে লাগা আগুনের ঘটনায় রাতের মধ্যেই ফ্লাইট চালুর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। শনিবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন।

জরুরি অগ্রাধিকার

বেসামরিক বিমান পরিবহন উপদেষ্টা বলেন, “এয়ারপোর্টের ফ্লাইট এই মুহূর্তে বন্ধ রয়েছে। এখানে শুধু আমদানি কার্গোতে আগুনের ঘটনা ঘটেছে, রপ্তানি কার্গো নিরাপদ আছে।”

তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে তাদের কাছে সবচেয়ে জরুরি হলো: ১. বিমানবন্দরকে চালু করা এবং স্বাভাবিক কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা। ২. ক্ষয়ক্ষতির নির্ণয় করা। ৩. একটি তদন্ত কমিটি তৈরি করে দুর্ঘটনার কারণ বের করা।

উপদেষ্টা জানান, “আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তবে পুরোপুরি নির্বাপণ হয়নি।” ভয়াবহ এই আগুন নিয়ন্ত্রণে সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট কাজ করছে। পাশাপাশি সিভিল এভিয়েশন, সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী ও বিজিবি'র সদস্যরাও কাজ করছেন।


কঠিন পরিণতির মুখোমুখি শেখ হাসিনা

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৮ ১১:০১:৪৭
কঠিন পরিণতির মুখোমুখি শেখ হাসিনা
ছবিঃ সংগৃহীত

চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে হতে পারে। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে এমনটাই লেখা হয়েছে। প্রতিবেদনে ৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনাকে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের খালা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

মৃত্যুদণ্ডের দাবি ও অভিযোগ

দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ হলো:

তিনি রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহার করার নির্দেশ দেন, যার ফলে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হন।

প্রসিকিউশনের দাবি: প্রসিকিউশন দাবি করেছে, শেখ হাসিনার আদেশেই দমন অভিযানের সময় নিহতদের লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং আহতদের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়।

সাবেক আইজিপি’র স্বীকারোক্তি: সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে বলেছেন, শেখ হাসিনার নির্দেশেই তিনি বিক্ষোভকারীদের ওপর হেলিকপ্টার ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিলেন এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন।

চিফ প্রসিকিউটরের মন্তব্য: প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আদালতে বলেন, “শেখ হাসিনা ১,৪০০ বার মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য। যেহেতু তা মানবিকভাবে সম্ভব নয়, তাই আমরা অন্তত একটি মৃত্যুদণ্ড দাবি করছি।” তিনি বলেন, “তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা।”

বিচার ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

পরোয়ানা জারি: আদালত ইতোমধ্যেই শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে তারা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।

রায়ের সময়সীমা: রোববার (১৯ অক্টোবর) থেকে শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবীরা তাদের যুক্তি উপস্থাপন শুরু করবেন। চূড়ান্ত রায় নভেম্বরের মধ্যভাগে ঘোষণা করা হতে পারে।

ক্ষতিপূরণ: অভিযোগ প্রমাণিত হলে শেখ হাসিনার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও নিলামে বিক্রির প্রক্রিয়াও শুরু হতে পারে, যার অর্থ ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।

রাজনৈতিক অবস্থা: বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা, যেখানে শেখ হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপি এখন ফেভারিট হিসেবে বিবেচিত। তবে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।


জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর: নতুন বাংলাদেশের অঙ্গীকার নাকি রাজনৈতিক ভারসাম্যের পরীক্ষা?

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৮ ১০:২৭:২১
জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর: নতুন বাংলাদেশের অঙ্গীকার নাকি রাজনৈতিক ভারসাম্যের পরীক্ষা?
জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর এর পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে শুক্রবারের দিনটি চিহ্নিত হলো এক নতুন অধ্যায়ে। রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ নানা রাজনৈতিক দলের নেতা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা। বিকেল পাঁচটা পাঁচ মিনিটে শুরু হওয়া স্বাক্ষরপর্বে দুইজন করে রাজনৈতিক প্রতিনিধি সই করেন, পরে স্বাক্ষর করেন ড. ইউনূস নিজে। এই ঘটনাকে “নতুন বাংলাদেশের সূচনা” বলে আখ্যায়িত করেন প্রধান উপদেষ্টা, বলেন—“এই সনদ শুধু একটি দলিল নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি।

তবে সনদ স্বাক্ষরের আগে সংসদ ভবন এলাকায় সংঘর্ষ ও বিক্ষোভে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দুপুরে “জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধা” ব্যানারে শত শত মানুষ তিন দফা দাবিতে অবস্থান নেয়, যার মধ্যে অন্যতম ছিল জুলাই যোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সংবিধানে সনদ অন্তর্ভুক্ত করা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ইটপাটকেল, টিয়ারশেল ও সাউন্ডগ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটে, আহত হন বহু মানুষ। সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে, এরপর দেরিতে হলেও অনুষ্ঠান শুরু হয়।

ঐতিহাসিক এই আয়োজনে অংশ নেয়নি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর বিতর্ক চলছে। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ হোসেন বলেন, “জুলাই সনদ এখনো পূর্ণাঙ্গ জাতীয় ঐক্যের প্রতিফলন নয়।” এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন জানান, তিন দফা দাবি না মানায় তারা আপাতত স্বাক্ষর করেননি, তবে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার দ্বার খোলা রাখছেন। তাদের দাবিসনদের আইনি বৈধতা নিশ্চিত করা, ড্রাফট আদেশের প্রাপ্তি ও গণভোটের মাধ্যমে সনদের অনুমোদন।

আখতার হোসেন বলেন, “দাবি পূরণ হলে আমরা স্বাক্ষর করবো, না হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।” সরকার ও ঐকমত্য কমিশন এনসিপিকে অন্তর্ভুক্ত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও দলটি শেষ পর্যন্ত দূরত্ব বজায় রাখে, যা রাজনৈতিক ঐক্যের পূর্ণতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

বিক্ষোভের মুখে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন শুক্রবার দুপুরে জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফা সংশোধনের ঘোষণা দেয়। নতুন দফায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, “২০২৪ সালের জুলাইআগস্ট গণঅভ্যুত্থান কালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান, আহতদের পুনর্বাসন ও শহীদ পরিবারকে আইনি দায়মুক্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ক্ষমা চেয়ে বলেন, “এই সংশোধনের মাধ্যমে আমরা শহীদ ও আহতদের প্রতি রাষ্ট্রের দায় স্বীকার করেছি।” তবে কিছু পর্যবেক্ষক মনে করছেন, এই সংশোধন রাজনৈতিক চাপের ফল এবং ভবিষ্যতে এর আইনি প্রয়োগই প্রকৃত পরীক্ষার জায়গা।

বিএনপিমহাসচিবমির্জাফখরুল ইসলাম আলমগীর এই ঐতিহাসিক সনদ স্বাক্ষরকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। জুলাই সনদ কেবল একটি চুক্তি নয়, এটি জনগণের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।” এনসিপির অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার মনে হয় তারা কোথাও ভুল বুঝছে। এই সনদ কারও দলীয় অর্জন নয়, এটি সবার।” ফখরুল আরও যোগ করেন, “আমরা বিশ্বাস করি, এই সনদের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় শুরু হলোযেখানে প্রতিহিংসা নয়, সংলাপ ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা হবে।” তার মতে, এই সনদের বাস্তবায়নই নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ সত্যিই ‘নতুন পথে’ হাঁটতে পারছে কিনা।

অন্যদিকে সনদে স্বাক্ষর করলেও জামায়াতে ইসলামী এর আইনি ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আস্থা রেখেই আমরা স্বাক্ষর করেছি। তবে বিলম্ব বা প্রতারণা জাতির সঙ্গে গাদ্দারি হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই, নতুন সংকটের নামে কোনো হেজিমনি যেন সৃষ্টি না হয়।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াতের এই শর্তযুক্ত অবস্থান একদিকে সরকারের প্রতি আস্থার ইঙ্গিত, অন্যদিকে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দরকষাকষির সম্ভাবনাও জিইয়ে রাখে।

স্বাক্ষরপর্ব শেষে বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “এই সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম।” তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনায় বসে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন উৎসবমুখর করার আহ্বান জানান। ড. ইউনূস বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে যদি নির্বাচনও হয়, তবে তা এমনভাবে হতে হবে যাতে জনগণ বিশ্বাস করতে পারেদেশ বদলেছে।তিনি প্রশ্ন রাখেন, “নিজেদের নির্বাচন নিজেরাই করবো, তাতে পুলিশ এসে কেন ধাক্কাধাক্কি করবে?” প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্য অনেকের কাছে ছিল নতুন রাজনীতির ইঙ্গিতএকটি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি।

এই সনদে স্বাক্ষর বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি ঐতিহাসিক মোড় নির্দেশ করেযেখানে দীর্ঘ দমননীতির পর প্রথমবারের মতো বিভিন্ন মতাদর্শের দল এক ছাতার নিচে এসেছে। কিন্তু এনসিপির অনুপস্থিতি, দফা সংশোধনের চাপ এবং মাঠপর্যায়ের অস্থিরতা ইঙ্গিত দিচ্ছে, জাতীয় ঐক্যের এই পথ এখনো মসৃণ নয়। অনেকের মতে, জুলাই জাতীয় সনদ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের ভিত্তিপ্রস্তরঅথবা আরেকটি রাজনৈতিক পরীক্ষার সূচনা মাত্র।


ইইউ রাষ্ট্রদূতের প্রশংসা: রাজনৈতিক ঐকমত্যে বাংলাদেশের অগ্রগতি

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৮ ১০:৩৬:৩৮
ইইউ রাষ্ট্রদূতের প্রশংসা: রাজনৈতিক ঐকমত্যে বাংলাদেশের অগ্রগতি
ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশে রাজনৈতিক ঐকমত্য ও সংস্কারের পথে ‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষরকে “গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি” হিসেবে অভিহিত করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। তাঁর মতে, এটি বাংলাদেশের আসন্ন ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের এক তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক।

শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে রাষ্ট্রদূত মিলার লিখেছেন, “জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরে আমি আনন্দিত। এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল, যা মৌলিক সংস্কার ও রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তি নির্ধারণ করেছে।” তিনি আরও বলেন, “দেশের রাজনৈতিক রূপান্তরের এ মুহূর্তটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক যাত্রার প্রতি ঐক্যবদ্ধ অঙ্গীকারের প্রতিফলন।”

গত শুক্রবার স্বাক্ষরিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’–এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ২৫টি রাজনৈতিক দল, যার মধ্যে বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও রয়েছে, একটি অভিন্ন সংস্কার-রূপরেখায় সম্মত হয়। এই উদ্যোগকে অনেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল এক ঐক্য প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতি এই প্রক্রিয়ায় ইইউর অব্যাহত আগ্রহ ও সম্পৃক্ততার প্রতীক। বাংলাদেশে গণতন্ত্র, সুশাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইইউ বারবার জোর দিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ নিশ্চিত করতে আগ্রহী। এই লক্ষ্যে তারা প্রযুক্তিগত সহায়তা ও প্রয়োজনে নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠানোর সম্ভাবনাও বিবেচনা করছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ‘জুলাই সনদ’ শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার ও সহযোগিতার নতুন দিগন্তই খুলে দেয়নি, বরং আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এক ইতিবাচক বার্তাও দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থন এই প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করে তুলতে পারে বলে তারা মনে করছেন।

-আহসান হাবিব


জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তীব্র উত্তেজনা

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৭ ১৩:৫৫:১৯
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তীব্র উত্তেজনা
ছবিঃ সংগৃহীত

জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে ঘিরে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে পুলিশি বাধা অতিক্রম করে দেওয়াল টপকে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ এবং অতিথিদের জন্য বরাদ্দ করা চেয়ারে বসে পড়া ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ ধাওয়া দিয়ে সংসদ ভবন এলাকা থেকে বের করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও টিয়ার শেল

ভাঙচুর: বিক্ষুব্ধ জুলাই যোদ্ধারা সংসদ ভবনের ১২ নম্বর গেট ভেঙে ফেলেন। তারা বাইরে বের হয়ে বেশ কয়েকটি ট্রাক ও বাসে ভাঙচুর করেন, যার মধ্যে দুটি ছিল পুলিশের গাড়ি।

সংঘর্ষ: গাড়ি ভাঙচুর করার সময় পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। বর্তমানে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে এবং পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে দেখা গেছে।

আন্দোলনকারীদের দাবি ও নিরাপত্তা

‘জুলাই জাতীয় সনদ’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ঘিরে সকাল থেকে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও আহত বীর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়াসহ ৩ দফা দাবিতে সকাল থেকে জুলাই যোদ্ধারা অবস্থান নিয়েছেন।

নিরাপত্তা: বর্তমানে সংসদ ভবন এলাকার ১২ নম্বর গেটে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র‍্যাব, সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা সম্পূর্ণ এলাকা ঘিরে ফেলেছেন। বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবিলা করার জন্য।


জুলাই হত্যা মামলার আসামির মুক্তি: আদালত অঙ্গনে তোলপাড়

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৬ ১৪:০৯:১০
জুলাই হত্যা মামলার আসামির মুক্তি: আদালত অঙ্গনে তোলপাড়
ছবিঃ সংগৃহীত

জুলাই হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি এবং বিতর্কিত স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ী ও ধনকুবের দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে জামিন দিয়েছেন আদালত। দ্রুত তার জামিননামা কারাগারে পৌঁছানোর পর কঠোর গোপনীয়তায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। দিলীপের এমন আকস্মিক কারামুক্তি নিয়ে আদালত অঙ্গনে তোলপাড় চলছে।

আইনজীবীদের অভিযোগ—রাষ্ট্রপক্ষের প্রত্যক্ষ সহায়তা ছাড়া তার এত দ্রুত কারামুক্তি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ, বর্তমানে যেকোনো বন্দি মুক্তির ক্ষেত্রে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার ক্লিয়ারেন্স লাগে। অথচ দিলীপের ক্ষেত্রে অজ্ঞাত কারণে কোনো ধরনের গোয়েন্দা রিপোর্ট দেওয়া হয়নি।

গোপনীয়তা ও নেপথ্যের অভিযোগ

কারামুক্তি: গুলশান থানার একটি হত্যা মামলায় ২৭ সেপ্টেম্বর জামিন পান দিলীপ। এর তিন দিনের মাথায় ৩০ সেপ্টেম্বর কঠোর গোপনীয়তায় তিনি কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়ে যান।

নীরবতা: কারা কর্তৃপক্ষ ছাড়াও পুলিশের বিশেষ শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা ছিলেন নীরব।

পলাতক: সূত্র জানায়, কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পরপরই দিলীপ গা ঢাকা দিয়েছেন। তিনি সীমান্ত পার হয়ে ওপারে চলে গেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

একটি সূত্র যুগান্তর সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে, দিলীপের মুক্তির নেপথ্যে রাষ্ট্রপক্ষের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তা কলকাঠি নাড়েন, যার সঙ্গে দিলীপের ঘনিষ্ঠতা পুরোনো।

দিলীপের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও প্রেক্ষাপট

রাজনৈতিক পরিচয়: দিলীপ আগরওয়ালা আওয়ামী লীগের বাণিজ্য উপকমিটির নেতা ছিলেন এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে এমপি পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তিনি বিএনপিতে ভিড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও সফল হননি।

দুদকের মামলা: গত ৮ অক্টোবর বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দিলীপ ও তার স্ত্রী সবিতা আগরওয়ালার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।

কারাজীবন: গ্রেফতারের পর বছরখানেক ধরে বন্দি থাকলেও, কারাজীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি ছিলেন হাসপাতালের ভিআইপি কেবিনে, যেখানে তিনি আরাম-আয়েশের মধ্যে ছিলেন।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

দিলীপ কুমার আগরওয়ালার কারামুক্তির ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের হাত রয়েছে—এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “যে কাউকে জামিন দেওয়া আদালতের এখতিয়ার। তবে তার চূড়ান্ত কারামুক্তির বিষয়টি আমার জানা নেই।”

আসামিপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন। যথানিয়মে বেইলবন্ড কারাগারে পৌঁছানোর পর তিনি মুক্ত হন। এক্ষেত্রে অনিয়মের কিছু নেই।” তিনি জানান, দিলীপের পাসপোর্ট জব্দ থাকায় তার বিদেশে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই এবং তিনি দেশেই আছেন।

পাঠকের মতামত: