‘আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি’: ডোনাল্ড ট্রাম্প

সত্য নিউজ: গত সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী কূটনৈতিক নীতিতে এক গভীর পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। যদিও ট্রাম্পের ব্যক্তিগত স্বভাব ও সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের প্রবণতার কারণে এটি স্থায়ী হবে কি না তা বলা কঠিন, তবুও সফরের ঘটনাবলি এবং তার বক্তব্যগুলো থেকে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন হতে পারে, বিশেষত ইসরায়েলের প্রতি আমেরিকার পূর্বের দৃঢ় সমর্থন ঘুলিয়ে যাওয়ার চিত্র স্পষ্ট।
সৌদি আরবের প্রতি নজিরবিহীন ভালোবাসা এবং সম্পর্কের পুনঃনির্মাণ
ট্রাম্পের সৌদি আরব সফরে তিনি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ‘আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি’ বলে অভিবাদন জানান। এর আগের সময় যুবরাজের প্রতি ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা এবং তীব্র ভাষায় আপত্তি থাকলেও এখন তার অভিব্যক্তি সম্পূর্ণ উল্টো। সৌদিতে ট্রাম্পের দেওয়া প্রায় ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ক্রয় চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ভারসাম্য বদলে দিতে পারে, কারণ এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের একক প্রধান সামরিক অংশীদার ছিল ইসরায়েল। এখন সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী অংশীদার’ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রাধান্যকে প্রভাবিত করেছেন।
সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক ‘স্বাভাবিক’ করার জন্য কোনো পূর্বশর্ত না থাকায় ইসরায়েল এই পদক্ষেপকে অনেকাংশেই হুমকি হিসেবে দেখতে শুরু করেছে। গত দশকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যে নীতির মূল অঙ্গ হিসেবে ইসরায়েলের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়া ছিল, যা এখন ট্রাম্পের কৌশলে বিবেচনায় আসছে না।
ইসরায়েল সফরের অনুপস্থিতি এবং সিরিয়ার প্রতি মনোভাব
সর্বাধিক নজর কাড়ে ট্রাম্পের সফরে ইসরায়েল যাওয়া থেকে বিরত থাকা। যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যগত মিত্র ইসরায়েলকে এভাবে বর্জন করা রাজনৈতিক দিক থেকে বিরল। সিরিয়া সফরে ট্রাম্প সেখানে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে এবং সিরিয়ার নতুন নেতাকে ‘আকর্ষণীয়’ ও ‘লড়াকু’ বলে প্রশংসা করেন, যিনি আগে একসময় যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী তালিকায় ছিলেন। এ পদক্ষেপ ইসরায়েলের নিরাপত্তা উদ্বেগকে আরও তীব্র করেছে।
ইরান, তুরস্ক এবং ইয়েমেন নীতিতে ট্রাম্পের কৌশল
ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির ‘খুব কাছাকাছি’ পৌঁছানোর কথা উল্লেখ করেছেন, যেখানে ইসরায়েল বারবার বলেছে যে ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা শুধুমাত্র বল প্রয়োগেই বন্ধ করা সম্ভব। একই সঙ্গে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করেছেন, যিনি ইসরায়েলের বিরোধী এবং হামাসের ঘনিষ্ঠ মিত্র। এ চিত্র থেকে বোঝা যায়, ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের জটিল রাজনৈতিক জালিকে আরও বহুমুখী করার চেষ্টা করছেন।
ইয়েমেনে হুতিদের সঙ্গে আলাদা চুক্তি করার পরিকল্পনা করছেন ট্রাম্প, যাতে তারা লোহিত সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজে হামলা বন্ধ রাখবে। তবে এই চুক্তিতে ইসরায়েলের ওপর হুতিদের রকেট হামলার বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই, যা ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিয়ে বড় উদ্বেগ তৈরি করেছে।
ট্রাম্পের কূটনীতির মূল সংকট: দর-কষাকষায় দুর্বলতা
বিশ্লেষকরা মনে করেন ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো দর-কষাকষায় বিনিময়ে কিছু না নিয়ে একতরফাভাবে ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা। সিরিয়ার নেতাকে ব্যাপক ছাড় দেয়ার পরও ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাননি তিনি। তার এই একতরফাভাবে পদক্ষেপগুলো ইসরায়েলের আস্থাকে দুর্বল করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিবর্তনের সূচনা করেছে।
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর ও কর্মকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী নীতির তুলনায় বেশ খানিকটা নমনীয় এবং বহুমুখী নতুন কৌশল দেখা যাচ্ছে। যেখানে পূর্বে ইসরায়েল ছিল একমাত্র অটল মিত্র, সেখানে এখন সৌদি আরবকে প্রধান অংশীদার করে নতুন ব্যালান্স তৈরি করা হচ্ছে। তুরস্ক, ইরান এবং ইয়েমেনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি সিরিয়ার প্রতি মনোভাব বদলে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনীতি এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছে।
ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তার ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক স্বার্থে কোন দেশের প্রতি তার আনুগত্য পরিবর্তিত হতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য তিনি যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত। এ অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে, যেখানে ইসরায়েল আর আগের মতো একক শক্তি হিসেবে আমেরিকার সম্পূর্ণ আস্থাভাজন থাকবে না। নতুন এই বাস্তবতায় মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা ও শান্তি কতটা বজায় থাকবে, তা সময়ই বলবে।
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে চার্জ দাখিল, বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার
- চীন না ভারত? উন্নয়ন না আনুগত্য? বুলেট ট্রেন বলছে স্পষ্ট জবাব
- অবশেষে বিসিবি সভাপতি ফারুককে নিয়ে মুখ খুললেন আসিফ
- বিশ্বশক্তির নজর এখন বাংলাদেশে: খনিজ ভাণ্ডারের নতুন মানচিত্র
- তারেক-ইউনুস উত্তপ্ত ফোনালাপ: যা জানা গেল
- বাহরাইনেরমানামায় বিএনপির সাংগঠনিক পুনর্গঠন, নেতৃত্বে আক্তার হোসেন
- নতুন বিসিবি সভাপতিবুলবুলের কাছে আশরাফুলের চাওয়া
- শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান: রাষ্ট্র নির্মাণের এক উজ্জ্বল প্রতিমূর্তি
- হালদা নদীতে ডিম ছাড়ল রুই জাতীয় মা মাছ, সংগ্রহ প্রায় ১৪ হাজার কেজি নিষিক্ত ডিম
- ঈদের দিন বৃষ্টি হবে কি?
- চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন ভোর: দক্ষিণ এশিয়ার তেলের ‘রাজসিংহাসন’ দখলের পথে বাংলাদেশ?
- ভারতের গর্ব এস-৪০০ ধ্বংস: বাস্তবতা নাকি প্রচারযুদ্ধ?
- ধ্বংস থেকে নেতৃত্ব: ৫ আগস্ট থেকে যেভাবে শুরু হলো অর্থনীতির পুনর্জাগরণ
- জবি’র সাবেক অধ্যাপক আনোয়ার বেগম হত্যাচেষ্টা মামলায় সুত্রাপুরে আটক
- বাহরাইনে জাতীয়তাবাদী শক্তির পুনর্জাগরণ: গ্যালালী শাখায় নতুন নেতৃত্ব