বিশেষ প্রতিবেদন
চীন না ভারত? উন্নয়ন না আনুগত্য? বুলেট ট্রেন বলছে স্পষ্ট জবাব

২০১৭ সালে যখন চীন ঢাকায় উচ্চগতির রেল প্রকল্পের প্রস্তাব দেয়, তখন অনেকেই কল্পনা করতে পারেনি যে এটি একদিন হয়ে উঠবে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতীকী উন্নয়ন প্রকল্প। সেই সময়েই সব প্রস্তুতি ছিল সম্পন্ন—সম্ভাব্যতা যাচাই, প্রাথমিক ডিজাইন, নথিপত্র। বাকি ছিল শুধু একটি স্বাক্ষর—তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
কিন্তু সেই স্বাক্ষর আর আসেনি। পেছনের গল্পটুকু এখন ইতিহাসের মুখোমুখি। বারবার শোনা গেছে, দিল্লির চাপেই ফাইলটি থেমে থাকে। চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ভারতের ‘স্বার্থে আঘাত’ করবে—এই আশঙ্কায় একপ্রকার আত্মনির্ভরতা বিসর্জন দিয়েছিল ঢাকা। শেখ হাসিনা পরিণত হয়েছিলেন শুধু রাষ্ট্রপ্রধান নন, এক সীমান্তরক্ষী ব্যবস্থাপক—যার কাছে প্রতিবেশীর মন রক্ষা নিজ দেশের স্বার্থের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
এরপর আসে ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। ৫ আগস্ট গর্জে ওঠা রাজপথ বদলে দেয় দেশের রাজনৈতিক গতি। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যান, আশ্রয় নেন ভারতের এক কোণে। আর দেশের মানুষ আস্থা রাখে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের ওপর—একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, যিনি রাজনীতির বাইরে থেকেও হয়ে ওঠেন পরিবর্তনের প্রতীক।
নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়েই আটকে থাকা স্বপ্নগুলো পুনরায় উন্মোচন করতে থাকে। বুলেট ট্রেন প্রকল্প হয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে। চীনা প্রতিনিধিরা আবার ঢাকায় আসেন, কিন্তু এবার আর তাদের ফিরতে হয়নি খালি হাতে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত মাত্র ৫৫ মিনিটের ভ্রমণের জন্য ঘন্টায় ৩০০ কিমি গতির ট্রেন চালুর কাজ শুরু হয় জোরেশোরে।
এই প্রকল্প শুধু একটি পরিবহন ব্যবস্থা নয়—এটি বাংলাদেশের অর্থনীতি, জনসংযোগ ও আঞ্চলিক উন্নয়ন কাঠামোর জন্য একটি গেমচেঞ্জার। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, পাহাড়তলী ও চট্টগ্রাম—এই ছয়টি প্রধান স্টেশনের আশেপাশে গড়ে উঠবে নতুন শিল্প এলাকা, বাড়বে কর্মসংস্থান, ব্যবসা ও রপ্তানি কার্যক্রম হবে আরও গতিশীল।
এক সময়কার ছয় ঘণ্টার ঢাকা-চট্টগ্রাম যাত্রা এখন মাত্র এক কাপ কফি আর একটি পডকাস্টের সময়। ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় পরিবহন করতে পারবে প্রায় ৫০০ যাত্রী, যা প্রতিদিনের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি বহুগুণ বাড়াবে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে তৈরি হবে নতুন এক ধরনের ‘উন্নয়ন করিডর’।
এই উচ্চগতির ট্রেন প্রকল্প যেন হয়ে উঠেছে সময়ের প্রতিশোধ। এক সময় যার থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল রাজনৈতিক দ্বিধা আর কূটনৈতিক টানাপোড়েনে, আজ সে-ই হয়ে উঠেছে জাতির আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।
এই বুলেট ট্রেন প্রকল্পের পুনর্জাগরণ একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়—যেখানে ভৌগোলিক কূটনীতি আর রাজনৈতিক আত্মনির্ভরতা একসাথে কাজ করে না, সেখানে জনগণের রায়ই হয়ে ওঠে চূড়ান্ত ফয়সালা। উন্নয়ন শুধু অবকাঠামো নয়, এটি আত্মবিশ্বাস, নেতৃত্ব, এবং স্বাধীন কূটনৈতিক অবস্থান গঠনের উপকরণ। বাংলাদেশের এই বুলেট ট্রেন আজ কেবল একটি প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ নয়; এটি একটি জাতির আত্মমর্যাদার প্রতীক, এবং সেইসব রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াশীলতার মুখে দাঁড়িয়ে সামনে এগিয়ে চলার এক নতুন যাত্রা।
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে চার্জ দাখিল, বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার
- চীন না ভারত? উন্নয়ন না আনুগত্য? বুলেট ট্রেন বলছে স্পষ্ট জবাব
- অবশেষে বিসিবি সভাপতি ফারুককে নিয়ে মুখ খুললেন আসিফ
- বিশ্বশক্তির নজর এখন বাংলাদেশে: খনিজ ভাণ্ডারের নতুন মানচিত্র
- শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান: রাষ্ট্র নির্মাণের এক উজ্জ্বল প্রতিমূর্তি
- নতুন বিসিবি সভাপতিবুলবুলের কাছে আশরাফুলের চাওয়া
- হালদা নদীতে ডিম ছাড়ল রুই জাতীয় মা মাছ, সংগ্রহ প্রায় ১৪ হাজার কেজি নিষিক্ত ডিম
- ঈদের দিন বৃষ্টি হবে কি?
- চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন ভোর: দক্ষিণ এশিয়ার তেলের ‘রাজসিংহাসন’ দখলের পথে বাংলাদেশ?
- জবি’র সাবেক অধ্যাপক আনোয়ার বেগম হত্যাচেষ্টা মামলায় সুত্রাপুরে আটক
- ধ্বংস থেকে নেতৃত্ব: ৫ আগস্ট থেকে যেভাবে শুরু হলো অর্থনীতির পুনর্জাগরণ
- ভারতের গর্ব এস-৪০০ ধ্বংস: বাস্তবতা নাকি প্রচারযুদ্ধ?
- ধর্ম-সংস্কৃতি উপেক্ষা নয়: সংবিধান সংশোধনে ১৮০ শিক্ষকের সরব প্রতিবাদ
- সোনাক্ষীর ‘নিকিতা রায়’-এর মুক্তি পেছাল, ঘোষণা দিলেন নতুন তারিখ
- দেশের ৬ জেলায় ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা, নদীবন্দরে ২ নম্বর সতর্কতা