হালদা নদীতে ডিম ছাড়ল রুই জাতীয় মা মাছ, সংগ্রহ প্রায় ১৪ হাজার কেজি নিষিক্ত ডিম

অমাবস্যা তিথির দ্বিতীয় জোড়ের শেষ দিন বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে প্রচণ্ড বজ্রপাত, মেঘের গর্জন ও অতি ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক মিঠাপানির মাছের প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে রুই জাতীয় মা মাছ ডিম ছেড়েছে। ডিম সংগ্রহকারীদের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এবার নদীতে প্রায় ১৪ হাজার কেজি নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।
বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ২টার দিকে হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে মা মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করে। এ সময় নদীতে অবস্থানরত ডিম সংগ্রহকারীরা হাঁকডাক শুরু করলে সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ৫০০-৬০০ ডিম সংগ্রহকারী ৩৫০-৪০০ নৌকা, জাল ও পাতিলসহ সরঞ্জাম নিয়ে নদীতে নামেন। যদিও ভোর রাতের দিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে, তবুও প্রচুর পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করতে পেরে ডিম সংগ্রহকারীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
ডিম সংগ্রহের উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায় হালদা নদীর মদুনাঘাট ছায়ারচর থেকে রামদাস মুন্সিরহাট, আমতুয়া, নাপিতার ঘোনা, আজিমের ঘাট, মাছুয়াঘোনা, কাগতিয়া, সিপাহী ঘাট, নয়াহাট, পুরালিয়া স্লুইসগেট, কেরামতালির বাক এবং অঙ্কুরীঘোনা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায়। প্রতি নৌকায় ৩-১২ বালতি (৮-১০ লিটার) নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ হয়েছে। গড়ে ৭-৮ বালতি ডিম পাওয়া গেছে, যা গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি।
হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে হালদায় মা মাছ ডিম দেয়নি। ২০২৩ সালে সংগ্রহ হয়েছিল ১৪,৬৬৪ কেজি, ২০২২ সালে সাড়ে ৬ হাজার, ২০২১ সালে সাড়ে ৮ হাজার, আর ২০২০ সালে রেকর্ড ২৫,৫৩৬ কেজি ডিম সংগ্রহ হয়েছিল। এবার প্রায় ১৪ হাজার কেজি ডিম সংগৃহীত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট মহল আশাবাদী।
প্রবীণ ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সওদাগর জানান, এবার কাগতিয়া, সিপাহী ঘাট, নয়াহাট, পুরালিয়া স্লুইসগেট ও কেরামতালির বাকসহ কিছু এলাকায় প্রত্যাশিত পরিমাণে ডিম সংগ্রহ হয়েছে। তিনি নিজে ১০টি নৌকায় প্রায় ৩৫-৩৭ বালতি নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করেছেন। এসব ডিম সরকারি ও বেসরকারি হ্যাচারিতে ও মাটির কুয়ায় রেনুতে পরিণত করা হবে এবং চারদিনের মধ্যেই বিক্রয়যোগ্য পোনা হিসেবে রূপ নেবে।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন আজাদী জানান, হালদা পাড়ে ডিমের পরিস্ফুটনের জন্য হ্যাচারিগুলোতে ডিম সংগ্রহকারীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। ১৮ ঘণ্টার মধ্যে রেনু তৈরি হবে, তারপর তিনদিন ধরে নার্সিং করা হবে এবং ৯৬ ঘণ্টা পর পোনা বিক্রির উপযোগী হবে। এই রেনুগুলো দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মাছচাষিদের কাছে চাহিদাসম্পন্ন, কারণ প্রাকৃতিক রেনু দ্রুত বড় হয় এবং সুস্থ থাকে।
এদিকে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান বলেন, হালদা নদীর মা মাছ রক্ষায় গত এক বছরে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, অবৈধ ড্রেজার ধ্বংস, জাল জব্দ, বালু উত্তোলনের নৌকা ধ্বংসসহ নানা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এসব উদ্যোগের সুফল হিসেবে হালদা তার পুরনো ঐতিহ্যে ফিরছে। এবারের ডিম প্রাপ্তির সাফল্যে প্রশাসনও সন্তুষ্ট।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, এবার রুই জাতীয় মা মাছ ডিম দিয়েছে এবং সংগ্রহকারীরা বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও সফলভাবে বিপুল পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বলেন, “হালদা রক্ষায় একাধিক সংস্থা ও জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলেই আজকের সাফল্য সম্ভব হয়েছে।” তিনি হালদাকে বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাপনার এক সফল উদাহরণ হিসেবেও অভিহিত করেন।
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে চার্জ দাখিল, বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার
- চীন না ভারত? উন্নয়ন না আনুগত্য? বুলেট ট্রেন বলছে স্পষ্ট জবাব
- অবশেষে বিসিবি সভাপতি ফারুককে নিয়ে মুখ খুললেন আসিফ
- বিশ্বশক্তির নজর এখন বাংলাদেশে: খনিজ ভাণ্ডারের নতুন মানচিত্র
- নতুন বিসিবি সভাপতিবুলবুলের কাছে আশরাফুলের চাওয়া
- হালদা নদীতে ডিম ছাড়ল রুই জাতীয় মা মাছ, সংগ্রহ প্রায় ১৪ হাজার কেজি নিষিক্ত ডিম
- শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান: রাষ্ট্র নির্মাণের এক উজ্জ্বল প্রতিমূর্তি
- ঈদের দিন বৃষ্টি হবে কি?
- জবি’র সাবেক অধ্যাপক আনোয়ার বেগম হত্যাচেষ্টা মামলায় সুত্রাপুরে আটক
- চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন ভোর: দক্ষিণ এশিয়ার তেলের ‘রাজসিংহাসন’ দখলের পথে বাংলাদেশ?
- ধ্বংস থেকে নেতৃত্ব: ৫ আগস্ট থেকে যেভাবে শুরু হলো অর্থনীতির পুনর্জাগরণ
- ধর্ম-সংস্কৃতি উপেক্ষা নয়: সংবিধান সংশোধনে ১৮০ শিক্ষকের সরব প্রতিবাদ
- সোনাক্ষীর ‘নিকিতা রায়’-এর মুক্তি পেছাল, ঘোষণা দিলেন নতুন তারিখ
- দেশের ৬ জেলায় ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা, নদীবন্দরে ২ নম্বর সতর্কতা
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৪০৫ কোটি টাকার লোকসান