গাজায় ত্রাণকেন্দ্রের কাছে গণহত্যার অভিযোগ, জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত দাবি

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ০৩ ১১:৩৩:২০
গাজায় ত্রাণকেন্দ্রের কাছে গণহত্যার অভিযোগ, জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত দাবি

গাজার রাফাহ এলাকায় একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলার অভিযোগে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। রোববার (২ জুন) ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় নিহতদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি থাকলেও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

ঘটনার দিন রাফাহয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের পাশে খাদ্যের জন্য অপেক্ষমাণ সাধারণ ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস জানায়, তাদের ফিল্ড হাসপাতালে এ ঘটনায় ১৭৯ জন আহতকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে ২১ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা বলছে, নিহতের সংখ্যা অন্তত ৩১।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অবশ্য এসব অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করে জানিয়েছে, তারা ওই এলাকায় কোনো বেসামরিক নাগরিককে লক্ষ্য করে গুলি চালায়নি এবং এ ধরনের প্রতিবেদনকে “মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে দাবি করে। একইসঙ্গে জিএইচএফ জানায়, তাদের পরিচালিত ত্রাণকেন্দ্র বা আশপাশে কোনো গোলযোগ বা হতাহতের প্রমাণ তারা পায়নি।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেন, “গাজায় ত্রাণ নিতে এসে ফিলিস্তিনিদের নিহত ও আহত হওয়ার খবর শুনে আমি স্তব্ধ। আমি এই ঘটনায় স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করছি এবং দোষীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।” ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই মন্তব্যকে “লজ্জাজনক” বলে নিন্দা করে এবং গুতেরেসের বিবৃতিতে হামাসের নাম না থাকায় তীব্র সমালোচনা করে।

রাফাহ শহরের আল-আলম স্কয়ারে যখন ফিলিস্তিনিরা ত্রাণের অপেক্ষায় ছিলেন, তখন ইসরায়েলি ট্যাংক এগিয়ে এসে গুলি চালায় বলে এক স্থানীয় সাংবাদিক বিবিসিকে জানান। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, খোলা জায়গায় মানুষ দৌড়াচ্ছেন এবং স্বয়ংক্রিয় গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে, যদিও বিবিসি ভিডিওর অবস্থান নিশ্চিত করতে পারেনি।

ইসরায়েলি বাহিনী পরে জানায়, ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র খোলার আগেই এক কিলোমিটার দূরে সন্দেহভাজন কিছু ব্যক্তি সেনাদের দিকে এগিয়ে এলে “সতর্কতামূলক গুলি” ছোড়া হয়েছিল। মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন এই বিষয়ে হামাসকে “গুজব ছড়ানোর” অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।

এ ঘটনায় জিএইচএফও দাবি করেছে, “আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ছড়ানো তথ্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।” যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবিও বলেন, “এই ঘটনার সংবাদ কাভারেজ দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং যাচাই না করে প্রচারিত।”

তবে এই বিতর্কের মধ্যেই সোমবার (৩ জুন) আরও একটি দুঃসংবাদ সামনে আসে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, রাফাহর তাল আল-সুলতান এলাকায় একই ত্রাণকেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে আরও তিন ফিলিস্তিনি নিহত হন এবং ৫০ জন আহত হন। একই দিনে খান ইউনুসের নাসের হাসপাতালে আরও একজন নিহতের মরদেহ পৌঁছায়।

এছাড়া গাজার জাবালিয়া এলাকায় একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১৪ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ৬ শিশু ও ৩ নারী রয়েছেন বলে সিভিল ডিফেন্স নিশ্চিত করেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও মানুষ চাপা পড়ে থাকতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে।

ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, তারা গাজাজুড়ে “সন্ত্রাসী সংগঠনের সামরিক কাঠামো, টানেল ও অস্ত্রাগার” লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালাচ্ছে।

গত ২ মার্চ থেকে গাজায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল, এবং দুই সপ্তাহ পর তারা আবার পূর্ণমাত্রায় সামরিক অভিযান শুরু করে। এতে করে হামাসের সঙ্গে দুই মাসব্যাপী যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়। ১৯ মে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানান, গাজার “সব অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে” নেওয়া হবে।

গাজায় মানবিক সংকট গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে, কিন্তু এই ধরণের প্রাণঘাতী হামলা সেখানে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোকে আরও কঠিন করে তুলছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরও কার্যকর ও নিরপেক্ষ ভূমিকা নেবে, এমন প্রত্যাশাই এখন সকলের।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত