রাবিতে 'জুলাই চত্বর' স্থাপনের মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিবিজড়িত বর্ষপূর্তি

শিক্ষা ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৬ ১০:০৬:২২
রাবিতে 'জুলাই চত্বর' স্থাপনের মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিবিজড়িত বর্ষপূর্তি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন ঘোষণা করেছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি স্মরণে তারা মাসব্যাপী নানা আয়োজনে শামিল হচ্ছে। এ উপলক্ষে সাংস্কৃতিক, স্মৃতিচারণ, শৈল্পিক ও চিন্তামূলক নানা কর্মসূচির পাশাপাশি ‘জুলাই চত্বর’ নামে একটি স্মারক চত্বরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হয়ে থাকবে।

শনিবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রফেসর মো. আখতার হোসেন মজুমদার স্বাক্ষরিত এক লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে এই কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। ঘোষণায় বলা হয়, বর্ষপূর্তির এ আয়োজনে শুধু অতীত স্মরণের চিত্র নয়, বরং তা ভবিষ্যতের জন্য একটি ঐতিহাসিক দায়িত্বশীলতা ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক বিকাশের অংশ হিসেবেই বিবেচিত হবে।

বর্ষপূর্তি কর্মসূচির প্রধান আকর্ষণ হিসেবে ১৩ জুলাই বেলা ১১টায় ‘জুলাই চত্বর’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে স্থাপিতব্য এই চত্বরটি শুধুমাত্র একটি কাঠামোগত সংযোজন নয়; বরং তা ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ছাত্রজনতার সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের স্মারক রূপে দাঁড়াবে।

১৫ ও ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার, আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণ ও নাট্য উৎসব। এসব আয়োজনে অংশ নেবেন সেই সময়ের আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতা, শিক্ষক, ভুক্তভোগী পরিবার এবং প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীরা। তারা তুলে ধরবেন আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, রাষ্ট্রের দমননীতি এবং জনগণের প্রতিরোধচেতনার বাস্তব রূপ।

১৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে শিক্ষক সংহতি সমাবেশ, যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনার প্রকাশ হিসেবে ধরা হচ্ছে। ২০ জুলাই বিকেল সাড়ে ৩টায় শহীদ পরিবার এবং আহতদের আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেওয়া হবে, যা একাধারে মানবিক সংহতি এবং সংগ্রামের ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন হিসেবে চিহ্নিত হবে।

২৪ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার এবং শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালায় ‘জুলাই কর্ণার’ স্থাপন করা হবে যেখানে জুলাই বিপ্লব সংক্রান্ত দলিল, চিত্র, সংবাদ প্রতিবেদন এবং ব্যক্তিগত স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষিত থাকবে। এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি গবেষণাগারও হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

১ আগস্ট আয়োজন করা হবে কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা ও দোয়া মাহফিল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায়। ১ থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলবে আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং আন্দোলনের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন। ২ আগস্ট থাকবে চিত্রাঙ্কন ও গ্রাফিতি প্রতিযোগিতা, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের শৈল্পিক প্রকাশের মাধ্যমে আন্দোলনের চেতনা তুলে ধরবে।

৩ ও ৪ আগস্ট ‘বিপ্লবকেন্দ্রিক সঙ্গীত ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’-এর আয়োজন করা হবে। এতে পরিবেশিত হবে প্রতিবাদী গান, আবৃত্তি, পথনাটক এবং স্বাধীন সৃজনধর্মী পরিবেশনা যা আন্দোলনের প্রাণের সঙ্গে যুক্ত থাকা সংস্কৃতিকে জীবন্ত করে তুলবে।

আন্দোলনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হবে একটি স্মারকগ্রন্থ ও অ্যালবাম, যাতে থাকবে সেই সময়কার দৃশ্যপট, নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা, শহীদদের সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত এবং আন্দোলনের রাজনৈতিক তাৎপর্য। এ প্রকাশনা ইতিহাস ও গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স হয়ে উঠতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই উদ্যোগকে অনেকেই শুধু আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে দেখছেন না; বরং এটিকে ২০২৪ সালের আন্দোলনের প্রতি প্রতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি এবং একটি ঐতিহাসিক দায়মুক্তির প্রয়াস হিসেবে বিবেচনা করছেন। আন্দোলনের সময় রাবি ছিল ছাত্রজনতার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে সংঘটিত হয়েছিল শতশত শিক্ষার্থীর সমাবেশ, মিছিল এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংস হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ।

এই কর্মসূচিগুলো যেন একদিকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো, অন্যদিকে ইতিহাসের পুনর্লিখন যেখানে ‘জুলাই-আগস্ট’ হয়ে উঠছে নতুন প্রজন্মের জন্য নৈতিকতা, সচেতনতা ও গণতন্ত্রচর্চার প্রতীক।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বর্ষপূর্তি উদযাপন কেবল অতীত স্মরণের এক অনুরণন নয়, বরং তা বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য এক প্রতিশ্রুতি যে রাষ্ট্র, শিক্ষা ও জনগণের মধ্যকার সম্পর্ক নির্মাণে প্রতিরোধ, আত্মত্যাগ ও সাংস্কৃতিক পুনরাবিষ্কার অপরিহার্য।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ