ঈদের আগে মসলায় খুচরার দাম আকাশছোঁয়া

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ৩১ ১২:০৩:৪০
ঈদের আগে মসলায় খুচরার দাম আকাশছোঁয়া

ঈদুল আজহা উপলক্ষে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্গে মসলার চাহিদা বাড়ায় রাজশাহীর মসলার বাজারে আবারও মূল্য ওঠানামার অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মাত্র এক মাসের মধ্যে মসলাজাত পণ্যের খুচরা দামে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

রাজশাহীর প্রধান বাজারগুলো সাহেববাজার, মাস্টারপাড়া ও হড়গ্রামে শনিবার সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, মসলার দাম সামগ্রিকভাবে বাড়ার পাশাপাশি কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অস্বাভাবিকতা বিরাজ করছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারের মসলার আমদানির পরিমাণ বেড়েছে, তবে বাজারে পূর্বের উচ্চ মূল্যের প্রভাব এখনও কাটেনি। অন্যদিকে ক্রেতারা অভিযোগ করেন, ঈদের আগের সময়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কিছু ব্যবসায়ী দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

রাজশাহীর মসলার বাজার মূলত আমদানির ওপর প্রায় ৮০ শতাংশ নির্ভরশীল। এ কারণে ডলার বিনিময় হার, বৈশ্বিক বাজারের দাম এবং শুল্ক কাঠামোর ওঠানামা স্থানীয় বাজারের দামকে সরাসরি প্রভাবিত করে। যদিও দেশে কিছু মসলা উৎপাদিত হয়, তা চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য। পাইকারি পর্যায়ে দাম তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকলেও খুচরা বাজারে পরিবহন, সংরক্ষণ এবং ছোট ছোট প্যাকেজিংয়ের খরচ যুক্ত হওয়ার কারণে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মূলত এলাচ, জিরা, আদা ও রসুনের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। উদাহরণস্বরূপ, এক মাস আগে প্রতি কেজি এলাচের দাম ছিল প্রায় ৪৬০০ টাকা, এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮০০ টাকায়। জিরার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা এবং ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। আদার দাম ৬৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি এবং রসুনের দাম ৭০ থেকে ১৫০ টাকায় উঠেছে। অন্যদিকে ধনিয়া, তেজপাতা, দারুচিনি, কিশমিশ ও বাদামজাতীয় পণ্যের দাম বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্থিতিশীল বা সামান্য কমেছে।

বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, তারা বড় আকারে মসলা কেনায় দাম তুলনামূলক কমে আসে, তবে খুচরা পর্যায়ে পরিবহন, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ছোট ছোট প্যাকেজিংয়ের খরচ যুক্ত হওয়ায় দাম বেড়ে যায়। একই সঙ্গে কিছু খুচরা বিক্রেতা ঈদের সময়ে চাহিদা বৃদ্ধি পেলে অতিরিক্ত লাভের আশায় দাম বাড়িয়ে থাকেন।

খুচরা বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, এখনও আগের দামে কেনা মসলা বিক্রি হচ্ছে, তবে ঈদ আসার কারণে গরম মসলার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা বেড়েছে। এ ছাড়া পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে সময়ের ব্যবধানও রয়েছে। তাই তারা পূর্বের মূল্য ধরে বিক্রি করছেন।

ক্রেতারা অভিযোগ করেন, প্রতি বছর ঈদ উপলক্ষে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে দাম বৃদ্ধি করা হয়, যা ভোক্তাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তারা দাবি করেন, মসলার দাম যেহেতু আমদানির ওপর নির্ভরশীল, আন্তর্জাতিক বাজারের দাম কমলেও তা খুচরা পর্যায়ে প্রতিফলিত হচ্ছে না, ফলে সাধারণ মানুষ অতিরিক্ত মূল্য দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের সহকারী পরিচালক ফজলে এলাহী জানান, তারা বাজার পর্যবেক্ষণে রয়েছে এবং অপ্রয়োজনীয় দাম বৃদ্ধির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে। অবৈধভাবে দাম বাড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবের কারণে মসলার দাম স্থিতিশীল রাখতে সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবে দেশের বাজারে সামগ্রিকভাবে গত কয়েক মাসে মসলার দাম মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

সুতরাং, ঈদ সামনে রেখে রাজশাহীর মসলার বাজারে চাহিদার সঙ্গে সঙ্গেই কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে, তবে পাইকারি পর্যায়ের তুলনায় খুচরা পর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কিছুটা অতিরিক্ত মুনাফার সম্ভাবনাও রয়েছে। ভোক্তাদের সচেতনতা ও কর্তৃপক্ষের কঠোর তদারকির মাধ্যমে বাজারের এই অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

-অনন্যা, নিজস্ব প্রতিবেদক

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত