কেউ রেকর্ড মুনাফায়, কেউ তলানিতে

সত্য নিউজ: ২০২৪ সালে দেশের ব্যাংকিং খাতের লাভ–লোকসানে এসেছে বৈপরীত্য। একদিকে কিছু ব্যাংক নিট মুনাফায় নতুন রেকর্ড গড়েছে, অন্যদিকে কয়েকটি ব্যাংক বড় অঙ্কের লোকসানে ডুবে গেছে। এখন পর্যন্ত ২২টি ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৩টি ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে, ৭টির মুনাফা কমেছে এবং ২টি ব্যাংকের লোকসান আরও বেড়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যেসব ব্যাংক অতীতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও গ্রাহক আস্থার জায়গায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে, তারা ভালো ফল করেছে। আর যেসব ব্যাংকে অনিয়ম, লুটপাট এবং ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ছিল, তারা মুনাফা হারিয়ে লোকসানের মুখে পড়েছে।
মুনাফায় রেকর্ড গড়া ব্যাংক
-
ব্র্যাক ব্যাংক: নিট মুনাফা ৮২৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১,৪৩২ কোটি টাকা।
-
সিটি ব্যাংক: ৬৩৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১,০১৪ কোটি টাকা।
-
এ ছাড়া পূবালী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংক যথাক্রমে ৭৮০ কোটি, ৭৫০ কোটি ও ৭৪৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছে।
-
বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক ১১ কোটি থেকে মুনাফা বাড়িয়ে ৬৩ কোটি টাকায় এনেছে।
-
সিটিজেন ব্যাংক লোকসান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, "সুশাসন ও আস্থার কারণে আমরা বিপুল পরিমাণ আমানত পেয়েছি। সঠিক খাতে বিনিয়োগ আমাদের এই মুনাফা নিশ্চিত করেছে।"
মুনাফায় পতন ও লোকসানে ব্যাংক
-
ডাচ্-বাংলা ব্যাংক: মুনাফা ৮০২ কোটি থেকে নেমে এসেছে ৪৭৩ কোটিতে।
-
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক: ৩৫৮ কোটি থেকে নেমেছে ১৬৯ কোটি টাকায়।
-
ট্রাস্ট ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, ও কমিউনিটি ব্যাংক-এর মুনাফাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
-
ন্যাশনাল ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লোকসানের মাত্রা আরও বাড়িয়েছে। যথাক্রমে লোকসান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৭০৬ কোটি এবং ৯৪ কোটি টাকায়।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, "চাহিদামতো এবং অতিরিক্ত নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখা হয়েছে ভবিষ্যৎ ঝুঁকি মোকাবেলায়। এতে সাময়িকভাবে মুনাফা কমেছে, তবে ভিত্তি হয়েছে শক্তিশালী।"
নিয়ন্ত্রক সংস্থার কঠোর নজরদারি ও বাজার বাস্তবতা
বাংলাদেশ ব্যাংক এবার ব্যাংকগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে কঠোর তদারকি চালিয়েছে। ঋণ প্রকল্প পরিদর্শনের মাধ্যমে খেলাপির পরিমাণ নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা অনেক ব্যাংকের মুনাফায় চাপ সৃষ্টি করেছে। তবে এটি ব্যাংক ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্য ইতিবাচক বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, ২০২৪ সালের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি অনেক ব্যাংক। ফলে বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
২০২৪ সাল দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য ছিল পারস্পরিক বিপরীতমুখী অভিজ্ঞতায় পূর্ণ। ভালো পরিচালনা, স্বচ্ছতা ও বাজারে আস্থার ভিত্তিতে কিছু ব্যাংক মুনাফায় শীর্ষে পৌঁছালেও অনিয়ম, দুর্বল তদারকি ও অতীতের আর্থিক দুর্নীতির ভারে অনেক ব্যাংক এখনো ধুঁকছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং সঠিক সঞ্চিতি সংরক্ষণের নির্দেশনা ব্যাংকিং খাতকে ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী করার পথে একটি বড় পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- শেয়ারবাজারে এল বড় সুখবর!
- স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ
- রিজার্ভের দাপট: বিদ্যুৎ খাতের ১৪ কোম্পানি বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতার বাড়িতে সেনা অভিযান:উদ্ধার ইয়াবা ও ধারালো অস্ত্র!
- দ্বিতীয় দিনেও চলছে কোরবানি, কসাই না পাওয়ায় আজ জবাই অনেকের
- তিন মাসেই যে ১০ বেসরকারি ব্যাংকে ৩২ হাজার কোটি টাকার আমানত বৃদ্ধি!
- তারেক রহমানের দেশেফেরার সম্ভাব্য সময় জানালেনমির্জা ফখরুল
- তারেক-ইউনূস বৈঠক: উত্তপ্ত রাজনীতিতে সম্ভাব্য টার্নিং পয়েন্ট?
- উত্তর-পূর্ব ভারতের ক্ষোভ কি ভারতের কেন্দ্রীয় কূটনীতি পাল্টাবে?
- লন্ডনে তারেক-ইউনূসের বৈঠকের পরে পর পর ২টি স্ট্যাটাসে কি বললেন পিনাকী?
- সাক্ষাৎ চাইলেন শেখ হাসিনার ভাগ্নি, মুখ ফিরিয়ে নিলেন ড. ইউনূস
- ডিএসইতে সাধারণ বীমা খাতের প্রান্তিক বিশ্লেষণ:মুনাফা বৃদ্ধির শীর্ষে কারা?
- তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা