সেনাপ্রধানের বক্তব্য, জুলকারনাইন তাতে যা বললেন!

সত্য নিউজ:আজ বুধবার ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত অফিসার্স অ্যাড্রেস সভায় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাবিষয়ক নানা প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখেন। জাতীয় নির্বাচন, মানবিক করিডর, ‘মব ভায়োলেন্স’, চট্টগ্রাম বন্দর এবং সংস্কার নিয়ে তাঁর উক্তিগুলো তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
কিন্তু এই বক্তব্যের আরও গভীর বিশ্লেষণ উঠে এসেছে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও নির্বাসিত মানবাধিকারকর্মী জুলকারনাইন সায়ের খান (ওরফে সামি)-এর ফেসবুক পোস্টে। বাংলাদেশের মূলধারার কোনো মিডিয়ায় যেখানে এই আলোচনার পূর্ণ মাত্রা এখনো প্রকাশ পায়নি, সেখানে সায়েরের পোস্টে উঠে এসেছে একেবারে ভেতরের বাস্তবতা ও স্পষ্ট বার্তা।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সকল পদবীর কর্মকর্তাদের সাথে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সেনাপ্রধান ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের আলোচনার মূল অংশঃ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে।
১। সেনাপ্রধান শুরুতেই সকলকে পেশাদারিত্বের সাথে দীর্ঘসময় দায়িত্ব পালনের জন্যে ধন্যবাদ জানান।
২। তিনি বলেন এখন সময় এসেছে রাজনৈতিক সরকারের দেশ পরিচালনা করার।
৩। করিডোর, বন্দর এবং অন্যান্য নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো রাজনৈতিক সরকারের দ্বারা পরিচালিত হবে।সেনাপ্রধান স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন - কোন করিডোর হবে না।
তিনি জোর দিয়ে বলেন যে এমন সিদ্ধান্ত (যেমন, মানবিক বা কৌশলগত করিডোর খোলার বিষয় ) শুধুমাত্র একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের দায়িত্বের মধ্যে আসে, যা বর্তমান সরকার এর এক্তিয়ার ভূক্ত নয়। কাউকে কোন প্রকারের করিডোর দেওয়া যাবে না – এটি পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। এই সিদ্ধান্তে সেনাবাহিনী স্পষ্ট করে দিয়েছে, তারা কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা বিদেশি শক্তিকে অঘোষিত বা অনানুষ্ঠানিক “করিডোর” বা ছাড় দেয়ার নীতি অনুসরণ করবে না। কোন বিদেশী দূতাবাস বা গোষ্ঠির পরামর্শে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত হবেনা।
৪. ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবার ব্যাপারে উনি মন্তব্য করেন - আমি আশা করছি ০১ জানুয়ারী ২০২৬ থেকে নতুন নির্বাচিত সরকার বাংলাদেশ পরিচালনা করবে।
৫. তিনি বলেন হঠাৎ করে কিছু ব্যক্তি বিদেশ থেকে আসবে এবং এ দেশের বিভিন্ন স্পর্শকাতর বিষয়ে জানার ও নিজ মতানুযায়ী প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে। কাজ হয়ে গেলে সংক্ষিপ্ত সফর শেষ করে ফিরে যাবে..এমনটা হতে পারে না।
৬. জুলাই- আগস্টের জাতিসংঘের রিপোর্ট সম্পর্কে সেনাবাহিনী কিছুই জানতো না কেন? এ বিষয়ে জাতিসংঘকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তারা বলেছিল এটি আপনার সরকারের কাছে জানানো হয়েছে কিন্তু সরকার আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করেনি এবং আমাদের জানায়নি - কেন?
৭. সমস্ত রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিক সরকারের দ্বারা সমাধান করতে হবে।
৮। তিনি প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের কার্যক্রমে প্রশংসা করেন কিন্ত তারা সরকার পরিচালনার বিষয়ে অনভিজ্ঞ, সেই কারণে রাজনৈতিক সরকারের বিকল্প নেই একটি দেশ পরিচালনা করার জন্য।
৯। তিনি এক পর্যায়ে সবাইকে প্রশ্ন করেন, কেউ কি আমার দায়িত্ব গ্রহণ করতে ইচ্ছুক? তাহলে দয়া করে গ্রহণ করো।
১০। আমাদের ১/১১ এর অভিজ্ঞতা ভালো নয়। আমরা এমন কিছু কামনাও করিনা।
১১। তিনি কথা বার্তায় বেশ খোলামেলা ছিলেন। তিনি বললেন আমি জানি এখানে যা বলি সব সামাজিক মাধ্যমে চলে যাবে।
১২। তিনি আরও বললেন যে আমার কোন রাজনৈতিক ইচ্ছা বা উচ্চাভিলাষীতা নেই।
১৩। তিনি বলেন এখনও প্রমোশনের ক্ষেত্রে অনেক রাজনৈতিক চাপ আসছে।
১৪। তিনি সতর্ক করেছেন যে বর্তমান প্রশাসন অজান্তেই বাংলাদেশকে বিদেশী শক্তিগুলোর জন্য একটি যুদ্ধ ক্ষেত্রের ময়দানের দিকে ধাবিত করছে—একটি "প্রক্সি যুদ্ধ"।
১৫। একজন কমান্ডিং অফিসার জোর দিয়ে বলেছেন যে, দেশের স্বাধীনতা, জাতীয়তাবাদ, সার্বভৌমত্ব খর্বিত হয় এমন কোন কার্যকলাপ প্রশ্রয় দেয়া উচিত হবেনা।
১৬। উপস্থিত সকল কর্মকর্তা অফিসারগণ জেনারেল ওয়াকার এর সমর্থনে একত্রিত হয়ে আছে এবং উনার কমান্ড অনুসরণে কাজ করার জন্য প্রস্তুত, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা যে কোন মুহুর্তে সেনাপ্রধানের কমান্ড অনুযায়ী কাজ করতে একতাবদ্ধ বলে সমস্বরে ঘোষণা দেন।
১৭। সেনাবাহিনী আর সহিংসতা বা আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ সহ্য করবে না, কঠোরভাবে নিয়ম প্রতিপালনের দিকে সচেষ্ট থাকবে।
১৮। রাস্তায় মব তৈরি করে অরাজকতা আর মানা হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
১৯। সংস্কার নিয়ে সেনাবাহিনীর পরামর্শ সরকার আমলে নেয়নি বলেও তিনি মন্তব্য করেন। অদ্যাবধি ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও তেমন কোন উলেখ যোগ্য সংস্কার দেখা যায় নি।
২০। সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্টে ফিরে যাওয়া উচিত, তবে নির্বাচনের পরেও সেনাবাহিনীকে কয়েক মাস বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে হতে পারে।
২১। নির্বাচনকে সামনে রেখে এ বছরের বাকী ক্রীড়া প্রতিযোগীতা অয়োজন না করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।
২২। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশের সাধারণ জনগন দরিদ্র, তাদের ঘাম-রক্তের অর্থে আমাদের সবার বেতন হয়, সংসার চলে। তাদের স্বার্থ বিরোধী কোন কাজই যেন না ঘটে সে বিষয় আমাদের সকলকে অটল থাকতে হবে।
জুলকারনাইন সায়েরের এই আলোচনায় সেনাবাহিনীর সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এই গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভায় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা থেকে স্পষ্ট হয়—বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখন আর কোনো রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়াতে চায় না, বরং একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের নেতৃত্বেই রাষ্ট্র পরিচালনা দেখতে চায়। করিডোর বা বিদেশি হস্তক্ষেপের বিষয়ে তাঁর দৃঢ় অবস্থান এবং "প্রক্সি যুদ্ধ" নিয়ে সতর্কবার্তা দেশের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনীর কঠোর মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়। প্রমোশনসহ অভ্যন্তরীণ বিষয়েও রাজনৈতিক চাপের কথা তুলে ধরে তিনি যে স্বচ্ছতা ও আত্মবিশ্লেষণ করেছেন, তা বিরল। একই সঙ্গে তিনি যে সেনাবাহিনীকে শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্বের পথে রাখার সংকল্প নিয়েছেন, সেটিও পরিষ্কার। দেশ পরিচালনায় রাজনৈতিক সরকারের প্রয়োজনীয়তা ও সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষ অবস্থান প্রতিষ্ঠার এই বক্তব্য সময়োপযোগী এবং তাৎপর্যপূর্ণ।
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শেয়ারবাজারে গেম্বলারদের দৌরাত্ম্য: আস্থা ফেরাতে চাই কঠোর শাস্তি ও কাঠামোগত সংস্কার
- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের দীর্ঘ ছুটি, চালু থাকবে জরুরি সেবা
- বাংলাদেশে সেনা-সরকার উত্তেজনা ও ‘কু’ এর গুঞ্জন: নেপথ্যে কি?
- নতুন রাজনৈতিক সমীকরণে কারা টিকে থাকবে, কারা হারিয়ে যাবে?
- সেনাপ্রধানের বক্তব্য, জুলকারনাইন তাতে যা বললেন!
- তারকা পরিচিতি: রক্ষাকবচ না কি সমাজবিমুখ অব্যাহতি?
- নাহিদের স্পষ্ট বার্তা: এনসিপিতে নেই দুই উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজ
- বিএনপির সালাউদ্দিনকে নিয়ে কি লিখলেন প্রেস সচিব শফিকুল?
- বাংলাদেশে আন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপে মৌলিক অধিকার হুমকিতে
- দারুননাজাত: নৈতিকতার আলোকবর্তিকা
- মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসনের ভবিষ্যৎ কেন অনিশ্চিত
- ইউজিসি-ম্যাকগিল পিএইচডি স্কলারশিপ: শুধুমাত্রবাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য
- ডিপ্লোমেটিক শেকআপ: জসীম উদ্দিন দূতাবাসে , সচিব হচ্ছেন নজরুল
- ডিসেম্বরে নির্বাচন চান সেনাপ্রধান
- "ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সব রাজনৈতিক দল অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে"