জাপান সাগরে উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২২ ১৮:৩৭:২৭
জাপান সাগরে উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ
ছবিঃ সংগৃহীত

উত্তর কোরিয়া জাপান সাগরের দিকে বেশ কয়েকটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ (জেসিএস)-এর বরাত দিয়ে ইয়োনহাপ সংবাদ সংস্থা এই খবর জানিয়েছে।

ইয়োনহাপের প্রতিবেদন অনুসারে, গত জুনের শুরুতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং ক্ষমতা গ্রহণের পর এটিই উত্তর কোরিয়ার প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ।

এপেক সম্মেলনের আগে উত্তেজনা

শনাক্তকরণ: জেসিএস জানিয়েছে, তারা উত্তর কোরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় উত্তর হোয়াংহে প্রদেশের জুংঘোয়া থেকে উৎক্ষেপণগুলো সনাক্ত করেছে।

আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া: এক বিজ্ঞপ্তিতে জেসিএস বলেছে, "আমাদের সেনাবাহিনী অতিরিক্ত উৎক্ষেপণের (সম্ভাব্য) প্রস্তুতির জন্য নজরদারি বাড়িয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক তথ্য শেয়ার করার সময় দৃঢ় প্রস্তুতি বজায় রেখেছে।"

প্রেক্ষাপট: ৩১ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ায় আসন্ন এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (এপেক) শীর্ষ সম্মেলনের আগেও উত্তর কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনুষ্ঠানের কয়েকদিন আগে দক্ষিণ কোরিয়ায় যাবেন। ট্রাম্পের সফরের আগে উত্তর কোরিয়ার এই পদক্ষেপ আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বাড়াল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


নিজ সরকারের বিরুদ্ধেই ট্রাম্পের মামলা: মার্কিন রাজনীতিতে নজিরবিহীন ঘটনা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২২ ১১:৫৩:২৫
নিজ সরকারের বিরুদ্ধেই ট্রাম্পের মামলা: মার্কিন রাজনীতিতে নজিরবিহীন ঘটনা
ছবিঃ সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ (ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস) তার প্রতি অতীত তদন্তগুলোয় যে ক্ষতি করেছে, তার জন্য তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার তার রয়েছে। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “আমার প্রতি অনেক বড় ক্ষতি করা হয়েছে, এবং তারা (বিচার বিভাগ) সম্ভবত আমাকে অনেক অর্থ দিতে বাধ্য।”

নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রিপাবলিকান এই নেতার আইনজীবীরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পূর্ববর্তী ফেডারেল তদন্তগুলোর কারণে আনুমানিক ২৩ কোটি ডলার (২৩০ মিলিয়ন) ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। এই তদন্তগুলো পরিচালিত হয়েছিল ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার আগেই।

প্রতিবেদনের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “এই ধরনের সিদ্ধান্ত আমার টেবিলেই আসে। কিন্তু নিজের সরকারের কাছে নিজেকেই অর্থ প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বেশ অদ্ভুত ব্যাপার।” এরপরই হাস্যরস মিশিয়ে যোগ করেন, “তবুও যদি আমি দেশের কাছ থেকে কোনো অর্থ পাই, আমি তা ভালো কাজে ব্যয় করব—সম্ভবত দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দেব বা হোয়াইট হাউসের জন্য ব্যবহার করব।”

ট্রাম্পের বক্তব্য অনুযায়ী, বিচার বিভাগের ওই তদন্তগুলো ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তার ভাবমূর্তি নষ্টের পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। তিনি আরও বলেন, “আমার বিরুদ্ধে পরিচালিত এই মিথ্যা তদন্তগুলো থেকে আমি যে ক্ষতির শিকার হয়েছি, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।”

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একাধিক মিডিয়া প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, যাদের বিরুদ্ধে তিনি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগ তুলেছেন। কিছু ক্ষেত্রে তিনি আদালতে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণও পেয়েছেন। যদিও ক্ষতিপূরণ দাবির বিষয়ে নিশ্চিত প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা হতে পারে যে আমার আইনজীবীরা দাবি দাখিল করেছেন, কিন্তু সঠিক সংখ্যা আমি জানি না, আমি তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলিনি।”

তার আইনজীবী দলের এক মুখপাত্র এএফপি-কে বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনো ডেমোক্র্যাটদের নেতৃত্বাধীন মিথ্যা ‘উইচ হান্ট’-এর (জাদুবিদ্যা অনুসন্ধান বা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র) বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।”

উল্লেখযোগ্য যে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ এবং ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার প্রচেষ্টা নিয়ে ফেডারেল তদন্ত শুরু হয়েছিল। এ ছাড়া, গোপন নথি অপব্যবহার ও রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁসের অভিযোগেও তদন্ত চলে। তবে গত বছর পুনর্নির্বাচনের পর এই তদন্তগুলো বাতিল করে দেওয়া হয়।

নিউইয়র্ক টাইমস মন্তব্য করেছে, একজন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিজের সরকারের কাছ থেকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করার ঘটনা “আমেরিকার ইতিহাসে নজিরবিহীন।” পত্রিকাটি আরও বলেছে, এই পরিস্থিতি “গভীর নৈতিক ও প্রশাসনিক জটিলতা” তৈরি করতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই দাবি কেবল প্রশাসনিক অস্বস্তিই নয়, বরং মার্কিন শাসনব্যবস্থায় একটি অভূতপূর্ব সাংবিধানিক দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে। কারণ, একজন প্রেসিডেন্ট যদি সরকারের বিরুদ্ধে নিজেই ক্ষতিপূরণ দাবি করেন, তবে তা সরকারের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে।

অন্যদিকে, ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী টড ব্লাঞ্চ বর্তমানে বিচার বিভাগের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, যা বিষয়টিকে আরও সংবেদনশীল করে তুলেছে। তবে বিভাগের মুখপাত্র চ্যাড গিলমারটিন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “যেকোনো পরিস্থিতিতে বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা পেশাদার নৈতিক নির্দেশনার অধীনে কাজ করেন; ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা রাজনৈতিক পরিচয় তাদের দায়িত্ব পালনে কোনো প্রভাব ফেলে না।”

এদিকে, ট্রাম্প এখনো নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে ৩৪টি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, যা ২০১৬ সালের নির্বাচনের সময় এক পর্নোতারকার কাছে অর্থ প্রদানের ঘটনায় ‘হাশ মানি’ মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই আইনি ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে তার ক্ষতিপূরণ দাবির পদক্ষেপটি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

-আলমগীর হোসেন


“অবৈধ অনুপ্রবেশ”–অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চীনের অভিযোগে কূটনৈতিক টানাপোড়েন

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২২ ১১:৩৮:৫০
“অবৈধ অনুপ্রবেশ”–অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চীনের অভিযোগে কূটনৈতিক টানাপোড়েন
ছবিঃ সংগৃহীত

দক্ষিণ চীন সাগরে অস্ট্রেলিয়ার একটি সামরিক উড়োজাহাজের সঙ্গে সংঘটিত মাঝআকাশের এক ঘটনার পর চীন অস্ট্রেলিয়ার প্রতি কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। বুধবার এক বিবৃতিতে বেইজিংয়ের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জিয়াং বিন জানান, এই ঘটনায় চীন গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে “কঠোর প্রতিবাদ” জানিয়েছে।

গত রবিবার দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত আকাশসীমায় টহল দেওয়ার সময় অস্ট্রেলিয়ার একটি পি-৮এ পোসাইডন নজরদারি বিমান চীনের এক যুদ্ধবিমানের কাছাকাছি চলে আসে বলে অস্ট্রেলীয় প্রতিরক্ষা দপ্তর জানিয়েছে। তাদের দাবি, চীনা যুদ্ধবিমানটি খুব কাছ থেকে ফ্লেয়ার নিক্ষেপ করে, যা অস্ট্রেলীয় বিমানের ক্রুদের নিরাপত্তার জন্য “গুরুতর ঝুঁকি” তৈরি করেছিল।

অন্যদিকে, চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সোমবার দাবি করে যে অস্ট্রেলীয় বিমানটি “অবৈধভাবে চীনের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছিল”, বিশেষ করে সিশা দ্বীপপুঞ্জের (চীনের নাম অনুসারে পারাসেল দ্বীপমালা) উপর দিয়ে উড়ে যায়। মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, চীনা বাহিনী সেই সময় “কার্যকর পাল্টা ব্যবস্থা” গ্রহণ করেছিল, যা ছিল দেশের “সার্বভৌমত্ব রক্ষার অংশ”।

বুধবারের বিবৃতিতে বেইজিং অস্ট্রেলিয়ার অভিযোগকে “বাস্তবতা বিকৃতি” বলে আখ্যা দিয়ে জানায়, “অস্ট্রেলিয়া সত্য-মিথ্যা গুলিয়ে দিচ্ছে, চীনকে দায়ী করার চেষ্টা করছে এবং নিজেদের বেআইনি কর্মকাণ্ড ঢাকতে বিভ্রান্তি তৈরি করছে।” মুখপাত্র জিয়াং বিন বলেন, “এই ধরনের বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অগ্রহণযোগ্য। আমরা অস্ট্রেলিয়ার কাছে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করছি।”

তিনি আরও বলেন, “অস্ট্রেলিয়া চীনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে এবং ঘটনাটিকে অতিরঞ্জিত করে প্রচারণা চালাচ্ছে। এই ভ্রান্তি টেকসই নয়। আমরা অস্ট্রেলিয়াকে অবিলম্বে উসকানিমূলক, অবৈধ ও প্রচারনামুখী কার্যকলাপ বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।”

জিয়াং বিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, চীনের সামরিক বাহিনী দেশের জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকবে।

দক্ষিণ চীন সাগরের আকাশ ও জলসীমা দীর্ঘদিন ধরে অঞ্চলীয় বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু। চীন প্রায় পুরো সাগরটিকে নিজেদের অংশ হিসেবে দাবি করে, অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশ আন্তর্জাতিক নৌচলাচলের স্বাধীনতা বজায় রাখতে সেখানে টহল ও নজরদারি চালিয়ে থাকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই এলাকা ঘিরে চীন ও পশ্চিমা শক্তির মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে, যার সর্বশেষ প্রতিফলন এই ঘটনাটিই।

-নাজমুল হাসান


মস্কোর কৌশলী অবস্থান: ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে কেন ‘সময়সীমা নেই’?

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২১ ২১:৪৮:৩৩
মস্কোর কৌশলী অবস্থান: ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে কেন ‘সময়সীমা নেই’?
ছবিঃ সংগৃহীত

ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি বিষয়ে আলোচনার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বুদাপেস্টে সম্ভাব্য বৈঠক নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। মস্কো মঙ্গলবার জানিয়েছে, বৈঠকের জন্য ‘নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই’ এবং প্রস্তুতি নিতে কিছু সময় লাগতে পারে।

মস্কোর অবস্থান

ক্রেমলিনের বক্তব্য: ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, “প্রারম্ভিকভাবে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা ঠিক করা হয়নি” এবং বৈঠকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি প্রয়োজন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য: রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ মন্তব্য করেছেন, বৈঠকের পূর্বপ্রস্তুতির আলোচনা করার মতো সময় এখনো হয়নি। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, “মস্কোর অবস্থান আলাস্কার শীর্ষ বৈঠকের পর থেকে অপরিবর্তিত”, যা তিনি সরাসরি মার্কিন প্রতিনিধি মার্কো রুবিওকে জানিয়েছেন।

আলোচনার প্রেক্ষাপট

যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে যুদ্ধবিরতির শর্ত নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। আগামী ট্রাম্প–পুতিন বৈঠকের সময় ও স্থান নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আলাস্কার বৈঠকে অর্জিত সমঝোতা বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ বলে রাশিয়ার অবস্থান। আলাস্কার বৈঠকে পুতিন জানিয়েছিলেন, যুদ্ধে স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে প্রধান কারণগুলো নিরসন করা জরুরি।

সূত্র: আল-জাজিরা


কানাডায় প্রবেশ করলে নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করা হবে, ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২১ ২১:৪৪:১৩
কানাডায় প্রবেশ করলে নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করা হবে, ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর
ছবিঃ সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) নির্দেশ অনুযায়ী, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যদি কানাডার মাটিতে পা রাখেন, তবে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। এমনই এক ঘোষণা দিয়েছেন কানাডার নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি।

সোমবার (২০ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে কারনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, কানাডা আন্তর্জাতিক আইন ও জবাবদিহিতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই নীতির অংশ হিসেবেই রোম স্ট্যাটিউটের বাধ্যবাধকতা মেনে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করা হবে।

প্রথম পশ্চিমা দেশ

প্রধানমন্ত্রী কারনি বলেন, কানাডা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আদেশকে বাধ্যতামূলক বিচারিক নির্দেশ হিসেবেই বিবেচনা করবে। সুতরাং, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যদি কানাডার ভূখণ্ডে প্রবেশ করেন, তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।

প্রেক্ষাপট: গাজা যুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আইসিসি সম্প্রতি নেতানিয়াহু ও ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োগাভ গালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

আইনি বাধ্যবাধকতা: কানাডা রোম স্ট্যাটিউটের সদস্যরাষ্ট্র হওয়ায় আন্তর্জাতিক আদালতের এই নির্দেশ বাস্তবায়নের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে দেশটির।

এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো কোনো পশ্চিমা দেশ এমন প্রকাশ্য অবস্থান নিল, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, কানাডার এই ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে বড় ধরনের টানাপোড়েন সৃষ্টি করতে পারে। তবে মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা এটিকে ‘সাহসী ও নৈতিক নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।


আই লাভ মুহাম্মদ লেখা নিয়ে ভারতে উত্তেজনা: পুলিশের গুলি ও উচ্ছেদ অভিযান

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২১ ১৮:২৭:৪০
আই লাভ মুহাম্মদ লেখা নিয়ে ভারতে উত্তেজনা: পুলিশের গুলি ও উচ্ছেদ অভিযান
ছবিঃ সংগৃহীত

ভারতের উত্তর প্রদেশের শিল্পনগরী কানপুরের একটি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় গত ৪ সেপ্টেম্বর আলোকসজ্জা করা একটি সাইনবোর্ডে ‘আই লাভ মুহাম্মদ (সা.)’ লেখা টাঙানো হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয় এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ফলস্বরূপ, উত্তর প্রদেশের একাধিক শহরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার এবং উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে।

কানপুরের ঘটনা ও অভিযোগ

কানপুরের সাঈদ নগরের মুসলিম বাসিন্দারা মহানবী (সা.)-এর জন্মদিন উপলক্ষে ঈদে মিলাদুন্নবী উদ্‌যাপন করছিলেন। সাজসজ্জার অংশ হিসেবে তারা এই সাইনবোর্ড টাঙান।

আপত্তি: কানপুরের মোহিত বাজপায়ীসহ কয়েকজন হিন্দু ব্যক্তি এই সাইনবোর্ড টাঙানোর বিরুদ্ধে আপত্তি তোলেন। তাদের দাবি, ওই স্থানটি হিন্দুদের একটি উৎসবের জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে মুসলিম বাসিন্দারা বলছেন, সাইনবোর্ডটি এমন এক উন্মুক্ত স্থানে রাখা হয়েছিল, যেখানে তারা প্রতিবছর ঈদে মিলাদুন্নবী উদ্‌যাপনের জন্য জড়ো হন।

মামলা: এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নয়জন মুসলিম পুরুষ ও অজ্ঞাতপরিচয় ১৫ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে মামলা করা হয়।

বেরেলিতে সংঘর্ষ ও দমন

কানপুরের ঘটনার কয়েক দিন পরে এর প্রভাব উত্তর প্রদেশের আরেক শহর বেরেলিতে ছড়িয়ে পড়ে। গত ১০ সেপ্টেম্বর রাজ্য পুলিশ বেরেলিতে একজন ধর্মীয় নেতাসহ নয়জন মুসলিমের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে।

গ্রেফতার: গত ২৬ সেপ্টেম্বর জুমার নামাজের পর হাজার হাজার মুসলিম ‘আই লাভ মুহাম্মদ (সা.)’ লেখা পোস্টার হাতে নিয়ে মাজারের আশপাশে জড়ো হন। স্থানীয় প্রশাসনের অভিযোগ, এ সমাবেশের অনুমতি ছিল না। পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে এবং তৌকির রেজা খানসহ কয়েক ডজন মুসলিমকে গ্রেপ্তার করে। শহরে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।

রাজনৈতিক সমালোচনা: উগ্র হিন্দুত্ববাদী মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বেরেলির অস্থিতিশীলতার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, “একজন মাওলানা ভুলে গেছেন যে কে ক্ষমতায় আছে।” এরপর মুসলিমদের ওপর দমন-পীড়ন আরও বেড়ে যায়।

মানবতাবিরোধী কার্যকলাপ

উত্তর প্রদেশ ও অন্যান্য বিজেপিশাসিত রাজ্যে বিভিন্ন অভিযোগে মুসলিমদের বাড়ি ও ব্যবসায়িক স্থাপনা উচ্ছেদ করা এখন সাধারণ ঘটনা। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এসব উচ্ছেদকে ‘বুলডোজার জাস্টিস’ বলে নিষিদ্ধ করেছেন।

মানবাধিকার: মানবাধিকার সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব সিভিল রাইটস (এপিসিআর) জানিয়েছে, ‘আই লাভ মুহাম্মদ (সা.)’ সংক্রান্ত প্রচারণা কেন্দ্র করে ভারতের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ২২টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এবং আড়াই হাজারের বেশি মানুষের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

উদ্দেশ্য: উর্দু কবি মুনাওয়ার রানার মেয়ে সুমাইয়া রানা অভিযোগ করেন, “বিজেপি সরকার ভীতি সঞ্চার করতে চায়, যাতে মুসলিমরা তাদের ধর্মীয় ও মৌলিক অধিকার রক্ষায় কথা বলার সাহস না পায়।”


দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন অন্ধ রোগীরা: চোখে মাইক্রোচিপ প্রতিস্থাপনে ‘চমকপ্রদ’ সাফল্য

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২১ ১৫:২৬:১৩
দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন অন্ধ রোগীরা: চোখে মাইক্রোচিপ প্রতিস্থাপনে ‘চমকপ্রদ’ সাফল্য
ছবিঃ সংগৃহীত

দৃষ্টিহীন রোগীদের চোখে অত্যাধুনিক একটি মাইক্রোচিপ সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে রোগীরা আবার দেখতে পাচ্ছেন। লন্ডনের মুরফিল্ডস আই হসপিটালে একদল দৃষ্টিহীন রোগীর ওপর পরিচালিত আন্তর্জাতিক এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফলকে চিকিৎসকরা ‘চমকপ্রদ’ বলে দাবি করেছেন।

প্রযুক্তি ও অপারেশনের বিবরণ

ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক বায়োটেক সংস্থা সায়েন্স করপোরেশনের তৈরি ‘প্রিমা ইমপ্লান্ট’ নামক এই ডিভাইসটি মানুষের চুলের মতো পাতলা, ২ মিলিমিটার আয়তনের বর্গাকার একটি ফটোভোলটাইক মাইক্রোচিপ। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এটিকে রেটিনার ঠিক নিচে স্থাপন করা হয়।

কার্যপদ্ধতি: রোগীরা বিশেষ ধরনের স্মার্ট চশমা পরেন, যাতে একটি ক্ষুদ্র ক্যামেরা যুক্ত থাকে। এই ক্যামেরা ইনফ্রারেড রশ্মির মাধ্যমে ভিডিও চিত্র ইমপ্লান্টে পাঠায়। ইমপ্লান্ট সেই তথ্যকে একটি ছোট প্রসেসরে পাঠিয়ে স্পষ্ট করে এবং উন্নত প্রতিচ্ছবিটি ইমপ্লান্ট ও অপটিক নার্ভের মাধ্যমে মস্তিষ্কে ফিরে যায়, যেখানে মস্তিষ্ক সেটি প্রক্রিয়া করে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেয়।

সফলতা: নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, ট্রায়ালে অংশ নেওয়া ৩২ জন রোগীর মধ্যে ২৭ জন রোগী পড়তে সক্ষম হয়েছেন।

রোগী ও চিকিৎসকের সন্তুষ্টি

সত্তর বছর বয়সী দৃষ্টিহীন রোগী শিলা আরভিন, যিনি এই প্রযুক্তির সাহায্যে আবার বই পড়তে এবং ক্রসওয়ার্ড মেলাতে পারছেন, বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এটিকে ‘অভূতপূর্ব’ এক অভিজ্ঞতা বলে বর্ণনা করেন।

মুরফিল্ডস আই হসপিটালের কনসালট্যান্ট অপথ্যালমিক সার্জন ড. মাহী মুকিত, যিনি যুক্তরাজ্যের এই ট্রায়ালের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনি বলেন, “এটি প্রথম ইমপ্লান্ট যা রোগীদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছে। আমি মনে করি এটি একটি বড় অগ্রগতি।”

মাকুলার সোসাইটির গবেষণা পরিচালক ড. পিটার ব্লুমফিল্ড এই ফলাফলকে নিরাময় অযোগ্য রোগ ‘ড্রাই এজ-রিলেটেড মাকুলার ডিজেনারেশন’ বা জিওগ্রাফিক অ্যাট্রোফিতে আক্রান্ত প্রায় ৫০ লাখ মানুষের জন্য ‘দারুণ খবর’ বলে অভিহিত করেছেন। ড. মুকিত আশা প্রকাশ করেছেন, এই প্রযুক্তিটি আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই যুক্তরাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা সংস্থা এনএইচএস (NHS)-এর রোগীদের জন্য ব্যবহার করা যাবে।

তবে, যাদের চোখের অপটিক নার্ভ (যেটি রেটিনা থেকে মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়) ঠিকমতো কাজ করে না, তাদের জন্য এই প্রযুক্তি কাজে আসবে না।

সূত্র: বিবিসি


নারী নেতৃত্বে জাপান: তাকাইচি পেলেন পার্লামেন্টের আস্থা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২১ ১১:৫৮:৪০
নারী নেতৃত্বে জাপান: তাকাইচি পেলেন পার্লামেন্টের আস্থা
ছবিঃ সংগৃহীত

জাপানের রাজনীতিতে নতুন ইতিহাস গড়লেন সানায়ে তাকাইচি। দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ মঙ্গলবার তাঁকে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেছে। ৬৪ বছর বয়সী এই রক্ষণশীল রাজনীতিক ও চীনবিরোধী কণ্ঠস্বর অপ্রত্যাশিতভাবে প্রথম দফার ভোটেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান।

নির্বাচনের পর মঙ্গলবারই সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তাকাইচি। এভাবেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী জাপানি রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে, যেখানে প্রথমবারের মতো নারী নেতৃত্বে দেশটির সরকার পরিচালিত হবে।

রক্ষণশীল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) দীর্ঘদিনের সদস্য তাকাইচি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ করে প্রতিরক্ষা, জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি নিয়ে কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত। চীনের সম্প্রসারণবাদী নীতির বিরোধিতা এবং জাপানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর পক্ষে তাঁর অবস্থান আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও আলোচিত।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান আরও দৃঢ় পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করবে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে। পাশাপাশি, তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়া জাপানের সামাজিক কাঠামোতেও নারীর নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

-হাসানুজ্জামান


ট্রাম্পের হুমকিতে উত্তাল বোগোতা: যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করল কলম্বিয়া

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২১ ১১:৪৫:৪৪
ট্রাম্পের হুমকিতে উত্তাল বোগোতা: যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করল কলম্বিয়া
ছবিঃ সংগৃহীত

দক্ষিণ আমেরিকার ঐতিহ্যবাহী মিত্র দেশ কলম্বিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক তীব্র সংকটে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান ও সহায়তা প্রত্যাহারের ঘোষণা ঘিরে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন চরমে পৌঁছেছে। সোমবার কলম্বিয়া তাদের ওয়াশিংটনস্থিত রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল গার্সিয়া পেনাকে ‘পরামর্শের জন্য’ দেশে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেয়, যা কার্যত দুই দেশের মধ্যে গভীর কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের প্রতিফলন।

ট্রাম্প রবিবার ঘোষণা দেন যে, যুক্তরাষ্ট্র কলম্বিয়াকে দেওয়া সব ধরনের অর্থনৈতিক সহায়তা বন্ধ করে দেবে। তিনি কলম্বিয়ার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোকে ‘অবৈধ মাদক ব্যবসার নেতা’ হিসেবে অভিযুক্ত করে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন। ট্রাম্পের হুমকি—যদি পেত্রো সরকার মাদক চাষ বন্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে কলম্বিয়ার ওপর ‘শাস্তিমূলক শুল্ক’ আরোপসহ আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

কলম্বিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর্মান্দো বেনেদেত্তি ট্রাম্পের মন্তব্যকে ‘আক্রমণ বা সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রকে মাদকবিরোধী লড়াইয়ের নামে ভয় দেখানো আন্তর্জাতিক আইন ও কূটনৈতিক রীতির পরিপন্থী।”

গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট পদে ফিরে আসার পর থেকেই তার সঙ্গে পেত্রোর সম্পর্ক ক্রমেই অবনতির দিকে। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যারিবীয় অঞ্চলে চালানো প্রাণঘাতী মাদকবিরোধী অভিযানের কারণে উত্তেজনা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। আগস্ট থেকে মার্কিন নৌবাহিনী দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল এলাকায় যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে অন্তত সাতটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে, যেগুলোকে তারা ‘মাদকবাহী জাহাজ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, এসব অভিযানে ৩২ জন নিহত হয়েছে, যদিও এ বিষয়ে কোনো স্বাধীন তদন্ত বা প্রমাণ প্রকাশ করা হয়নি।

মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন ‘সারসংক্ষেপ হত্যাকাণ্ড’ আন্তর্জাতিক আইনে বেআইনি, এমনকি যদি লক্ষ্যবস্তু মাদক পাচারকারীও হয়। সাম্প্রতিক অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল ভেনেজুয়েলা, তবে এখন মনোযোগ পড়েছে কলম্বিয়ার দিকে। রবিবার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ জানিয়েছেন, কলম্বিয়ার বিদ্রোহী সংগঠন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (ইএলএন)-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি নৌযানে হামলায় তিনজন নিহত হয়েছে। এর আগে একটি আধা-ডুবোজাহাজে চালানো হামলায় দুজন জীবিত উদ্ধার হয়, যাদের একজন কলম্বিয়ান নাগরিক।

এই ঘটনার পর প্রেসিডেন্ট পেত্রো ট্রাম্পকে প্রকাশ্যে ‘খুনের দায়ে অভিযুক্ত’ করে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র কলম্বিয়ার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে।” তিনি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি বিশ্বাস করি যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো সত্য ও বিজ্ঞানের পক্ষে দাঁড়াবে, অহংকার ও মিথ্যার পক্ষে নয়। ট্রাম্প স্বাধীন মানুষ পছন্দ করেন না, কারণ তিনি নিজেকে রাজা ভাবেন।”

দীর্ঘদিন ধরে কলম্বিয়া দক্ষিণ আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সহায়তাপ্রাপ্ত দেশ। ২০২৩ সালে দেশটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ৭৪০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য পেয়েছিল, যার অর্ধেকই মাদকবিরোধী কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সম্পর্ক এমন পর্যায়ে নেমে এসেছে যে, ওয়াশিংটন কলম্বিয়াকে ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধে অবিশ্বস্ত সহযোগী’ ঘোষণা করেছে। জবাবে বোগোতা যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র কেনা স্থগিত করে।

এ বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় নিউইয়র্কে প্রো-প্যালেস্টাইন সমাবেশে অংশ নেওয়ার কারণে পেত্রোর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার (ভিসা) বাতিল করে ওয়াশিংটন। ফলে দুই ঐতিহাসিক মিত্র দেশের সম্পর্ক এখন কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে।

২০২২ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পেত্রো যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন মাদকবিরোধী যুদ্ধের ‘জবরদস্তিমূলক’ কৌশল পরিবর্তনের আহ্বান জানান। তার মতে, মাদক চাষ নির্মূলের চেয়ে সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা ও বিকল্প জীবিকা নিশ্চিত করাই টেকসই সমাধান। তবে তার শাসনামলে কোকা চাষ প্রায় ৭০ শতাংশ বেড়েছে বলে জাতিসংঘ ও কলম্বিয়া সরকারের নিজস্ব প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প প্রশাসনের হুমকি এবং কলম্বিয়ার রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার—দুই দেশকেই এমন এক সংঘাতময় পথে ঠেলে দিচ্ছে, যার পরিণতি লাতিন আমেরিকার রাজনীতিতে নতুন অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

-আলমগীর হোসেন


গাজায় রক্ত ঝরছে, মার্কিন দূতরা ইসরায়েলে: শান্তিচুক্তি কি টিকে থাকবে?

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২১ ১১:২৫:১৯
গাজায় রক্ত ঝরছে, মার্কিন দূতরা ইসরায়েলে: শান্তিচুক্তি কি টিকে থাকবে?
ছবিঃ সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি বিমান ও স্থল হামলা অব্যাহত থাকায় শান্তি টিকিয়ে রাখতে মার্কিন দূতেরা কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছেন। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, সোমবার (২০ অক্টোবর) গাজা সিটির তুফাহ এলাকার পূর্বাংশ আল-শাফে দুটি ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা নিজেদের বাড়ি দেখে ফেরার পথে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারান।

সীমা না মানা ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

ইসরায়েলি দাবি: ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা এমন সন্ত্রাসীদের দিকে গুলি চালিয়েছে, যারা শুজাইয়া এলাকায় তথাকথিত হলুদ সীমারেখা অতিক্রম করে ইসরায়েলি সেনাদের দিকে এগিয়ে গিয়েছিল। এই সীমারেখাটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রকাশিত মানচিত্রে নির্ধারিত, যেখানে ইসরায়েলি সেনারা যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে পিছু হটে অবস্থান করছে।

ফিলিস্তিনিদের বিভ্রান্তি: গাজা সিটির বাসিন্দারা জানান, পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় এই সীমারেখাটি কোথায়, তা তারা বুঝতে পারছেন না। স্থানীয় বাসিন্দা সামির (৫০) বলেন, “আমরা মানচিত্র দেখেছি, কিন্তু বাস্তবে কোনো সীমারেখা খুঁজে পাওয়া যায় না।”

হামলার ধারাবাহিকতা: রোববারের (১৯ অক্টোবর) ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৪২ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল দাবি করেছে, এটি প্রতিশোধমূলক হামলা। তবে হামাস সেই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ইসরায়েল অজুহাত তৈরি করে যুদ্ধ পুনরায় শুরু করতে চাইছে।

হামাসকে ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি ও কূটনৈতিক তৎপরতা

ট্রাম্পের বার্তা: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, হামাসের ভেতরে কিছু বিদ্রোহী উপাদান রয়েছে, যা সংগঠনের নেতাদের ঠিক করতে হবে। তিনি বলেন, “তাদের ভালো হতে হবে। না হলে তারা নিশ্চিহ্ন হবে।” তবে তিনি স্পষ্ট করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের স্থল সেনা এতে অংশ নেবে না।

মার্কিন কূটনীতি: অবিরত সহিংসতার মধ্যে সোমবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ ও জামাতা জ্যারেড কুশনার ইসরায়েল পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আগামী মঙ্গলবার মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইসরায়েল সফরে যাবেন।

তবে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান দ্যুজারিক বলেছেন, গাজায় সাহায্য পৌঁছানো এখনো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজযুম জানান, একাধিক চেকপোস্ট সাহায্যবাহী ট্রাকগুলোকে আটকে রেখেছে।

পাঠকের মতামত: