হামাস-ইসরায়েল চুক্তি কার্যকর: ধ্বংসস্তূপের মাঝে ফিরছে ফিলিস্তিনিরা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১২ ১০:২১:১৩
হামাস-ইসরায়েল চুক্তি কার্যকর: ধ্বংসস্তূপের মাঝে ফিরছে ফিলিস্তিনিরা
ছবিঃ সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর পাঁচ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি তাদের পুরোনো বাসস্থানে ফিরে এসেছেন। গাজা সিটির সিভিল ডিফেন্স সংস্থা শনিবার (১১ অক্টোবর) এই তথ্য জানিয়েছে।

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস পরিচালিত উদ্ধার সংস্থা সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসসাল বলেন, “গতকাল (শুক্রবার) থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ গাজা (সিটিতে) ফিরে এসেছেন।”

ধ্বংসস্তূপের মাঝে প্রত্যাবর্তন

গত কয়েক সপ্তাহের ভারি বোমাবর্ষণে গাজা সিটির বহু এলাকা এমন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, যা সেখানকার মানুষ কল্পনাও করেননি। তবুও তারা নিজেদের এলাকায় ফিরে যাচ্ছেন।

প্রায় দুই বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।

চুক্তি ও যুদ্ধবিরতি

আলোচনা: ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাব নিয়ে গত সোমবার (৬ অক্টোবর) মিশরের শারম আল-শেখে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় হামাস ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিদের পরোক্ষ আলোচনা শুরু হয়।

চুক্তি: টানা তিন দিনের আলোচনার পর বুধবার (৮ অক্টোবর) রাতে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রস্তাবের প্রথম ধাপ মানতে দুই পক্ষ সম্মত হয়।

কার্যকর: শুক্রবার (১০ অক্টোবর) ইসরায়েলি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি অনুমোদন করে এবং এদিনই গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর ও সেনা প্রত্যাহার শুরু হয়েছে বলে জানায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ)।


সৌদি আরবের মক্কা অঞ্চলে বিশাল সোনার খনি আবিষ্কার

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১২ ২১:১১:৪০
সৌদি আরবের মক্কা অঞ্চলে বিশাল সোনার খনি আবিষ্কার
ছবিঃ সংগৃহীত

সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা অঞ্চলে বিশাল এক সোনার খনি আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রায় ১২৫ কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত এই খনিজভাণ্ডারকে দেশটির ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ আবিষ্কার হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। মানসুরা–মাসারাহ সোনার খনির দক্ষিণে পাওয়া এই নতুন সোনার খনি ইতোমধ্যেই সৌদি অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। খবর দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনালের।

অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত মাইলফলক

রাষ্ট্রীয় খনিজ কোম্পানি ‘মাআদেন’ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে প্রায় ১০০ কিলোমিটারজুড়ে উচ্চমাত্রার সোনার উপস্থিতি শনাক্ত করা গেছে। পরীক্ষাগারে নেওয়া নমুনায় দেখা গেছে, প্রতি টন মাটিতে সর্বোচ্চ ২০.৬ গ্রাম পর্যন্ত সোনা পাওয়া গেছে—যা আন্তর্জাতিক মানে ‘অত্যন্ত সমৃদ্ধ’ হিসেবে ধরা হয়।

মাআদেনের প্রধান নির্বাহী রবার্ট উইলে বলেন, “এই নতুন আবিষ্কার মক্কাকে বৈশ্বিক সোনার মানচিত্রে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এটি শুধু অর্থনৈতিক নয়, প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রেও এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।”

বর্তমানে মানসুরা–মাসারাহ খনিতে প্রায় ৭০ লাখ আউন্স সোনা মজুত আছে এবং প্রতিবছর এখান থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার আউন্স সোনা উত্তোলন করা হয়। নতুন আবিষ্কারের ফলে উৎপাদন বহুগুণে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরো অঞ্চলজুড়ে ১২৫ কিলোমিটারব্যাপী এক ‘গ্লোবাল গোল্ড বেল্ট’ বা আন্তর্জাতিক মানের স্বর্ণপট্টি গড়ে উঠতে পারে।

ভিশন ২০৩০ ও বৈশ্বিক প্রভাব

এই সোনার খনি আবিষ্কার সৌদি আরবের ‘ভিশন ২০৩০’ উদ্যোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। দেশটি দীর্ঘদিন ধরে তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে খনিজ, প্রযুক্তি ও শিল্পখাতকে অর্থনীতির নতুন চালিকাশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে।

সৌদি শিল্প ও খনিজসম্পদমন্ত্রী বান্দার আলখোরাইফ বলেছেন, “এই নতুন সোনার খনি আবিষ্কার সৌদি অর্থনীতির বৈচিত্র্যকরণের যাত্রায় ঐতিহাসিক মাইলফলক হয়ে থাকবে।”

মাআদেন আরও জানিয়েছে, মক্কার কাছাকাছি ওয়াদি আল-জাও ও জাবাল শাইবান অঞ্চলেও নতুন সোনা ও তামার ভাণ্ডার আবিষ্কৃত হয়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই নতুন খনি হাজার হাজার কর্মসংস্থান তৈরি করবে এবং বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে। এতে সৌদি আরব আন্তর্জাতিক সোনার বাজারে আরও শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারবে।


আফগান সীমান্তে পাকিস্তানের সামরিক অভিযান: বড় সংখ্যক তালেবানকে হত্যার দাবি

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১২ ১৯:১৯:১৮
আফগান সীমান্তে পাকিস্তানের সামরিক অভিযান: বড় সংখ্যক তালেবানকে হত্যার দাবি
ছবিঃ সংগৃহীত

আফগান তালেবান এবং ভারত-সমর্থিত সন্ত্রাসী সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর হামলার জবাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মরক্ষামূলক অভিযানে ২০০ জনের বেশি সন্ত্রাসীকে হত্যা করার দাবি করেছে। রোববার (১২ অক্টোবর) পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে।

আফগান ভূখণ্ডে ঘাঁটি দখল

বিবৃতিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, আফগান ভূখণ্ডে থাকা তালেবান ঘাঁটি, সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণকেন্দ্র এবং সহায়ক নেটওয়ার্কে সুনির্দিষ্ট হামলা চালানো হয়েছে। এই অভিযানের সময়:

২১টি ঘাঁটি দখল: সীমান্তজুড়ে তালেবানের একাধিক স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে এবং আফগান ভূখণ্ডের ভেতরে ২১টি শত্রু ঘাঁটি অস্থায়ীভাবে দখল করা হয়েছে।

ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি: তালেবান পোস্ট, ক্যাম্প, সদর দপ্তর ও সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলোর অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক, যা সীমান্তজুড়ে কৌশলগত ও কার্যক্রমগত স্তরে ছড়িয়ে আছে।

সন্ত্রাস ও ভারতের সংশ্লিষ্টতা

পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র বলেন, ইসলামাবাদ সহযোগিতামূলক কূটনীতি ও সংলাপকে অগ্রাধিকার দিলেও, আফগান মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদের কার্যক্রম কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না।

আইএসপিআর সতর্ক করে বলেছে, যদি তালেবান সরকার ভারতীয় সহযোগিতায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিয়ে অঞ্চলের অস্থিতিশীলতা বাড়াতে থাকে, তাহলে পাকিস্তান থেমে থাকবে না। আফগানিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসবাদের মূল উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।

সম্প্রতি আফগান বাহিনীর গুলিবর্ষণ থেকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। আঙ্গুরআডা, বাজাউর, কুররম, দির, চিত্রাল ও বারামচাসহ একাধিক সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।

আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

এদিকে, এই উত্তেজনা বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব, কাতার ও ইরান। প্রতিবেশী এই দুই দেশের প্রতি সংযম প্রদর্শন এবং সংলাপের মাধ্যমে বিরোধ মেটানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

সূত্র : জিয়ো নিউজ


ইসরায়েল ধোঁকা দিতে পারে: গাজার চুক্তি মানা নিয়ে সংশয়ে ইরান

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১২ ১৪:৩৮:৪৪
ইসরায়েল ধোঁকা দিতে পারে: গাজার চুক্তি মানা নিয়ে সংশয়ে ইরান
ছবিঃ সংগৃহীত

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও দখলদার ইসরায়েলের প্রতি কোনো আস্থা নেই বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। তিনি বলেছেন, “ইসরায়েলের পূর্বের চুক্তি এবং আগ্রাসনবিরতি নিয়ে আমরা সজাগ। জায়োনিস্ট শাসক ধোঁকা ও প্রতারণা করতে পারে। এই শাসকের প্রতি আমাদের কোনো আস্থা নেই।”

যুদ্ধ থামাতে সমর্থন

আরাঘচি লেবাননে পূর্বের আগ্রাসনবিরতির লঙ্ঘনের উদাহরণ উল্লেখ করে বলেন, ইসরায়েলের পূর্বের চুক্তিভঙ্গের বিষয়ে ইরান সতর্ক। তবে তিনি আগ্রাসনবিরতির প্রতি ইরানের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, যে কোনো পরিকল্পনা যা এই অপরাধ থামাতে সাহায্য করবে, তাতে ইরানের সবসময় সমর্থন রয়েছে।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ইরান সব ধরনের পদক্ষেপ বা উদ্যোগকে সমর্থন করে, যা গণহত্যামূলক যুদ্ধ থামানো, দখলদার বাহিনী প্রত্যাহার, মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি এবং ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের অন্তর্ভুক্ত।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের বার্তা

আরাঘচি জানান, মোটামুটি তিন-চার দিন আগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে একটি টেলিফোন আলাপ হয়েছিল। নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে বলেছেন, ইরানের সঙ্গে নতুন যুদ্ধ শুরু করার কোনো ইচ্ছা তার নেই। রাশিয়ার মাধ্যমে ইরানকে এই বার্তাটি দেওয়া হয়েছে বলে আরাঘচি নিশ্চিত করেন।

উল্লেখ্য, ইরান ও ইসরায়েল জুনে ১২ দিনের যুদ্ধ করেছে, যা শুরু হয়েছিল ইসরায়েলের ইরানের নিউক্লিয়ার ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে অভূতপূর্ব হামলার মাধ্যমে।


আফগানিস্তানের ‘প্রতিশোধমূলক’ অভিযান: সীমান্তে তীব্র সংঘাত

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১২ ১৪:১০:২৯
আফগানিস্তানের ‘প্রতিশোধমূলক’ অভিযান: সীমান্তে তীব্র সংঘাত
ছবিঃ সংগৃহীত

আফগান সীমান্তের কাছে পরিচালিত রাতভর এক অভিযানে পাকিস্তানের ৫৮ জন সেনাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার। রোববার (১২ অক্টোবর) বার্তাসংস্থা এপি’র প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

তালেবান সরকারের প্রধান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, আফগান বাহিনী পাকিস্তানের ২৫টি ঘাঁটি দখল করেছে এবং ৫৮ জন সেনাকে হত্যা করেছে। এ ছাড়া অভিযানে আরও ৩০ জন পাকিস্তানি সেনা আহত হয়েছে।

প্রতিশোধ ও নিরাপত্তা

কাবুলে এক সংবাদ সম্মেলনে মুজাহিদ বলেন, আফগানিস্তানের সকল সরকারি সীমান্ত এবং 'কার্যত রেখার' পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং অবৈধ কার্যকলাপ অনেকাংশে প্রতিরোধ করা হয়েছে। তালেবানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের বাহিনী সীমান্ত সংলগ্নে প্রতিশোধমূলক এবং সফল অভিযান চালিয়েছে। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যদি বিরোধী পক্ষ আবারও আফগানিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন করে, তাহলে আফগান সশস্ত্র বাহিনী কঠোর জবাব দেবে।

এর আগে, পাকিস্তান গত বৃহস্পতিবার আফগান আকাশসীমা লঙ্ঘন করে, তাদের সীমান্তের ভেতরে একটি বাজারে বোমা হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করে তালেবান সরকার। এর জেরেই এই হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে আফগানিস্তান।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া

সেনা হতাহত ও ঘাঁটি দখলের আফগানিস্তানের দাবি নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানায়নি পাকিস্তান। তবে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি বলেছেন, আফগান হামলাগুলো 'বিনা উস্কানিতে' করা হয়েছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের উপর গুলি চালানো হয়েছে।

নাকভি সতর্ক করেছেন যে, তার দেশের বাহিনী 'প্রতিটি ইটের বিনিময়ে একটি পাথর' দিয়ে পাল্টা জবাব দেবে। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে বলেছেন, আফগানিস্তান আগুন ও রক্তের খেলা খেলছে।

উল্লেখ্য, এর আগে পাকিস্তান দাবি করে, তারা আফগানিস্তানের ১৯টি ঘাঁটি দখল এবং ৫০ জন তালেবানকে হত্যা করেছে।


গাজায় শান্তির সন্ধিক্ষণ: সোমবার শারম এল-শেখে ট্রাম্প ও সিসির নেতৃত্বে বৈশ্বিক শীর্ষ সম্মেলন

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১২ ০৮:৪৪:৩৭
গাজায় শান্তির সন্ধিক্ষণ: সোমবার শারম এল-শেখে ট্রাম্প ও সিসির নেতৃত্বে বৈশ্বিক শীর্ষ সম্মেলন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি

গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূমিতে এক অনিশ্চিত শান্তির প্রাক্কালে নতুন আশার আলো জ্বলছে। আগামী সোমবার মিশরের শারম এল-শেখে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এক ঐতিহাসিক শান্তি সম্মেলন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবেন। এই বৈঠকে অংশ নেবেন ২০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা। মিশরের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, বৈঠকের লক্ষ্য হলো গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতার নতুন অধ্যায় সূচনা করা।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ইতালির জর্জিয়া মেলোনি, স্পেনের পেদ্রো সানচেজ এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইতিমধ্যেই সম্মেলনে যোগদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কিংবা হামাসের কোনো প্রতিনিধি এতে অংশ নেবেন কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

এর মধ্যেই যুদ্ধবিরতির পর গাজার হাজারো মানুষ উপকূলবর্তী এলাকায় ফিরে যাচ্ছেন তাদের বিধ্বস্ত ঘরে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলি বাহিনী আংশিকভাবে গাজা থেকে সরে গেছে, যা এই যুদ্ধের প্রথম ধাপের অংশ হিসেবে বন্দি বিনিময়, সেনা প্রত্যাহার ও মানবিক সহায়তা প্রেরণের পথ খুলে দিয়েছে। গাজা সিটি থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, “যুদ্ধবিরতি হয়তো এক ধরনের সহিংসতা থামিয়েছে, কিন্তু বেঁচে থাকার লড়াই প্রতিটিমুহূর্তেচলছে।”

গাজার সরকারি তথ্যকেন্দ্র জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির পর থেকে অন্তত পাঁচ হাজার ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম চালানো হয়েছে। সিভিল ডিফেন্স ও পৌর কর্তৃপক্ষ ৮৫০টিরও বেশি উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে শতাধিক মৃতদেহ উদ্ধার করেছে, যেখানে দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরেই ২৮টি মৃতদেহ পাওয়া গেছে। পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার প্রায় ৯০০টি মেরামত কার্যক্রমও সম্পন্ন হয়েছে, যদিও ইসরায়েলি অবরোধের কারণে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও জ্বালানি প্রবেশ এখনো সীমিত।

ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসপ্রাপ্ত খান ইউনিসের মেয়র জানিয়েছেন, দক্ষিণাঞ্চলের ৮৫ শতাংশ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং শহর থেকে প্রায় চার লাখ টন ধ্বংসাবশেষ সরাতে হবে। মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো সীমান্ত খুলে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানিয়েছে, তারা ১৪৫টি খাদ্য বিতরণকেন্দ্র পুনরায় চালু করতে প্রস্তুত, যদি ইসরায়েল আরও সীমান্ত খুলে দেয়।

এদিকে, ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে সোমবার গাজায় আটক ইসরায়েলি বন্দিদের প্রথম দলকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং বিনিময়ে ইসরায়েলও ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দি ও প্রায় ১,৭০০ জন আটক ব্যক্তিকে মুক্তি দেবে। বন্দিদের পরিবার ও ইসরায়েলি জনতা তেলআবিবে জড়ো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই মধ্যস্থতাকে ‘শান্তির অগ্রদূত’ হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে।

ট্রাম্পের উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার ও ইভাঙ্কা ট্রাম্পও সেই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, “আজকের রাতটি ইতিহাসের অংশযে রাতের স্বপ্ন আমরা দীর্ঘদিন দেখেছি।” ইসরায়েলি জনতার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে—“ধন্যবাদ ট্রাম্প, ধন্যবাদ উইটকফ।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সম্মেলন মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত নিরসনে এক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। বিশ্বশক্তিগুলোর উপস্থিতি এবং যুক্তরাষ্ট্র-মিশরীয় নেতৃত্ব হয়তো নতুন এক শান্তির ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।

-ইশরাত ওয়ারা


ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল না দেওয়ায় চটলেন পুতিন

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১১ ১৪:১২:০৩
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল না দেওয়ায় চটলেন পুতিন
ছবিঃ সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জটিল আন্তর্জাতিক সংকট সমাধানে ‘অতি আপ্রাণ প্রচেষ্টা’ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি মন্তব্য করেছেন, নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটি এমন ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করেছে, যারা শান্তির জন্য কিছুই করেনি, ফলে পুরস্কারের সম্মান কমেছে।

শুক্রবার (১০ অক্টোবর) দূশানবেতে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন এসব কথা বলেন।

নোবেল ও গাজা শান্তি পরিকল্পনা

পুতিন যুক্তি দেখান যে, ট্রাম্প দীর্ঘকাল ধরে চলা জটিল সংকট সমাধানে অনেক কাজ করছেন। তিনি বিশেষভাবে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, যদি ট্রাম্পের ২০-দফা পরিকল্পনা গাজা অঞ্চলে কার্যকর হয়, তা হবে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, ট্রাম্প আন্তরিকভাবে যুদ্ধ শেষ করার চেষ্টা করছেন।

এর আগে শুক্রবার নরওয়ের নোবেল কমিটি ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাডোকে ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করে। মাচাডোকে ‘ভেনেজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার জন্য’ পুরস্কার দেওয়া হয়।

ট্রাম্পের কৃতজ্ঞতা

পুতিনের এই মন্তব্যের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি তার ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, “প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ধন্যবাদ!” এবং পুতিনের বক্তব্যের ভিডিওটি শেয়ার করেছেন।


নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা: কে পেলেন এ বছরের সম্মানজনক পুরস্কার?

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১০ ১৫:১০:১৭
নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা: কে পেলেন এ বছরের সম্মানজনক পুরস্কার?

এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছেন ভেনেজুয়েলার রাজনীতিক মারিয়া কোরিনা মাচাডো। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টায় নরওয়ের অসলো থেকে নোবেল কমিটি তার নাম ঘোষণা করে।

শান্তি পুরস্কারকে নোবেলের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার হিসেবে দেখা হয়। গত বছর (২০২৪) এই পুরস্কার পেয়েছিল জাপানের অ্যান্টি-নিউক্লিয়ার সংগঠন নিহন হিদানকিয়ো।

বিজয়ীর পটভূমি ও পুরস্কারের চিত্র

মারিয়া কোরিনা মাচাডো এ বছর ৩৩৮ জন ব্যক্তি ও সংস্থার মনোনয়নকে পেছনে ফেলে এই সম্মান অর্জন করলেন। এবারের পুরস্কারের জন্য ২৪৪ জন ব্যক্তি এবং ৯৪টি সংস্থা মনোনীত হয়েছিল।

পুরস্কারের মূল্য: প্রতিটি নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় ১.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। বিজয়ী পাচ্ছেন একটি সোনার পদক ও ডিপ্লোমা।

ইতিহাস: ২০০৬ সালে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে এই পুরস্কার জিতেছেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সবচেয়ে কম বয়সে নোবেল পান পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই (১৭ বছর, ২০১৪)।

ট্রাম্পের দাবি ও প্রত্যাশা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই পুরস্কার পাওয়ার বিষয়ে তার আগ্রহ বারবার প্রকাশ করলেও, নোবেল কমিটি তাঁর এই স্বপ্ন পূরণ করেনি। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি “আটটি যুদ্ধ” বন্ধ করেছেন এবং সেই কারণেই নোবেল পাওয়ার দাবি রাখেন। তবে নোবেল কমিটির ফলাফলে তার সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল।

ট্রাম্প গতকাল সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সমালোচনা করে বলেছিলেন, “ওবামা নোবেল পেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি জানতেন না কেন। ওবামা আমাদের দেশ ধ্বংস করেছে।”


নোবেল শান্তি পুরস্কারের ঘোষণা আজ, ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১০ ১৪:০৪:১৭
নোবেল শান্তি পুরস্কারের ঘোষণা আজ, ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ
ছবি: সংগৃহীত

আজ, শুক্রবার (১০ অক্টোবর) নরওয়ের অসলোতে ঘোষণা হবে এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের। বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টায় বিজয়ীর নাম জানাবে নোবেল কমিটি। তবে এই ঘোষণার আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুরস্কার না পেলে তার প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির মধ্যে।

ট্রাম্পের দাবি ও বিশেষজ্ঞদের মত

ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি আটটি বড় সংঘাতের মীমাংসা করেছেন এবং এ কারণেই তিনি নোবেলের যোগ্য। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তত এ বছর তার হাতে পুরস্কার উঠছে না।

অধ্যাপক পিটার ভ্যালেনস্টেইন মনে করেন, গাজা সংকটসহ নানা বিতর্ক এখনো তাজা থাকায় ট্রাম্পকে এবার বেছে নেওয়া হবে না।

অসলো পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান নিনা গ্রেগার জানান, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও নিরস্ত্রীকরণে উৎসাহ দেওয়াই নোবেলের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু ট্রাম্পের নীতি ছিল একের পর এক চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়া, বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ—যা তার সম্ভাবনা কমিয়েছে।

কমিটির অবস্থান ও সম্ভাব্য বিজয়ী

নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ইয়োরগেন ওয়াতনে ফ্রিডনেস বলেছেন, “আমরা কারও পূর্ণাঙ্গ কর্মকাণ্ড দেখে সিদ্ধান্ত নিই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—শান্তির জন্য বাস্তব অবদান।” তিনি বলেন, ক্ল্যাসিক শান্তির ধারণায় ফিরে সম্ভবত এবার পুরস্কার এমন কারও হাতে যাবে, যিনি বিতর্কহীন।

এ বছর পুরস্কারের জন্য মোট ৩৩৮ ব্যক্তি ও সংস্থা মনোনীত হয়েছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছে সুদানের ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স রুমস’, প্রয়াত রুশ নেতা আলেক্সেই নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ওডিআইএইচআর।

সূত্র: এএফপি, দ্য গার্ডিয়ান


ফিলিপাইনে ৭.৫ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প: সুনামি সতর্কতা, আতঙ্কে মিন্দানাওবাসী

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১০ ১১:০৫:৫৬
ফিলিপাইনে ৭.৫ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প: সুনামি সতর্কতা, আতঙ্কে মিন্দানাওবাসী

ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় মিন্দানাও দ্বীপপুঞ্জে আজ শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকালেই কেঁপে উঠেছে পৃথিবী। স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৪৩ মিনিটে আঘাত হানে এক ভয়াবহ ভূমিকম্প, যার মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৫। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মানায় শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে এবং ভূপৃষ্ঠের ২০ কিলোমিটার (১২ মাইল) গভীরে। দেশটির ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ সংস্থা (Phivolcs) সঙ্গে সঙ্গেই সুনামি সতর্কতা জারি করে, নাগরিকদের উপকূল এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও সিএনএন জানিয়েছে, প্রধান কম্পনের পর মিনিট দশেকের ব্যবধানে একই এলাকায় আরও একটি ৭ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই দুটি ভূমিকম্পের প্রভাবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিশাল অংশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস (USGS) জানিয়েছে, দ্বিতীয় ভূমিকম্পটির এপিসেন্টারও মানায় শহরের কাছেই, ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫৮ দশমিক ১ কিলোমিটার গভীরে। এপিসেন্টার থেকে দাভাও শহরের দূরত্ব ছিল প্রায় ১২৩ কিলোমিটার।

ভূমিকম্পের পরপরই প্রশান্ত মহাসাগরীয় সুনামি সতর্কতা কেন্দ্র (PTWC) একটি সতর্কবার্তা জারি করে জানায়, সুনামির ঢেউ ফিলিপাইনের উপকূলীয় এলাকায় ১০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। পাশাপাশি, ঢেউয়ের ধাক্কা পৌঁছাতে পারে প্রতিবেশী দেশ ইন্দোনেশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র পালাউ পর্যন্ত, যেখানে ঢেউয়ের উচ্চতা ১ মিটার বা ৩ ফুটেরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মিন্দানাওয়ের রাজধানী দাভাও প্রদেশের গভর্নর এডউইন জুবাহিব সাংবাদিকদের জানান, “ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি, তবে আঘাত এতটাই শক্তিশালী ছিল যে অনেক ভবনের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। মানুষ আতঙ্কে খোলা জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছে।” তিনি আরও জানান, “উদ্ধারকর্মীরা ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাচাই করা হচ্ছে।”

স্থানীয় সময় সকাল ১০টার মধ্যে ৫ দশমিক ৬ থেকে ৬ মাত্রার বেশ কয়েকটি আফটারশক আঘাত হানে মিন্দানাওয়ের বিভিন্ন এলাকায়, যার মধ্যে দাভাও ও কাগায়ান দে ওরো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, ভবনের জানালা ভেঙে পড়ছে, দোকান ও বাসাবাড়ির আসবাবপত্র ছিটকে যাচ্ছে, আতঙ্কে রাস্তায় ছুটছে মানুষ।

মিন্দানাওয়ের দক্ষিণাঞ্চলে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ও স্কুল ভবন সাময়িকভাবে খালি করা হয়েছে। ফিলিপাইনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা এখনও মূল্যায়নাধীন, তবে বেশ কয়েকটি সেতু ও রাস্তা ধসে পড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ ছাড়া সমুদ্র উপকূলবর্তী কিছু এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের প্রাথমিক ঢেউয়ের লক্ষণ দেখা গেছে, তবে বড় কোনো সুনামি এখনও আঘাত হানেনি।

এদিকে, ইন্দোনেশিয়া ও পালাউ সরকারও নিজ নিজ উপকূলীয় এলাকায় সুনামি সতর্কতা জারি করেছে। স্থানীয় প্রশাসন জনগণকে উপকূল থেকে অন্তত এক কিলোমিটার দূরে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলেছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশ—জাপান, পাপুয়া নিউগিনি ও মাইক্রোনেশিয়াও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

মার্কিন ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ড. এমিলি হপকিনস সিএনএনকে বলেন, “ফিলিপাইন প্রশান্ত মহাসাগরের কুখ্যাত ‘রিং অব ফায়ার’-এর ওপর অবস্থিত। এখানে পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটগুলো একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত। এই কারণেই ফিলিপাইন বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্প-সংবেদনশীল দেশ।”

তিনি আরও বলেন, “আজকের ভূমিকম্পের মাত্রা ও গভীরতা ইঙ্গিত দেয় যে এটি একটি ‘মেগা-থ্রাস্ট’ ধরনের কম্পন হতে পারে, যা বড় ধরনের সুনামি সৃষ্টি করার সক্ষমতা রাখে। এমন ভূমিকম্প ২০০৪ সালের সুমাত্রা সুনামির মতো বিপর্যয় ঘটাতে পারে, যদি এর ঢেউ উপকূলে পৌঁছে যায়।”

ভূমিকম্পের প্রভাব মিন্দানাও ছাড়িয়ে ভিসায়াস ও লুজন দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত অনুভূত হয়েছে। রাজধানী ম্যানিলায় উচ্চ ভবনগুলো কেঁপে ওঠে, তবে সেখানে বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। ফিলিপাইন প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র এক টুইট বার্তায় বলেন, “সব নাগরিককে শান্ত থাকতে ও সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে অনুরোধ করছি। উদ্ধার ও ত্রাণ দল সক্রিয় রয়েছে।”

আন্তর্জাতিক রেডক্রস, জাতিসংঘের OCHA, এবং জাপান সরকারের দুর্যোগ ত্রাণ বিভাগ ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জরুরি যোগাযোগ স্থাপন করেছে। মানবিক সহায়তা ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

ফিলিপাইনের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও দুই ডজনের বেশি আফটারশক হতে পারে, যার কিছু তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী হবে। জনসাধারণকে ভবনের ভেতরে অবস্থান না করার এবং গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি এলাকা থেকে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির যে চিত্র আসছে, তা ভয়াবহ। ফাটল ধরা ভবন, ধসে পড়া দেয়াল ও কাঁপতে থাকা মাটির নিচে দাঁড়িয়ে এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরছে সবার মনে—“এটা কি আরেকটি বড় বিপর্যয়ের শুরু?”

পাঠকের মতামত:

কুরআন ও বিজ্ঞানের মহাবিস্ময়: যেভাবে মিলে যাচ্ছে ‘বিগ ক্রাঞ্চ’ তত্ত্ব ও কিয়ামতের ভবিষ্যদ্বাণী!

কুরআন ও বিজ্ঞানের মহাবিস্ময়: যেভাবে মিলে যাচ্ছে ‘বিগ ক্রাঞ্চ’ তত্ত্ব ও কিয়ামতের ভবিষ্যদ্বাণী!

মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে যেমন 'বিগ ব্যাং' (Big Bang) তত্ত্ব বহুল পরিচিত, তেমনই এর সম্ভাব্য শেষ পরিণতি নিয়েও বিজ্ঞানীরা এক নতুন... বিস্তারিত