খাবার পানি লবণমুক্ত হবে না, ২৫৯৮ কোটি টাকার প্রকল্পে ক্ষুব্ধ খুলনাবাসী

খুলনার পানি সংকট দূর করতে মধুমতী নদী থেকে পানি আনার জন্য নতুন একটি প্রকল্প নিয়েছে খুলনা ওয়াসা, যার নাম ‘পানি সরবরাহ প্রকল্প ফেজ-২’। এতে ব্যয় হবে প্রায় ২ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। তবে শুরুতেই এই প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এর কার্যকারিতা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধুমতী নদীর পানি লবণাক্ত হওয়ায় এই বিপুল অঙ্কের অর্থ অপচয় হতে পারে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ওয়াসা এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিদিন ১৩ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করবে। শুষ্ক মৌসুমের জন্য ১১৫ কোটি লিটার পানি রিজার্ভারে মজুত রাখার কথা থাকলেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই পরিমাণ পানি মাত্র ৯ দিনের চাহিদা মেটাবে।
বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ
পানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা ওয়াসা’র এই পরিকল্পনাকে আত্মঘাতী বলে মনে করছেন। তাদের মতে, মধুমতী নদীর পানি বছরে দেড় থেকে দুই মাস অতিমাত্রায় লবণাক্ত থাকে। বৃষ্টি কম হলে এই লবণাক্ততা চার মাস পর্যন্ত থাকতে পারে। সাত বছর আগে ২ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত প্রথম ধাপের প্রকল্পটিও শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট দূর করতে পারেনি। তখন মানুষকে টাকা খরচ করে লবণ পানি কিনতে বাধ্য হতে হয়েছিল।
খুলনার ভূগর্ভের পানির স্তরও সংকটের মধ্যে রয়েছে। নগরবাসী প্রতিদিন ভূগর্ভ থেকে ১৫-১৬ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করছে। এমন পরিস্থিতিতে ওয়াসাও যদি প্রতিদিন আরও ৫-১০ কোটি লিটার পানি উত্তোলন শুরু করে, তা দীর্ঘ মেয়াদে সংকট আরও ঘনীভূত করবে।
পানি বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, “ভবিষ্যতে মধুমতীর লবণাক্ততা আরও বাড়বে। তাই ওয়াসাকে বিকল্প চিন্তা করতে হবে। তা না হলে এই প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
ওয়াসার ব্যাখ্যা
ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, মধুমতী নদীতে লবণাক্ততা অন্য নদীর তুলনায় কম। লবণ পরিশোধন কেন্দ্র ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় তারা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পরিশোধন করবে এবং শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভের পানির সঙ্গে নদীর পানি মিশিয়ে সরবরাহ করা হবে।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু ছায়েদ মোহাম্মদ মনজুরুল আলম বলেন, “লবণ পরিশোধন কেন্দ্র স্থাপন করতে গেলে কয়েক হাজার কোটি টাকা বেশি খরচ হবে। এটি নিয়মিত পরিচালনা করাও ব্যয়সাপেক্ষ।” তিনি আরও বলেন, “এ জন্যই পাম্প বসানো হচ্ছে। এতে পরিবেশের ক্ষতি হবে না।”
রংপুরে চার হত্যার দায় স্বীকার পুলিশের, জবানবন্দিতে এল শীর্ষ কর্তাদের নাম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় গত ১৯ জুলাই রংপুর সিটি বাজারের সামনে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহতের ঘটনায় এক পুলিশ কনস্টেবল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ওই কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম সম্প্রতি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে এই হত্যার দায় স্বীকার করেছেন বলে মামলার তদন্ত সূত্রে জানা গেছে।
সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান, পুলিশের ডিসি অপরাধ আবু মারুফ হোসেনসহ মেট্রোপলিটন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারাও জড়িত ছিলেন।
কনস্টেবলের জবানবন্দি ও অস্ত্রের জব্দ
কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে তিনি কোন পরিস্থিতিতে গুলি চালাতে বাধ্য হন। তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি রাইফেল থেকে ৫০ রাউন্ড গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়েছেন। তবে তার গুলিতেই ওই চারজন নিহত হয়েছেন কি না, তা তিনি উল্লেখ করেননি। এ সময় মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার অফিসের সামনে কোন কোন কর্মকর্তা কী নির্দেশনা দিয়েছেন, তা তিনি জবানবন্দিতে বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন।
সিআইডি ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চায়না রাইফেলটি তাদের হেফাজতে নিয়েছে, যার ফরেনসিক রিপোর্টও তদন্ত সংস্থা হাতে পেয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের রিজার্ভ অফিসে কর্মরত ছিলেন। ৫ আগস্ট পরবর্তী বদলি নিয়ে তিনি খাগড়াছড়ি এপিবিএনে স্পেশালিস্ট ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণরত ছিলেন। সেখান থেকেই গত ৬ সেপ্টেম্বর তাঁকে রংপুর সিআইডি গ্রেপ্তার করে। এরপর ৭ সেপ্টেম্বর রিমান্ড মঞ্জুরের দিনেই তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
আমিরুল ইসলামকে ফল বিক্রেতা মেরাজুল ইসলাম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তিনি এজাহারনামীয় আসামি ছিলেন না। তিনি বর্তমানে চাকরি থেকে সাময়িক বহিষ্কার হয়ে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।
শীর্ষ কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা
ঘটনার সময় পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সাদা এপিসিতে দায়িত্বে ছিলেন। ওই এপিসিতে আমিরুল ইসলাম ছাড়াও মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার অপরাধ আবু মারুফ হোসেনসহ মোট ছয়জন পুলিশ সদস্য ছিলেন।
ওই দিন ঘটনাস্থলে মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ, ডিবি, এপিবিএনের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। মেট্রোপলিটন পুলিশের এপিসি ছাড়াও জেলা পুলিশের এপিসিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তৎকালীন পুলিশ সুপার শাজাহান আলী এবং জেলা পুলিশের সদস্যরাও। যৌথভাবে তারা আন্দোলন মোকাবেলা করার চেষ্টা চালিয়েছেন। তদন্ত সংস্থা বিভিন্ন ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের চিহ্নিত করেছে।
এদিকে ওই ঘটনায় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেনকে গ্রেপ্তার করার অনুমতি চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছে সিআইডি। একই সঙ্গে অভিযুক্ত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
নিহত ও মামলার বিবরণ
গত ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার পর রংপুর উত্তাল হয়ে ওঠে। ১৮ ও ১৯ জুলাই তীব্র সংঘর্ষ চলে দিনভর। ১৯ জুলাই বিকালের সংঘর্ষে রংপুর সিটি বাজারের সবজি বিক্রেতা সাজ্জাদ হোসেন, ফল বিক্রেতা মেরাজুল ইসলাম, স্বর্ণ কারিগর মোসলেম উদ্দিন মিলন ও শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল তাহির খুন হন।
সাজ্জাদ হোসেন হত্যা মামলা: স্ত্রী জিতু বেগম পুলিশের ছয় কর্মকর্তাসহ ২১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।
মেরাজুল ইসলাম হত্যা মামলা: মা আম্বিয়া খাতুন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার উৎপল কুমার রায়, সহকারী কমিশনার ইমরান হোসেন, আরিফুজ্জামান আরিফ, এসআই মামুন, এসআই গণেশ, এসআই মজনু, ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম, ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল আলমসহ ২১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।
মোসলেম উদ্দিন মিলন হত্যা মামলা: বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন, সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন, সাবেক পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।
আব্দুল্লাহ আল তাহির হত্যা মামলা: বাবা আব্দুর রহমান শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক রংপুর পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামানসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ দলের ৪০ জনের নাম উল্লেখ করে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন।
এসব মামলার অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা সিআইডি।
রংপুর সিআইডির পুলিশ সুপার ভারপ্রাপ্ত সুমিত চৌধুরী জানিয়েছেন, আইজিপি ও সিআইডি চিফের নির্দেশনা রয়েছে নিরপেক্ষ থেকে মামলার তদন্ত সম্পন্ন করতে। তিনি বলেন, বিভিন্ন ডিভাইসের ফরেনসিক রিপোর্ট, ব্যালেসটিক রিপোর্ট, ডিজিটাল প্রমাণ এবং সাক্ষীদের ১৬৪ ধারার জবানবন্দি তাদের কাছে রয়েছে। তিনি জানান, প্রত্যেকটি মামলায় প্রায় দেড় থেকে দুই শতাধিক আসামি রয়েছে এবং প্রত্যেকের বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। সিআইডি দ্রুতই অভিযোগপত্র দাখিল করবে।
সূত্র: যুগান্তর
পদ্মার চরাঞ্চলে অপারেশন ফার্স্ট লাইট: উদ্ধার বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র
রাজশাহী, নাটোর, পাবনা ও কুষ্টিয়ার পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে দাপিয়ে বেড়ানো সন্ত্রাসী চক্রগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’ নামে পরিচালিত এই অভিযানে মোট ১১টি সন্ত্রাসী বাহিনীর ৬৭ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশই দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ইঞ্জিনিয়ার হাসিনুজ্জামান কাকনের নেতৃত্বাধীন কাকন বাহিনী-এর সদস্য।
রোববার (৯ নভেম্বর) ভোর থেকে দিনব্যাপী পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা এই অভিযানে অংশ নেন। এ সময় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, মাদকদ্রব্য, মোটরসাইকেল, নৌযান এবং বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
অভিযানের প্রেক্ষাপট ও গ্রেপ্তার
সম্প্রতি পদ্মা চরের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, রাজশাহীর বাঘা এবং নাটোরের লালপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী মরিচা ইউনিয়নের নিচ খানপাড়া এলাকায় ভয়াবহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছিল। গত ২৭ অক্টোবরের ওই সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। এই ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে কাকন বাহিনীর প্রধান হাসিনুজ্জামান কাকনসহ তার বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় মামলা করা হয়। এর পরই সন্ত্রাসীদের দমন ও চরাঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যৌথ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ প্রশাসন।
রোববার ভোরে রাজশাহীর বাঘা, পাবনার আমিনপুর ও ঈশ্বরদী এবং কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে একযোগে অভিযান শুরু হয়। এই অভিযানে পুলিশ, র্যাব ও এপিবিএনের প্রায় ১ হাজার ২০০ সদস্য অংশ নেন। দুর্গম চরাঞ্চলে নৌপথে গিয়ে সন্ত্রাসীদের আস্তানাগুলো ঘিরে ফেলা হয়। দিনভর অভিযান চালিয়ে মোট ৬৭ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
উদ্ধারকৃত সামগ্রী ও সন্ত্রাসী বাহিনী
রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান রোববার বিকেলে তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযানের বিস্তারিত তথ্য জানান। তিনি বলেন, রাজশাহী, পাবনা ও নাটোর জেলার চরাঞ্চল থেকে ৫৮ জন এবং খুলনা রেঞ্জের কুষ্টিয়ার দৌলতপুর এলাকা থেকে আরও ৯ জন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা কাকন বাহিনীসহ ১১টি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য। গ্রেপ্তারদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে পূর্ব থেকেই একাধিক হত্যা ও অস্ত্র মামলায় সাজা রয়েছে।
ডিআইজি আরও জানান, অভিযানে রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা জেলা থেকে ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র, চারটি গুলি, ২৪টি হাসুয়া, ছয়টি ডোসার, দুটি ছোরা, চারটি চাকু, তিনটি রামদা, দুটি চাইনিজ কুড়ালসহ বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ও যানবাহন উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশের তথ্যমতে, পদ্মার চরে দীর্ঘদিন ধরে মণ্ডল বাহিনী, টুকু বাহিনী, সাঈদ বাহিনী, লালচাঁদ বাহিনী, রাখি বাহিনী, শরীফ কাইগি বাহিনী, রাজ্জাক বাহিনী, চল্লিশ বাহিনী, বাহান্ন বাহিনী, সুখচাঁদ ও নাহারুল বাহিনীসহ একাধিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সক্রিয় ছিল। এসব বাহিনীর বিরুদ্ধে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্রপাচার, চর দখল, জেলে ও কৃষকদের হয়রানি এবং সর্বহারা সংগঠনকে আশ্রয় দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
ডিআইজি শাহজাহান জানান, অপারেশন ফার্স্ট লাইটই শেষ নয়, বরং এটি কেবল শুরু। চরাঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত অভিযান চলবে। এই অভিযানের মাধ্যমে দীর্ঘদিন সন্ত্রাস ও ভয়ের রাজত্ব করা পদ্মার চরে নতুন করে স্বস্তির বাতাস বইতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ঢাকায় একরাতে চার্চে চার বিস্ফোরণ: আতঙ্কে খ্রিস্টান সম্প্রদায়!
রাজধানী ঢাকায় খ্রিস্টান ধর্মীয় স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে একাধিক ককটেল বা দেশীয় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত অন্তত চারটি বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি ঘটেছে রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত ঐতিহাসিক সেন্ট মেরি ক্যাথেড্রাল চার্চের সামনে, যা ঘটেছে মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে চার্চের জুবিলি উদযাপনের পূর্ব মুহূর্তে।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে কাকরাইলের সেন্ট মেরি ক্যাথেড্রাল চার্চের মূল ফটকের সামনে একটি দেশীয় বোমা বিস্ফোরিত হয়। একইসঙ্গে চার্চের ভেতরে আরেকটি ককটেল নিক্ষেপ করা হলেও সেটি বিস্ফোরিত হয়নি। পরে পুলিশ সেটি নিষ্ক্রিয় করে উদ্ধার করে।
এর কয়েক ঘণ্টা পর, শনিবার ভোররাত ৩টার দিকে, মোহাম্মদপুরে অবস্থিত সেন্ট জোসেফ স্কুল অ্যান্ড কলেজের খ্রিস্টান পুরোহিত ও শিক্ষকদের আবাসিক ভবনের সামনে আরও দুটি দেশীয় বোমা বিস্ফোরিত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বোমার অবশিষ্টাংশ সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু করেছে।
চার্চের মুখপাত্র ফাদার বুলবুল অগাস্টিন রিবেইরো জানান, “সেন্ট মেরির জুবিলি ছিল ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি বড় উৎসব। এই উৎসব শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে বোমা হামলা ছিল স্পষ্টতই ভয় ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে।”
অন্যদিকে, খ্রিস্টান যোগাযোগ সংগঠন অ্যানোনিমাস PRCM-এর জনসংযোগ কর্মকর্তা আপু প্ল্যাসিড বলেন, “একই রাতে দুটি স্থানে হামলা, তারও মধ্যে একটি পুরোহিতদের বাসভবনে—এটি নিঃসন্দেহে আতঙ্কের বিষয়। দেশের সব খ্রিস্টান এখন ভয় ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।”
এই ঘটনার আগে গত ৮ অক্টোবর তেজগাঁওয়ের হোলি রোজারি চার্চেও একবার ককটেল হামলা চালানো হয়েছিল। সেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজন সন্দেহভাজনকে শুক্রবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোবারক হোসেন জানান, আগের হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এদিকে, সেন্ট জোসেফ কলেজের ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ওসি মো. রফিক আহমেদ। তবে, কাকরাইলের সেন্ট মেরি চার্চে বিস্ফোরণের ঘটনায় রামনা থানায় এখনো কোনো মামলা বা জিডি হয়নি, বলে জানিয়েছে থানা সূত্র।
সব উদ্বেগ ও হামলার মধ্যেও শনিবার চার্চ প্রাঙ্গণে যথারীতি জুবিলি উদযাপন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ভক্তরা এতে অংশ নেন। তবে চার্চের ভেতরে ও বাইরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতারা বলছেন, “এটি শুধু কোনো একটি চার্চের ওপর হামলা নয়, এটি ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার ওপর আঘাত।” তারা দ্রুত হামলার বিচার ও নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন।
-শরিফুল
নতুন পে কমিশনের সিদ্ধান্ত নেবে আগামী সরকার: অর্থ উপদেষ্টা
নতুন পে কমিশনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি আগামী সরকার নেবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পে কমিশনের কাজ শুরু করেছে বা 'ইনিশিয়েট' করেছে, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আগামী সরকারই গ্রহণ করবে।
রোববার (৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এবং অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন।
আইএমএফের সন্তুষ্টি ও রাজস্বের চ্যালেঞ্জ
অর্থ উপদেষ্টা জানান, আগামী ১৫ তারিখে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে তাঁর চূড়ান্ত আলোচনা হবে। তিনি বলেন, "আইএমএফের সঙ্গে আমার জুমে কথা হয়েছে। ওরা বলেছে, তোমাদের সার্বিক অর্থনৈতিক দিকটা নিয়ে আমরা অত্যন্ত হ্যাপি। ঠিক আছে—যা যা করার তোমরা চেষ্টা করছ, করেছ।"
তিনি স্বীকার করেন যে আইএমএফের কিছু সুপারিশ আছে, যেমন রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, "ট্যাক্স-জিডিপির রেশিও লো, সেটার অনেক কারণ আছে। আমাদের লোকজন ট্যাক্স দিতে চায় না।" তিনি জানান, এনবিআর বন্ধ থাকার কারণেও বিরাট সমস্যা হয়েছে, "তবুও আমরা চেষ্টা করছি।"
আইএমএফের আরেকটি পর্যবেক্ষণ হলো, সামাজিক সুরক্ষার জন্য আরও বেশি ব্যয় করা উচিত, বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা এবং খাদ্যের পেছনে। খাদ্য খাতে সরকার মোটামুটি ভালো করছে বলে জানান তিনি।
সংস্কার ও ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ
নির্বাচনের তিন মাস বাকি আছে, তার মধ্যে সংস্কার শেষ করা সম্ভব হবে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংস্কারের কোনো শেষ নেই, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, "আমরা এটাকে একটা ভালো প্যাকেজিং করবো, প্যাকেজিং করে আমরা পরবর্তী সরকারকে দেব।" যেসব বড় সংস্কার রয়েছে, তা আগামী সরকার করবে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, "ইভেন আমি একটা কমিটি করেছি ট্যাক্সের ব্যাপারে। আপনারা জানেন, কিছু ইকোনমিস্টদের নিয়ে, তারা ইন্ডিপেন্ডেন্ট। তারা কিছু রিকমেন্ডেশন দেবে।"
তিনি জানান, ব্যাংকিং সেক্টর দেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, "ব্যাংকিং সেক্টরটা মোটামুটি যেটা শুরু হয়েছে, আর বাকিগুলো আস্তে আস্তে করবো। এই জিনিসগুলো আমরা আগামী সরকারের জন্য দিয়ে দেব।"
আইএমএফের ৬ষ্ঠ কিস্তি
আইএমএফের ঋণের ৬ষ্ঠ কিস্তি অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে পাওয়া যাবে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, "আমরা রাজি হয়েছি আগেই, যে এখন কোনো প্রয়োজন নেই। ওরা রিভিউটা কমপ্লিট করেছে।" তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, "একটা রাজনৈতিক সরকার এসে কতটুকু ধারণ করে; ওটা তো একটা ইম্পর্ট্যান্ট জিনিস।" তিনি জানান, আগামী ফেব্রুয়ারির দিকে নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে আইএমএফ আবার রিভিউতে আসবে, তারপর তারা ডিসাইড করবে।
দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে শহীদ মিনারে প্রাথমিকের শিক্ষকরা: শুরু হলো দেশব্যাপী কর্মবিরতি
তিন দফা দাবি আদায় এবং সম্প্রতি পুলিশি হামলার প্রতিবাদে সারাদেশে ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। রবিবার সকাল থেকে এই কর্মবিরতির পাশাপাশি শিক্ষকরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
শহীদ মিনারে অবস্থানের দ্বিতীয় দিন এবং কর্মবিরতির প্রথম দিন শিক্ষকদের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে।
উপদেষ্টাদের পদত্যাগ দাবির কারণ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের নেতা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ রবিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে পদত্যাগের এই দাবি জানান। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষকদের তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন না করা, শাহবাগে নিরীহ শিক্ষকদের ওপর অতর্কিত হামলা, রাবার বুলেট, জলকামান, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে শত শত শিক্ষককে আহত করার দায় হিসেবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে।
সহকারী শিক্ষকদের প্রধান তিন দফা দাবি হলো
১. ১০ম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ।
২. চাকরির ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সমস্যার সমাধান।
৩. শিক্ষকদের জন্য শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি নিশ্চিত করা।
পুলিশি হামলা ও প্রতিবাদ কর্মসূচি
কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত শনিবার শিক্ষকরা শহীদ মিনারে অবস্থান নেওয়ার পর বিকালে শাহবাগে এলে পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এই হামলায় শিক্ষকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন এবং একাধিক শিক্ষক আহত হন। বেশ কয়েকজন শিক্ষককে আটকও করা হয়।
পুলিশি হামলার প্রতিবাদে এবং আটককৃতদের মুক্তি ও আহতদের সুচিকিৎসার দাবিতে শিক্ষকরা রাত ১২টা ১ মিনিটে শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করেন। বেশ কিছুসংখ্যক শিক্ষক খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানোর পর সকাল থেকে আবারও শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
১ কোটি টাকার বদলে ১৮ লাখ টাকার লিফট! দুর্নীতির মহোৎসব
চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যুৎ বিভাগে লিফট কেনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এক শক্তিশালী দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট। সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অন্তত ছয়টি প্রকল্পে নিম্নমানের লিফট সরবরাহ করে এই চক্র কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। প্রকল্পের টেন্ডারে উল্লেখ ছিল ‘এ’ গ্রেড আন্তর্জাতিক মানের লিফট সরবরাহের কথা, কিন্তু বাস্তবে দেওয়া হয়েছে ‘সি’ ও ‘ডি’ গ্রেডের চায়না প্রোডাক্ট। দরপত্রে প্রতিটি লিফটের মূল্য ধরা হয়েছিল এক কোটি ১৫ লাখ টাকা, অথচ যেগুলো সরবরাহ করা হয়েছে তাদের বাজারমূল্য মাত্র ১৮ লাখ টাকার মতো। ফলে একাধিক প্রকল্প থেকে প্রায় সাত কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এই অর্থ লোপাটে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে বন্দরের বিদ্যুৎ বিভাগের পরিচালক এসএম সাইফুল ইসলাম, উপপ্রধান প্রকৌশলী মো. মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক এমপি আলি আজগর, সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদের ব্যক্তিগত সহকারী ইঞ্জিনিয়ার আরশাদ পারভেজ এবং ঠিকাদার মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে। তারা একত্রে বন্দরে এমন একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন, যারা নিয়মবহির্ভূতভাবে টেন্ডার প্রক্রিয়াকে “ওয়ার্কস” হিসেবে সম্পন্ন করে নির্দিষ্ট ঠিকাদারদের পক্ষে সুবিধা নিশ্চিত করেছে। সরকারি ক্রয়বিধি অনুযায়ী, লিফট কেনা পণ্য শ্রেণির (গুডস) প্রকল্পের আওতায় পড়ে এবং এতে আন্তর্জাতিক মান যাচাই বাধ্যতামূলক। কিন্তু “ওয়ার্কস” হিসেবে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ফলে আন্তর্জাতিক মান যাচাই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে, যা দুর্নীতির একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
২০২২ সালে বন্দরের চার নম্বর গেটের ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিসিং বিল্ডিং’-এর জন্য চারটি ‘এ’ গ্রেড লিফট সরবরাহের দরপত্র আহ্বান করা হয়। শর্ত ছিল জাপানের ফুজিটেক, হিটাচি, মিৎসুবিশি, ফিনল্যান্ডের কোনে, যুক্তরাষ্ট্র-ফ্রান্সের ওটিস বা জার্মানির থাইসেনক্রুপের মতো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ব্র্যান্ডের লিফট সরবরাহ করতে হবে। কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই ভবনে স্থাপন করা হয়েছে ‘ফুজাও, ফুজি এলিভেটেড কো. লি., চায়না’ নামের নিম্নমানের লিফট, যার প্রতিটির দাম সর্বোচ্চ ১৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটির কাজ পেয়েছিল ঠিকাদার জাহাঙ্গীর আলমের প্রতিষ্ঠান ‘এ অ্যান্ড জে ইন্টারন্যাশনাল’। তিনি চারটি নিম্নমানের লিফট সরবরাহ করেন এবং এর মাধ্যমে প্রায় চার কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেন।
একই ধরনের অনিয়ম ধরা পড়েছে বন্দর হাসপাতাল সংলগ্ন ফার্স্ট ক্লাস অফিসার্স কোয়ার্টার, অফিসার্স ডরমিটরি, স্টোর ভবন, প্রশাসনিক ভবন ও কার শেড প্রকল্পেও। এসব জায়গায় ‘এ’ গ্রেডের পরিবর্তে ‘বি’, ‘সি’ এবং ‘ডি’ গ্রেড লিফট বসানো হয়েছে। এভাবে ছয়টি প্রকল্পে সাত কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘এ অ্যান্ড জে ইন্টারন্যাশনাল’, ‘ম্যাক্সওয়েল সিমেন্স পাওয়ার প্লাস’, ‘এবিএম ওয়াটার কোম্পানি’ ও ‘গ্রিন ডট’। এগুলোর মালিক যথাক্রমে মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. শাখাওয়াত হোসেন এবং আতাউল করিম সেলিম। বন্দরের কর্মকর্তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এরা একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটায়। ঠিকাদাররা জানান, এখন বন্দরে টেন্ডার মানে এক ধরনের ‘প্যাকেজ সিস্টেম’, যেখানে আগেই ঠিক করে রাখা হয় কে কাজ পাবে, বাকিরা শুধু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, ‘এ’ গ্রেড লিফটে উচ্চমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ইউরোপীয় গিয়ারলেস মোটর, কার্বন স্টিল রোপ, অয়েল ফ্রি প্রযুক্তি এবং সার্টিফায়েড কন্ট্রোল ইউনিট থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বন্দরে স্থাপিত লিফটগুলোতে এসব উপাদান অনুপস্থিত। একজন প্রকৌশলী বলেন, “এই লিফটগুলো শুধুই নিম্নমানের নয়, এগুলো কর্মীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।” অনেক ভবনে এসব লিফট বারবার আটকে যাচ্ছে, সার্ভিসিং করতে হচ্ছে ঘন ঘন, অথচ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নীরব।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, সিন্ডিকেটে জড়িত কয়েকজন কর্মকর্তা বিদেশে পালানোর চেষ্টা করছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারেরও তথ্য রয়েছে। বিষয়টি এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের নজরে এসেছে।
এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী। তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দরের মতো কৌশলগত একটি প্রতিষ্ঠানে বছরের পর বছর এমন অনিয়ম চলা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এক কোটি ১৫ লাখ টাকার লিফটের জায়গায় ১৮ লাখ টাকার লিফট বসানো মানে রাষ্ট্রীয় অর্থ সরাসরি লুট। এটি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির স্পষ্ট উদাহরণ।” তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের আহ্বান জানান।
অন্যদিকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের তিনজন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী মনে করেন, বন্দরে স্থাপিত লিফটগুলোর মান ও নিরাপত্তা যাচাইয়ের জন্য একটি স্বাধীন টেকনিক্যাল অডিট টিম গঠন করা জরুরি। তারা বলেন, “এ’ গ্রেডের টেন্ডারে যদি ‘সি’ গ্রেড লিফট বসানো হয়, তাহলে এটি কেবল আর্থিক নয়, জননিরাপত্তার বিরুদ্ধেও অপরাধ।”
ঠিকাদার মো. জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “কোন ধরনের লিফট সরবরাহ করা হয়েছে, তা প্রকৌশলীরাই ভালো জানেন।” পরে আর কোনো মন্তব্য না করে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। বন্দরের বিদ্যুৎ বিভাগের পরিচালক এসএম সাইফুল ইসলাম বলেন, “সরেজমিনে দেখে তারপর প্রতিবেদন লিখুন।” উপপ্রধান প্রকৌশলী মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম বন্দরের চিফ পারসোনাল অফিসার মো. নাসির উদ্দিন বলেছেন, “এটি ভয়াবহ দুর্নীতির একটি অংশ। আমরা তদন্ত করব এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
-শরিফুল
রবিবার ঢাকায় বন্ধ থাকবে যেসব মার্কেট ও এলাকা
রাজধানী ঢাকায় সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে বিভিন্ন মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে, যা ঢাকা সিটি করপোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হয়। রবিবারও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই কেনাকাটার পরিকল্পনা করার আগে জানা জরুরি আজ কোন কোন এলাকার দোকানপাট এবং জনপ্রিয় মার্কেটগুলো বন্ধ থাকবে। এতে যেমন সময় বাঁচবে, তেমনি অপ্রয়োজনীয় ঝামেলা থেকেও রেহাই পাওয়া যাবে।
রবিবার রাজধানীর উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা বন্ধ থাকবে। এর মধ্যে রয়েছে আগারগাঁও, তালতলা, শেরেবাংলা নগর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, পল্লবী, মিরপুর-১০, মিরপুর-১১, মিরপুর-১২, মিরপুর-১৩, মিরপুর-১৪, ইব্রাহীমপুর, কচুক্ষেত, কাফরুল, মহাখালী, নিউ ডিওএইচএস, ওল্ড ডিওএইচএস, কাকলী, তেজগাঁও ওল্ড এয়ারপোর্ট অঞ্চল, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ক্যান্টনমেন্ট, গুলশান-১, গুলশান-২, বনানী, মহাখালী বাণিজ্যিক অঞ্চল, নাখালপাড়া, মহাখালী ইন্টারসিটি বাস টার্মিনাল অঞ্চল, রামপুরা, বনশ্রী, খিলগাঁও, গোড়ান, মালিবাগের একাংশ, বাসাবো, ধলপুর, সায়েদাবাদ, মাদারটেক, মুগদা, কমলাপুরের একাংশ, যাত্রাবাড়ীর একাংশ, শনির আখড়া, দনিয়া এবং রায়েরবাগ। এই সব এলাকায় রবিবারের দিনে দোকানপাট, বাজার এবং শপিং সেন্টার বন্ধ থাকে। তবে ওষুধের দোকান, খাবারের দোকান এবং ছোট গ্রোসারি স্টোরগুলো খোলা থাকতে পারে।
এছাড়া রাজধানীর বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় মার্কেটও রবিবার বন্ধ থাকবে। এর মধ্যে রয়েছে বিসিএস কম্পিউটার সিটি (আইডিবি), পল্লবী সুপার মার্কেট, মিরপুর বেনারসী পল্লী, ইব্রাহীমপুর বাজার, রজনীগন্ধা মার্কেট, ইউএই মৈত্রী কমপ্লেক্স, বনানী সুপার মার্কেট, ডিসিসি মার্কেট গুলশান-১ ও ২, গুলশান পিংক সিটি, মোল্লা টাওয়ার, আল-আমিন সুপার মার্কেট, রামপুরা সুপার মার্কেট, মালিবাগ সুপার মার্কেট, তালতলা সিটি করপোরেশন মার্কেট, কমলাপুর স্টেডিয়াম মার্কেট, গোড়ান বাজার, আবেদিন টাওয়ার, ঢাকা শপিং সেন্টার, আয়েশা মোশারফ শপিং কমপ্লেক্স এবং মিতালী অ্যান্ড ফ্রেন্ডস সুপার মার্কেট।
ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ বিভিন্ন মার্কেট ও বাণিজ্যিক এলাকায় কেনাকাটা, ব্যবসা বা কর্মক্ষেত্রের কাজে যান। অনেক সময় তারা মার্কেট বন্ধ থাকার বিষয়টি না জানায় বিপাকে পড়েন। তাই আগেভাগেই মার্কেট বন্ধের দিন জানা থাকলে সময় ও যাতায়াত উভয়ই বাঁচানো সম্ভব। বিশেষ করে যারা দূরবর্তী এলাকা থেকে আসেন, তাদের জন্য এটি জানা আরও জরুরি।
রবিবার যদি কেউ কেনাকাটার পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে বিকল্প হিসেবে রাজধানীর কিছু এলাকা খোলা থাকবে। যেমন গুলিস্তান, নিউ মার্কেট, হাতিরপুল, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, চাঁদনী চক ও মালিবাগের কিছু অংশের দোকান খোলা থাকে। এসব এলাকায় রবিবার ক্রেতাদের ভিড় তুলনামূলকভাবে কম থাকে, ফলে সহজে কেনাকাটা করা যায়।
-রাফসান
রাজধানীতে ডিএমপি'র 'বড় মহড়া': যমুনা, সচিবালয়সহ ১৪২ স্পটে সাত হাজার পুলিশ সদস্যের তৎপরতা
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীর ১৪২টি গুরুত্বপূর্ণ স্পটে একযোগে একটি ‘বড় মহড়া’ পরিচালনা করেছে। এই মহড়ায় ডিএমপির বিভিন্ন পদমর্যাদার মোট সাত হাজার পুলিশ সদস্য অংশ নেন। শনিবার বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চলে এই মহড়া। এই মহড়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সামনের স্পটগুলো। এর মধ্যে অন্যতম হলো প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা, বাংলাদেশ সচিবালয়, হাইকোর্ট, বঙ্গভবন এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
নিয়মিত কার্যক্রম না নিরাপত্তা জোরদার?
পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই মহড়া নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, "আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমেরই অংশ হিসেবে যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য কুইক রেসপন্স মহড়া করা হয়েছে।"
তবে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সম্প্রতি রাজধানীজুড়ে ঘটে যাওয়া কিছু সহিংস ঘটনার প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা বাড়ানোর অংশ হিসেবেই এই মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শুক্রবার রাতে রাজধানীর কাকরাইল গির্জায় ককটেল নিক্ষেপ এবং ধানমন্ডি শংকর এলাকায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের মশাল মিছিল ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা।
মহড়ার এলাকা ও উদ্দেশ্য
ডিএমপি'র আটটি বিভাগ জুড়ে মোট ১৪২টি স্পটে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভাগ অনুযায়ী মহড়ার স্পটগুলো হলো: তেজগাঁও (১৬টি), রমনা (৩৪টি), মিরপুর (১৪টি), মতিঝিল (১৭টি), ওয়ারী (১৬টি), লালবাগ (১৫টি), গুলশান (১৪টি) এবং উত্তরা (১৬টি)।
ডিএমপির এক উপকমিশনার (ডিসি) জানান, পুলিশের এই মহড়াটি মূলত ফোর্স ও অফিসারদের এক্সিভিশন বা প্রদর্শনীর মতো। এর মূল উদ্দেশ্য হলো রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে পুলিশের নিয়ন্ত্রণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা। যারা অপরাধ করতে চায় বা অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায়, এই মহড়া মূলত তাদের বিরুদ্ধে একটি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ। এর আগে চলতি বছরের ৫ আগস্টের আগে সীমিত আকারে এ ধরনের মহড়া অনুষ্ঠিত হলেও, এটি দ্বিতীয়বারের মতো ডিএমপি'র বৃহৎ পরিসরের মহড়া।
নাটোরে প্রকৃতির বিস্ময়! এক কাণ্ডে ১৩ মাথাওয়ালা নারকেল গাছ
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের কাছিকাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে আছে এক অবিশ্বাস্য প্রাকৃতিক বিস্ময় একটি ১৩ মাথাওয়ালা নারকেল গাছ। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, যেন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে অনেকগুলো গাছ। কিন্তু কাছে গেলে বোঝা যায়, এটি আসলে একক কাণ্ড থেকে জন্ম নেওয়া বহু মাথাওয়ালা একটিমাত্র গাছ। এই গাছটি এখন স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘কুদরতি নিদর্শন’ নামে, এবং প্রতিদিন শত শত মানুষ এই গাছ দেখতে আসছেন।
শনিবার (১১ নভেম্বর) সকালে কলেজ প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, গাছটির বয়স প্রায় ২৫ থেকে ২৬ বছর। একসময় এর মাথার সংখ্যা ছিল ১৪টি, বর্তমানে ১৩টি মাথা সবুজ ও সতেজভাবে বেড়ে উঠেছে। প্রতিটি মাথায় ঘন ও ছড়ানো পাতা এমনভাবে বিস্তৃত যে মনে হয়, প্রকৃতি নিজেই যেন এক অনন্য ভাস্কর্য সৃষ্টি করেছে। এর প্রতিটি ডগায় ঝুলছে নতুন কচি পাতার মেলা দেখলে মনে হয় প্রকৃতি যেন এক শিল্পীর তুলি দিয়ে গড়েছে এই সৃষ্টিকে।
কাছিকাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক নজরুল ইসলাম বলেন, “গাছটি আমরা প্রায় ২৫-২৬ বছর আগে লাগিয়েছিলাম। কয়েক বছর পর থেকেই কাণ্ডে একাধিক মাথা গজাতে শুরু করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাথার সংখ্যা বেড়েছে, আবার কিছু শুকিয়ে গেছে। বর্তমানে ১৩টি মাথা টিকে আছে। আমরা নিয়মিত সার ও ওষুধ দিয়ে গাছটির যত্ন নিই।” তিনি বলেন, “আমার জীবনে এমন গাছ আর দেখিনি। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে শুধু এই গাছটি একবার দেখার জন্য। এটি নিঃসন্দেহে প্রকৃতির এক বিরল ও সুন্দর নিদর্শন।”
স্থানীয় বাসিন্দা শাকিল আহমেদ বলেন, “একটি নারকেল গাছে এতগুলো মাথা—এমন দৃশ্য আমরা শুধু ছবিতে দেখি। এটি আল্লাহর এক অসাধারণ সৃষ্টি, একেবারে কুদরতি নিদর্শন। বর্তমানে ১৩টি মাথা পুরোপুরি সতেজ রয়েছে। মানুষ গাছটি দেখতে আসে, ছবি তোলে, ফেসবুকে শেয়ার করে—আমাদের এলাকার গর্ব এখন এই গাছ।”
শুধু বড়রাই নয়, ছোটরাও সমান উৎসাহী। কাছিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মিম জানায়, “আমাদের স্কুলে অনেক মানুষ আসে এই নারকেল গাছ দেখতে। সবাই গাছটি দেখে খুশি হয়, আর আমরা গর্ব করি যে এমন গাছ আমাদের স্কুলে আছে।”
এলাকার মানুষ মনে করেন, এই গাছটি কেবল একটি প্রাকৃতিক বিস্ময় নয়, এটি স্থানীয় পর্যটন আকর্ষণেরও সম্ভাবনা তৈরি করেছে। কেউ কেউ বলছেন, গাছটি যদি যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও প্রচার করা যায়, তবে এটি নাটোর জেলার একটি পর্যটন স্পট হিসেবেও পরিচিতি পেতে পারে। এতে যেমন বাড়বে এলাকার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব, তেমনি মানুষ কাছ থেকে প্রকৃতির এই বৈচিত্র্য দেখার সুযোগ পাবে।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কে. এম. রাফিউল ইসলাম বলেন, “একটি নারকেল গাছে ১৩-১৪টি মাথা গজানো সাধারণ কোনো ঘটনা নয়। এটি একটি বিরল জেনেটিক মিউটেশন, যা অত্যন্ত ব্যতিক্রমী ও গবেষণাযোগ্য। সাধারণত একটি নারকেল গাছে একটি কাণ্ড ও একটি মাথা থাকে, কিন্তু এটির জিনগত বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হওয়ায় একাধিক শাখা বা মাথা তৈরি হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “গাছটির পরিচর্যা এবং সার ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত তত্ত্বাবধান করবেন। সঠিক যত্ন নেওয়া গেলে এটি দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবে এবং ভ্রমণপিপাসু মানুষের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠবে।”
স্থানীয় কৃষকরা বলেন, গাছটি আশেপাশের এলাকায় একটি প্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছে। অনেকেই এখন বিশেষ ধরনের নারকেল গাছ বা ফলের প্রজাতি নিয়ে গবেষণা ও চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। গাছটি যেন এখন কেবল প্রকৃতির উপহার নয়, এক অনুপ্রেরণার উৎসও বটে।
প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থানীয় মানুষ ও বাইরে থেকে আসা দর্শনার্থীদের ভিড়ে জমজমাট থাকে কলেজ প্রাঙ্গণ। কেউ ছবি তোলে, কেউ ভিডিও করে, কেউ আবার গাছটির পাশে বসে গল্প করে বা প্রার্থনা করে। প্রকৃতির এই অনন্য সৃষ্টিকে ঘিরে সবার মনে একটাই অনুভূতি বিস্ময় আর মুগ্ধতা।
এলাকাবাসীর দাবি, গাছটি যদি সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণ করা হয় এবং এর চারপাশে পর্যটন অবকাঠামো গড়ে তোলা যায়, তবে এটি নাটোরের একটি ‘নেচার হেরিটেজ’ বা প্রাকৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে।
পাঠকের মতামত:
- ১০ নভেম্বর ২০২৫: আজকের নামাজের পূর্ণ সময়সূচি প্রকাশ!
- দেশে আবারও স্বর্ণের দাম বাড়ল
- ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর সর্বশেষ আপডেট , ১০ নভেম্বর ২০২৫
- তফসিলের আগে গণভোটের বাস্তবতা নেই: ভিপি নুর
- ১২৩ ঘণ্টা অনশন শেষে আম জনতার দলের তারেক রহমান হাসপাতালে
- ঢাকা-১০ আসন হটস্পট: ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঘিরে ভোটের হিসাব নিকাশ
- মশলা কিনতে এসে দেশ দখল: যেভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হয়ে উঠেছিল পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রাইভেট আর্মি!
- রংপুরে চার হত্যার দায় স্বীকার পুলিশের, জবানবন্দিতে এল শীর্ষ কর্তাদের নাম
- পদ্মার চরাঞ্চলে অপারেশন ফার্স্ট লাইট: উদ্ধার বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র
- গভীর ঘুমের রহস্য: গ্লিমফ্যাটিক সিস্টেম কীভাবে মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে?
- লাশ দাফনেও জায়গা দেয়নি আওয়ামী লীগ: মুগ্ধের ভাই মীর স্নিগ্ধ
- ১৭ জেলার তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামার পূর্বাভাস
- মাঠ থেকে সেনাবাহিনী সরিয়ে নেওয়ার গুজব নিয়ে মুখ খুললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
- কোরিয়ান ড্রামায় মুগ্ধ বিশ্ব: মিস্ট্রি থ্রিলার থেকে টাইম ট্রাভেল, দেখুন সেরা ১০ সিরিজ!
- ইসলামী ব্যাংক লুটপাট: ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বৃহত্তম মামলা দায়ের
- নেপাল-ভারত ম্যাচের আগে উৎসব: দেশে ফিরছেন হামজা, শিরোপা জিতে ফিরছেন কি সৌমিত?
- ঢাকায় একরাতে চার্চে চার বিস্ফোরণ: আতঙ্কে খ্রিস্টান সম্প্রদায়!
- অ্যান্ড্রয়েড ১৫-ভিত্তিক HyperOS 3 নিয়ে চুপিসারে বড় আপডেট আনছে শাওমি!
- শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল জাপান জারি করা হল সুনামি সতর্কতা
- সাধারণ মানুষ ভোট চায়, চাপানো গণভোট বা সনদ নয়: মির্জা ফখরুল
- বেতন বাড়বে না আন্দোলন চলবে? শিক্ষকদের দাবিতে নতুন মোড়
- নির্বাচন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানালেন উপদেষ্টা আসিফ: দিলেন পদত্যাগের ইঙ্গিতও
- নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি সরকার: রাশেদ খান
- ক্ষত সারাতে লাগবে না অস্ত্রোপচার: শরীর নিজেই গজাবে নতুন টিস্যু, যুগান্তকারী আবিষ্কার
- নতুন পে কমিশনের সিদ্ধান্ত নেবে আগামী সরকার: অর্থ উপদেষ্টা
- ০৯ নভেম্বর ডিএসই লেনদেনের সারসংক্ষেপ
- ০৯ নভেম্বর ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ লুজার তালিকা প্রকাশ
- ০৯ নভেম্বর ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- এক ভিসায় জিসিসি'র ছয় দেশ ভ্রমণ, চালু হচ্ছে 'গ্র্যান্ড ট্যুরস ভিসা'
- দল নিবন্ধনে অনড়: ইসি’র গেটে ১২৩ ঘণ্টা ধরে অনশনে তারেক রহমান
- ইংল্যান্ড প্রবাসী কিউবা মিচেল: অবশেষে জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পেলেন
- দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে শহীদ মিনারে প্রাথমিকের শিক্ষকরা: শুরু হলো দেশব্যাপী কর্মবিরতি
- সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে জামিন দিলেন হাইকোর্ট
- গাজায় পানির সংকট তীব্র নিকাশি ব্যবস্থা ধ্বংস হওয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানিও দূষিত, নেই কোনো বিকল্প
- এটা আমার শেষ নির্বাচন: ঠাকুরগাঁওয়ে ভোট চেয়ে আবেগঘন আবেদন মির্জা ফখরুলের
- কুমিল্লার বদলে ধানমন্ডি থানার ভোটার হচ্ছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
- ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে
- বিরোধী আসনে জামায়াতকে ঠেলতে আ.লীগের নতুন পরিকল্পনা!
- ডিএসইর নির্দেশনা অনুযায়ী বোর্ড সভার তারিখ প্রকাশ
- দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তির নায়ক ট্রাম্প- পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী
- শেষ বাঁশির আগেই বদলে গেল গল্প- টটেনহ্যাম বনাম ম্যান ইউ
- বাংলাদেশ–ভারত ফুটবল ম্যাচের টিকিটের দাম প্রকাশ
- পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আফগানিস্তানের বার্তা
- বাংলাদেশি টাকার বিপরীতে বিদেশি মুদ্রার সর্বশেষ বিনিময় হার প্রকাশ
- মাটিন স্পিনিংয়ের প্রথম প্রান্তিকের ফলাফল প্রকাশ
- ফার্মা এইডের ডিভিডেন্ড ঘোষণা
- মুনাফায় রেকর্ড গড়ল ফাইন ফুডস লিমিটেড
- হাক্কানি পাল্পের প্রথম প্রান্তিকে মুনাফা ইতিবাচক
- ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের Q3 প্রতিবেদন প্রকাশ
- আজকের নামাজের সময়সূচি ও নামাজের ফজিলত
- গবেষণা ভিত্তিক শিক্ষা: বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য এক নতুন দিগন্ত
- শেয়ারবাজারে শীর্ষ বিশ শেয়ারের তালিকা প্রকাশ
- ০৩ নভেম্বর ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা: ভবিষ্যতের সম্ভাব্য যুদ্ধের কারণ
- ৫ ও ৬ নভেম্বর বন্ধ থাকবে ২ বছরের সরকারি ট্রেজারি বন্ড
- ০৩ নভেম্বর ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ লুজার তালিকা প্রকাশ
- গ্রিন সিগন্যাল কী পেল মান্না, নুর, পার্থসহ ১২ জোটনেতা
- ঢাকার আজকের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি এক নজরে
- ইসরায়েলের নেতাদের জন্মনাম ও পরিচয় পরিবর্তনের যত কারণ
- রপ্তানি আয়ে বড় ধস; যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কে চাপে পোশাক শিল্প
- দেউলিয়া পাঁচটি ইসলামি ব্যাংক একীভূত
- ইন্টারন্যাশনাল স্পেশালাইজড নিট লিমিটেডের প্রথম প্রান্তিক আর্থিক ফলাফল প্রকাশ
- রেকর্ড ডেট ঘিরে দুই দিন লেনদেন বন্ধ থাকবে
- বোনের কোরআন পাঠে হার মানল দম্ভ; হজরত ওমর (রা.) এর ইসলাম গ্রহণের বিস্তারিত ঘটনা
- বিএনপি আজ ঘোষণা করতে পারে শতাধিক আসনের প্রার্থী তালিকা








