জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে আপিল, শুনানির জন্য কার্যতালিকায়

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১২ ১৮:৫৯:৫৪
জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে আপিল, শুনানির জন্য কার্যতালিকায়

সত্য নিউজ: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের ২০১৩ সালের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল এবং প্রতীক বরাদ্দ বিষয়ে দলটির আবেদনের শুনানি আগামী মঙ্গলবার (১৩ মে) আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় রয়েছে। এই শুনানিতে দলটির ২০১৩ সালের করা আপিলটি এবং ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের রেজল্যুশনকে ঘিরে করা প্রতীক সংক্রান্ত আবেদন উত্থাপন করা হবে। জামায়াতের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানিয়েছেন, দলটি তাদের পুরোনো ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক পুনরায় বরাদ্দের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেছে।

জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক সমস্যা:

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ২০০৯ সালে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া নিবন্ধনকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছিল। রিটের পর, ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ জামায়াতের নিবন্ধনকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। এ রায়ের পর জামায়াতের পক্ষ থেকে ২০১৩ সালে আপিল এবং লিভ টু আপিল (আগ্রহী আবেদন) দায়ের করা হয়। একই বছর দলটি রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করেছিল, তবে তৎকালীন চেম্বার বিচারপতি আবেদনটি খারিজ করেন।

পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর, নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এছাড়াও, ২০২৪ সালের ১ আগস্ট জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে ২০১৪ সালে এক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয় এবং জামায়াতের নিষিদ্ধকরণ প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করা হয়।

২০১৬ সালের সুপ্রিম কোর্ট রেজল্যুশন:

২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ রেজল্যুশন পাস করে, যার মাধ্যমে 'দাঁড়িপাল্লা' প্রতীককে শুধু বিচার বিভাগের জন্য সীমাবদ্ধ করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যে ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীকটি ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে শুধু সুপ্রিম কোর্টের ব্যবহৃত মনোগ্রাম হিসেবে ব্যবহৃত হবে এবং অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীকে এই প্রতীক বরাদ্দ করা যাবে না।

এ প্রসঙ্গে, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের রেজল্যুশনকে অতিক্রম করে নিজেদের পুরোনো প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ পুনরায় বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে। জামায়াতের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, ২০১৩ সালের আপিল বিচারাধীন থাকার কারণে তাদের প্রতীক সংক্রান্ত আবেদনটি আপিলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, সুপ্রিম কোর্টের রেজল্যুশন অনুযায়ী দলটির এই আবেদন নিষ্পত্তির জন্য চাওয়া হয়েছে।

আইনি প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট:

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘদিন ধরে আইনি লড়াই চালিয়ে আসছে। তাদের নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পক্ষে সরকার বিভিন্ন সময় আইনগত পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে, দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তাদের বিরুদ্ধে করা আইনি পদক্ষেপগুলি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জামায়াতের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান সর্বোচ্চ পর্যায়ে শক্তিশালী হয়েছে, বিশেষ করে ২০১৩ সালের রায় এবং ২০১8 সালের প্রজ্ঞাপন জারির পর।

এছাড়া, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন কমিশনও সুপ্রিম কোর্টের রেজল্যুশন অনুযায়ী দাঁড়িপাল্লা প্রতীক বরাদ্দ করতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং উল্লেখ করে যে এই প্রতীক শুধুমাত্র আদালতের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। জামায়াতের জন্য এই সিদ্ধান্ত একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ তারা তাদের পুরোনো প্রতীক পুনরায় ব্যবহার করতে চায়।

আগামী দিনের আইনগত পরিস্থিতি:

আগামীকাল আপিল বিভাগের শুনানি দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। যদি জামায়াতের আবেদন মঞ্জুর করা হয়, তবে দলটির প্রতীক পুনরায় বরাদ্দ হতে পারে। তবে, সুপ্রিম কোর্টের রেজল্যুশন এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী জামায়াতের রাজনৈতিক পুনর্গঠন এবং কার্যক্রমে আরও বাধা আসতে পারে।

এই আপিল এবং প্রতীক সংক্রান্ত আবেদন বিচারাধীন থাকার কারণে, জামায়াতের ভবিষ্যত রাজনৈতিক অবস্থান ও কার্যক্রম সম্পর্কে আরও আইনি পদক্ষেপের প্রয়োজন হতে পারে। আপিল বিভাগে ২০১৩ সালে জামায়াতের করা রিটের সিদ্ধান্তের পাশাপাশি, দলটির নিবন্ধন এবং রাজনৈতিক কার্যক্রমের বৈধতা চ্যালেঞ্জ হতে পারে, যা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন আলোচনার সৃষ্টি করতে পারে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত